E-Paper

৫০ বছর ধরে ‘শোলে’র ফুলকি আর নিশি-অর্গান

এ ছবি এক আশ্চর্য ইতিহাস। পাঁচ বছর ধরে ‘হাউসফুল’ তো পরের কথা, আগেও ঘটেছে নানা বিস্ময়। গব্বর সিংয়ের রোল ফিরিয়ে দিয়েছেন ড্যানি ডেনজ়ংপা। তার বদলে আমজাদ খান নামের নবাগত প্রথম দিনের সংলাপ চল্লিশ টেকেও উতরোতে পারেননি। দ্বিতীয় হিরোর রোলে সকলের পছন্দ শত্রুঘ্ন সিংহ। কিন্তু পরিচালক দেখছেন রোগা, লম্বা এক যুবককে, যার কাঁধে তখন বারোটি ফ্লপ ফিল্মের বোঝা, মুক্তি পায়নি ‘জ়ঞ্জির’। ‘শোলে’ মানে এমনই আরও নানা বিস্ময়।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৭
চরিত্র: গব্বর সিংয়ের ভূমিকায় আমজাদ খান।

চরিত্র: গব্বর সিংয়ের ভূমিকায় আমজাদ খান।

ফিল্ম স্টুডিয়োটির দূরত্ব ছিল গুজরাতের বিমানবন্দর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার। গাড়ি করে যাওয়াই সুবিধা, সে রকমই ব্যবস্থা হয়েছে গব্বর সিং এবং ‘আংরেজো কে জমানে কা জেলর’ সাহেবের জন্য। এই দু’টি চরিত্র দেশের রুপোলি পর্দায় কম্পন তুলতে শুরু করেছে সবেমাত্র। সময়টা ১৯৭৫ সালের বর্ষা পেরিয়ে শরৎ। যদিও গুজরাতের আবহাওয়া তেতেপুড়েই থাকে ওই সময়টা। আমজাদ খান এবং আসরানি যাচ্ছেন একটি স্টুডিয়ো উদ্বোধন করতে সপরিবার। পথে আমজাদের পুত্রের জলতেষ্টা পেল। জনমানবশূন্য প্রান্তরের মধ্য দিয়ে গাড়ি চলছে। এক জায়গায় দাঁড় করানো হল গাড়ি, কারণ ধু ধু মাঠের মধ্যে একটি জরাজীর্ণ স্টল দেখা গিয়েছে। একটু দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, এখানে চা, বিস্কুট, কোল্ড ড্রিঙ্ক, সিগারেট পাওয়া যাবে। চার পাশে কয়েক মাইলের মধ্যে বাড়ি তো দূরস্থান, কুঁড়েও নেই।

 ‘জয়’ অমিতাভ ও ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।

‘জয়’ অমিতাভ ও ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।

ওই দোকানের ভিতর ঢুকতেই তাঁরা দেখেন একটি গ্রামোফোন, যেখানে গমগম করছে, “কিতনে আদমি থে?...”

এর পর নাগাড়ে বাজতে লাগল গব্বর সিংয়ের সংলাপ। দোকানি ওই ছোট্ট দলটিকে চা দিলেন বিশেষ পাত্তা না দিয়েই। তিনি সে দিন বুঝতে পারেননি, কারা তাঁর দোকানে এসেছে! শুধু আমজাদ নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কয়েক মিনিট।

আমজাদ তখনও ফিল্মজগতে সদ্য পা রাখা সেই থিয়েটার-অভিনেতা, ড্যানি দেনজংপা ফিরোজ় খানের ‘ধর্মাত্মা’ ছবিটি করার জন্য শেষ মুহূর্তে গব্বরের চরিত্র ফিরিয়ে না দিলে, যাঁর রুপোলি পর্দায় আবির্ভাবই ছিল অনিশ্চিত। শুটিংয়ে তাঁর প্রথম দিনের সংলাপটি বলতে (‘কিতনে আদমি থে...’) গিয়ে টানা চল্লিশটি টেক এবং দু’দিন লাগার পরেও উতরোয়নি। তাঁর কণ্ঠস্বর নিয়ে হাসাহাসি হয়েছে। ইউনিট-এর উড়ো খইয়ের মতো খবর রটে গিয়েছিল, রমেশ সিপ্পি বিরাট ভুল করেছেন, আমজাদ এ বার কাঁচি হবেনই! এমনকি যাঁরা সিপ্পির কাছে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তাঁরাও সন্দিগ্ধ হয়ে বলেন, আমজাদকে বসিয়ে দেওয়াই ভাল।

সেদিন গুজরাতের ওই চায়ের স্টলটি থেকে বেরিয়ে এসে খাঁ খাঁ প্রান্তরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লেন আমজাদ খান। কাঁদতে লাগলেন অঝোরে।

*****

ইটালির বোলোনায় সিনেমা রিত্রোভাতো ফেস্টিভ্যাল-এ, ‘পিয়াজ়া মাজ্জ়ো’র ওপেন থিয়েটারের উপরে রাতের আকাশের চাঁদোয়া ছাড়া আর কিছু ছিল না। সে ছিল গত জুনের এক অবিস্মরণীয় রাত। কিন্তু সেই আকাশে সম্ভবত কোনও নক্ষত্র ছিল না! থাকলেও কারও নজরে আসার কথা নয়। ইটালির দর্শকরা ওপেন থিয়েটারে বসে সামনের পর্দার তারাদের নিয়েই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে রইলেন রাত একটা পর্যন্ত। আসলে নক্ষত্রের যে নির্দিষ্ট কোনও আকাশ প্রয়োজন হয় না সম্মোহনের নিমিত্ত, সে যে সর্বত্র সমান ভাবে বিহ্বল করতে পারে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা দর্শককে, সেটাই যেন আবার প্রমাণিত হল ওই ফেস্টিভ্যালে।

সেই রাতে, ইটালির অপূর্ব নিসর্গের মাঝে বড় স্ক্রিনে প্রথম বারের মতো দেখানো হল ‘শোলে’ ছবির পুনরুদ্ধারকৃত সংস্করণটি। পঞ্চাশ বছর পর নতুন রূপে ফিরে আসা এই যুগন্ধর ছবিটি ঘিরে দেশ জুড়ে যে কম্পন তৈরি হয়েছে, সেই আবেগের আঁচ সে দিন হিন্দি ভাষা না-বোঝা সব বয়সের ইটালীয়দের মনেও। সিঁড়িতে, এমনকি মাটিতে বসেও মানুষ মুগ্ধ হয়ে ছবিটি দেখলেন। ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সেই রাতের ছবি ও খবরের পোস্ট ভেসে গেল ভারত তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আবেগে। ছবির এই ‘আনকাট’ এবং ঝকঝকে সংস্করণটি তৈরি হয়েছে ব্রিটেনের গুদামে খুঁজে পাওয়া কিছু ইন্টারপজ়িটিভ থেকে। এর পর গবেষণাগারে সে সব ফেলে পুনরুদ্ধার করেছে ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন।

উনিশশো পঁচাত্তরের রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুযায়ী জরুরি অবস্থার আবহে সেন্সর বোর্ড কঠোর কাঁচি চালিয়ে হিংসাত্মক তকমায় গব্বরকে কাঁটা লাগানো জুতো দিয়ে পিষে হত্যা করার দৃশ্য বাদ দেয়। এক জন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার আইন নিজের হাত নিতে পারেন না— এই ছিল যুক্তি। পরিচালক রমেশ সিপ্পিকে নতুন করে শুট করতে হয় ছবির শেষাংশ। অভিনেতা, কলাকুশলীদের তড়িঘড়ি ফিরিয়ে আনা হয় সেই বিখ্যাত রামগড় গ্রামে। শেষ পর্যন্ত গব্বর সিংকে বন্দি করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার দৃশ্য চূড়ান্ত হয়।

দৃশ্যাবলি: ‘বাসন্তী’র ভূমিকায় হেমা মালিনী। সঙ্গে ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।

দৃশ্যাবলি: ‘বাসন্তী’র ভূমিকায় হেমা মালিনী। সঙ্গে ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্র।

হারিয়ে যাওয়া আসল দৃশ্যগুলি আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ করেন পরিচালক রমেশ সিপ্পির পুত্র, শাহজাদ সিপ্পি। ২০২২ সালে তিনি যোগাযোগ করেন ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে। তাতেই হয় অসাধ্য সাধন। বাদ পড়া সব দৃশ্য এবং সংলাপ জুড়ে দেওয়া হয় ছবিতে। যুক্ত হয় মিনিট ছয়েকের ফুটেজ। ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার শিবেন্দ্র সিংহ দুঙ্গারপুর নিজেও আবেগে ভেসেছেন সে দিন, ইটালীয় দর্শকদের সঙ্গে ছবিটি বড় পর্দায় দেখে। তাঁর কথায়, “আসল সমাপ্তি-সহ ঝকঝকে প্রিন্টের ‘শোলে’ পিয়াজ়া মাজ্‌জ়ো-র বড় পর্দায় দেখে আমার শৈশব ফিরে এল যেন। সেই সঙ্গে পঞ্চাশ বছর আগের কত স্মৃতি। এই সংস্করণটিই ‘শোলে’র ইতিহাসে সবচেয়ে প্রামাণ্য ও নিখুঁত সংস্করণ হয়ে রইল।”

*****

বিকানেরের যে গ্রামগুলিতে শৌচের জল সংগ্রহ করতে দৈনিক মাইল তিনেক হাঁটতে হয় গ্রামবাসীদের, সেখানে এক বিকেলে বীরু পৌঁছেছিলেন! বাসন্তীর প্রেমিক, জয়ের দোস্ত, গব্বর সিংয়ের প্রতিপক্ষ হিসাবে নন, ২০০৪-এর লোকসভা ভোটে সেই বীরু অর্থাৎ ধর্মেন্দ্র বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিকানের থেকে। ধু ধু মরুভূমি, আকাশে ঘুড়ি ওড়ে শুধু, মানুষ দেখা যায় না। এতই রোদ, যে দিনে বেরোলে গায়ে ফোস্কা পড়ে যায়। রোদ কমলে শুরু হয় জীবন।

সেই নির্জন উত্তপ্ত মরুশহরে ধর্মেন্দ্রর প্রচারসঙ্গী হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল। জিপ চলছে। সাদা তোয়ালে, ঠান্ডা জলের বোতল নিয়ে ড্রাইভারের পাশে ধর্মেন্দ্র। মাঝে আমচা-চামচা। পিছনে ঘাপটি মেরে বসে আছি। সুযোগ-সুবিধা মতো টুকটাক কথা। অনেক বালিয়াড়ির পর বালিয়াড়ি, মাঝে আলপনা দেওয়া অপূর্ব সব বাড়ি। ভাঙাচোরা মুখগুলো বেরিয়ে আসছে পরম কৌতূহলে। একটু ভিড় জমলে, জিপ থামছে। ধর্মেন্দ্র লাফিয়ে নেমে, হুবহু একই সংলাপ দিচ্ছেন— “আজ আপনাদের গ্রামে বীরু এসেছে। আপনাদের জলের সমস্যা, খরার কষ্ট, সরকারি যোজনা না পাওয়ার বেদনা আর থাকবে না। এখানে জল ধরার ব্যবস্থা হবে, বড় বড় ট্যাঙ্ক বসবে। না, ‘সুসাইড’ করার জন্য নয়! পানীয় জলের জন্য। আপনাদের যা-যা সমস্যা রয়েছে, সব গব্বর সিংয়ের মতো এ বার উড়িয়ে দেব। আপনারা শুধু আমায় জিতিয়ে আনুন।”

সেই সন্ধ্যায় অন্তত দশটি গ্রামে এই সংলাপ। রাজস্থানি গহনার সঙ্গে গহনার ঠোকাঠুকি, কৌতূহল, চাপা হাসাহাসি ভিড়, আনন্দ। গ্রাম থেকে গ্রামে। বিকানেরের ওই গ্রামগুলোর মতোই রাজস্থানের বেশ কিছু গ্রাম যে আজও জলহীন রয়ে গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে বিজলিহীনও, সেটা অনেক পরে লোকসভা ভোট কভার করতে গিয়ে দেখেছি। কোনও বীরু আসেনি তাঁদের উদ্ধার করতে। ধর্মেন্দ্রও আর ভোটে দাঁড়াননি কখনও। কিন্তু সে বার, সেই ২০০৪-এ যে বিপুল ভোটে জিতবেন ধর্মেন্দ্র, তা ওই সন্ধ্যাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যেন। কারণ ওই গরিবগুর্বো মানুষগুলি ভোট দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্রকে নয়, বীরুকে। রমেশ সিপ্পির সেট যে কী ভাবে একটি অখ্যাত জনপদকেও প্রভাবিত করতে পারে, সেই বিকেলে হাতে-গরম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ‘শোলে’র সাফল্যের রহস্য খুঁজতে আর অধিক তত্ত্বের প্রয়োজন পড়েনি।

*****

গত শতকের সত্তর-পূর্ব প্রজন্ম তো বটেই, এমনকি সত্তরের শেষ পর্ব থেকে আশির দশক যাদের শৈশবস্মৃতিতে ঘাই মারে, সেই সব বলিউড-প্রেমীদের কাছেও ‘শোলে’ একটি সভ্যতার নাম। বড় পর্দায় প্রথম বার ‘শোলে’ দেখার পারিবারিক স্মৃতি, শ্রুতিকথন, ছবিটিকে নিয়ে অতিকথা, পলিডোর সংস্থার লং প্লেয়িংয়ে ছবির বিভিন্ন সংলাপ, বিস্কুটের বিজ্ঞাপনে গব্বর সিং-এর সাদা-কালো ছবি— তাঁদের কাছে আমৃত্যু থেকে যাবে। ছবির বিখ্যাত হয়ে যাওয়া সংলাপে রয়েছে, পঞ্চাশ-পঞ্চাশ ক্রোশ দূরে ক্রন্দনরত শিশুকে মায়ের ভয় দেখানো— ‘শিগগির ঘুমিয়ে পড়, নয়তো গব্বর সিং এসে যাবে।’ কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ‘শোলে’ মুক্তির পর ক্রমশ বাচ্চাদের মধ্যে এক আশ্চর্য কার্যকারণে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠল এই ডাকাত। শিশুদের গ্লুকোজ় বিস্কুট বিপণনের জন্য ব্রিটানিয়া সংস্থা এত দিন নায়কদের ব্যবহার করে এসেছে। স্বাভাবিক কোনও ভয়ঙ্কর ভিলেনের মুখ শিশুদের পণ্যে আনার কথা কোনও বিজ্ঞাপন-গুরু দুঃস্বপ্নেও ভাববেন না। কিন্তু ব্রিটানিয়া বাজার সমীক্ষা করে দেখল, গব্বর চরিত্রটি শিশু কিশোর তরুণদের মধ্যে এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, সমসাময়িক নায়কেরা তার এক মাইল পিছনে। ‘গব্বর কি অসলি পসন্দ’ ক্যাচলাইনে ডাকুবেশী আমজাদ খান পাঁচটা গ্লুকোজ় বিস্কুট মুখে দিলেন পোস্টারে, ভিডিয়োয়। বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণ। বিজ্ঞাপন-দুনিয়ার বহু বিস্ময়ের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিল এই ঘটনা। পঞ্চাশ বছর আগের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাওয়ার পর ১,৫০০ আসনবিশিষ্ট মিনার্ভা থিয়েটারে একটানা পাঁচ বছর চলে ম্যাটিনি শো-তে ‘শোলে’। ২৪০তম সপ্তাহেও দেখা যায়, হাউসফুল। ২০১৫ সালের এপ্রিলে ‘শোলে’ মুক্তি পায় পাকিস্তানের স্ক্রিনে। কিমাশ্চর্যম্, তখনই ৪৫ বছরের পুরনো হয়ে যাওয়া সেই ছবি পাকিস্তানে প্রদর্শিত গত বিশ বছরের সমস্ত বলিউডি রেকর্ড ভেঙে দেয়। এমনকি সে দেশে হইচই ফেলে দেওয়া, ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহরুখ খানের ‘দেবদাস’ও হার মানে টিকিট বিক্রির পরিমাণে। এই ছবির অন্যতম এক পরিবেশক শ্যাম শ্রফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে যেমন বলা হত, ঠিক সে রকমই ‘শোলে’র ক্ষেত্রেও কোনও সূর্যাস্ত নেই।” ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ‘শোলে’কে তকমা দেয় শ্রেষ্ঠ ভারতীয় ছবি হিসাবে। বিবিসি ইন্ডিয়া-র সমীক্ষার পর ‘শোলে’র শিরস্ত্রাণে যোগ হয় নতুন পালক, ‘ফিল্ম অব দ্য মিলেনিয়াম’। ছবির সংলাপ এবং আর ডি বর্মণের করা সুরের রেকর্ডের (পরবর্তী সময়ে ক্যাসেট) বিক্রি পৌঁছে যায় দশ লাখে।ধর্মেন্দ্র এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য এই ‘শোলে’!”

বচ্চনের কথায়, “শুটিং করার সময়ে মোটেই বুঝতে পারিনি, ভারতীয় সিনেমার মাইলফলক হয়ে উঠতে চলেছে এই ছবি।”

অন্যান্য সহঅভিনেতার সঙ্গে ‘রাধা’ চরিত্রে জয়া বচ্চন ও ‘ঠাকুরসাব’ সঞ্জীবকুমার

অন্যান্য সহঅভিনেতার সঙ্গে ‘রাধা’ চরিত্রে জয়া বচ্চন ও ‘ঠাকুরসাব’ সঞ্জীবকুমার

রাজনৈতিক বক্তৃতা থেকে জনসভা, বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন— ‘শোলে’র সংলাপে গড়ে ওঠে এক সাংস্কৃতিক সামাজিক ভাষ্য, যা এর আগে কোনও হিন্দি ছবির ক্ষেত্রে হয়নি। জিএসটি হয়ে ওঠে ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’! সুরমা ভূপালি থেকে ঘোড়া ‘বাসন্তী’ পর্যন্ত রক্তমাংসের চরিত্র হয়ে নড়াচড়া করতে থাকে, পারিবারিক হয়ে ওঠে। তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা, অকিঞ্চিৎকর সংলাপ, বিস্মৃতপ্রায়চরিত্র— সবই দর্শকদের স্মৃতিতে অতিজীবিত হয়ে উঠতে থাকে।

মুক্তি পাওয়ার প্রথম বছর ঘোরার আগেই ‘শোলে’ যে পরিমাণ ব্যবসা করেছিল, সব মিলিয়ে তা নাকি সেই বছর কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ হওয়া টাকার কাছাকাছি বা কিছু বেশি।

*****

এই অকল্পনীয় সাফল্যকে আতসকাচের নীচে ফেলে গবেষণা গত পাঁচ দশকে কিছু কম করেননি বাজার-বিশেষজ্ঞ, সমাজতাত্ত্বিক, অধ্যাপক, ফিল্ম-পণ্ডিতরা। উঠে এসেছে বহু কারণ, কিন্তু তবুও পুরোপুরি যেন ছোঁয়া যায়নি এর ম্যাজিককে। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, “‘শোলে’র মধ্যে রক্তচক্ষু হিরোর দ্রোহ রয়েছে। পাল্টা মার রয়েছে। ঘটনা ও পরিস্থিতির চক্রে তারাই সামাজিক নায়ক হয়ে এক লোকগাথায় পরিণত হয়। সত্তরের মধ্যভাগের বেকারত্ব ও হতাশার পটভূমিতে স্থানীয় মস্তানচক্রের সঙ্গেও এর যোগ রয়েছে। যে পটভূমি থেকে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভ বচ্চনের উত্থান, তা এই ছবিতেও উপস্থিত। তবে নানা কারণে সবাই ছবি দেখে প্রথমে খুবই আনন্দ পেয়েছে, পরে তার ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছে।”

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা— সাধারণ দর্শকের বিনোদন উপচে দিয়েও এক সমান্তরাল নৈতিকতার পাঠ পড়ায় ‘শোলে’। যেখানে হাত-কাটা ঠাকুর অসহায় কিন্তু প্রতিশোধমনস্ক, বিধবা রাধা বিষণ্ণ নীরব সঙ্গে তার অবদমিত প্রেম, গব্বর সামাজিক অত্যাচারী, ইমাম সাহেবের বেদনা ও ধর্মনিরপেক্ষ ভারত-দর্শন, নেহাতই ছিঁচকে দুই অপরাধীর বৃহত্তর লড়াইয়ের ভূমিতে উন্নীত হওয়ার মতো বিষয়গুলির সঙ্গে সংযুক্ত হতে তিলার্ধ সময় লাগেনি আম ভারতীয়ের।

ইউনিভার্সিটি অব ম্যাঞ্চেস্টার-এর বলিউড বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাজিন্দর দুধরা মনে করেন, ‘শোলে’ সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পেরেছে, কারণ এই ছবির আবেদন বহুস্তরীয়। সমস্ত রকম মশলা দিয়ে তৈরি অভূতপূর্ব পদ। নাটক, অতিনাটক, রোম্যান্স, পরিবার, চূড়ান্ত অ্যাকশন— এ সবই একে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে সম্পাদনা এবং চিত্রনাট্যের পারদর্শিতায়। তবে এটাই সব নয়। বিশেষজ্ঞদের মতামতে যে ক্ষেত্রটি কখনই ‘শোলে’র আলোচনায় বাদ পড়ে না তা হল, জরুরি অবস্থাকালীন ভারতের দর্শকদের প্রেক্ষাপট। আইনশৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার, প্রতিশোধ, বিশ্বাসঘাতকতা সব মিলিয়ে এক অস্থিরতার সময়। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নাগরদোলায় সওয়ার গোটা দেশ। দুধরার কথায়, “রামগড়ের কাল্পনিক গ্রামের প্রেক্ষাপটে আইনের শাসনহীন আমেরিকান, ইটালিয়ান ছবি বা বল্গাহীন পশ্চিম (ওয়াইল্ড ওয়েস্ট) থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার যে বিষয়টি আলোচিত হয়, তা কাকতালীয় বা অপ্রাসঙ্গিক ছিল না ভারতের পটভূমিতে। আইন বলবৎ করতে আইনের বাইরে যাওয়ার বিষয়টিও নয়।”

আসলে ন্যায়বিচার ও প্রতিশোধস্পৃহার মাঝে ঝুলন্ত দেশের রাজনীতি ও সমাজ এমন এক স্বপ্নময় বিশল্যকরণীর সন্ধানে ছিল সে সময়, যা অবিশ্বাসের আবহকে কাটিয়ে, ভারতের ফুসফুসে ভরে দেবে অক্সিজেন। ‘শোলে’র আগুন পঞ্চাশ বছর পার করেও তাই নিভবে না।

*****

তিয়াত্তরের জানুয়ারি মাস। নাতিশীতোষ্ণ মুম্বইয়ে সে বার শীতটাও পড়েছে জব্বর। তবে আল্টামাউন্ট রোডের প্রাসাদোপম শ্রীবিজয় ভবনের টেরেস গমগম করছে সিনে-তারকাদের উষ্ণতায়। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে নৈশ পার্টির জৌলুস।

উজ্জ্বল তারকাদের ভিড়ে এক কোণে পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন লম্বা রোগা এক যুবক। ভাল করে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে, তাঁর চোখ দুটো লালচে, চুল অবিন্যস্ত, চোখ কোটরাগত। গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার। তবুও কোনও মতে ড্রিঙ্ক-এর গ্লাসটা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যুবা। যখন আর দাঁড়াতে পারছেন না, ভিতরে গিয়ে কোনও একটি বেডরুমে গা এলিয়ে দিচ্ছেন একটু বিশ্রামের জন্য। কিন্তু বেশি ক্ষণ সে ভাবে থাকার জো নেই। জ্বরের ওষুধ খেয়ে আবার বাইরে এসে কোনও ক্রমে হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে অভ্যাগতদের সামনে। টানতে হচ্ছে প্রেস-ক্যামেরার নজর।

ইন্ডাস্ট্রিকে পর পর কয়েকটি বড় হিট দেওয়ার পর এই পার্টি দিয়েছেন জি পি সিপ্পি। জোর গুজব, তাঁর পরের প্রোডাকশনের প্রস্তুতি শুরু হবে শীঘ্রই। অর্ধেক কাস্ট বাছাই হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজন ‘সেকেন্ড হিরো’র। কোণে দাঁড়িয়ে থাকা জ্বর-গায়ের যে যুবকটিকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম অমিতাভ বচ্চন, তিনি জ্বর সয়েও কষ্ট করে এসেছেন সিপ্পি প্রোডাকশনের এই রোলটির টানে। তাঁর প্রেমিকা জয়া ভাদুড়ী তদবির করেছেন। যত অসুস্থই হোন, এই পার্টিতে হাজির থাকার জন্য অমিতকে চাপও দিয়েছেন জয়াই।

কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, জি পি সিপ্পির ছেলে রমেশ পরের ছবিটির পরিচালক, এবং ছবিটির বাজেট নাকি বিরাট। রমেশ আদৌ অপরিচিত নন বলিউড বাজারে। প্রথম ছবি ‘আন্দাজ়’ বক্স অফিস টানতে না পারলেও দ্বিতীয় ছবি ‘সীতা অউর গীতা’র (১৯৭২) সাফল্য নজরকাড়া। হেমা মালিনী মাত করেছেন ডবল রোলে। সঙ্গে সঞ্জীবকুমারের অনবদ্য অভিনয়। হেমা মালিনীর আসনটিও বলিউডে এক নম্বরে পাকাপাকি হয়েছে এই ছবির জন্যই।

জায়গা পোক্ত হয়েছে রমেশেরও। এমনিতে ছোটখাটো চেহারা, উসকোখুসকো চুল, খুবই সাদামাটা দেখতে। চুপচাপ, বিখ্যাত প্রোডিউসারের ছেলে বলে কোনও বাড়তি লাফালাফি নেই, বরং যেন কিছুটা গুটিয়ে থাকাটাই পছন্দ। কথা বলেন খুব আস্তে। যে দিন নিজের ছবি মুক্তি পায়, সে দিন তিনি পালিয়ে বেড়ান অন্যত্র, যাতে ভিড়ের মুখে না পড়তে হয়! প্রথম ছবি বানিয়েছেন পঁচিশ বছর বয়সে, দ্বিতীয় ছবি ‘সীতা অউর গীতা’ সাতাশ বছর বয়সে। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন গোড়ায় খুব একটা পাত্তা দিত না, আড়ালে বলত বড়লোক বাপের উড়নচণ্ডী ছেলে। মাথায় যত সব উদ্ভট আইডিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় ছবিটি হিট হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলায় তো অবশ্যই। শশী কপূর পর্যন্ত কৌতুহলী হয়ে বলেন, “ইয়ে রমেশ সিপ্পি হ্যায় কেয়া চিজ়!”

রমেশ ছেলেবেলা থেকেই সিনেমার পোকা। সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুলে পড়ার সময় রোজ মেট্রো সিনেমার সামনে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখা মানুষ। ১৯৫০ সালে বাবা যখন তাঁর প্রথম ছবি ‘সাঝা’ বানানোর কাজ শুরু করলেন, রমেশ স্কুল পালিয়ে চলে যেতেন সেটে। বড় বড় চোখে দেখতেন সব কিছু। বাপ প্রোডিউসার হলে যা হয়, ন’বছর বয়সেই ক্যামেরার সামনে মুখ দেখানোর সুযোগ এসে গেল অচলা সচদেবের ছেলের রোলে। সেই ছবির নামও ছিল ‘শাহেনশাহ’। মাত্র এক লাইনের সংলাপ, কিন্তু পরে রমেশ বলেছেন, “এই একটি শটই আমার ভিতরটা নাড়িয়ে গিয়েছিল যেন। আমি ভাবনার জগতে ডুবে গেলাম আর স্কুলের পরীক্ষায় ধ্যাড়াতে লাগলাম!”

প্রথম দিকে খারাপ ফল করলেও পরে লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স-এ ভর্তি করা হয় তাঁকে। ছ’মাস সেখানে লড়াই করে এক গভীর রাতে বাবাকে ফোন করেছিলেন ছেলে। মাত্র একটা কথাই বলতে পেরেছিলেন, “বাবা, আমি কি ফিরে আসতে পারি?”

আজন্ম ঝুঁকি নেওয়াতে সিদ্ধহস্ত জি পি সিপ্পি উত্তর দিতে এক সেকেন্ডও সময় নেননি সে রাতে। বলেছিলেন, “ঠিক আছে। চলে এস।”

ফিরেও হাল একই। বম্বে ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি নিয়ে ভর্তি হলেন ঠিকই, কিন্তু ক্লাসরুম ছেড়ে দিনরাত পড়ে থাকতে শুরু করলেন স্টুডিয়োতে। মর্নিং কলেজ সকালে সাড়ে ন’টার মধ্যে সেরে ট্রেন ধরে চলে যাওয়া সিপ্পি প্রোডাকশনের কার্দার স্টুডিয়োতে। মাথাভর্তি আইডিয়া নিয়ে। বিভিন্ন নামকরা পরিচালকের সঙ্গে জুড়ে ছিলেন লেজুড়ের মতো। কাজ বলতে বিশেষ কিছু নয়, ফাইফরমাশ খাটা। যেমন ‘মেরে মেহেবুব’ ছবিতে নায়িকা সাধনার জুতো গুছিয়ে রাখা, সিন অনুযায়ী সঠিক জুতো এগিয়ে দেওয়াটাই ছিল রমেশের সহ-পরিচালকগিরি! এমন করতে করতেই প্রথম ছবি ‘আন্দাজ়’-এর কাজ শুরু করেন রমেশ। গপ্পোটি গুলজ়ারের লেখা। ছবির নায়িকা হেমা মালিনী পরে বলেছিলেন, “শুটিংয়ের শেষ পর্বে প্রায়শই রমেশকে দেখা যেত তাঁরই সমবয়সি দুই উঠতি লেখকের সঙ্গে গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করতে। তাঁদের নাম সেলিম খান এবং জাভেদ আখতার।”

সেই সেলিম-জাভেদও উপস্থিত সেই নৈশ পার্টিতে। তাঁরা যে রমেশের তৃতীয় ছবিটি লিখবেন সেটা নিশ্চিত। তবে নিছক প্রেমের নরম রোমান্টিক ছবি নয়, বাপ-বেটা এ বার বড় ‘ধামাকা’র সন্ধানে. আর তাই রমেশের তৃতীয় ছবি ঘিরে এত জল্পনা। শোনা যাচ্ছে, বহু তারকা নিয়ে একটি অ্যাডভেঞ্চার ছবি বানানো হবে। ‘সীতা অউর গীতা’র সফল জুটি ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনীকে নেওয়া পাকা হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় পুরুষ-তারকার রোলটি পাওয়ার জন্য অমিতাভ লড়ছেন ঠিকই, কিন্তু নিজেও জানেন, পাওয়ার আশা কম। সিপ্পি প্রোডাকশনের পরিবেশকরা তাঁকে নেওয়ার পক্ষে নন। এমনিতেই ডিগডিগে রোগা, মুখে বিষাদের কালি লেপা। এক ফোঁটা হাসি নেই। জৌলুস নেই কোনও। তার উপর পর পর বারোটি ফ্লপ ছবির বোঝা কাঁধে।

তো এহেন পার্টিতে অমিতাভের হৃৎকম্প বাড়িয়ে মাঝরাতে ঢুকলেন শত্রুঘ্ন সিংহ। নিজস্ব কায়দায়। ‘রামপুর কা লক্ষ্মণ’ এবং ‘ভাই হো তো অ্যায়সা’— সম্প্রতি এই দু’টি ছবি করে বাজার মাত করে দিয়েছেন তখন। তখনও পর্যন্ত সব ছবিতেই তাঁকে দেখা যাচ্ছে ভিলেনের রোলে, কিন্তু নিজস্ব ঘরানার অভিনয় এবং প্রথাবিরোধী চেহারায় টেক্কা মারছেন হিরোদের। তাই তিনি পার্টি-হলে ঢুকতেই সেই রাতের সব আলো তাঁর উপর। হেমা মালিনী এবং ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে ছবি তুললেন হাসিমুখে। দাপিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন পার্টিতে। তাঁর সঙ্গে করমর্দন করতে এগিয়ে এলেন উপস্থিত প্রযোজক ও পরিবেশকেরা। আর ধীরে ধীরে কার্যত ফ্রেমের বাইরে চলে গেলেন জ্বরক্লিষ্ট অমিতাভ। একটু পর এক পরিবেশক রমেশের কানের কাছে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শত্রুঘ্নকে দেখিয়ে ফিসফিস করে বলেছিলেন, “ইয়ে হ্যায় আপ কি কাস্টিং। উস লম্বুজি কো সোচনা ভি মাত!” মনে রাখতে হবে, শুটিংয়ের কাজ শেষ হয়ে গেলেও তখনও মুক্তি পায়নি প্রকাশ মেহরার ছবি ‘জ়ঞ্জির’।

সে দিন একটু হেসেছিলেন রমেশ। আজ আমরা নিঃসন্দেহ, সে দিন একা রমেশ সিপ্পিই নন, অলক্ষ্যে মুচকি হেসেছিল ইতিহাসও!

*****

পঞ্চাশ বছর ধরে ফুলকি ছুটিয়ে যাচ্ছে ‘শোলে’। আর একটি একটি করে লণ্ঠন নিভিয়ে আরও গভীর শৈত্যে ডুবে যাচ্ছেন রাধা, গোটা গ্রাম আকুল হচ্ছে নিশি-অর্গানে। মধ্যবিত্ত স্বপ্নে দৌড়ে যাচ্ছে ঘোড়া। আজ জরুরি অবস্থা নেই সরকারি ভাবে। অসহায় বেকারত্ব রয়েছে। সত্তরের দশকের লাইসেন্স-রাজ নেই, মুদ্রাস্ফীতির রাক্ষস রয়েছে। বাসন্তীর নিরাপত্তা নেই গ্রামে, শহরে, কলেজের ইউনিয়ন রুমে, সরকারি হাসপাতালে, সীমান্তে, নাইট ক্লাবে। এক নিষ্ফলা আক্রোশে আজও রাজপথ, কখনও না কখনও খালি হাতেই ঢুকে পড়তে চায় গব্বরের ডেরায়। রুখে দিতে চায় ডিজ়েলের দাম, আর জনজাতি সম্প্রদায়ের মেয়েটিকে নির্যাতনের হাত থেকে ছিনিয়ে এনে বসাতে চায় ছায়াবীথিতলে। হা-ক্লান্ত মানুষ দোল-উৎসবের রংমিলান্তির মধ্যে শোকের ছায়া চায় না আর। একটি পিঁপড়ে তবু ওঠানামা করে চৈতন্যের সিঁড়ি দিয়ে। কয়লার ইঞ্জিন থেকে ছাই উড়ে এসে চোখ ঝাপসা করে দেয়। সত্তর দশকের ভারতীয় স্ক্রিন জুড়ে উচ্চাবচ টিলা আর দিগন্ত, যেখানে এখনও বিলীন হয়ে যায়নি ঘোড়সওয়ারেরা। আতঙ্কের হাওয়া এসে সাদা চাদর উড়িয়ে দিলে, শবের প্রদর্শনী শুরু হয় আজও।

তথ্যঋণ: ‘শোলে দ্য মেকিং অব আ ক্লাসিক’ (অনুপমা চোপড়া)— বিবিসি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Hema Malini Jaya Bachchan Amitabh Bachchan Dharmendra Sholay

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy