বেলিয়াতোড় পাঁচবাড়ির দুর্গা পুজো।
বৈদিক যুগ থেকে ভারতে শক্তি আরাধনার চল। বেদের বিভিন্ন সূক্ত অনুযায়ী প্রকৃতিই আসলে মাতৃশক্তি। প্রাকৃতিক শক্তিদের মানুষ ভয়ে ভক্তি করত তাদের রোষানল থেকে বাঁচার জন্য। ধীরে ধীরে প্রচলন হয় বছরের নানা সময়ে নানা ভাবে শক্তিপূজার। মনের কল্পনায় প্রকৃতি রূপ নেয় মূর্তিতে। মূর্তিপূজার সঙ্গেই চল ছিল ঘটপুজো, পটপুজো, অস্ত্রপুজোর। মূর্তিবৈচিত্র বাংলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
বাঁকুড়া জেলার এক সমৃদ্ধ পৌর শহর সোনামুখী। দেবী স্বর্ণমুখীর নাম থেকে গ্রামের নাম হয়েছিল সোনামুখী। শোনা যায়, বর্গির আক্রমণ থেকে গ্রামকে রক্ষা করেছিলেন দেবী স্বয়ং। গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে মন্দিরে দেবীর অধিষ্ঠান। তবে এ মন্দির আধুনিক মন্দির। প্রাচীন মন্দিরের সংস্কার সাধন হওয়ার পরবর্তী চেহারা।
সোনামুখীর অধিবাসীরা বরাবরই ধর্মপ্রাণ। কালী পুজো ও কার্তিক পুজো এই অঞ্চলের মুখ্য উৎসব। তবে দুর্গাও আসেন বারোয়ারি ও পারিবারিক পুজোর আসরে।
সিদ্ধান্ত চট্টোপাধ্যায় বাড়ির রামলক্ষ্মণ-সহ দুর্গা
শ্রীরামচন্দ্র দুর্গাপুজো করেছিলেন রাবণবধ এবং যুদ্ধে জয়লাভের আশায়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই মাতৃপূজার চল ছিল। তবে সে পুজো ছিল বসন্তকালীন বাসন্তী দুর্গার। রামচন্দ্র অকালবোধন করে শরৎকালে জাগ্রত করেছিলেন দশভুজা মহিষমর্দিনীকে। ক্রমে এই অকালবোধনই বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব হয়ে উঠেছে। ত্রেতাযুগ থেকে তাই দুর্গা আর রামের সম্পর্ক অটুট। মায়ের মূর্তিতে এমন রূপের ছোঁয়া দেখা যায় সোনামুখী সিদ্ধান্ত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির প্রতিমায়। মায়ের সঙ্গেই রাম-লক্ষ্মণ অধিষ্ঠিত এক চালচিত্রে।
দেড় শতক ধরে এই পুজোর সাক্ষী অঞ্চলবাসী। বংশের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নে মায়ের পুজোর আদেশ পান। অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন তাঁরা। দেবী বলেন মাটির দেওয়ালে মূর্তি এঁকে পুজো করতে। স্বপ্নাদিষ্ট সেই মূর্তিতে দেবী দুর্গার দু’পাশে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক গণেশের বদলে ছিলেন জয়া-বিজয়া, রাম ও লক্ষ্মণ।
তান্ত্রিক মতে সম্পন্ন এই পুজোয় পশুবলি, চালকুমড়ো, আখ বলি হয়। প্রতিদিন অন্নভোগ দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোয় থাকে লুচিভোগ। বিসর্জনের পর কাঠামো তুলে রাখা হয়। একই কাঠামোয় বংশপরম্পরায় কুমোর এসে পুজোর দালানে গড়ে তোলেন মাতৃমূর্তি।
সোনামুখীর চৌধুরীবাড়ির এলোকেশী মা দুর্গা
কন্যা উমা চারটি দিনের জন্য এসেছেন পিতৃগৃহে। এখানে উমা একেবারে ঘরের আদুরে কন্যাটি। পরিপাটি সাজগোজে এই ক’দিন রুচি নেই তাঁর। রাজরাজেশ্বরীর মতো জমকালো জরির শাড়ি, ভারী গহনা পরার ইচ্ছে নেই। তাই পরনে খুব সাধারণ শাড়ি, সামান্য গয়না, মাথার চুল অবিন্যস্ত। একেবারে ঘরোয়া রূপ। মায়ের নাম তাই এলোকেশী। সোনামুখী চৌধুরীদের বাড়িতে এমন রূপেই আসেন মা।
সোনামুখীর সবচেয়ে পুরনো এই দুর্গাপুজো প্রায় ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। চৌধুরীদের কুলদেবতা শ্যামরাধিকা, তবুও বাৎসরিক নিয়মে হয় দুর্গাপুজো। ভৈরব চৌধুরীর হাত ধরে দুর্গাপুজোর সূচনা। মল্লরাজাদের মৃন্ময়ী মায়ের সঙ্গে এ পুজো জড়িত বিশেষ ভাবে। এলোকেশী মায়ের বোধন বসে কৃষ্ণানবমীতে। সেই দিন থেকে চণ্ডীপাঠ শুরু হয়। পুজোর বিধি কালিকাপুরাণ অনুসারী। সোনামুখীর এই অঞ্চলে বাগদি, বাউরি, থানদার প্রভৃতি অনুন্নত সম্প্রদায়ের বাস। এদেরই জমিদার ছিলেন চৌধুরীরা। এলোকেশী মায়ের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
চৌধুরীদের এক পূর্বপুরুষ কাশীনাথ চৌধুরী ছিলেন ধর্মপ্রাণ মাতৃভক্ত। বিষ্ণুপুরে তখন বীর হাম্বিরের পুত্র গোপাল সিংহের রাজত্ব। বীর হাম্বির বৈষ্ণব হওয়ায় নিয়ম জারি করেছিলেন, রাজ্যে কোথাও বলি হবে না। কাশীনাথ এ নিয়ম মানতে পারেননি। ছাগবলি দিয়ে সেই মস্তক ও দেহ নিয়ে বিষ্ণুপুর রাজদরবারে উপস্থিত হন। সঙ্গে বাজনা বাজিয়ে যান প্রজারা। কাশীনাথ বলির শাস্তি মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত হন। কিন্তু রাজা তাঁর ধর্মপরায়ণতায় খুশি হয়ে চৌধুরীদের জমিদারি দান করেন।
এলোকেশী মায়ের মূর্তি একচালার, নানা ছবিতে অলঙ্কৃত। মায়ের পরনে কোনও কৃত্রিম জিনিস নেই। যেমন শাড়ি, গয়না, শোলা বা প্লাস্টিকের মালা, এমনকি মুকুটও থাকে না। পরিবর্তে লাল ওড়নায় ঢাকা থাকে তিন দেবীর মস্তক। গণেশ-কার্তিকের মাথা অনাবৃত থাকে। অনেক বছর আগে বলিপ্রথা উঠে গেছে। তবে স্বর্ণময়ী মায়ের মন্দিরে নবমীর দিন একটি ছাগবলি দেওয়া হয়। মাষকলাই বলি হয়। এলোকেশী মায়ের ভোগ সম্পূর্ণ নিরামিষ। থাকে সাদা ভাত, ভাজা, পোলাও, ঘি-ভাত। অষ্টমীতে লুচিভোগ। এখনও এ বাড়ি থেকে প্রসাদ বিতরণ করা হয় অঞ্চলবাসীর মধ্যে।
চৌধুরীদের পুজোর ভার আজ মুখোপাধ্যায় পরিবারে চলে এসেছে। কয়েক পুরুষ আগে চৌধুরীদের বংশে কোনও পুত্রসন্তান না থাকায় দৌহিত্র বংশে আসে পুজোর ভার। সেই থেকে দায়িত্ব ও ব্যয়ভার বহন করে আসছেন মুখোপাধ্যায়রা।
সোনামুখীর ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে বেলিয়াতোড় গ্রাম। এটি বাঁকুড়ার পঞ্চায়েত অঞ্চলভুক্ত। গ্রামের মাঝখানে বাশুলী দেবীর ছোট্ট মন্দির। বাশুলী শব্দটি বিশালাক্ষীর অপভ্রংশ। দেবী বাশুলী দুর্গারই এক রূপ। বেলিয়াতোড়ের নামডাক প্রখ্যাত চিত্রকর যামিনী রায়ের জন্মস্থান হিসেবে। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য রায় ও বসন্ত রায়ের বংশধর তিনি। বসন্ত রায়ের সংগৃহীত, বড়ু চণ্ডীদাস লিখিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুঁথি আবিষ্কার হয়েছে এখানেই। আজও রায়বাড়ির অভিনব দুর্গাপুজো দেখতে আসেন দূরদূরান্তের মানুষ। এঁদের মন্দিরের নাম বড়মেলা। দুর্গার মুখমণ্ডল পুজো হয় এঁদের। দু’পাশে দেওয়ালে আঁকা থাকে পুত্র-কন্যার অবয়ব। কিন্তু রায়বাড়ি ছাড়াও অনেক পুজোর সাক্ষী বেলিয়াতোড়।
পাঁচবাড়ির পুজো
বেলিয়াতোড়ের সবচেয়ে সুন্দর, সযত্নলালিত দালানে পুজো হয় পাঁচবাড়ির দুর্গামায়ের। পাঁচ খিলানের সুউচ্চ দালান— ভিতরদালান ও বাহিরদালানে বিভক্ত। প্রতিমার কাঠামো সারা বছর রাখা থাকে এখানে। সামনে সুপ্রশস্ত নাটমন্দির। পাঁচটি ঘর মিলে ছিল পাঁচ বাড়ি। এঁদের আদিনিবাস পূর্ববঙ্গের খুলনা জেলা। সেখান থেকে বর্ধমান রাজার দরবারে এসে কর্মজীবন শুরু করেন কোনও পূর্বপুরুষ। কর্মদক্ষতায় খুশি হয়ে বিষ্ণুপুর রাজার দরবারে পাঠানো হয় তাঁকে। বিষ্ণুপুর রাজা সেনাবাহিনীর সেনাকর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করেন। প্রকৃত পদবি দে, বদলে যায় নিয়োগীতে। বেলিয়াতোড়ে বসত গড়ে তোলার পর পারিবারিক দুর্গাপুজো শুরু হয়। এঁদের উপর বিষ্ণুপুরের রাজার কৃপাদৃষ্টি ছিল, তাই এঁরাই একমাত্র সম্পূর্ণ দুর্গামূর্তি পুজো করার অনুমতি পান। বাকিরা শুধুমাত্র মায়ের মুখ পুজো করতে পারবেন, এমন শর্ত রাখা হয়।
জয়নারায়ণ নিয়োগীর হাতে এ পুজোর সূত্রপাত। এক সময় পাঁচবাড়ির পুজো ছিল প্রধান। পরে জয়নারায়ণের দুই পুত্রের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় পাঁচবাড়ি সাতবাড়িতে ভাগ হয়ে যায়, পুজোও ভাগ হয়ে যায়। জয়নারায়ণের পুত্র ভবতারণের বংশধর এখন পুজো এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
৩০০ বছর ধরে চলা পুজোর সাবেকি প্রতিমা গড়েন অঞ্চলের ছুতোর সম্প্রদায়। কারণ এখানে কোনও কুমোর থাকেন না। রথের দিন কাঠামোয় মাটি ছোঁয়ানো হয়। পাঁচবাড়ি ও সাতবাড়ির পুজো বহু বছর ধরে পৃথক হলেও নির্ঘণ্ট ও নিয়ম-নীতি এক। সপ্তমীর ভোরে দোলায় করে দুই বাড়ির নবপত্রিকা স্নানে যায়। মন্ত্রোচ্চারণ করেন পাঁচবাড়ির পুরোহিত। দেবীপুরাণের মন্ত্রে নবপত্রিকাদের স্নান হয়। পুজোর দিনগুলোয় ষোড়শোপচারে ভোগ দিয়ে হয় মায়ের আপ্যায়ন। আগে দশমীর দিন দুপুরে বিসর্জন হত। এখন একাদশীর দিন সারা হয় বিসর্জন পর্ব। তার আগে দেবীর পা ধোয়ানো, সিঁদুরদান চলে অঞ্চলবাসী ও পারিবারিক সদস্যদের উপস্থিতিতে।
সাতবাড়ির পুজো
পারিবারিক বিবাদ পাঁচবাড়ি থেকে আলাদা করে দেয় সাতবাড়িকে। সাত ঘর সদস্য নিয়ে সাতবাড়ি। শোনা যায়, সামান্য সুপুরি বলি নিয়ে বিবাদ বাধে দুই ভাইয়ে। ভাগ হলেও উত্তরসূরি হিসেবে পাঁচবাড়িকে মান্যতা দিয়ে আসছে সাতবাড়ি। পাঁচবাড়ির পুজো শুরু হলে তবেই সাতবাড়িতে পুজো শুরু হয়। ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এ নিয়ম। বলির প্রস্তুতি পূর্ণ হলে প্রথমে পাঁচবাড়িতে, তার পর সাতবাড়িতে বলি হয়। এখানে ছাঁচিকুমড়ো, আখ, শসা বলি হয়। নৈবেদ্যর মাপও নির্দিষ্ট: সপ্তমীতে সাত সের এক পোয়া, অষ্টমীতে ষোলো সের এক পোয়া, সন্ধিপুজোয় তেরো পোয়া, নবমীতে ন’সের এক পোয়া চালের নৈবেদ্য হয়।
মূর্তির গঠন একেবারে সাবেকি ধরনের। বিষ্ণুপুরের রাজার আনুকূল্যে কর্ম, বসত সম্ভব হয়েছিল, তাই নিয়ম করে প্রতি পুজোয় বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির মৃন্ময়ী মায়ের মন্দিরে ডালা যায়। জিতাষ্টমীর দিন ডালা নিয়ে যান নির্দিষ্ট বাহকেরা। সাজিয়ে দেওয়া হয় এক গৃহবধূর নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ। লালপেড়ে কোরা শাড়ি, হলুদ, আবাটা (মেথি), সিঁদুর, নোয়া, শাঁখা, আলতা, আলপনা দেওয়ার পঞ্চগুড়ি, ধূপ-ধুনো, প্রদীপের সলতে, ঘি, স্টোভের সলতে, আতপ চাল, আনাজ, নাড়ু, খাজা, বোঁদে, গুড়ের মেচা সন্দেশ ইত্যাদি। বিনিময়ে বিষ্ণুপুর থেকে মায়ের প্রসাদ আসে।
বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির সিংহবাহিনী
শারদীয় দুর্গোৎসবে দেখা প্রচলিত মূর্তির থেকে আলাদা এক মূর্তির দেখা মেলে বেলিয়াতোড়ের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে। মা এখানে একাকী, সিংহবাহনা, অসুরহন্তা। একচালায় দেবদেবীর সংযোজন অনেক পরে। বেদের সূক্তে, পুরাণের বর্ণনায় দেবী একাই অসুর দমনে আবির্ভূতা হয়েছিলেন। সেই রূপেই মা এখানে পূজিতা। পুজোর সঠিক বয়স জানা যায় না। বর্ধমান জেলার গাজীপুর গ্রামের ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় স্বপ্নে এমন রূপ প্রত্যক্ষ করেন। পুজো শুরু হয়। দালানে মূর্তি গড়ে ওঠে। বিসর্জনের পর কাঠামো তুলে আনা হয়। বেদিতে সারা বছর শাড়ি পরিয়ে রাখা হয়। নিত্যপুজো হয়। কালিকাপুরাণের মতে পুজো হয়, নবপত্রিকা স্নানে যায় দোলায় করে। পরিবারের মেয়েরা এই স্নান করিয়ে আনেন। পুজোর ক’দিন নিরামিষ অন্নভোগ মাকে নিবেদন করা হয়। এ বাড়িতে মায়ের ইচ্ছানুযায়ী এক বিশেষ টক রান্না করা হয়। মুলো, বেগুন, ঢেঁড়স, বড়ি ও তেঁতুল দিয়ে তৈরি এই টক বেশ অভিনব। সঙ্গে থাকে ভাত, আলুপোস্ত। একেবারে গ্রামবাংলার ঘরোয়া আহার। মাষকলাই বলি হয় সন্ধিক্ষণে ও নবমীতে। নবমীর দিনে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘এয়োজাত’। ওই দিন সধবা মহিলাদের সিঁদুর, আলতা, মুড়ি, মিষ্টি, পান, সুপুরি দিয়ে বরণ করা হয়। দশমীর দিন দোলায় করে মূর্তি ও নবপত্রিকা যাত্রা করে। পথে ছাড়া হয় জ্যান্ত চাং মাছ। সবাই সেই মাছ ধরার চেষ্টায় মাতে। বাংলার অনেক রীতির একটি এই মাছ ছাড়া।
নিয়োগী বাড়ির মুখপুজো
বেলিয়াতোড়ে মা দুর্গার মুখমণ্ডলের পুজো শুধু রায় পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়। নিয়োগী পরিবারেও মা আসেন এমন রূপেই। নিয়োগীদের আদি বাসভূমি বর্ধমােনর কুচুটকালেশ্বর গ্রামে। বিষ্ণুপুর রাজার অধীনে কর্মরত ছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষ। রাজাই তাদের বাঁকুড়ার এই অঞ্চলে জমিজমা দিয়ে দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োগ করেন। সেই থেকে এঁদেরও পদবি নিয়োগী। পরে বেলিয়াতোড়ের বাড়িতে দুর্গাপুজোর অনুমতি চেয়ে বিষ্ণুপুর রাজদরবারে পত্র পাঠানো হয়। কিন্তু বিষ্ণুপুরের রাজপরিবারে দশভুজা দুর্গার আরাধনা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে, তাই শুধুমাত্র মায়ের মুখটুকু পুজোর অনুমতি মেলে। পাঁচবাড়ি বা সাতবাড়ির নিয়োগীরা পূর্ণাবয়ব দুর্গামূর্তি পূজার অনুমতি পেলেও, এঁরা তা পাননি। সেই অনুসারে পুজো করে আসছেন নিয়োগী পরিবার, ৩৫৪ বছর ধরে। একই সঙ্গে গ্রামে বিষ্ণুমন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। শসা, আখ, চালকুমড়ো বলি হয়। বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজে, তাই এ পুজোয় ঢাক বাজানোর অনুমতি মেলেনি। এ বাড়ির পুজোয় বাজে শুধু কাঁসর-ঘণ্টা। বাড়ি সংলগ্ন দালানে মায়ের মুখ গড়া হয়। বেদিতে বসিয়ে চার পাশে সিংহাসনের মতো সাজানো হয়। তাতে থাকেন বাকি দেবদেবীরা। দোলায় করে বিসর্জন হয় স্থানীয় হীরা পুকুরে।
এমনই নানা স্বকীয়তার ঐতিহ্য নিয়ে চলে আসছে এই জেলার এই ক’টি দুর্গাপুজো। স্বপ্নাদেশ বা রাজাদেশ— নানা কারণে তৈরি হয়েছে বৈশিষ্ট্য। বিধি-সংস্কারের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে চিরকালের জন্যই জুড়ে গিয়েছে সেগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy