Advertisement
E-Paper

রাধার দেশে, কবিতার দেশে

বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারত, রাজপুতানা, সবই মিলেছে এই শহরে। তারই মধ্যে সমাহিত বাঙালির দর্শন ও কবিতা। রূপ, সনাতন থেকে কৃষ্ণদাস কবিরাজ— কে নেই? আর আজও আছেন শ্রীরাধিকা। দোলের বৃন্দাবন এই রকমই। গৌতম চক্রবর্তী বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারত, রাজপুতানা, সবই মিলেছে এই শহরে। তারই মধ্যে সমাহিত বাঙালির দর্শন ও কবিতা। রূপ, সনাতন থেকে কৃষ্ণদাস কবিরাজ— কে নেই? আর আজও আছেন শ্রীরাধিকা। দোলের বৃন্দাবন এই রকমই। গৌতম চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
ছবি: কুনাল বর্মণ

ছবি: কুনাল বর্মণ

রাধার বাড়িতে গত রবিবারেই দোল হয়ে গিয়েছে। বৃষভানু-নন্দিনী রাধার বাড়ি বৃন্দাবন থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে বরসানা গ্রামে। সেখানে ‘লাড্ডু হোলি’ দিয়ে শুরু উৎসব। মানে লাড্ডু ছুড়ে হোলিখেলা।

লাড্ডুর পর লাঠিই বা বাকি থাকে কেন? সোমবার ছিল সেখানে লাঠমার হোলি। মেয়েরা চার জনের দল তৈরি করে লাঠি দিয়ে ছেলেদের মারতে যায়, ছেলেরা ঢাল দিয়ে আত্মরক্ষা করে। ব্রজভূমির উৎসবে রাধাকৃষ্ণ মানে শুধু মাথুর, বিরহ নয়। মেয়েদের লাঠি ধরার অধিকার, এবং আরও অনেক কিছু।

উৎসব শুরু বরসানায়, লাঠমার হোলি পর দিনই সরে যায় ৭ কিমি দূরে নন্দগাঁওতে। শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতা নন্দরাজার রাজত্বে। এর পর উৎসব খাস বৃন্দাবনে, তানসেনের গুরু হরিদাস স্বামীর বাঁকেবিহারী মন্দিরে। বৃন্দাবন-বরসানা-নন্দগাঁও নিয়ে ব্রজভূমিই সেই জনপদ, যেখানে দোলের সপ্তাহ ব্যাপী একটি রুটিন থাকে।

উৎসব যেখানে আরম্ভ, বরসানার সেই রাধারানি মন্দিরটি চমকপ্রদ। পাথরে বাঁধানো ২২৫টি সিঁড়ি বেয়ে উঠে টিলার ওপর মন্দির। ইতালীয় মার্বেলের চক-মেলানো মেঝে, রাজপুত প্রাসাদের ছাঁচে জাফরি-কাটা ফটক, ছাদে ছত্রি। রাধা এখানে রাজপুত নারী। তার চেয়েও বড় কথা, মন্দিরের সিলিঙে, দেওয়ালে সখী বেশে, মালিনী বেশে কৃষ্ণের অজস্র ছবি। রাধাই সব, কৃষ্ণ নারীমাত্র। বরসানা মন্দিরে উঠতে উঠতে গাইডের কাছে রাধার ক্ষমতা নিয়ে একটি গল্প শুনেছিলাম। মথুরার রাজা কংস কৃষ্ণকে খুঁজতে খুঁজতে বরসানায় এসে, পা পিছলে এক পুকুরে পড়ে গেলেন। অতঃপর কংস মেয়ে হয়ে গেলেন, ওই ভাবে তাঁকে ছয় মাস থাকতে হল। রাধারানিই এখানে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন, শ্রীকৃষ্ণ নন। ‘আমরা সবাই এখানে গোপী, মানে রাধারানির সখী বলতে পারেন,’ বলেছিল মুশকো জোয়ান সেই গাইড। ছেলেরা নিজেকে এখানে রাধিকার সখী ভাবে! বিকল্প যৌনতার চমকপ্রদ পরিসর!

কিন্তু নারী-পুরুষ-বিকল্প যৌনতা ইত্যাদি আধুনিকতার ছাঁচে বরসানাকে ধরা যাবে না। অষ্টধাতুর তৈরি ছোট ছোট রাধামূর্তি নিয়ে মন্দিরে চলেছে মেয়েরা। মেয়েদের মন্দিরে প্রবেশ বারণ জাতীয় ফতোয়া নেই। শুনলাম, সাত কিমি দূরের যে নন্দগাঁও, সেখানকার ছেলেদের সঙ্গে বরসানার মেয়েদের বিয়ে হয় না। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, প্রেম? উত্তর এল, ‘প্রেম স্বাভাবিক, হতেই পারে। সেখানে বাধা দেবে কে? কিন্তু বিয়েটা হয় না।’ দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদ যখন প্রেম, ভ্যালেন্টাইন্স ডে সব কিছুর বিরুদ্ধে, বরসানা শেখাতে পারে অন্য ঐতিহ্য।

তার আগে, জানতে হবে রাধা কে! আয়ান ঘোষের স্ত্রী, তাঁর সঙ্গে কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে প্রাকৃত ভাষার কবি থেকে মিথিলার বিদ্যাপতি, বাংলার চণ্ডীদাস নানা কবিতা লিখেছেন। শ্রীচৈতন্যের পর গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা আবার রাধাভাবের সাধনা আরম্ভ করলেন। তাঁরা বললেন, রাধা আসলে স্বকীয়া। কৃষ্ণের থেকে আলাদা নন, বরং তাঁর অবিচ্ছেদ্য হ্লাদিনী শক্তি।

রূপ, সনাতন এবং শ্রীজীব গোস্বামীরা এই স্বকীয়া শক্তিতে বিশ্বাসী হলেও বৃন্দাবনের আর এক বৈষ্ণব দার্শনিক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ও তাঁর শিষ্য বলদেব বিদ্যাভূষণ বিশ্বাস করতেন উলটোটা। রাধা আসলে পরকীয়া। এক দিন বিশ্বনাথকে একা পেয়ে জীব গোস্বামীর দল লাঠি হাতে মারতে এল। বিশ্বনাথ জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, বলো তো, রাধার বাড়ি বরসানা আর কৃষ্ণের বাড়ি নন্দগাঁও। এই দুয়ের মাঝখানে কোন বন?’ লাঠিধারীরা উত্তর দিল, ‘সাকেত বন। রাধাকৃষ্ণের মিলনস্থল, সবাই জানে।’ বৈষ্ণব টীকাকারের পালটা প্রশ্ন, ‘রাধাকৃষ্ণের যদি স্বকীয়া প্রেম, তবে বরসানা বা নন্দগাঁও থাকলেই হত। মাঝখানে অভিসারের জন্য সাকেত বন কেন?’ বিরুদ্ধবাদীরা উত্তর দিতে না পেরে চলে গেল, স্বকীয়া-পরকীয়ার দ্বন্দ্ব আজ অবধি মিটল না।

গল্পটায় আরও একটা জিনিস আছে। এক দল বৈষ্ণবের লাঠি হাতে আর এক বৈষ্ণব টীকাকারকে মারতে আসা। মানে, ‘তৃণাদপি সুনীচেন, তরোরপি সহিষ্ণুনা’ আদর্শে সব সময় গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের জয় ঘটেনি। বৃন্দাবনেই আছে চৈতন্যশিষ্য সনাতন গোস্বামীর তৈরি মদনগোপাল মন্দির। আজও সেখানে কয়েক ঘর বাঙালি বিধবা থাকা-খাওয়ার ঠাঁই পান। বনমালী গোস্বামীর লেখা প্রাচীন এক হিন্দি গ্রন্থ জানাচ্ছে, সনাতন গোস্বামী মহাবনের পরশুরাম চৌবের থেকে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই বিগ্রহটি নিয়ে এসেছিলেন।

দু’বছর বাদে পাওয়া গেল আর একটি বিগ্রহ। সনাতনের দাদা রূপ গোস্বামীর তৈরি গোবিন্দজিউ-এর মন্দিরে বসল সেটি। রূপ গোস্বামী বৃন্দাবনের কোথাও সেই বিগ্রহ না পেয়ে ‘হা কৃষ্ণ’ বলে কাঁদছেন, এমন সময় এক ব্রজবাসী তাঁকে এক টিলায় নিয়ে এলেন। সকালবেলা এই টিলায় এসে এক গরু দাঁড়ায়, বাঁট থেকে ঝরঝরিয়ে এই গর্তে দুধ পড়ে। সনাতন আনন্দে মূর্ছিত হলেন। ওখানেই তো গোবিন্দদেব! উপকথায় সাধারণত গরু দুধ দেয় শিবলিঙ্গে, এখানে গোবিন্দদেব। বারাণসীর বিশ্বনাথধামের মতো এখানেও আছে রূপ, সনাতনের মন্দির, রাধাকৃষ্ণের নিধুবন নিয়ে অষ্টকোশী পরিক্রমা। শৈব, বৈষ্ণব কে কার থেকে ধার করেছে, বলা মুশকিল। ধর্ম এ দেশে কখনও হিন্দু বনাম মুসলিম সরলরেখায় হাঁটেনি। প্রাক-আধুনিক যুগে হিন্দু গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘাত ছিল, সমন্বয়ও ছিল।

বৃন্দাবনকে তাই শুধু গৌড়ীয় বৈষ্ণবের দোলযাত্রা, রাসপূর্ণিমা ও ঝুলনের মহাস্থান বলে দেখলে চলবে না। বৃন্দাবন এমন এক জনপদ, যেখানে রঙবেরঙের চেকার বোর্ডের মতো দক্ষিণ ভারত, ওড়িশা, বাংলা, রাজস্থানের অনেক ঐতিহ্য একাকার হয়ে যায়, মিলেমিশে ছড়িয়ে পড়ে।

বন মানে, জনপদ। লাঠাবন, মধুবন ইত্যাদি অনেক বন ছিল। সবচেয়ে সুরম্য বনটি বৃন্দার, মানে, শ্রীরাধিকার। তারই নাম বৃন্দাবন। জমি, জনপদে সর্বদা পৌরুষী পাট্টা চলে না।

কিন্তু রাধা কি এক নামেই আসমুদ্রহিমাচল এই ভারতে রয়ে যান? রূপ গোস্বামীর প্রতিষ্ঠিত গোবিন্দদেব মন্দির থেকে একটু এগিয়ে রঙ্গনাথজীর মন্দির। সামনে তামার তৈরি, ৬০ ফুট খাম্বা, সোনার জলে গিল্টি করা। গাইডরা এটিকে ‘সোনার তালগাছ’ বলেন। এই তালগাছের পাশেই রঙ্গনাথ মন্দির।

বহু কাল আগে দক্ষিণ ভারতে বিষ্ণুচিৎ নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর মেয়ে গোদাম্মা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি অনুরক্ত। বৃন্দাবনে আসার জন্য বাবার কাছে প্রতিনিয়ত বায়না করেন। কিন্তু বৃন্দাবন অনেক দূর। রাজা তাই নিজের রাজ্যেই তৈরি করলেন শ্রীরঙ্গনাথের মন্দির। গোদাম্মাও বিয়ে না করে আজীবন সেই দেবসেবায় কাটিয়ে দিলেন। ভবিষ্যতে এই রঙ্গনাথের নামেই রাজধানীটির নাম হয় শ্রীরঙ্গপত্তনম্, টিপু সুলতানের রাজধানী।

হৃদি বৃন্দাবনে রঙ্গনাথ আর গোদাম্মা আজ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পুজো পান। পূজারীরা দাক্ষিণাত্যের রামানুজী সম্প্রদায়ের বৈষ্ণব। রসকলিটি অন্য রকম। কপালে দুটো সাদা রেখা, নীচের দিকে একটা রেখা দিয়ে দুটো সংযুক্ত। মাঝখানে লাল চন্দনের আর একটি রেখা, এটি শ্রী বা লক্ষ্মীর চিহ্ন। ব্রাহ্মণের পরিচিতি পইতেতে আর বৈষ্ণবের তিলকে।

বৃন্দাবনের দক্ষিণ ভারত কী আর এতটুকু? শ্রীচৈতন্য দাক্ষিণাত্যে তীর্থ করতে গিয়ে রামানুজ সম্প্রদায়ের বেঙ্কটভট্টের বাড়িতে তিন মাস ছিলেন। বেঙ্কটভট্টের ছেলে গোপালভট্ট পরে আবার চৈতন্যের শিষ্যত্ব নেন। বৃন্দাবনে আজও আছে তাঁর রাধারমণ মূর্তি। বংশীধারী, ত্রিভঙ্গমুরলী কৃষ্ণ। পাশে মুকুট, ওটি রাধার প্রতিভূ। বৃন্দাবন এখানেই অনন্য। শুধু অশ্বমেধ যজ্ঞের সময় পুরুষসিংহ নির্বাসিত স্ত্রীর স্বর্ণপ্রতিভূ তৈরি করে সম্মান দেবেন, এমন একরৈখিক গতে হিন্দুধর্ম চলে না। এখানে অনুরক্তারও সমান অধিকার।

বৃন্দাবনের এই দক্ষিণী আধিপত্য প্রায় একার চেষ্টায় বদলে দিলেন নবদ্বীপের বাঙালি। শ্রীচৈতন্যের ভক্তি, দর্শন, সামাজিক বিপ্লব নিয়ে দোলপূর্ণিমার সময় এই বঙ্গে যত না কথা হয়, তার সিকিও হয় না মধ্যযুগে তাঁর ‘প্রত্নতাত্ত্বিক বিপ্লব’ নিয়ে। চৈতন্য রূপ-সনাতনদের কী বলছেন? চরিতামৃতের ভাষায়, ‘ব্রজে যাই রসশাস্ত্র কর নিরূপণ/ লুপ্ত সব তীর্থ তার করিহ প্রচারণ।’ বৃন্দাবন তখন জঙ্গল, চৈতন্যের প্রেরণাতেই গৌড়ীয় বৈষ্ণবরা খুঁজে খুঁজে ঘটালেন তার পুনর্নির্মাণ।

এই প্রচারকার্যটি আজও হতভম্ব করার মতো। মদনমোহন মন্দিরের পিছনে সনাতন গোস্বামীর সমাধির অদূরে ‘গ্রন্থসমাধি’। রূপ, সনাতন, শ্রীজীব প্রমুখ ষড়গোস্বামীর লেখা ভূর্জপত্রের পুঁথি এখানে সমাধিস্থ। লিখিত শব্দের এই সমাধিতে কি নেই অনন্য এক পুস্তকপ্রেম?

বাঙালির দর্শন, কবিতা সবই এখানে সমাহিত। রাধাদামোদর মন্দিরের এক দিকে রূপ গোস্বামীর সমাধি, উলটো দিকে শ্রীজীব গোস্বামী ও ‘চরিতামৃত’ স্রষ্টা কৃষ্ণদাস কবিরাজ। মুরারি গুপ্ত এবং যাঁদের কথা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে পড়তে হয়, তাঁদের সকলের পুষ্পসমাধি খুঁজে পাওয়া যাবে এখানে। বৃন্দাবন শুধু হোলির শহর নয়, উনিশ শতকে নবজাগরণেরও ঢের আগে বাঙালির অন্য এক জাগরণের নির্ঘোষ।

কূপমণ্ডূকের নয়, এই জাগরণ বৃহৎ বাঙালির। চৈতন্যের সময়েই বৃন্দাবনে আসছেন দাক্ষিণাত্যের শুদ্ধাদ্বৈতবাদ মতের প্রবক্তা বল্লভাচার্য। বৈষ্ণব বলতে তো কেবল শ্রীচৈতন্য নন। রামানুজ, মধ্ব অনেকেই। এই রামানুজ-চৈতন্য-বল্লভ, প্রতিটি বৈষ্ণব মতই যে শহরে চকমকি পাথরের মতো আলো ছড়িয়েছে, তারই নাম বৃন্দাবন।

মুঘল আমলের শেষ দিকে এই আলো রক্ষা করেছিল রাজপুতানা। আওরঙ্গজেবের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বৃন্দাবনের গোপীনাথ, মদনমোহন, রাধাবিনোদ মূর্তিকে জয়পুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বৃন্দাবনে আজ তাঁদের প্রতিরূপ।

আর রাধা? চৈতন্যশিষ্যদের আমলেও বৃন্দাবনে পাওয়া যায়নি রাধামূর্তি। পুরীতে জগন্নাথের মন্দিরে লক্ষ্মী নামে একটি মূর্তি ছিল, রূপ গোস্বামীর গোবিন্দ আবিষ্কারের পর সেই লক্ষ্মীকে রাধা নাম দিয়ে বৃন্দাবনে পাঠানো হল। ‘ভক্তিরত্নাকর’ বইয়ে নরহরি চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘শ্রীরাধিকা ক্ষেত্র হইতে বৃন্দাবনে গেলা/ গৌড় উৎকলাদি দেশে সকলে জানিলা।’ যে জনপদে রাধামূর্তির অস্তিত্ব ছিল না, বাঙালির সৃজন তাকেই করে তুলল জনজীবনের নায়িকা।

বৃন্দাবনে রাধাকে পেয়েছিলাম দু’বার। প্রথম বার ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে। বৃন্দাবনে কাক ডাকে না, হোটেলের লোকেরা বলাবলি করছিলেন, ‘গাছে গাছে যা বাঁদর, দেখছেন তো। সেই ভয়ে এখানে কাক ডাকে না।’ এই স্বভাববুদ্ধি সত্য, তবু শেষ সত্য নয়। ভক্ত-কল্পনা বরং ঢের ভাল: কেলিক্লান্তাকমলিনীদের প্রভাত-নিদ্রাভঙ্গ ভয়ে এখানে কাক ডাকে না।

তাই অহেতুক স্বকীয়া-পরকীয়া ভেবে কী হবে? প্রেম মানে যেন আজও বৈষ্ণব কবিতা: ‘তোমার আমার একই হিয়া ভাল সে জানয়ে আমি/ হিয়ার হৈতে বাহির হৈয়া কী রূপে আছিলা তুমি।’

বরসানা থেকে সন্ধের অন্ধকারে বৃন্দাবনে ফিরতে ফিরতে দ্বিতীয় বার আবিষ্কার করলাম রাধাকে। ড্রাইভারকে বলেছিলাম, অক্রুরঘাট যাব। তিনি নারাজ, ‘কী যাবেন? জঙ্গল, কিচ্ছু নেই। রাস্তাও খারাপ।’

সত্যিই জঙ্গল, ছিনতাইবাজের উপদ্রব। যমুনা সরে গিয়েছে তিন কিমি দূরে। এই সেই অক্রুরঘাট? কংসের আদেশে কৃষ্ণকে দ্রুতগামী রথে বৃন্দাবন থেকে মথুরা নিয়ে যেতে এসেছেন অক্রুর। এই অক্রুরঘাটে থামলেন, সন্ধ্যাহ্নিক করতে করতে চোখে পড়ল অভাবিত এক দৃশ্য। বালক কৃষ্ণ ক্রমশ চতুর্ভুজ হয়ে যাচ্ছেন, বড় কাজের জন্য তিনি প্রস্তুত। এর পর মথুরা, দ্বারকা, কুরুক্ষেত্র— কোত্থাও আটকাবেন না তিনি।

শুধু রাধা এখানেই রয়ে যাবেন। মনের আয়নায় আজও তাঁকে দেখা যায়।

Holi Celebration Vrindaban
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy