E-Paper

শীতের শিউলিরা

খেজুর গাছ ঝুরে রসের আহ্বান যেন এক সাধনা। গাছের রসস্থলী চেঁছে বেঁধে দিতে হবে হাঁড়ি। সারা রাত ধরে আপাত-নীরস কণ্টকময় তরু তার অমৃতধারা বিন্দু বিন্দু জমা করবে মৃত্তিকাভাণ্ডে। যে অমৃত জ্বাল দিয়ে তৈরি হবে নলেন গুড়। এই মোক্ষপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যেই শীতের কয়েকটি মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন খেজুর রস-সংগ্রাহক বা শিউলিরা। দীপক দাস

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ১০:৪২
ছবি: কুনাল বর্মণ।

ছবি: কুনাল বর্মণ।

একটা উনুন। লম্বাটে, দু’মুখো। উনুনের উপরে অ্যালুমিনিয়ামের আয়তাকার পাত্র। ওটা তাপাল। ছোট-বড় বেশ কয়েকটা হাঁড়ি উনুনের পাশে। রসের হাঁড়ি। তাপালে তখনও ঢালা হয়নি রস। ঢালা হয়নি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। ঢালা হয়েছে একটা গেলাসে। সেটা হাতে নিয়ে তাপালের পাশেই দাঁড়িয়ে একটা ছেলে। মাথায় মায়ের বুনে দেওয়া উলের টুপি। গায়ে মায়ের হাতেরই সোয়েটার। পৌষের ঠান্ডা সেঁধোবার উপায় নেই। তবুও কেঁপে যাচ্ছে ছেলেটা। গেলাসে এক চুমুক দিতেই সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে গিয়েছে। এখন হলে ছেলেটা টিভিতে দেখা বিজ্ঞাপনী হিন্দি বুলিতে বলত, দাঁতে ‘ঝনঝনাহট’। কিন্তু সুদূর ‘ঝনঝনাহট’-পূর্ব যুগে তার মনে হচ্ছিল, হাতে যেন এক গেলাস হিমশীতল দধি ধরিয়ে দিয়েছে কেউ। ওদের বাড়ি যেখানে, সেখানকার বাজারের মিষ্টির দোকানগুলোয় তখন ফ্রিজ এসেছে সবে। দোকানের গায়ে লেখা হচ্ছে, ‘এখানে হিমশীতল দধি পাওয়া যায়’। এখন গেলাস-ভরা হিমশীতল রস নিয়ে সে কী করে! দাদু যে জিজ্ঞাসা করছে, “খাইতি না!”

সূর্য আড়মোড়া ভেঙেছে সবে। ছেঁড়া-ছেঁড়া কুয়াশার ফাঁক গলে গলে ছোলা চাষের জমির পাশ দিয়ে দু’টো ছেলে এগিয়ে আসছিল। ওই তাপালের দিকে। দু’হাতে তাদের রসের হাঁড়ি। তারাও কাঁপছিল। শীতে। গায়ে তাদের পাতলা জামা। শিউলি তাড়া দিচ্ছিল ছেলে দু’টোকে। এখনও কিছু গাছের হাঁড়ি নামানো বাকি। তার পর গাছ-মালিককে ভাগ দিয়ে রস জ্বাল দেওয়ার পালা। বেলা হয়ে যাবে হাটে গুড় নিয়ে যেতে।

জায়গাটা ভারী স্নেহময়। ষোড়শ শতকে এতদঞ্চলের এক স্নেহময়ের পরশে বাংলায় ভক্তিরসের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। স্নেহময়ের চিহ্ন জড়িয়ে ইতিউতি। কোথাও তিনি উপনয়নের পরে মাঙ্গন করেছিলেন। গ্রামটি নিজের নামে জড়িয়ে নিয়েছে সে ঘটনা। কোনও গ্রাম তাঁর বিদ্যা অর্জনের নগর। এখানকার মাটিও বড় স্নেহময়। এক সময়ে নাকি গঙ্গা এই এলাকা দিয়েই বইত। এখন সরে গিয়েছে অনেকটা দূরে। কিন্তু এক সময়ে যে বইত, সে প্রমাণ বললেই দিয়ে দেবে লোকে। গাঁয়ের প্রাচীন বটগাছকে দেখিয়ে বলবে, এখানেই তো ছিল জহ্নুমুনির আশ্রম। সেই যে গঙ্গা তাঁর আশ্রম ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল আর মুনি রেগে গিয়ে…। স্নেহময় এই মাটি আশ্রয় দিয়েছিল কত জনকে। তারা সব শিকড়হারা। কারও শিকড় কেটে দেওয়া হয়েছিল। কেউ কাটার আশঙ্কায় দলা পাকিয়ে ওঠা কান্নাটাকে গিলে শিকড় ছিঁড়েছিলেন নিজেই। সকলকে বুকে টেনে নিয়েছিল এখানকার মাটি। ষোড়শ শতকে সেই স্নেহময় যেমন বুকে টেনে নিয়েছিলেন ‘আদ্বিজচণ্ডাল’কে।

আহরণ: রস পাড়তে গাছে উঠছেন অভিজ্ঞ শিউলি।

আহরণ: রস পাড়তে গাছে উঠছেন অভিজ্ঞ শিউলি।

উর্বর মাটিতে ফসল হয়। টুকরো টুকরো জমির সেই ফসলে তো সারা বছর চলে না। কমবয়সি ছেলেরা নানা কাজ করে। তাদেরই কেউ কেউ শিখে নেয় খেজুর গাছ কাটা। হয়ে ওঠে পাকা শিউলি। তার গুড়শালে লোকে টিন হাঁড়ি নিয়ে উবু হয়ে বসে থাকে। তাপাল থেকে গুড় ঢালার ফুরসত হয় না। লোকে নিয়ে হাটে বাজারে ছোটে। তাতেও কি অভাব যায়! মাস চারেকের কাজ যে! ছেলেদের শীতের পোশাক কিনে দিতে পারে না সে। শীতের ভোরে ঠকঠকিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছেলেগুলোকে রসের হাঁড়ি বওয়াতে হয়। না হলে একা পেরে উঠবে না যে! গাছের মালিকদের রসের ভাগ দিয়ে হাঁড়িগুলো নিয়ে ফেলতে হবে নিজের গুড়শালে। রস জ্বাল দিতে যাবে অনেকটা সময়। এখানে তো তার মতো আরও শিউলি রয়েছে। অশ্বিনী… মণীন্দ্র… ত্রিপুর…। সকলেই তার মতো শিকড়ছেঁড়া। নলেন গুড়ের চাহিদা প্রচুর। ভাল, কম ভাল কোনও গুড়ই ফেরত আসে না বাজার থেকে। সব বিক্রি হয়ে যায়। তাই নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে হয় না। গাছ জমা দেওয়ার সময়ে একটু-আধটু হয়তো টানাটানি হল। আপসে মীমাংসাও হয়ে যায় সে সব।

কাটের নেশায়

ভারী মনখারাপ নৃপেন ঘোষের। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হয়ে গেল, এখনও গাছ ঝুরতে পারলেন না। পারতেনও না। একে বর্ষাটা লাফাতে লাফাতে পুজোর গায়ে এসে ঠেকেছে এ বার। তার উপর কথায় কথায় নিম্নচাপ। দেরি এমনিতেই হয়েছিল। প্রকৃতির একটু দয়ামায়া হল তো বিগড়ে গেল পরিবার। ছেলে আর বৌ বলেছে, আর গাছ ঝুরতে হবে না। নৃপেনের বাড়ি ফুলিয়ার বয়ড়ায়। কবি কৃত্তিবাস ওঝার ভিটের দিকে যেতে যে তোরণ তৈরি হয়েছে, তার ঠিক উল্টো দিকে। বছর সাতাত্তর বয়স। এলাকার অভিজ্ঞ শিউলিদের মধ্যে অন্যতম। এই বয়সে ছেলে-বৌ গাছে উঠতে মানা করেছে। সে কথা মেনেছেন নৃপেন। কিন্তু মনটা কেমন যেন করছে। মাছ ধরা যেমন নেশা, তেমনই শীতে খেজুর গাছ কাটা। না কাটতে পারলে মনটা ফসফস করে। কেউ কেউ একটা-দু’টো গাছ ঝুরেছে গ্রামে। নৃপেনও লোক দিয়ে একটা গাছ কাটিয়েছেন। গাছ কাটা দেখেও কিছুটা তর হয় মন।

দোষ দেওয়া যায় না ছেলে-বৌকে। খেজুর রসের আহ্বান একটা সাধনা। কিন্তু ভগীরথকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়। ছোটখাটো একটা যুদ্ধই সেটা। অস্ত্রশস্ত্র লাগে সত্যি সত্যি। সে অস্ত্রসজ্জা দশভুজার মতোই— ‘বিষ্ণু দিলেন চক্র… পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল… কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ’। শিউলির রস-যুদ্ধের অস্ত্রসম্ভার আসে কামার, কুমোর, দড়িওয়ালা কত বাড়ি থেকে। কামার দেয় কোবেরদা, ছেনদা, বাটালি। কোবেরদা আসলে কোপেরদা। লোকমুখে উচ্চারণ পাল্টে গিয়েছে। কোবেরদার হাঁই-হাঁই করা কোপে খেজুর গাছের ডেগো কেটে নীচে ফেলেন শিউলি। গাছের মুড়োর কাছাকাছি রসস্থলী করা হবে। পরিষ্কার করে নিতে হবে কোবেরদা দিয়ে। ছেনদা দিয়ে চাঁছা হয় রসস্থলী। কার্তিক পড়লেই অস্ত্র দু’টোতে শান দিয়ে ঝকঝকে করে রাখেন শিউলিরা। অস্ত্র থাকলে তা রাখার জায়গাও থাকে। তরবারির যেমন কোষ, তিরের তূণ, শিউলিদের তেমন খালোই। বাঁশ চেঁছে তৈরি হয়। কিনতে পাওয়া যায় বীরনগর হাটে। নৃপেনরা সেখান থেকেই কেনেন।

খালোই জিনিসটা এক সময়ে বেশ পছন্দ ছিল। তখন দূরদর্শনে রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’ টিআরপির চুড়োয়। দূরদর্শনে তির-ধনুকের ধুন্ধুমারে কত কিশোর যে বীরপুঙ্গব হয়ে উঠেছিল! কত লঙ্কাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল পাড়ার মাঠে, জমির আলে, নতুন ধানের গাদা দেওয়া খামারে! কত ডটপেনের ঢাকনা যে পাটকাঠি, কঞ্চির আগায় বসে তিরের ফলা হয়েছিল। আগায় ভারী কিছু থাকলে পাটকাটির তির সাঁইসাঁই ছোটে। যায় অনেক দূরে। শত্রুপক্ষের শিবির পর্যন্ত। কিন্তু কিশোর রাম-লক্ষ্মণের মা-বাবা সেই বীররসে মোটেও প্রভাবিত ছিলেন না। প্রথমে পেনের ঢাকনা কোথায় সে কৈফিয়ত দাবি। তার পর ঢাকনা হারিয়ে যাওয়া পেনের খেসারত আদায়। সেই দমাদ্দম দাওয়াই দমাতে পারত না তাদের। পরদিন আবার তির-ধনুক নিয়ে বেরিয়ে পড়া শত্রুপক্ষের সন্ধানে। মুশকিল একটাই, তির রাখার জায়গা নেই। পিঠে গেঞ্জির ভিতরে গুঁজে রাখতে হয়। তা ভারী ঝঞ্ঝাটের। স্যান্ডো গেঞ্জি হাফ প্যান্টে গুঁজে পরতে হয়। একটা তূণ হলে লড়াইটা আর একটু জমত! খালোই অনেকটা তূণের মতোই। অঞ্চলভেদে তার নানা আকার। কোথাও সিড়িঙ্গে, কোথাও একটু বেশি গোলাকার পেটমোটা। মামার বাড়িতে শিউলিদাদুর খালোই ছিল দ্বিতীয় ধরনের। সেটাকে তূণ করার ইচ্ছে হয়েছিল। মামাদের পাট চাষ হত। ডাঁই করে রাখা থাকত পাটকাঠি। তিরের অভাব হত না। সমস্যাটা তির রাখার। তুতো নাতির দাবি শিউলিদাদু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। মামা-মাসিরা বীর বোনপোর যুদ্ধাগ্রহে গড়িয়ে পড়েছিল হেসে।

আন্দু তো হাতি বাঁধার শিকল। নতুন এক কথায় প্রকাশ শেখার পরে কাছিগুলোও যেন আন্দু মনে হত। ও দিয়ে বাঁধা যেতে পারে গজরাজের পা। ওগুলো সব গাছি বাঁধার কাছি। জম্পেশ ধরনের। গাছিদের খাড়া রাখে গাছের উপরে, গাছের মতো। এখন তো নাইলনের হয়। পাটেরও হতে পারে। বাড়িতে চাষের পাট থাকলে, সময় মিললে পাকিয়ে নেন শিউলিরা। হুগলি জেলার বলাগড়ের গ্রাম তারাপুর। এখানকার শিউলিরা পাকিয়ে নেন কাছি। না হলে কেনা।

কাছি ছাড়াও দড়িদড়া লাগে শিউলিদের। কোমরের কাছি তো গাছের সঙ্গে আটকে রাখল। কিন্তু পা? কুয়াশাভেজা গাছের গায়ে পা হড়কে যেতে পারে। বা এবড়োখেবড়ো গাছের গায়ে পা দিয়ে দাঁড়ানোও বেশ কষ্টের। লাগবে পায়ের দড়ি। গাছি কাছি দিয়ে নিজেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পায়ের দড়িতে ভর দিয়ে রসের হাঁড়ি বাঁধবেন।

তার আগে একটা দড়ি দিয়ে কোমরের সঙ্গে খালোই বেঁধে নিয়েছেন।

‘রসের হাঁড়ি’তে যে শব্দ-রস; রসের টিন, প্লাস্টিকের হাঁড়িতে তা তেমন জমে না। রসের গুণমানও ভাল থাকে না। কিন্তু কোনও কোনও জায়গার শিউলিরা বাধ্য হন গাছে টিন বা প্লাস্টিকের হাঁড়ি বাঁধতে। মাটির হাঁড়ি ছেলেছোকরারা ভেঙে দেয়। কখনও চেয়ে মাগনায় রস না পাওয়ার রাগে, কখনও আমোদে। হাঁড়ি কেনারও অভিজ্ঞতা দরকার হয়। ঝোরার সাত দিন পর গাছ চাঁছা হয়েছে। তৈরি হয়ে গিয়েছে রসস্থলী। সাত আট দিন পরে আবার এক বার চাঁছা। ঘামতে শুরু করেছে রসস্থলী। পাকা শিউলি বা গাছিরা ওই ঘামা দেখে বুঝে যান গাছে রস কয়েক দিনে আসবে, নাকি আরও ক’দিন চাঁছতে হবে। রস হলে কতটা হবে। সেই আন্দাজ অনুযায়ী হাঁড়ি কেনা। পাঁচ কেজি বা তিন কেজির। যে গাছে রস কম, তাতে বড় হাঁড়ি বেঁধে লাভ নেই। বাজার বা কুমোরবাড়ি থেকে হাঁড়ি আনতে হবে তেমন মাপের।

লোহালক্কড়, মাটি, পাটের পরে বাঁশও শিউলিদের রসাস্ত্র। বাঁশ কেটে তৈরি হবে নলি আর গোঁজ। সব বাঁশে হবে না নলি। ছোট ছোট গাঁটের কাঁটা বাঁশ হলে বেশি ভাল। গাছ-পিছু দু’টো গোঁজ আর একটা নলি। শিউলির হাতে যত গাছ, নলি-গোঁজ তৈরি হবে তত। গোঁজ দু’টো লাগে গাছে রসের হাঁড়ি বাঁধতে। ঠুকে রসস্থলীর দু’পাশে পুঁতে দিতে হয়। আর নলি? তাকে পোঁতা নয়, স্থাপন করতে হয়। স্থাপন হবে ত্রিবেণী সঙ্গমে। গাছের রস নিঃসরণে শিউলিরা রসস্থলীতে পাশাপাশি দু’টো কাট তৈরি করেন। সারা মরসুম ওই কাটের অংশ চেঁছে হাঁড়ি বাঁধা হয়। যত বার হাঁড়ি লাগানো হবে কাটে, ছেনদা চালাতে হবে তত বার। চালানো নয়। ছেনদা বোলাতে হবে। অতি কোমল ভাবে। এমন ভাবে যাতে গাছ বুঝতে না পারে। ছেনদায় কাটের অংশ উঠে আসবে ‘রসুনের খোসার মতো পাতলা’।

রসস্থলীর দুই কাট যেখানে এসে মেলে, সেখানে পোঁতা হয় নলি। ত্রিবেণীসঙ্গম সম্পূর্ণ। নলি স্থাপন করতে হয় দেবদেবীর ঘটের মতো ‘নিখুঁত’ ভাবে। একটু ভুলভাল হলেই রস আর নলিতে আসবে না। গাছের গা বেয়ে চুঁইয়ে পড়ে নষ্ট হবে।গাছে হাঁড়ি লাগানোর পরের ভোরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সারা রাত ধরে আপাত-নীরস কণ্টকময় তরু তার অন্তঃসলিলা অমৃতধারা বিন্দু বিন্দু জমা করেছে মৃত্তিকাভাণ্ডে। যে অমৃত জ্বাল দিয়ে তৈরি হবে নলেন গুড়।না, সব খেজুরের গুড়ই নলেন নয়।

শিউলি শাখা

জাঁকিয়ে শীত পড়লে কষ্ট হয়। রাত যত বাড়ে, মাটি যত ঠান্ডা হয়, হিমেল হাওয়া ঠিক খুঁজে নেয় পালাঘরের ফাঁকফোকর। ফিরফির করে ঢুকতে থাকে হাওয়া। খেজুরপাতার তৈরি পালাঘর। ফাঁক থাকে এমনিতেই। সেই ফাঁক ঢাকা দিতে ভিতর দিয়ে পলিথিন টাঙানো থাকে বটে। কিন্তু শীতের হাওয়া বড় বেয়াড়া। ছুঁচের মতো ফুটোতেও অস্বস্তি বাড়ায়। খড়ের কুঁড়ে করলে হয়তো কিছুটা স্বস্তি হত। তাতে খরচ বাড়ত। খড়ের দাম বেশ। তা রস জ্বাল দিতে রেখে দিতে হয়। বেশি শীতে রস ভাল হয়, গুড়ও। ওটাই শীতের শান্তি। হাড়-কাঁপানো ঠান্ডার সঙ্গে যোঝা তো ভাল গুড়ের জন্যই।

স্থানীয় শিউলিদের এই সমস্যা নেই। তাঁদের গুড়শাল বাড়িতে। গাছগুলো বাড়ির কাছাকাছি। সমস্যা হয় যাযাবর শিউলিদের। এঁদের কাজ-কারবার ভিন্ জেলায় বা জেলার ভিন্ প্রান্তে। বর্ধমান, নদিয়া, চব্বিশ পরগনা, বাঁকুড়ায় স্থানীয় শিউলি প্রচুর। হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, বাঁকুড়ায় কার্তিকের শেষ দিক থেকে জায়গায় জায়গায় তৈরি হতে থাকে পালাঘর। খেজুর গাছের পাতায় তৈরি। কোথাও বা খড়ের কুঁড়ে। যাযাবর শিউলিদের সাময়িক আস্তানা।

হুগলির দ্বীপায় গুড়শাল করেছেন শম্ভু পয়ড়া। সঙ্গে এনেছেন ছেলে আর দুই কাজের ছোকরাকে। ভাই মদন আর স্বপন গিয়েছেন হাওড়ার দিকে। এঁরা পূর্ব মেদিনীপুরের হলুদবাড়ি কুঞ্জপুরের লোক। বাবা ভাকু পয়ড়াও শিউলি ছিলেন। টাঙ্গি, হাঁসুয়া, ঠোঙা নিয়ে কাকদ্বীপে পালাঘরের আস্তানা গাড়তেন শীতে। অঞ্চলভেদে পরিবর্তন হয় শিউলিদের অস্ত্রের। কোবেরদার কাজ করে টাঙ্গি। এটা দিয়েই পাউচি, মানে খোঁচাগুলো কেটে গাছের গায়ে পা রাখার জায়গা করে নেওয়া। হাঁসুয়া দিয়েই গাছ ছানা। খালোইকে শম্ভুরা বলেন, ঠোঙা। তাপাল হয় শালতি বা নৌকা। পূর্ব মেদিনীপুর নদী-খাল-বিলের দেশ। মানুষ তো চেনা কিছুর সঙ্গেই উপমিত করে!

শিউলিদের আরও দু’টো ভাগ হওয়া উচিত। সে ভাগ হাতের গুণে— পাকা আর আনাড়ি। যারা গাছের কথা ভাবে না, আনাড়ি তারাই। ভাবে বেশি কাটলে রস বেশি। তাই হ্যাঁচাৎ করে টানে ছেনদা। অনেকখানি চোকলা উঠে আসে কাট থেকে। ক্ষত গভীর হয়। টের পায় গাছ। কাটের চোটে গাছ কাত হয়ে পড়ে। পর পর দু’বছর এমন শিউলির হাতে গাছ পড়লে হয় মরে, না হলে মরো-মরো হয়। গড় মান্দারণে দেখা মিলেছিল আর এক শিউলির। সেই বঙ্কিমচন্দ্রের আমোদর নদীতীরের গড় মান্দারণ। সাইকেলের ক্যারিয়ারে রসের হাঁড়ি নিয়ে পর্যটক যাচাই করছিলেন। বেলা বারোটার পরে সে রস…। এঁরা অন্য রসের রসিক। গুড়ের ধার ধারেন না।

পাকা শিউলিরা যত্ন নেন গাছের। নদিয়া, বর্ধমান ইত্যাদি জেলার মতো পূর্ব মেদিনীপুরেও বহু পাকা শিউলির বাস। এঁদের অনেকেই যাযাবর। কুঞ্জপুর, রামচক, কার্তিকখালির মতো জায়গা থেকে বহু শিউলি কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে ঘর ছাড়তে শুরু করেন। রাম মণ্ডলের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি-২ ব্লকের রামচকে। প্রতি বছর হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর ব্লকে আসেন। সপরিবার। সে পরিবার বিস্তৃত। স্ত্রী অণিমা, ছেলে পল্টু, সুদীপ সঙ্গে বৌমারা। আসেন জামাই রাজীব গায়েনও। দু’টো জায়গায় ডেরা হয় এঁদের। বাবা-মা হয়তো কুঁড়ে তৈরি করলেন গড়বালিয়ায় পাতিহাল-খাঁদারঘাট রোডের পাশে। ছেলে-বৌমা চলে গেলেন মুন্সিরহাট। ডাকঘরের কাছে হল তাঁদের ডেরা। জামাইকে মাঝে মাঝে রামের সঙ্গেও দেখা যায়। এক বার দেখা গেল, গুড়শালে কুঁড়ের কাছে ঘুরছে একটা বাচ্চা। রাম-অণিমার নাতি। ঘরে তো তালা দিয়ে চলে এসেছে, এত ছোট বাচ্চাকে রাখবে কে? মা ছাড়া থাকবে কী করে! তাই গুড়শালে যাযাবর জীবনে দীক্ষা।

হাওয়ায় গরমের ভাপ টের পেলে ঘরে ফেরা। শম্ভু পয়ড়ার অবশ্য মত, পৌষপার্বণের পরে গুড়ে টান কমে মানুষের। তাঁরাও পালাঘর ভাঙতে থাকেন।

রসের গাছ

মুকুল দেখে আমগাছ জমা নেওয়া চলে। বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে লোকসান হবে না। কিন্তু খেজুর গাছ দেখে কি বোঝা যায় কত রস মিলবে? বড় গাছে বেশি রস, বেঁটে বা কমবয়সির কম? এ সব দেখে কি গাছ-মালিকের সঙ্গে করা যাবে নানা কড়ার! গুড়ের বা টাকার। গুড় নিলে এক মরসুমে গাছ-পিছু দু’কেজি পাবেন মালিক। টাকা নিলে ৬০০। হিসাবটা ফুলিয়ার। স্থানভেদে কড়ার আলাদা।

মুশকিল হল, গাছ দেখে বোঝা যায় না রসের কম বেশি। রস আসে শিউলির হাতের গুণে। তাদের অভিজ্ঞতায়। কাট যত ভাল হবে, রস তত ভাল বেরোবে। জানতে হবে কাটের সময়। একটু গরম থাকলে গাছ কাটলেও ঘামবে না রসস্থলী। তাপে শুকিয়ে যেতে পারে। একটুখানি শীত পড়লে রসস্থলী শুকোবে না। ওই জন্যই কার্তিকের মাঝামাঝি গাছ ঝুরলে ঠিকঠাক। অগ্রহায়ণ-পৌষের শীতে রসস্থলী ভিজে থাকবে।

অনেকের ধারণা, যে সব এলাকা বর্ষায় জলে ডুবে যায়, সেখানকার খেজুর গাছে ভাল রস হয়। শিউলিদের অভিজ্ঞতা, শুকনো জায়গার গাছে রস ভাল হয়। স্বাদ বেশি। গাছ যদি একটু ছায়ার দিকে থাকে, তাতেও সমস্যা হতে পারে। ছায়ায় থাকা গাছের ফেনা শুকোতে চায় না সহজে। সেই রসের গুড়ে গন্ধ হতে পারে।ভাল শীত আর তেজি রোদ্দুরে গাছেরা রসের উৎসমুখ খুলে দেয়।

ভোরের শিউলিরা

শরতের শিউলি রাতে ফোটে, ভোরে ঝরে। শীতের শিউলিদের সঙ্গে তার ভোরের মিল। ভাত খেয়ে একটু জিরিয়ে বিকেলের দিক থেকে গাছে হাঁড়ি বাধা শুরু। বেশি গাছ থাকলে দুপুর গড়ানোর আগেই কাজ শুরু করতে হয়। শীতে ঝপ করে সন্ধ্যা নামে যে! আঁধারে গাছে ওঠা মুশকিল। তার উপর রস বাঁচাতে নানা কৌশল করতে হয়। কিছু গাছ থাকে ছোট, হেলে পড়া। হাঁড়ি বাঁধলে শিয়ালে রসের নাগাল পেয়ে যায়। রস বাঁচাতে শিউলি হাঁড়ি পুঁতে দেন মাটিতে। আর নলিতে লাগিয়ে দেন বাঁশের একটা লম্বা চোঙ। সেই চোঙের শেষটা গিয়ে ঢোকে রসের হাঁড়িতে। তার পরে হাঁড়ির মুখ কাঁটা-টাটা দিয়ে চাপা দিয়ে দেওয়া।

ভোরে হি-হি করে কাঁপতে কাঁপতে গাছে ওঠা সহজ কাজ নয়। কনকনে ঠান্ডায় তখন নলেন-প্রিয়রা লেপের ওমে। জমে যাওয়া হাত-পা নিয়ে শিউলিরা গাছে ওঠেন রসের হাঁড়ি নামাতে। এই কারণেও ফুলিয়ার নৃপেনকে গাছে উঠতে বারণ করে দিয়েছেন বাড়ির লোক। বুড়ো হাড়ে ঠান্ডা বেশি লাগে। অবশ করে দেয় ভোরের বাতাস। কেউ কেউ তো ভোর তিনটের সময়ে গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামিয়ে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে ফেলেন। সক্কাল সক্কাল বাজারে নিয়ে হাজির।

গুড়ের হাট-বাজারগুলো অনেক জায়গায় ভোর-ভোর হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুর গুড়ের হাট হয় সোম ও শুক্রবার। ভোর তিনটে থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। এ হাট ধরতে হলে শিউলিদের লেপের মায়া ত্যাগ করতে হয় অন্ধকার থাকতেই।

জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুর রস।

জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুর রস।

নতুন গুড়ের গন্ধ

সব খেজুরের গুড়ই কি নলেন? অভিজ্ঞ শিউলিদের দাবি, প্রথম কাটের পরে যে রস মেলে, তা থেকে তৈরি গুড়ই নলেন। গাছ ঝোরার পরে রসস্থলীতে দু’বার চাঁছ পড়ল। লাগানো হল রসের হাঁড়ি। এই রসের গুড়ই নলেন। দ্বিতীয় দিনে হাঁড়ি লাগাতে আবার কাট দিতে হবে। সেই রস দোকাটের। এর পর তিন কাটের। তিন কাটের পরে বিশ্রাম পাবে গাছ। না হলে হাঁপিয়ে উঠবে। রস কমবে, গন্ধ হবে। তিন দিনের বিশ্রামে গাছের রসের দাবিদার প্রকৃতির সন্তানেরা। নলি বেয়ে টুপটুপিয়ে রস ঝরবে। বুলবুলির মতো ছোট পাখিরা নলিতে বসে রস চাখবে। হাঁড়িচাঁচার মতো বড় পাখিরা রসের মজা নেবে গাছের গায়ে ঝুলতে ঝুলতে। তিন দিন পরে শিউলি আবার কাট দেবেন। সেই রস জিরেন কাটের। জিরেন কাটের রস-গুড়ও সুগন্ধি। কোনও কোনও শিউলির দাবি, প্রথম ১০-১৫ দিন গুড়ে সুগন্ধ থাকে। তাকে নলেন বলা যেতে পারে। পৌষ মাসে রস বেশি হতে শুরু করলে গুড়ে সেই সুগন্ধ আর থাকে না।

রস কাটা শিল্প। রসে জ্বাল দেওয়াটাও। অভিজ্ঞতায় জন্মায় শিল্পী মন। পাকা শিউলিরা রস জ্বাল দিতে জানেন। আর একটা হাত হলে ভাল হয়। সে জন্যই মোতালেফের দরকার হয় মাজু খাতুনকে। সে তো নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্পে। বাস্তবে খেজুরির রামের সঙ্গে আসতে হয় অনিতাকে। তাঁদের পুত্রবধূ, মেয়েকে। স্থানীয় শিউলিদের তো বাড়িতেই গুড়শাল। ছেলে, বৌ, মেয়ে সকলে মিলে সময়-সুযোগ মতো গুড়ের তাক তোলে। তাক মানেই পাক। গাছ-মালিকদের বাড়ির মেয়ে-বৌদেরও কেউ কেউ রস জ্বালে নিপুণা হয়ে ওঠেন। এঁরা জানেন সর্ষে ফুট কাকে বলে, বাতাসা ফুটই বা কী! এই মালিকেরা শিউলির সঙ্গে টাকা বা গুড়ের কড়ার করেন না। করেন রসের। শীতে খেজুরের গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। পড়তে পায় না বাজারে। ইলিশের মরসুমে যেমন খোকাও দাম হাঁকায়, তেমনই নলেন গুড়। খুব ভাল হাতের গুড় না হলেও বিক্রিতে অসুবিধা হয় না। চাহিদার লাভটা সরাসরি নিতে চান গাছ-মালিকদের কেউ কেউ। তাই রসের কড়ার। চাষ থাকলে জ্বালানির খড়ের অভাব হবে না। হারভেস্টার যন্ত্রে এখন ধান কাটা। খড় আর চাষির বাড়িতে আসে না। খড়ের দামও এ কারণে বেশি। যাঁদের চাষ নেই, তাঁরা বনজঙ্গল কেটে শুকিয়ে নেন। খড়ি খাস কেটে রাখেন। তবে গুড়ে সুগন্ধ রাখতে নাকি খড়েরজ্বালই ভাল।

মিষ্টিভেদে পাক ভিন্ন। নলেন গুড়ের সন্দেশের সঙ্গে জলভরার পাক মেলে না। কাঁচাগোল্লার পাক অন্য রকম। খেজুরের গুড়ের পাকও নানা রকম। ঝোলা গুড়ের এক রকম। পাটালির আলাদা। আবার সার গুড়ের আর এক রকম। সব পাকেই খেয়াল রাখতে হয়, রস তাপালের গায়ে ধরে না যায়। পাক বেশি না হয়। হলে গুড়ে সুগন্ধ থাকবে না। গুড় রক্ষায় আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হয়, আগুন যেন হু হু করে উনুনের কোনও ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে না পড়ে। তা হলে সেই দিকের রস ধরে যেতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফাঁকের দিকে উনুন থেকে ছাই নিয়ে দেওয়াল তুলে দাও। আটকে যাবে আগুন। থাকবে তাপালের নীচে।

 বাঁশ চেঁছে তৈরি ‘খালোই’ এবং শিউলিদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। (ছবি: লেখক)

বাঁশ চেঁছে তৈরি ‘খালোই’ এবং শিউলিদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। (ছবি: লেখক)

সবার চেয়ে ভাল কী? কবি বলেছেন, পাউরুটি আর ঝোলা গুড়। শীতের গুড় মানে সেটা ঝোলা। উপরে ঝোলা, আর নীচে দানাদার খেজুরের গুড়ও হয়। তাপালে গুড়ের বীজ মেরে তৈরি হয় বিশেষ পদ্ধতিতে। অনেকে মনে করেন, তিন কাটের, নদিয়া ঘেঁষা বর্ধমানে বলে জের কাটের, রসে সামান্য টক গন্ধ হতে পারে। এই রসের ঝোলা গুড়ের সুগন্ধ নিয়ে সন্দেহ থাকে। জের কাটের রস থেকে তাঁরা সার গুড় বানিয়ে নেন। পদ্ধতিটা হল, রস ফোটানোর সময়ে ফেনাগুলো এক দিকে জড়ো করতে হয়। গুড়ে পাক হয়ে গেলে সেই ফেনায় সামান্য চিনি ছড়িয়ে খেজুর গাছের ডেগোর হাতা দিয়ে ঘষতে থাকো। আস্তে আস্তে ঘন হয়ে আসবে। সেই ঘন আর ঝোলা এক সঙ্গে পাত্রে ঢেলে দাও। সার গুড় উপরে ঘন আঠালো, নীচে ঝোল। বাড়িতে রুটি, মুড়ি, দুধের সঙ্গে খেতে দারুণ।

জীবনরসের সন্ধানে

আক্ষেপে ভারী হয়ে থাকে কুমোরপাড়া, তন্তুবায় পাড়া। নতুন প্রজন্ম কাজে আগ্রহী নয়। এগুলো তথাকথিত জাত পেশা। শিউলি কিন্তু জাত পেশা নয়। ধর্মভিত্তিক ভাগের একটা ধারণা ছিল আগে। সে বেড়া অনেক আগেই ভেঙেছে। নতুন গুড়ের মিষ্টি এখন অনায়াস দেবভোগ্য। হিন্দু-মুসলমান, তথাকথিত উচ্চবর্ণ, নিম্নবর্ণ যে কেউ শিউলি হতে পারেন। তবে কিনা, শিউলির ছেলেরা এখন আর গা তোলে না তেমন। একে তো চার মাসের কাজ। তার উপর এন্তার খাটুনি। আর খেজুর গাছের সংখ্যাও কমছে। এক লপ্তে অনেক গাছ পাওয়া মুশকিল। স্থানীয় শিউলিরা অনেকেই অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। ফুলিয়ায় হরিদাস ঠাকুরের শ্রীপাটের পাশের বুধো ঘোষ গোয়ালা সম্প্রদায়ের। তিনি দুধের ব্যবসার সঙ্গে শীতকালে গাছ কাটেন। এ গ্রামের নিরাপদকেও অন্য কাজ করতে হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের শম্ভু পয়ড়ারা বছরের বাকি সময়ে কাজ খুঁজতে থাকেন।

তবে এর একটা উল্টো ছবিও রয়েছে। এক সময়ে তাঁরা ছিলেন গাছ-মালিক। শিউলিরা রসের ভাগ দিয়ে যেতেন। গুড় তৈরি করে নিতেন নিজেরাই। কিছুটা বিক্রি, আত্মীয়স্বজনকে দেওয়া, বাকিটা নিজেদের জন্য। বোনের বাড়ি দূরে।বিয়ের আগে সেও রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করত। রসের পায়েস খেতে ভালবাসে বোন। কিন্তু অত দূরে রস নিয়ে যেতে গেলে তো গেঁজে যাবে। তাই অল্প ফুটিয়ে ক্যানে ভরে দূরদেশে বোনের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া।সময়ের অনিবার্য ফেরে গাছ-মালিকের ছেলে এখন নিজেই শিউলি। নিজের বেঁচে থাকা দু’-চারটের সঙ্গে জমা নেওয়া গাছও কাটেন। সারা বছর কাজ কোথায়? অল্প জমি। চাষে ক’টা পয়সা আসে?শীতের শিউলি হলে চারটে মাস তো একটু নিশ্চিন্ত।

জিরেন কাটের রসে জীবন পাল্টায়!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

date jaggery

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy