Advertisement
E-Paper

চিনা সেনার সঙ্গে মেষপালকের সেলফি

অরুণাচল প্রদেশের মেচুকা সীমান্ত এমনই!  হাসপাতালে যেতে পাহাড়ি পথে পাড়ি দিতে হয় প্রায় দুশো কিলোমিটার। মোবাইল ফোন প্রায় নিষ্ক্রিয়। অথচ, ১৯৬২ সালের যুদ্ধেও চিন এখানে রক্তপাত ঘটায়নি। বরং ভারতীয় সেনা আহত মালবাহককে ফেলে পালিয়ে গেলে চিনা সেনারাই তাঁর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছিল। অরুণাচল প্রদেশের মেচুকা সীমান্ত এমনই!  হাসপাতালে যেতে পাহাড়ি পথে পাড়ি দিতে হয় প্রায় দুশো কিলোমিটার। মোবাইল ফোন প্রায় নিষ্ক্রিয়। অথচ, ১৯৬২ সালের যুদ্ধেও চিন এখানে রক্তপাত ঘটায়নি। বরং ভারতীয় সেনা আহত মালবাহককে ফেলে পালিয়ে গেলে চিনা সেনারাই তাঁর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছিল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০০:০০

পাহাড়ে ভেড়া চরাতে চরাতে কত দূর যে এসে গিয়েছেন, খেয়াল করেননি গোপাল কাম্পুং। আচমকা তাঁর সামনে মাটি ফুঁড়ে উদয় হল হেলমেট-পরা কিছু হলদেটে মুখ, হাতে বেয়নেট। ভেড়ার খোঁজে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে চিনের এলাকায় ঢুকে এসেছেন গোপাল।

দরিদ্র, ভারতীয় মেষপালক তখন ভয়ার্ত। শত্রু সৈন্যের হাতে এ বার জীবনটাই চলে যাবে! কিন্তু চিনারা উলটে গোপালকে কাছে ডেকে নেয়, প্যাকেট খুলে ভিন দেশের মেষপালককে বাড়িয়ে দেয় সিগারেট। এমনকী, তারা হাসিমুখে গোপালের সঙ্গে সেলফিও তোলে।

অরুণাচল প্রদেশের মেনচুখা বা মেচুকা এমনই। তাওয়াং, বমডিলায় ’৬২ সালে চিন যুদ্ধের ধাক্কা নিয়ে যে আলোচনা হয়, তার সিকির সিকি ভাগও হয় না এই মেচুকা সীমান্ত নিয়ে। অথচ, সেখানকার গাঁওবুড়োদের স্মৃতিতে এখনও অনেক কথা টাটকা। সে সময় মেচুকা দিয়ে ঢুকে তাতো পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছিল চিনা সেনা। কিন্তু কখনও খারাপ ব্যবহার করেনি গ্রামবাসীদের সঙ্গে। এমনকী ভারতীয় সেনা পালিয়ে যাওয়ার পরে অসহায় গ্রামবাসীদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছিল তারা।

মেচুকার বেশির ভাগ মানুষই মেম্বা জনজাতির বৌদ্ধ। দক্ষিণ তিব্বতেই মূলত মেম্বাদের বাস, কিছু আছেন অরুণাচলের সিয়াং জেলাতেও (মেচুকা এই পশ্চিম সিয়াং জেলাতেই)। সহজ-সরল, কৃষিজীবী মানুষগুলো ভুট্টা, ধান, বাজরা ফলান; পাহাড়ি উপত্যকায় ভেড়া, ছাগল চরান, বাড়িতে পোষেন গরু আর ঘোড়া। ওঁদের লিপি ‘হিকর’ এসেছে তিব্বতি লিপি থেকেই। তিব্বতি শেকড়ের এই মানুষেরা নিজেদের তিব্বতি রক্ত নিয়ে যেমন গর্বিত, তেমনই সগর্বে ঘোষণা করেন, ‘আমরা মনেপ্রাণে ভারতীয়’। কিন্তু ভারত সরকারের প্রতি তাঁদের মনে অনেক অভিমানও জমে। সীমান্ত পারের এই শেষ শহরে সড়কপথে পৌঁছনো এখনও দুঃস্বপ্ন! সদ্য সামরিক প্রয়োজনে চালু হয়েছে রানওয়ে। কিন্তু আমজনতার জন্য কোনও পরিষেবার ব্যবস্থা হয়নি। এখনও গ্রামের মানুষ অসুস্থ হলে জেলা সদর আলং-এর হাসপাতালে যেতে পাড়ি দিতে হয় ১৮৬ কিলোমিটার রাস্তা। গোপালের সঙ্গে তো তাও সীমান্তে দেখা হয়েছিল, চিনের সেনা নাকি এখনও মাঝেমধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে চলে আসে! কথা বলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে। যা বারবার অস্বীকার করে এসেছে ভারতীয় সেনা ও প্রশাসন। এখানকার মানুষ মনেপ্রাণে চিন-বিরোধী। কিন্তু জুতো-জামা থেকে শুরু করে টুনি বাল্‌ব পর্যন্ত সবই তো ‘মেড ইন চায়না’। তাই খেটে-খাওয়া সাধারণ মানুষের দাবি, ফের খুলে দেওয়া হোক সীমান্ত বাণিজ্য।

সীমান্তরেখা: অরুণাচল প্রদেশের মেনচুখা বা মেচুকা উপত্যকা।

মেচুকা আসলে এই ভারতের মধ্যেই থাকা এক টুকরো অন্য ভারত। যেখানে একটু নাড়াচাড়া করতেই বেরিয়ে আসে টুকরো টুকরো অনেক ছবি। তিব্বতি শেকড় আর ভারতের জন্য দেশপ্রেম, চিন-ভারত যুদ্ধের স্মৃতি, আর নিত্য দিনের যন্ত্রণা, অভাব-অভিযোগের অদ্ভুত এক কোলাজ।

আরও পড়ুন: চলে গেলেন বারেন্দ্র ইহুদি

১৯৬২ সালে চিন মেচুকা দখল করে নেওয়ার পরে পলায়নরত ভারতীয় সেনার সঙ্গে মাল কাঁধে নামছিলেন তাপির সামচুং। চিনা সেনা ভারতীয় বাহিনীকে তাড়া করে সীমান্তের এ পারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল। দখল করে নিয়েছিল তাতো। পালানোর সময় আচমকা চিনা সেনার গুলি তাপিরের পা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। গুরুতর জখম তাপিরকে ফেলে পালায় ভারতীয় সেনা। কিন্তু চিনা বাহিনী তাঁকে মেরে ফেলেনি। বরং তাঁর পা থেকে গুলি বের করে প্রাথমিক চিকিৎসা তারাই করে। এখন তিনি দোরজিলিং-এর গ্রামপ্রধান। সীমান্তের শেষ গ্রাম মানগাংয়ের গাঁওবুড়া দোর্জি ফুরবা চুকলাও জানালেন, চিনা বাহিনী এ পারের মানুষকে কোনও অত্যাচার করেনি। বরং বলেছিল, তোমরা-আমরা একই লোক। আমাদের লড়াই শুধু ভারতীয় সেনার সঙ্গে! প্রায় দেড় মাস চিনা দখলে থাকার সময় মেচুকার দু’জন গ্রামবাসী চিনাদের গুলিতে মারা যান। কারণ, তাঁরা ভারতীয় সেনার দেওয়া রেনকোট পরেছিলেন!

মেচুকা সাব ডিভিশনের অন্তর্গত ৩০টি গ্রামের গাঁওবুড়া সংগঠনের সভাপতি কেসাং গোইবা দুঃখ করছিলেন, আমাদের পূর্বপুরুষ সবাই ও পার থেকে আসা। আমাদের শেকড় চিনের দখলে থাকা তিব্বতে। যুদ্ধের আগে কত সহজে ও পার থেকে আসত চমরি গাই, ঘি, কালো নুন, দা। এ পারের চিনি, বিড়ি আর ইয়েরঝেগোমু পোকার চাহিদা ও পারে ছিল খুব। তাই সীমান্ত বাণিজ্য ফের খোলার দাবি এখানকার মানুষ জানাচ্ছেন অনেক দিন থেকেই। চিন ও পারে সীমান্ত পর্যন্ত সুন্দর রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। আর এ পারে প্রথম বেসরকারি ছোট গাড়ি আসে ২০০৪ সালে। সেই সড়কের অবস্থা এখনও তেমন উন্নত হয়নি। রাজনীতিবিদরা আসেন ভোটের আগে বা কোনও বিশেষ অনুষ্ঠান থাকলে। এত বছরের সাংসদ নিনং এরিং প্রথম বার হেলিকপ্টারে চেপে মেচুকা এসেছেন ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে!

মেচুকার বুক চিরে যাওয়া ইয়ারগাপচু নদীর পারে দাঁড়িয়ে ৩৫ বছরের চেঙ্গা ডোলু খচ্চরের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে জানাচ্ছিলেন, আপনারা যেমন স্কুটার বা গাড়ি কেনেন, আমরা তেমন বাড়িতে ঘোড়া পুষি। আমার নিজের ১৫টা ঘোড়া রয়েছে। আমাদের মতো এখানকার ঘোড়াদেরও তিব্বতি রক্ত। পাহাড়ে ৭০ কিলো মাল বইতে পারে এরা। সেনাবাহিনীও পোস্টে যেতে আমাদের ঘোড়ার উপরেই ভরসা করে। আর অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে এদের জুড়ি নেই। পাহাড়ের উপর থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র আসতে এরাই ভরসা। অবশ্য রোগ বেশি হলে মরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। কারণ জেলা সদর আলং ১৮৬ কিলোমিটার দূরে। সেখানে যেতে জঘন্য রাস্তায় পথেই মরে যায় রোগী। আর এখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন ডাক্তার। রক্তপরীক্ষা, এক্স-রে করার কোনও লোক নেই। তাই কখনও বুদ্ধদেব, কখনও সূর্যদেব, কখনও স্বপ্নাদেশে পাওয়া ওষুধই মরণাপন্নের ভরসা।

রাস্তা ও মোবাইল সংযোগ না থাকার জন্য রাজ্য, কেন্দ্র আর সেনাবাহিনীর চাপানউতোরকে দায়ী করলেন মেচুকা এএলজি-তে কর্মরত এক সেনা অফিসার। তাঁর মতে, রাস্তা তৈরি করে দেয় বিআরও। পূর্ত দফতরের হাতে তা তুলে দেওয়ার পরে তার ঠিকা নিয়ে নেন মন্ত্রী-বিধায়কদের আত্মীয়রা। তার পর থেকে রাস্তা ক্রমে খারাপ হতে থাকে। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মেলে না। মোবাইলের টাওয়ার বসাতে এলে স্থানীয় মানুষ কাজ তো বটেই, পেনশন পর্যন্ত দাবি করে বসেন। মেচুকা থেকে বাইরের দুনিয়ায় যেতে গেলে ভরসা সুমো সার্ভিস। জনপ্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা। তাই গরিবদের জন্য মেচুকার বাইরের পৃথিবীকে জানা কার্যত অসম্ভব।

কিন্তু মেচুকার একেবারে শেষ সীমায় লামা থেকে নিকটবর্তী তিব্বতি শহর গাজা মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে। গাঁওবুড়াদের সভাপতি কেসাং গোইবা, মালিং কোজে, ৭৬ বছর বয়সি সাংগে খান্ডু সোনা বা ১০০ বছরে পা দেওয়া কোদোং পুসারা জানান, ১৯৬২-র আগে পর্যন্ত মেচুকার দরকারি জিনিসপত্র সব চিন থেকেই আসত। এ পারের চিনির বদলে ও পারের নুন, ওপারের চমরি গাইয়ের বদলে এ পারের বিড়ি হাতবদল হত। সেই সঙ্গে তিব্বতি উৎসের মানুষগুলো একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন নিয়ম করে। ’৬২ সালের যুদ্ধ যে যোগাযোগের শিকড়ে কুড়ুলের কোপ মেরেছে। এখন নিয়ম করে উসকে দেওয়া হচ্ছে দেশপ্রেমের টোটকা, আর বজায় রাখা হচ্ছে চিন জুজু।

সীমান্তের দিকে যেতেই পথ আটকায় ভারতীয় সেনা। সেনা ছাউনিতে আকাশমুখী হাউইৎজার কামান। পাহাড়ের গায়ে গায়ে সবুজ বাঙ্কার উঁকি মারছে। কিন্তু জঙ্গলে পোকা সংগ্রহে যাওয়া দুই দেশের গ্রামবাসীরা ম্যাকমোহনের বেড়া মানেন না। উঁচু পাহাড়ে বরফের খাঁজে মেলে ইয়েরঝেগোমু পোকা। যা সিদ্ধ করে জল পান করলে নাকি মানুষ, গরু বা ঘোড়ার নীরোগ শরীর আর চিরযৌবন বাঁধা। পোকার খোঁজে এ পারে ঢুকে পড়া চিনারা ভারতীয় বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন।

১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধের সময় চিনা সেনার গুলি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল তাপির সামচুং-এর পা। বৃদ্ধের পায়ে আজও রয়ে গিয়েছে সেই ক্ষতচিহ্ন।

কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, চিনা সেনার সীমান্ত পার করার ঘটনা। যা কখনওই ঘটেনি বলে বারবার দাবি করে সেনাবাহিনী। কিন্তু গ্রামবাসীরা অন্য গল্প শোনালেন। দেখালেনও। সীমান্ত পেরিয়ে আসা চিনা সেনার ছবি এক ভারতীয় যুবকের মোবাইলে! বিজেপির মণ্ডল সভাপতি, গোপালের জামাইবাবু মালিং কোজে-ই দেখালেন, সিগারেট-মুখে, চিনা সেনার সঙ্গে তোলা গোপালের সেলফি। সেই সিগারেট তাকে দিয়েছিল ওই সেনারাই! ভারতীয় সেনা খবর রাখে না? গ্রামপ্রধানরা জানালেন, চিনা বাহিনীর গতিবিধির খবর পেলে তাঁরাই সেনাবাহিনীকে জানান, প্রশাসনকেও। তবে বড় মাপের হাতাহাতিতে যেতে চায় না কোনও পক্ষই। তাই চিনা বাহিনী কখনও টহলে ঢুকে পড়লেও ফিরে যায়।

দোরজিলিং-এর মালো বস্তিতে দোতলা কাঠের বাড়িতে বসা আশি বছরের ডোগে ফালে জানান, পাহাড়ি পথে খচ্চরের পিঠে রঙ, চাল, চিনি, লংকা চাপিয়ে কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত তিব্বতে ব্যবসা করতে যেতেন তিনি। গিয়েছিলেন লাসা পর্যন্ত। পথে চিনের বিভিন্ন গ্রামে তাঁর অনেক বন্ধু হয়েছিল। শেষ বার স্ত্রী ডোগি ডেসভিয়াও তাঁর লম্বা তিব্বত যাত্রার সঙ্গী হয়েছিলেন। মালো বস্তিতে যে দিন ফিরেছিলেন তাঁরা, স্থানীয় মানুষ তাঁদের সম্মানে মিথুন (স্থানীয় মোষ) কেটে উৎসব করেছিল। সে বার রাস্তায় তিব্বতি চমরি গাই মেরে খেয়েছিলেন। তার মাথা এখনও তাঁদের বাড়িতে ঝুলছে। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে ও পারের ধর্ম, সংস্কৃতি, আচারের মিল অবিকল। কিন্তু একটা লাইন আর একটা যুদ্ধ সব শেষ করে দিল। বেঁচে থাকতে আর ও পারের বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখা হবে না। সেই সঙ্গে মেচুকার কৃষি বাণিজ্যও বরাবরের মতো শেষ হয়ে গিয়েছে।”

শহরের বুকে ২০০ বর্গমিটারের বাজারে এখনও কিন্তু জুতো-জামা-জ্যাকেট-কাপ-বাল্‌ব, সবই চিনা! সভাপতি কেসাং বা বয়স্ক মেচুকাবাসীরা এখনও চান, ফের খুলে যাক সীমান্ত বাণিজ্য। চান, ভারত আরও মন দিক মেচুকার দিকে। জানান, গাঁওবুড়া হিসেবে মাসে তাঁরা পান মাত্র ২০০ টাকা ভাতা। বিএসএনএল-এর টাওয়ার মাঝেমধ্যে মেলে। অন্য মোবাইল পরিষেবার কোনও অস্তিত্ব নেই। টেলিভিশন চোখেই পড়ে না।

নিজের বাড়িতে ‘হোম স্টে’ খুলেছেন ৫৬ বছরের হাসিখুশি মহিলা লুলু থারগি। মেচুকার নদী, দূর পাহাড়ের বুকে থাকা গুরুদ্বার, গুহা, ঝরনার টানে যদি পর্যটকদের চোখ কখনও মেচুকার দিকে পড়ে, সেই আশায়। সঙ্গে চালান মদের ডিলারশিপ। একা হাতেই সামলান সব কাজ। এত অভাব, কষ্টের মধ্যেও অভিযোগের ঘ্যানঘ্যানানি নেই তাঁর। সন্ধে নামলেই স্থানীয় পানীয় মারোয়া বা বিলিতিতে গলা ভিজিয়ে রামো, বোকা, ওঙ্গে জনজাতির পুরুষ-মহিলারা নিজেদের কাঠের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে শুরু করেন নাচ-গান। কিছুটা পুরনো দিনের হিন্দি গান। বাকিটা স্থানীয় ভাষায়। রাত বাড়ে। নাচও বাড়তে থাকে। অমলিন হাসিতে বহিরাগত অতিথিকে বুকে টেন নেন লুলু আর তাঁর দিদি লেব্রি। বিদায় নেওয়ার সময়ও গাইছেন, চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত...

মেচুকাবাসীর এই দেশপ্রেম, নিজের দুঃখ ভোলার অদ্ভুত ক্ষমতা, সুর্য ঢললেই নাচে-গানে দিনের কষ্ট ভুলে যাওয়ার প্রতিভাতেই ভরসা রেখেছে সেনাবাহিনী আর রাজনৈতিক নেতারা। সব দলই বুঝে গিয়েছে, পাঁচ বছর অন্তর খানিক ভরসা, প্রতি বছর কোনও একটা উৎসব আর এক ছটাক রাস্তা— এই খুড়োর কল দেখিয়েই এখান থেকে সহজে ভোট জোগাড় হয়ে যাবে। মেচুকার মানুষের চোরা দুঃখ, শিকড়ের সন্ধানকে পাত্তা দেওয়ার সময় এখনও কারও হাতে নেই। ইয়ারগাপচু নদীর বুকে ঝুলন্ত সেতু প্রাণ হাতে করে পার হতে থাকা স্কুলের বাচ্চাগুলো বুঝে গিয়েছে, তাদের যৌবনেও এখানে পাকা সেতু হবে না। যদি না চিন এক বার ফের জোরজার করে এখানে চলে আসে!

ছবি: লেখক

Travel and Tourism Mechuka Border Arunachal Pradesh মেচুকা Mechuka Valley West Siang
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy