Advertisement
E-Paper

মিষ্টিদিদা

ভেতরে ভেতরে বেশ একটু উত্তেজনা বোধ করছে টুবু। ব্যাপারস্যাপার যে দিকে গড়াচ্ছে শেষ পর্যন্ত যে কী হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আর যদি সত্যিই তেমন কিছু একটা ঘটে যায়...! মিষ্টিদিদার বয়সের গাছপাথর নেই। অনেকটা শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছটার মতো।

অনিন্দিতা গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৩:০৮

ভেতরে ভেতরে বেশ একটু উত্তেজনা বোধ করছে টুবু। ব্যাপারস্যাপার যে দিকে গড়াচ্ছে শেষ পর্যন্ত যে কী হবে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আর যদি সত্যিই তেমন কিছু একটা ঘটে যায়...!

মিষ্টিদিদার বয়সের গাছপাথর নেই। অনেকটা শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছটার মতো। বটগাছটার অসংখ্য ঝুরির মধ্যে কোনটা যে আসল গুঁড়ি, তা খুঁজে পাওয়াই ভার। অনেকে বলেন মূল গাছটা হয়তো বেঁচেই নেই, ঝুরিগুলোই পরে গাছ হয়ে গিয়েছে।

মিষ্টিদিদা আসলে টুবুর দিদানের বড়মাসি। টুবুর দিদানের মায়ের থেকে বারো বছরের বড়। মিষ্টিদিদার একমাত্র ছেলে থাকত বস্টনে। মিষ্টিদিদাকে তিনি অনেক বার নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু মিষ্টিদিদার এক কথা: বাংলা কথা না বলে না শুনে আমি এক দিনও থাকতে পারব না বাপু। তা হলে এখানে মিষ্টিদিদাকে দেখবে কে? টুবুর দিদান তো মারা গেছেন অনেক আগেই অতএব মিষ্টিদিদার দেখাশোনার ভার বর্তালো টুবুর মায়ের ওপরেই। মিষ্টিদিদার ছেলে তাদের বরানগরের পৈতৃক ভিটে বিক্রি করে দিয়ে মিষ্টিদিদার জন্য কিনে দিলেন টুবুদের বাড়ির কাছাকাছি একটা ফ্ল্যাট আর ব্যবস্থা করে দিলেন দিনেরাতে দু’জন আয়ার।

মিষ্টিদিদার সেই ছেলেও মারা গেছেন বহু দিন হল। তার মেয়ে রায়নামাসিকে টুবু প্রথম বার দেখেছিল মিষ্টিদিদার শততম জন্মদিনের দিন। হ্যাঁ, ক’দিন আগেই সেন্টেনারি হয়ে গেল মিষ্টিদিদার। হয়েছিল অবশ্য টুবুর মা-বাবার উদ্যোগেই। খুব মজা হয়েছিল সে দিন। রীতিমতো ফ্ল্যাটবাড়ির মাথায় প্যান্ডেল বেঁধে ধুমধাম করে, কেটারিং দিয়ে লোকজন খাইয়ে পালন করা হয়েছিল অনুষ্ঠান। আত্মীয়স্বজন সক্কলে এসেছিল। টুবুর মা আবার মিষ্টিদিদার কপালে চন্দন পরিয়ে, সেমিজের ওপরে শাড়ি পরিয়ে, দু’পাশে বালিশ দিয়ে মিষ্টিদিদাকে বসিয়ে দিয়েছিল বিছানায়। অত লোকজন দেখে মিষ্টিদিদা তো বেজায় খুশি! সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু গোল বাধল আরও পরে।

ঠিক ছিল মিষ্টিদিদার সামনে পঞ্চব্যাঞ্জন সহ ভাতের থালা সাজিয়ে কয়েকটা ফটো তোলা হবে তার পর সব সরিয়ে দিয়ে দিদাকে খাইয়ে দেওয়া হবে রোজকার খাবারের এক বাটি স্যুপ।

এখন যেই না ভাতের থালা সরানো হয়েছে, ব্যস বেঁকে বসল মিষ্টিদিদা। বলল সব খাবার চাই আমার। আমার মেনুকার্ড চাই। আমার জন্মদিন সবাই ভালমন্দ খাবে আর আমি খাব ওই বিচ্ছিরি স্যুপ। সবাই দোনামনা করছে দেখে পকেট থেকে মেনুকার্ড বের করে টুবু পড়তে আরম্ভ করল, রাধাবল্লভী, মটরপনির পড়তে পড়তে পোলাও, মাটন রেজালা হয়ে যখন পানতুয়া পর্যন্ত পৌঁছল টুবু, তখন মিষ্টিদিদা চোখ গোল গোল করে বলল দেখলে দাদুভাই তেরো রকমের আইটেম। এর একটা কম হলে আমি জলস্পর্শ করব না সারাদিন। দিদার কথা শুনে তো সকলের মাথায় হাত, এই সব খাবার খেলে যে শরীর খারাপ করবে তোমার! জলস্পর্শ না করলে ওষুধ খাবে কী করে!

শেষ পর্যন্ত অবশ্য হার মানতে হল সকলকেই। সব খাবার এনে সামনে দিতে হল মিষ্টিদিদার। একটা বিজয়ীর হাসি দিয়ে মিষ্টিদিদা সব খাবারগুলো খেলো একটু একটু করে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার মিষ্টিদিদার কিচ্ছু হল না। এবং মিষ্টিদিদা ফরমান জারি করল এখন থেকে আর আমি ও সব স্যুপটুপ খাব না, সকলে যা খায় তাই খাব।

টুবুর মায়ের সব রাগ গিয়ে পড়েছে টুবুর ওপরে। এর মধ্যেই বেশ কয়েক বার কান মলা খেয়েছে টুবু। মায়ের ধারণা টুবুর উসকানিতেই মিষ্টিদিদা এ সব করছে। কিন্তু টুবু দেখছে জন্মদিনের পর দিন থেকে মিষ্টিদিদা কেমন যেন তরতাজা হয়ে উঠছে। চশমা ছাড়াই খবরের কাগজ পড়ে ফেলছে! গলার স্বরেও যেন জোর এসেছে।

এক দিন মিষ্টিদিদার জরুরি তলব পেয়ে সে আর তার মা প্রায় ছুটতে ছুটতে গেল মিষ্টিদিদার বাড়িতে। মিষ্টিদিদা বলল, শোনো যে জন্য ডেকেছিলাম, কত দিন বাইরে বেরই না, আকাশ দেখি না, ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে হাঁপ ধরে গেছে আমার। চলো আজ একটু বাজারে বেরিয়ে আসি।

মিষ্টিদিদার কথা শুনে টুবুর মা তো ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়, হাঁটতে যাবে মানে! তা-ও আবার বাজারে? ধাক্কার চোটে তিন জনেই হুড়মুড় করে পড়ব। মিষ্টিদিদা স্মার্টলি উত্তর দিল, পড়লে পড়ব।
আবার তিন জনে হাত ধরাধরি করে উঠে দাঁড়াব। তবে হ্যাঁ ও সব শাড়িটাড়ি পরে ম্যানেজ করতে পারব না, রায়নার মেয়ে জুলিয়া একটা লাল রঙের ফ্রক ফেলে গেছে, ওটা পরিয়ে দাও আমাকে। টুবুর মা যন্ত্রের মতো মিষ্টিদিদাকে পরিয়ে দিল লাল ফ্রকটা।

মিষ্টিদিদা টুবুর হাত ধরে বলল, চল।

কেমন যেন আনন্দে ভেতরটা গুড়গুড় করে উঠল টুবুর। একশোর পর থেকে কি রিসাইকল শুরু হয় হিউম্যান বডির? মিষ্টিদিদা কি ধীরে ধীরে টুবুর গার্লফ্রেন্ডের মতো হয়ে যাবে? ইস্, কী মজাই না হবে তা হলে! কিন্তু মায়ের কাছে আরও পাঁচটা কানমলা খাবার ভয়ে সে সে সব কিছু প্রকাশ করল না মুখে বরং অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে সে মিষ্টিদিদার হাত ধরল।

anandamela mistidida
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy