E-Paper

তালিবানের দেশে, মার্কো পোলোর পথে

তালিবান গত চার বছর ধরে আফগানিস্তানের মসনদে। তালিবান শব্দের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে চাপা আতঙ্ক। তবু অজানা যাত্রায় যাওয়ার টান অদম্য। বেড়ানোর সিলেবাসে ছিল অক্ষত রুক্ষ প্রকৃতির ঘ্রাণ, আর দুই যাযাবর জনগোষ্ঠীর সান্নিধ্য। যুদ্ধবিগ্রহ প্রভাব ফেলে না সাধারণ মানুষের আন্তরিকতায়।

পীযূষ রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ ০৫:২১
জীবনযাত্রা: সুবিস্তীর্ণ ওয়াখান করিডর অতিক্রম করছেন এক জন যাত্রী।

জীবনযাত্রা: সুবিস্তীর্ণ ওয়াখান করিডর অতিক্রম করছেন এক জন যাত্রী। (ছবি: লেখক)

লম্বা লেজের মতো দুর্গম ভূমি, যা লিটল পামির ও হিন্দুকুশ মালভূমির মধ্যে বিছানো, কখনও বাঁকা কখনও সোজা। প্রায় ৩,০০০ মিটার উচ্চতায় এই ভূখণ্ডটি তিনটি দেশের সঙ্গমবিন্দু। দক্ষিণে পাকিস্তান, উত্তরে তাজিকিস্তান, আর উত্তর-পূর্ব প্রান্তে শেষ বিন্দুটি চিন। এই ‘চিকেন নেক’টাই হল আফগানিস্তানের ওয়াখান করিডর।

আর মোরগের গলা মটকানো (গ্রেট গেম) নিয়েই অশান্তি রাশিয়া আর ব্রিটিশের মধ্যে। রাশিয়া তখন আফগানিস্তানকে সোভিয়েট হেফাজতে আনার জন্য ফণা তুলেছে, কিন্তু বাগে পাচ্ছে না। ব্রিটিশরা জানত, পাশতুনদের ঠকিয়ে অবলীলায় দেশটাকে লুট করা সম্ভব নয়। ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ কূটনীতিক মর্টিমার ডুরান্ড ও আফগানিস্তানের আবদুর রহমান খানের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হল। ডুরান্ড লাইন টেনে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ হতেই এক স্থায়ী সঙ্কটের জন্ম হল।

ত্রয়োদশ শতকে দুঃসাহসী ভেনিসীয় পর্যটক মার্কো পোলো এই ওয়াখান করিডরে ওয়াখজির পাস অতিক্রম করে চিনে ঢুকে কুবলাই খানের সঙ্গে দেখা করতে যান।

কালের আঙুলে লেখা হল ‘লেজেন্ড’স রুট, দ্য ওয়াখান করিডর’। কিংবদন্তির পদচিহ্নে আঁকা এমন ভ্রমণপথটাই ছিল আমার ‘বাকেট লিস্ট’-এ।

*****

স্থানীয় ওয়াখি দম্পতি ও তাঁদের সন্তান।

স্থানীয় ওয়াখি দম্পতি ও তাঁদের সন্তান। (ছবি: লেখক)

চল্লিশ বছরের যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান কখনওই আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকেনি। ২০২১ সালে আমেরিকা স্বেচ্ছায় পাততাড়ি গোটানোর পর গত চার বছর আফগানিস্তানের মসনদে কট্টর ইসলামিক তালিবান। আর তালিবান মানে আতঙ্ক। এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে হঠাৎ মন চাইল এই অজানা যাত্রায় যেতে, কপালে যা-ই থাক। নতুন সংস্কৃতি, নতুন দিগন্ত, নতুন জ্ঞানের খোঁজ— আমি তখন মার্কো পোলো হওয়ার জন্য পাগল। সিলেবাসে ছিল অক্ষত রুক্ষ প্রকৃতির ঘ্রাণ নেওয়া, আর প্রাচীন দুই যাযাবর জনগোষ্ঠীর সান্নিধ্যে আসা।

কাবুলের খাইবার হোটেল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে পরিচয় হল আমেরিকান ক্রিস্টোফার স্মিথের সঙ্গে। ইউনিসেফ-এর ‘সেভ চিলড্রেন লাইফ’ প্রকল্পে কাজের সূত্রে কাবুলে এসেছেন সপ্তাহখানেকের জন্য। কালাশনিকভ হাতে ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। অফিস আর হোটেল, এর বাইরে আর কোথাও যান না। আমি বেড়াতে এসেছি শুনে খুশি হলেন। আমার ভ্রমণসূচিতে পামির উপত্যকা আছে শুনে কপাল কোঁচকালেন— “ওয়াখান! ইন্টারেস্টিং, আই অ্যাপ্রিশিয়েট। বাট বি কেয়ারফুল, মে বি ওয়ান্স ইট হ্যাড বিন লাদেন’স হাইডিং প্লেস।”

আমু দরিয়ার শাখানদী কোকচা-র কোল ঘেঁষে ফৈজ়াবাদ থেকে ইস্কাশিমে যাওয়ার রাস্তা পাহাড়ি ধসে বন্ধ। যানজট। ফিরে এলাম, রাত কাটাব তাখোরে, যেখানে দোভাষী মুসায়েরের বাড়ি। ওর আমন্ত্রণে ওর বাড়িতে গেলাম চা খেতে। ওর বাড়ির সামনে একটা ফুটবল মাঠ দেখিয়ে বলল, ওর জন্মের আগে ১৯৯৬ সালে এই মাঠে তালিবানের মরাল পুলিশ অকপটে ওর এক অবিবাহিত মাসিকে ৮০ বার চাবুক মেরে শাস্তি দিয়েছিল। ক্ষতবিক্ষত মাসি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মাঠেই মারা যায়। মাসি এক তুর্কি প্রেমিকের সঙ্গে ইরানে পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে। অপরাধ, মেয়েটি শারিয়া আইনকে উপেক্ষা করেছিল। ঘটনা শেষ করে মুসায়ের ফিসফিস করে বলল, “উইমেন আর অলওয়েজ় ইজ়ি প্রে। বর্তমান তালিবান শাসক তুলনায় নরম। প্রকাশ্যে রাষ্ট্রীয় হত্যা হয় না।”

রাস্তা তখনও বোল্ডার-অবরুদ্ধ। পরের দিন বিকল্প লং রুটে ইস্কাশিমে পৌঁছতে সন্ধে ছুঁই-ছুঁই। একটা চার কক্ষের ছোট আফগান গেস্ট হাউসে আস্তানা পেলাম। ট্যুর লিডার আব্দুল স্ট্যানিকজ়াই ভীষণ যত্নশীল আর দায়িত্ববান। ঝটপট রাতের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে গেল।

*****

পাঞ্জ নদীর এ পারে ইস্কাশিম, ও পারে তাজিকিস্তানের সীমান্ত শহর এস্কোশিম। নদীর উভয় দিক মাদক চোরাচালানের জন্য কুখ্যাত। বর্ডার পুলিশ এসে সার্চ করে গেল, কোনও ড্রাগ পাচারকারী আছে কি না।

ওয়াখান করিডরের পারমিট দেবে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। লিখিত আবেদন, পাসপোর্টের কপি, ছবি, এ সব জমা দেওয়া হল। তালিবান পুলিশ ক্যামেরা চেক করে। নিষিদ্ধ ছবি তুলে ধরা পড়লে জেলে যেতে হবে। অপ্রত্যাশিত ঘটনা যখন-তখন ঘটে যেতে পারে বলে নিরাপত্তারক্ষী নেওয়ার জন্য জোর করছিল। চার্জ ৫০০ ডলার। আমার দরকার হয়নি, কারণ সঙ্গে দেহরক্ষী ছিল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দেওয়া, ফ্রি সার্ভিস। নাম আব্দুল হাদি আহমাদি। গজনীর বাসিন্দা, মিলিটারি কম্যান্ডার, শার্প শুটার, সঙ্গে আমেরিকান এম-৪ রাইফেল, কার্তুজ। গাড়ির সারথিও আহমাদি।

‘সালাম আলেইকুম’ বলে ইনফর্মেশন অফিসার করমর্দন করলেন।

‘আলেইকুম সালাম।’

আমি ভারতীয় জেনে খুশি হলেন। উর্দু-মেশানো হিন্দিতে জানালেন, আমিই হয়তো প্রথম ভারতীয় যে আফগান পামিরে যাচ্ছে। তথ্যটা ভুলও হতে পারে। হয়তো তিনি তাঁর কর্মজীবনে আর কাউকে তখনও যেতে দেখেননি। বলিউডের ভক্ত, প্রিয় তারকা শাহরুখ, সলমন, আমির। ফেসবুক সার্চ করে আমার পরিচয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হলেন। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন, আমাকে ফ্রেমে ধরে সেলফি তুললেন, তার পর পাখতুনি ভাষায় বললেন— “তোমার বয়স হয়েছে। সাবধানে থেকো। কঠিন যাত্রা। ভয়ঙ্কর রাস্তা। উপরে খুব ঠান্ডা। বারায়ে শমা আরযেভি মফেঘিট দারাম।” (তোমার জন্য আমার শুভকামনা।)

গমনপথ পাঞ্জ নদী বরাবর তাজিকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষে। এবড়োখেবড়ো পাথুরে, বাঁক, ধুলো-ওড়ানো রাস্তা। নদীর দু’পারের মধ্যে বৈষম্য অশেষ, তাজিকিস্তানের দিকটার শ্রীবৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। আফগান দিকটা অবহেলিত। বেঁচে থাকার জন্য সামান্য কৃষিজমি ছাড়া কিছু নেই।

‘ফোটর’ আউটপোস্ট, ওয়াখান করিডরের হুইসল-স্টপ। তোরণে লেখা ‘ওয়েলকাম টু ওয়াখান ন্যাশনাল পার্ক।’ ওখানে বিদেশি হওয়ার কারণে পঞ্চাশ ইউএস ডলার এন্ট্রি ফি দিতে হল।

*****

পামির মালভূমি আফগানিস্তানের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। স্বাস্থ্যসেবা তেমন নেই, শিক্ষা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত, বিদ্যুৎ নেই, পানীয় জল নেই, গণপরিবহণ নেই। আছে অফুরন্ত কাঁচা, নির্ভেজাল প্রাকৃতিক সম্পদ। জাতীয় পরিবহণ গাধার পিঠে করে। এতেই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজ়মের স্বপ্নপূরণ।

মৌলবাদী তালিবানি ব্র্যান্ডের শারিয়া-র চরম বাস্তবায়নে সবাই শঙ্কিত।

কিন্তু পামিরে শারিয়া আইনের কড়াকড়ি কম। মৌলবিদের ফতোয়া নেই। বোরখা নেই, হিজাব ছেঁটে দুপাট্টা। মাথায় স্কার্ফ পরাটা ঐচ্ছিক।

বন্ধুর পথে পিছনবাগে ফেলে আসছি একের পর এক গ্রাম। প্রকৃতির দৃশ্য তখনই সুন্দর, আমি অভিভূত। নদী-অববাহিকা মারমটদের (পাহাড়ি ইঁদুর) দখলে। গ্রামের নামগুলো বেশ— ওয়ারগ, নেশখাওর, পিগিস, আমিত। সব কি মনে রাখা যায়! পামিরিদের টুপির ডিজ়াইন গ্রাম অনুযায়ী পাল্টে যায়। টুপি নির্দিষ্ট গ্রামের প্রতীক।

খানডোডের নজর-ফাঁড়িতে হল বিপত্তি। ঘাড়ে বন্দুক, গালে তালিবানি দাড়ি, পিলে চমকে দেওয়া চেহারার এক দল সীমান্তপুলিশ আমাদের গাড়ি আটকাল। নজরবন্দি আমি। ডুরান্ড লাইনে পাকিস্তান ও আফগান সেনার মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওরা ‘দুশমন’ দেশের দু’জন পর্যটককে এখান থেকে ফেরত পাঠিয়েছে। ইটালিয়ান ভ্রমণকারী জলবায়ুর পরিবর্তন সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে ফিরে গেছে। সবার জন্য পামিরের ভিজ়িট পারমিট আপাতত বাতিল। উত্তেজনা, মনে উচাটন। আমারও কি কপালে গেরো! সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে হাসি মুখে তালিবান সর্দার বলল, “যে হেতু আপনি ভারতীয়, আমরা আপনাকে অনুমতি দিচ্ছি। কারণ ভারতীয়রা আমাদের ভাই।”

গুরুত্বপুর্ণ পামির করিডরে এখন চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। ফন্দি-চাতুর্যে চিকেন নেক দখল করাই চিনের ব্লু-প্রিন্ট। নগদের অভাব, তালিবানের পক্ষে প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নতি করা কঠিন। দেনা-ধার বিলিয়ে চিন আফগানিস্তানকে কব্জা করতে চাইছে। জানা গেল, গোপনে ওয়াখান করিডরে রাস্তা তৈরির কাজও চলছে।

পাকিস্তান সঙ্কীর্ণ ওয়াখান করিডর নামক চাপিয়ে দেওয়া ডুরান্ড লাইনকে মানে না। ওরা জমি দখল করে করিডরের উত্তর-দক্ষিণ অংশটা সম্প্রসারণ করে তাজিকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইছে। তাতে ‘ল্যান্ড-লকড’ তাজিকিস্তান পাকিস্তানের বন্দরগুলিতে যেতে সক্ষম হবে, বিনিময়ে পাকিস্তান সবচেয়ে সহজ পথে সম্পদসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ায় পৌঁছতে পারবে। কিন্তু আফগানিস্তান এর বিরুদ্ধে। করিডরের নিয়ন্ত্রণ হারালে চিনের সঙ্গে স্বার্থের দরাদরিতে ওরা কমজোরি হয়ে পড়বে।

*****

বায়ো-ব্রেকে যাত্রাবিরতি। এক ওয়াখি দম্পতি গাড়িতে লিফট চাইল। ওরা দশ কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে আসছে। রমণীর পিঠে দুধের শিশু। গাড়িতে এরই মধ্যে আছে এক সামরিক যোদ্ধা। যাবে বর্ডারে যুদ্ধ করতে। আদেশ এসেছে, কিন্তু তাকে সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। খানডোডের বর্ডার চেকপয়েন্ট থেকে আমাদের গাড়িতে উঠেছে। জায়গার অভাবে শিশুকে নিয়ে দম্পতিটি গাড়ির ওপেন বুট ক্যারিয়ারে মালপত্রের মাঝে কোনও রকমে বসল।

চিলকাণ্ড গ্রামে এসে খানিক অবসর। এক দল কিশোর আমাদের ঘেরাও করল। সবাই স্থানীয় স্কুলের ছাত্র। কয়েকটি কিশোরী একটু তফাতে বসে ছিল। ত্বকে কাঁচা হলুদের আভা, ডাগর ডাগর নীল চোখ, পাপড়ি-কোমল ঠোঁট। আলিমের (ইসলামিক শিক্ষক) কথায় লাজুক চাহনি নিয়ে ওরাও কাছে এল। ক্লাসে আরবি, পাখতুনের সঙ্গে ইংরেজি পড়ানো হয়। প্রিন্সিপাল ফৈজ় মহম্মদ স্কুলে আমাকে অভ্যর্থনা করলেন। ইংরেজি-শিক্ষক ফৈজ়ুল্লাহ জালিলি জানালেন, মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল নেই। সিক্সথ গ্রেড-এর পর নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ। তবুও ওরা চালিয়ে যাচ্ছে।

মহম্মদ করিম বললেন, গর্ভবতী মায়েদের অনিশ্চিত জীবন। সন্তান প্রসবকালে মৃত্যু নিয়মিত ঘটনা। ইস্কাশিম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতেই এক সপ্তাহ লেগে যায়। শীতকালে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি। ঠান্ডায় আরও খারাপ অবস্থা। মা আছে বাবা নেই, এমন অর্ধ-অনাথ মেয়ের অভাব নেই আফগানিস্তানে। অবিবাহিত ওয়াখি পুরুষদের নজর সেই দিকে। দেনমোহর দিতে হয় না।

১২,০০০ জনজাতির বেশির ভাগ ওয়াখি, হাজার খানেক কিরঘিজ়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিচ্ছিন্নতা। সাধারণ সুযোগ-সুবিধা তো দূরস্থান, মৌলিক মানবিক চাহিদা সম্পর্কেও এরা অবগত নয়। তালিবানরা আসার পর নৈরাজ্য, দুর্নীতি কিছুটা কমেছে, তবুও পাহাড়িয়াদের জন্য বরাদ্দ খোরাক যা পাঠানো হয়, ‘মিডিয়েটর’রা তা মাঝপথেই গ্রাস করে নেয়।

কিলাই পাঞ্জা গ্রামের সবচেয়ে ধনী, সৈয়দ আব্রাহাম শাহ ইসমাইলের পুত্র সালাউদ্দিন ইসমাইল ওদের বাড়িতে দাওয়াত দিল। ওয়াখিদের স্বাধীন রাজ্য কিলাই পাঞ্জা। এখানে তালিবানি শাসন চলে না। ষাট বছর বয়সি শাহ ইসমাইল, ওয়াখিদের পঞ্চম প্রজন্মের ‘মির’ বা রাজা। ওয়াখি মেয়েদের বিয়ের জন্য মিরের অনুমোদন নিতে হয়। কুমারীত্ব পরীক্ষা হওয়ার পর বিয়ে মঞ্জুর হয়। কী ভাবে হয়? ওরা নীরব।

ওয়াখি সম্প্রদায় প্রি-ইসলামিক জরথ্রুস্টীয় আমল থেকে এখানে বসবাস করছে। ইতিহাস-প্রাগিতিহাসের যাবতীয় ছাপ ধরা আছে এই রমণীয় ভূখণ্ডে। সুফিবাদে প্রভাবিত এরা ইসমাইলি মুসলিম, যেটা শিয়া ইসলামের একটি শাখা। আগা খান, যাকে নবি মহম্মদের সরাসরি বংশধর বলে মনে করা হয়, ওয়াখিরা তার অনুসারী। সপ্তম ইমামের নির্বাচন নিয়ে বিরোধের কারণে ওরা পৃথক হয়ে যায়। ইসমাইলিরা মসজিদে যায় না। ওদের আধ্যাত্মিক নেতা ৭৫ বছর বয়সি ‘শাহ রহিম আগা খান’ বর্তমানে পর্তুগালে থাকেন। দেয়ালে টাঙানো ওয়াখি দেউলে ইসলাম নবির স্যুট-টাই পরা ছবি।

সারহাদ-ই-ব্রোঘিল। প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের ছায়া। বহু শতাব্দী ধরে কালের প্রবাহে এখানকার দেহাতিরা একই ভাবে টিকে আছে। কোনও পরিবর্তন নেই। দূরে দূরে প্রত্যন্ত গাঁ-সমূহ। উঠেছিলাম লিটল পামির গেস্ট-হাউসে। একটাই থাকার জায়গা।

*****

জীবনদৃশ্য: কালাশনিকভ কাঁধে সীমান্তরক্ষীরা।

জীবনদৃশ্য: কালাশনিকভ কাঁধে সীমান্তরক্ষীরা। (ছবি: লেখক)

চাইনিজ় রোড কনস্ট্রাকশন প্রজেক্টের ছবি না তোলার নির্দেশ ছিল। বেখেয়ালে এক চাইনিজ় ইঞ্জিনিয়ারের ছবি তুলতে গিয়ে ধরা পড়লাম। মুসায়ের বলল, “অন্য কেউ হলে খবর হত।” ভারতীয় হিসেবে বিশ্বের আর কোথাও এমন গুরুত্ব পাইনি। কোথাও নেট নেই, ফোন নেই, কিন্তু চিনারা ওখানে স্যাটেলাইট ওয়াইফাই-এর ব্যবস্থা করেছে। এক মিলিটারি জওয়ান পাক-সীমান্ত থেকে তিন দিন ধরে পায়ে হেঁটে এখানে এসেছে শুধু বাড়িতে খবর দেওয়ার জন্য। পাকিস্তানিরা ডুরান্ড লাইনে আফগানিস্তানের কিছুটা অংশ দখল করার পর খবর পেয়ে ষোলো জন তালিবান যোদ্ধা সশস্ত্র আড়াইশো পাকিস্তানি ফৌজকে স্রেফ ধমকে হটিয়ে দেয়। মাদ্রাসা থেকে ‘রিক্রুট’ তরতাজা তালিবানদের মতো হিংস্র ও মারাত্মক যোদ্ধা আর কেউ নেই।

সাইনবোর্ডে লেখা ‘আফগানিস্তান ইজ় আ গ্রেভইয়ার্ড অ্যান্ড হেল ফর এভরি ইনভেডারঅ্যান্ড অ্যাগ্রেসর’।

পর্দা-ঘেরা মাটি-চেরা হট সালফার স্প্রিং। ওখানে পুরুষরাও প্রকাশ্যে শরীর হাট করে না। কিউ জাম্পিং করে সবার আগে আমার জন্য চানের ব্যবস্থা হল। কাঁধে কালাশনিকভ, দোর্দণ্ডপ্রতাপ সীমান্ত পাহারাদারদের পক্ষপাত দেখলে মনে টান ধরে যায়।

দিন ঘনিয়ে সাঁঝ ধরেছে, এক বালিকা রাখালি গরু চরিয়ে ঘরে ফিরছে। ইশারায় কাছে ডাকলাম, অপলক চোখে ভয়-ভয় ইতস্তত চাহনি। এরা ভিনদেশি দেখতে অভ্যস্ত নয়।

*****

সারহাদ পেরোতেই পাহাড়ের গভীর নদীখাত এবং খাড়া চড়াই শুরু হল। পণ্য পরিবহণের একমাত্র উপায় চমরি গাই। আচমকা পাহাড়ি বানে নদীর জলস্তরে উচ্ছ্বাস। গাড়ি আটকে গেছে নদীর উপলখণ্ডে। এই রুটে বিপর্যয় মোকাবিলার কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় আহমাদি ফিফ্‌থ গিয়ারে গাড়িটাকে নিয়ে একটা বিপজ্জনক খাদের কিনারা ঘেঁষে রাস্তায় উঠে এল। আমার বুকটা ভয়ে ধড়ফড় করে উঠল। পড়লে সটান আমু দরিয়ায়। অবশেষে অ্যাল্পাইন তৃণভূমি। যেখানে ইয়র্টে (কিরঘিজ় তাঁবু) বসবাসকারী তুর্কি-ভাষী কিরঘিজ় চমরি গাই-পালকরা বাস করে। ১২,৫০০ ফুট উঁচুতে গাঁ ‘বোজাই গুম্বাজ’। যাকে বলা হয় ‘জিব্রাল্টার অব হিন্দুকুশ’। অঞ্চলটা দখল করার জন্য এক সময় রাশিয়া ও ব্রিটেন উভয়ই মরিয়া ছিল। জায়গাটা পামির উপত্যকার পশ্চিম প্রান্তে। প্রশস্ত উপত্যকার এক পাশে লিটল পামির, অন্য পাশে হিন্দুকুশ।

সারা জীবন ধরে গৌরবময় হিন্দুকুশ পাহাড়ের নাম শুনে এসেছি। এখন চোখের সামনে সেই সুউচ্চ গ্রানাইট, ডায়োরাইটের অবয়ব সরীসৃপের মতো বিস্তৃত। আমি একই গিরিপথে দাঁড়িয়ে, যে পথে মার্কো পোলো তাঁর দুঃসাহসিক অভিযানেরনিশান উড়িয়েছিলেন।

মরক্কোর ভ্রামণিক ইবনে বতুতা এই গিরিশ্রেণিটির নাম দেন হিন্দুকুশ। যার অর্থ হিন্দু নিধনকারী। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে তুর্কিস্তানে যাওয়ার পথে অসংখ্য হিন্দু ক্রীতদাস এখানে হিমশীতল ঠান্ডায় মারা যায়।

পামির উপত্যকায় মাত্র ৮০০ জন কিরঘিজ় জনজাতির বাস। যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আটটা গ্রামে থাকেন। কিরঘিজ়রা যাযাবর চমরি গাই-পালক। সম্পদ আসে এই গাইয়ের দুধ দুয়ে। মহিলাদের অলঙ্কার, লাল পোশাক দেখে কিরঘিজ় সম্প্রদায় বলে চেনা যায়। সাদা হিজাব মানে বিবাহিত মহিলা, লাল হিজাব অবিবাহিত কুমারী মেয়েরা পরে। স্থায়ী কাঠামো (ইয়র্ট) করে তাঁবু বানায়। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিবির পরিবর্তন হয়। দুর্ভাগ্যবশত নিজভূমিতে কিরঘিজ়রা আজ ডোডোপাখির মতো অবলুপ্তির পথে।

বিপরীতে, ওয়াখি জনগোষ্ঠী বারোমেসে দরিদ্র কৃষক, মেষপালক। চেহারা ও জীবনযাত্রায় জিপসিদের সঙ্গে মিল। শীতকালে গ্রামে থাকেন, গ্রীষ্মে গবাদি পশু নিয়ে চারণভূমির খোঁজে গিরিপথে চলে যান। খুব কাছ থেকে এঁদের আচার-আচরণ, খাওয়াদাওয়া, তাঁদের বহুবর্ষজীবী কষ্ট আর সংগ্রাম দেখার সুযোগ হয়েছিল। শাসকের পতাকা পাল্টায় বার বার, কিন্তু এদের অবস্থা পাল্টায় না।

এক সময় বিলুপ্তপ্রায় ‘মার্কো পোলো শিপ’ ঘরের উঠোনে চলে আসত নুন খেতে, পিছন পিছন স্নো-লেপার্ড। এখন আর আসে না।

*****

জীবনদৃশ্য: চিলাকাণ্ড গ্রামের ইসলামিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা।

জীবনদৃশ্য: চিলাকাণ্ড গ্রামের ইসলামিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। (ছবি: লেখক)

আল্পাইন তৃণভূমি। গাছপালা নেই, রান্না হয় চমরি গাইয়ের গোবরের ঘুঁটেতে। দু’বেলা দু’মুঠো বলতে এখানে চমরি গাইয়ের দুধ, দই আর রুটি। কখনও ভেড়া বা গাই জবাই করে শরীরের প্রোটিন ঘাটতি মেটানো হয়। ছেলাব গ্রামের হারি আব্দুল্লাহ ওর কুটিরে নিয়ে গেল। আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই। গল্পের ফাঁকে জানলাম, ওদের প্রধান সমস্যা মাদকে আসক্তি। বংশপরম্পরায় গাঁজা, আফিমের ভোগবিলাস। তালিবান শাসক পপি চাষ বন্ধ করে দেওয়ায় দাম দশ গুণ বেড়ে গেছে। তাও রোজ নেশা চাই। নেশাই একমাত্র বিনোদন। মাদক নিয়ে ব্যাপারিরা আসে বদখশান থেকে। কিরঘিজ়রা চমরি গাই বেচে মাদক কেনে। এক সময়ের অগম্য অঞ্চল, এখন খানিকটা সুগম হয়েছে চিনারা সড়ক তৈরি করার পর। বিশ্বায়নের দাপট শুরু হল বলে। হারি আব্দুল্লাহ অনেক চমরি গাই হাতবদল করে গাড়ি কিনে পস্তাচ্ছে। খারাপ হলে সারানোর ব্যবস্থা নেই। মার্কো পোলোর যুগে যে ভূখণ্ড অদম্য, নিষ্কলুষ ছিল, সভ্যতার লোভী থাবায় দূষিত হয়েছে।

হারি আব্দুল্লাহর ইয়র্টে থাকার কথা ছিল, কিন্তু নজরে এল একটা কংক্রিটের নবনির্মিত হেলথ সেন্টার। আলাপ হল চিকিৎসক আব্দুল রহমান ইয়াকুবির সঙ্গে। কাবুল ইউনিভার্সিটি থেকে ডাক্তারি পাস করে সবে এখানে পোস্টিং পেয়েছেন। ওঁর গেস্ট রুমেই নাইট-হল্ট। সৌরশক্তিতে ঘরের বাতি, কলের জল। না চাইলেও যারে পাওয়া যায়। ভাবিনি এই উচ্চ দুর্গম প্রত্যন্ত এলাকায় এমন স্বাচ্ছন্দ্য মিলবে। আমার তখন ঠান্ডা লেগে স্বরভঙ্গ, কণ্ঠদাহ। কথা বলতে কষ্ট। উনি ডায়াগনোসিস করে চার রকমের ওষুধ দিলেন। ট্যাবলেটগুলোর একটা আফগানিস্তানে তৈরি, বাকি তিনটে পাকিস্তান, ভারত আর চিনের। জেনে অবাক হলাম, এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সব ওষুধের ‘সাপ্লাই’ হয়।

ওখানে বাচ্চাদের স্কুল নেই, মাদ্রাসা আছে। মাদ্রাসার মৌলবি খাতির করে শির-চায়ে (দুধ চা) খাওয়ালেন। হারি আব্দুল্লাহ চার জন শিশুকে নিয়ে এসেছে, ওরা ইসলামে দীক্ষিত হবে। এক মোল্লা সুরেলা কণ্ঠে ‘শাহাদাহ’ আবৃত্তি করলেন, ইসলাম ধর্মের গুণের প্রচার, দোষের প্রতিরোধ।

সামনে কেদারভূমিতে গোরস্থান। সেখানে জানলা দেওয়া মাটির ঘর বানিয়ে মৃতদেহকে কবর দেয়া হয়। ঘরগুলো অনেকটা বৌদ্ধ স্তূপের মতো। শবদেহের সঙ্গে রুটি রেখে আসে কিরঘিজ়রা। এতে প্রয়াতের মরণোত্তর মূল্যায়ন হয়। রুটি উধাও হলে মহাত্মা, নচেৎ পাপী। কিরঘিজ় যাযাবরদের মধ্যে কি বুদ্ধের প্রভাব আছে? ওয়াখানে ভারাং গ্রামে বুদ্ধের ধ্বংসাবশেষে একই ধরনের গম্বুজ আবিষ্কার হয়েছে।

পাথুরে জমিতে সুর্যের বেগুনি রশ্মিতে পোড়া হলুদ ঘাসভূমি— বন্য, অদম্য, প্রাণবন্ত। আনাচ-কানাচে ঘুরতে ঘুরতে একটা টিলা পাহাড়ের মাথায় উঠলাম, গোচরে আধা হিমায়িত নীল চাগমা-টিন হ্রদ। নীল আকাশে মেঘের উড়ান। বাতাস আর রোদের চুম্বনে পান্না সরোবর, বরফের মুকুট পরা পাহাড় থেকে ঝরে পড়ছে বরফের নদী। স্ফটিকস্বচ্ছ জলের শান্ত আরশিতে পাহাড়ের প্রতিবিম্ব। ভেড়ার পাল নিয়ে রাখাল চলেছে সরোবরের কিনারা ধরে। সরোবর তটে আমার নিরাপত্তার ঠিকা নেওয়া আহমাদি বন্দুক রেখে বিড়বিড় করে নমাজেরসুরা পড়ছে।

অভাবনীয় নির্জনতা, শান্ত স্নিগ্ধ বাতাবরণ, আমার উপলব্ধির মস্তিষ্কে তখন নজরুল ছেয়ে— ‘হায় ঋষি দরবেশ, বুকের মানিকে বুকে ধরে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।’

*****

উপরে ডান দিকে, কিরঘিজ় সম্প্রদায়ের বিবাহিতা মহিলারা। (ছবি: লেখক)

উপরে ডান দিকে, কিরঘিজ় সম্প্রদায়ের বিবাহিতা মহিলারা। (ছবি: লেখক)

স্মৃতিতে টগবগ, ক্লান্তিতে ম্রিয়মাণ, পামির উপত্যকায় থেকে ফিরে ইস্কাশিমের এক আফগানি সরাইখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আখ্যানে এমন একটি মধুর কাহিনি যোগ হতে যাচ্ছে, আমার জীবনে একটা স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।ওয়েটার খাবার দিয়ে গেল, কাবুলি পোলাও আর শঙ্কুতে গাঁথা কাবাব। আর পেটরোগা আমার জন্য আলুভাজা, স্যালাড, নমকিন লস্যি। উঁচু সিমেন্টের মাচা, তার উপর পাতা কুশন, তাকিয়া। জুতো খুলে তার ওপর উঠে হাঁটু ভাঁজ করে বাবু হয়ে অন্যদের সঙ্গে মুখোমুখি বসে আহার। রাজকীয় আফগানি তখত-তাউস স্টাইলে। মাঝে অলিন্দ, তার উল্টো দিকের তক্তায় বসে ছিলেন দশাসই দুই পাঠান। দৃষ্টি আমার দিকে। চোখাচোখি হতেই উঠে এসে আমার সামনে বসে বললেন, “বঘদ লাআ ঘরমা পাখের (গুড আফটারনুন)।”

না বোঝা কথায় আমাকে ইতস্তত করতে দেখে এ বার বললেন, “কেয়া আপ হিন্দুস্তানি হ্যায়?”

“হাঁ, আপ?”

“ম্যায় পাকিস্তানি, পেশওয়ার সে আয়া।”

নমস্তের প্রত্যুত্তরে আদাব। এটা-সেটা কথার পর ওঁরা বললেন, “কেয়া আপ জানতে হো ভারত নে পাকিস্তান পর হামলা কিয়া?”

না, শুনিনি তো! পামিরে ছিলাম, তাই কোনও যোগাযোগ ছিল না। ব্যস, যুদ্ধের আলোচনা ওখানেই শেষ। দু’জন দীর্ঘদেহী পেশোয়ারি পাঠান এ বার আমার আদর-যত্নে মন দিল। খাবার দিতে দেরি করায় মালিকের উপর চোটপাট করল। আমার খাবারের প্লেট সাজিয়ে দিল, আলুভাজায় মশলা মেশাল, শসা কেটে নুন ছড়াল। আমার অনুরোধে প্লেট থেকে আলুভাজার টুকরো মুখে ফেলে বলল, “স্বাদ আপ কি বজয়সে বেহতর হো গিয়া। আপ সে পহলে হামনে কোই হিন্দুস্তানি নেহি দেখা।”

বিদায় নেওয়ার আগে আমার জন্য আল্লার কাছে দোয়া করে গেল।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ, খবরটা পেলাম এক পাকিস্তানির মুখে আফগানিস্তানে। অভিজ্ঞতায় জানলাম, বিদ্বেষহীন মানবিক মানুষ যুদ্ধ নিয়ে মাথা ঘামায় না।

মার্কো পোলো পামিরের দুর্গম রেশম-বাণিজ্যপথে হেঁটে চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ১২৭১ সালে। আর আফগানিস্তানে প্রাক্‌-ইসলামিক যুগ থেকে বসবাসকারী প্রাচীন হিন্দু-শিখ সম্প্রদায়কে নিকেশ করা জঙ্গি ইসলামিদের দেশে এক ভারতীয় ঘুরে এল তালিবানের সাহচর্যে, নিশ্চিন্তে নিরাপদে— মার্কো পোলোর দেখানো পথে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Afghanistan Marco Polo taliban

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy