Advertisement
E-Paper

সরকার ‘খাপ’ খুলছে

নি র্ভয়া কাণ্ডের পর প্রবল হট্টগোলসহ ধর্ষণের আইন বদলানোর পর আমাদের জ্বলন্ত বিবেকে ছ্যঁাক করে ঠান্ডা জল, এবং ‘কী দিলাম!’ ভেবে আত্মপ্রসাদের ডিমে তা। ও দিকে যে রাজধানীতে এত কাণ্ড, সেই দিল্লিতে করা এক অনুসন্ধান দেখাচ্ছে, কেস জন্ডিসতর। দিল্লি সংলগ্ন উত্তর ভারত এমনিতেই অনার কিলিং এর জন্য জগদ্বিখ্যাত।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৬ ০০:০৩

নি র্ভয়া কাণ্ডের পর প্রবল হট্টগোলসহ ধর্ষণের আইন বদলানোর পর আমাদের জ্বলন্ত বিবেকে ছ্যঁাক করে ঠান্ডা জল, এবং ‘কী দিলাম!’ ভেবে আত্মপ্রসাদের ডিমে তা। ও দিকে যে রাজধানীতে এত কাণ্ড, সেই দিল্লিতে করা এক অনুসন্ধান দেখাচ্ছে, কেস জন্ডিসতর। দিল্লি সংলগ্ন উত্তর ভারত এমনিতেই অনার কিলিং এর জন্য জগদ্বিখ্যাত। ও তল্লাটে মেয়ে বাড়ির অমতে বিয়ে করলে সম্মানকাতর বাপ-মা হয় লোক লাগিয়ে কিংবা ‘বাছা রে জামাইষষ্ঠীর নেমন্তন্ন খাবি আয়’ বলে বাড়িতে ডেকে আনেন। তার পর পাড়াপড়শি-বন্ধুবান্ধব সহ জোর লাঠ্যৌষধি। কখনও মড়মড় করে হাত-পা ভেঙে নুলো করে দিয়ে ধীরেসুস্থে মেরে ফেলা হয়, কোথাও চুপচাপ ঘিলুতে ছাপ। কখনও ছেলে-মেয়ে দু’পিসেরই পঞ্চত্বপ্রাপ্তি, কখনও জোড়া পাখির একটিকে খালাস করেই, ‘মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং’ ফলোজ।

কী আশ্চর্য, এই ‘খাপ পঞ্চায়েত’ ছাপ্পা ঐতিহ্যপূর্ণ সুবন্দোবস্তের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন ও কঠিন ধর্ষণ আইন। তার ধারা-উপধারা খুব শক্তপোক্ত। এক বার ধর্ষণের অভিযোগ এলেই, ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার, জামিনের চান্স নেই। অভিযুক্তকেই কার্যত অপরাধ না-প্রমাণ করতে হবে, এবং দীর্ঘকালীন জেল-হাজত সুনিশ্চিত। এই আইনকে ব্যবহার করতে, ঝানু ও সম্মানকাতর নৈতিক অভিভাবকরা দিব্যি সিম্পল পদ্ধতি ইস্তমাল করতে পারেন। কপোতীটিকে ধরে এনে, রামঠ্যাঙানি দিয়ে, ‘ফুসলানো’ প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনালেই কেল্লাফতে। পুলিশও ‘আর প্রেম করবি?’ বলে সমাজসেবায় একপায়ে খাড়া। অতঃপর কপোতের ফরফরানি খতম। বিচার-ফিচার পরে হবে, আগে জেলের হাওয়া এনজয় কর অনির্দিষ্টকাল। কয়েদিদের হাতে ‘রেপ করেছিস?’ মরালবাণী সহ ধড়াদ্ধড় মার খা, পাড়াপ্রতিবেশী মুখ দেখা বন্ধ করুক, বিয়ের শখ ঘুচে যাক, তার পর দেখা যাবে।

গল্পকথা না, দিল্লিতে ২০১৩ সালের বিচার হওয়া সমস্ত ধর্ষণের মামলাগুলিকে আলাদা করে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, কম নয়, প্রায় অর্ধেক (৪০%) কেসই এই বস্তু। এ ছাড়াও এক-চতুর্থাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগের কারণ বিয়েতে অসম্মতি। আর যা ঠেকানোর জন্য এত কাণ্ড, অর্থাৎ বলপূর্বক যৌন নিগ্রহ, সেটার সংখ্যা হাতে গোনা, এক-তৃতীয়াংশ। ব্যাপারটা এমনও নয়, যে, নতুন আইন হয়েছে বলে ধর্ষিতারা থানায় গেলেই পুলিশ সোনামুখ করে ‘আসুন ম্যাডাম’ বলে অভ্যর্থনা করছে। সে পরিস্থিতি যে তিমিরে সে তিমিরেই। জিনিসটা উদ্বেগজনক এই কারণে, যে, যাদের এমপাওয়ারমেন্টের জন্য এত আন্দোলন, সেই আইন তাদের বিরুদ্ধেই তুমুল দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে। মরাল অভিভাবকরা ফুর্তিতে ডগমগ। অন্য দিকে যাঁদের উদ্যোগে আইন, তাঁরা মিডিয়ায় হাই-প্রোফাইল বিচারসভা বসিয়ে শর্টকাটে সেনসেশন তৈরি করলেই জেন্ডার-জাস্টিসের ছানা ডিম থেকে বেরিয়ে নিজে-নিজেই ডানা মেলে উড়ে যাবে, এ রকম আকাশ-কুসুমের ওমলেট রান্না করছেন।

bsaikat@gmail.com

Rabibashariya Saikat Bhandhapadhayay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy