Advertisement
E-Paper

জন্মদিনের রসিকতায় ‘TV’কে ‘VT’ বলেছি!

দে খতে দেখতে চল্লিশ বছর হয়ে গেল কলকাতায় টেলিভিশন আসার। ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট ঘোষিকা শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত বাংলা টেলিভিশনের প্রথম মুখ হিসেবে পরদায় এসে বললেন, ‘আজ থেকে কলকাতা টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হল।’ সাড়ম্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে যাত্রা শুরু হল, কিন্তু তার পরের দিনই, ১০ অগস্ট, কোনও অনুষ্ঠানই প্রচারিত হল না।

পঙ্কজ সাহা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
কলকাতা টেলিভিশনের প্রথম দিন। স্টুডিয়োতে সিদ্ধার্থশংকর রায় (বাঁ দিকে), বিদ্যাচরণ শুক্ল, ধরমবীর সিংহ।

কলকাতা টেলিভিশনের প্রথম দিন। স্টুডিয়োতে সিদ্ধার্থশংকর রায় (বাঁ দিকে), বিদ্যাচরণ শুক্ল, ধরমবীর সিংহ।

দে খতে দেখতে চল্লিশ বছর হয়ে গেল কলকাতায় টেলিভিশন আসার। ১৯৭৫ সালের ৯ অগস্ট ঘোষিকা শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত বাংলা টেলিভিশনের প্রথম মুখ হিসেবে পরদায় এসে বললেন, ‘আজ থেকে কলকাতা টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হল।’ সাড়ম্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে যাত্রা শুরু হল, কিন্তু তার পরের দিনই, ১০ অগস্ট, কোনও অনুষ্ঠানই প্রচারিত হল না। কারণ, ৯ অগস্ট রাতে ভীষণ ঝড়ে রাধা ফিল্ম স্টুডিয়োর সঙ্গে গল্ফ গ্রিনে আমাদের ট্রান্সমিটারের সংযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চারিদিকে সমালোচনার ঝড়। দিল্লি থেকে উড়ে এলেন টেলিভিশনের প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল পি ভি কৃষ্ণমূর্তি। আমাদের বললেন, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের উপর তো আমাদের কোনও হাত নেই, কিন্তু এ দেশে কোনও কিছু ঠিক সময়ে চলে না, কেবল ব্রডকাস্টিং আরম্ভ হয় ডট টাইমে। আজ আমরা আবার ঠিক সময়েই ট্রান্সমিশন আরম্ভ করব, ঘাবড়ানোর কোনও কারণ নেই।’ গল্ফ গ্রিনের ট্রান্সমিটারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় একটা ছোট অস্থায়ী স্টুডিয়ো তৈরি করা হল। কৃষ্ণমূর্তিজি আমাকে বললেন, ‘তুমি মেক-আপ করে তৈরি হয়ে থাকো, যদি ঠিক সময়ের মধ্যে স্টুডিয়োর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন সম্ভব না হয়, তা হলে তুমি কথা বলে, কবিতা বলে, নানা রকম গল্প বলে ট্রান্সমিশনের সময়টা কাটিয়ে দেবে।’ সন্ধে সাড়ে ছ’টার আগেই সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হল। মেক-আপ করে তৈরি হয়েই ছিলাম, তাই সে দিন আমাকেই প্রথম ঘোষণা করতে বলা হল।
প্রথম দিন স্টুডিয়োতে ভিআইপিদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল, ডেপুটি মিনিস্টার ধরমবীর সিংহ, রাজ্যের তরুণ তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কলকাতায় টেলিভিশন চালু হওয়ার পিছনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল, এখন সে কথা অনেকেই ভুলে গেছেন। আমাদের এখানকার অনেক আগেই ঢাকাতে টেলিভিশন চালু হয়েছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল জামিল চৌধুরীর নেতৃত্বে হামিদা আতিক, শাহনাজ রহমতুল্লাহ প্রমুখ শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেন।

কলকাতা টেলিভিশনের এক বছর পূর্ণ হলে, আমরা খুব উদ্দীপনার সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করি। সেই থেকে কলকাতা দূরদর্শনের জন্মদিন প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। দর্শকরা ৯ অগস্ট দিনটাকে পরিবারের এক সদস্যের জন্মদিন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সকাল থেকে তাঁরা টালিগঞ্জের টিভি সেন্টারে এসে অভিনন্দন জানাতেন। কেউ বাড়িতে তৈরি কেক নিয়ে আসতেন, কেউ মিষ্টি, কেউ ফুল। সারা দিন অবিরাম ফোনে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেন দর্শকরা। একেবারে শুরু থেকেই দর্শকদের সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যে ‘দর্শকের দরবারে’ চালু করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে দূরদর্শনের প্রতিনিধি হিসেবে আমি দর্শকদের চিঠিপত্রের জবাব দিতাম, দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতাম। ‘দর্শকের দরবারে’র জন্য টিভির জন্মদিনে দর্শকরা রাশি রাশি চিঠি লিখতেন, কার্ড এবং ছবি এঁকে পাঠাতেন। প্রথম বছরের জন্মদিনে সমস্ত ট্রান্সমিশনে সংবাদ ছাড়া পুরোটাই ছিল লাইভ বিশেষ ‘দর্শকের দরবারে’। দর্শকদের মধ্যে একটা নিবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা আহ্বান করা হয়েছিল, বিষয় ‘টেলিভিশনের সামাজিক ভূমিকা’। নির্বাচিত দর্শকদের সে দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা খোলাখুলি মত বিনিময় করেন। ডিরেক্টর মীরা মজুমদার অনুষ্ঠানে সেরা পত্রলেখকদের পুরস্কার দেন। স্টুডিয়োতে ছিলেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি সেই বিশেষ ‘দর্শকের দরবারে’ নিয়ে তাৎক্ষণিক ছবি আঁকেন। ছিলেন সদ্য গ্রিস-প্রত্যাগত তরুণ ভাস্কর প্রবীর ব্যাপারী। দর্শকদের মধ্যে থেকে কয়েক জনকে বেছে নিয়ে তিনি দ্রুত তাঁদের মূর্তি গড়েন, মূর্তিগুলো তাঁদের উপহারও দেওয়া হয়। সে দিনের অনুষ্ঠানে আমাকে সহযোগিতা করেন ঘোষিকা চৈতালী দাশগুপ্ত ও রুমা চট্টোপাধ্যায়। দর্শকদের কোন কোন প্রস্তাব আমরা মানতে পেরেছি, তার একটি তালিকা প্রত্যেক বছর জন্মদিনের ‘দর্শকের দরবারে’ পেশ করা হত। যেগুলো পারিনি, তার পিছনের কারণগুলোও কবুল করা হত।

এক বার জন্মদিনে এক দর্শক একটা সুন্দর কার্টুন এঁকে পাঠালেন। টিভি একটা ছোট্ট খোকা, সন্ধেবেলা একটুখানি জেগে থাকে আর সারা দিন সারা রাত ঘুমোয়। আমাদের ভুলভ্রান্তির জন্যে কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগের জন্যে স্টুডিয়োতে রেকর্ডিংয়ের সময়, আবার কখনও পরদাতেও অনেক মজার পরিস্থিতি তৈরি হত। সে সব নিয়ে এক বারের জন্মদিনে নিজেদের ব্যঙ্গ করে আমি ‘TV-VT’ নামে একটা অনুষ্ঠান প্রযোজনা করেছিলাম। সব উলটোপালটা হয়ে যেত বলে TV-র উলটো VT শব্দটাকে নামে আনা হয়েছিল। শুধু দর্শকরা নয়, আমরা নিজেরাও উপভোগ করেছিলাম।

pankajsaha.kolkata@gmail.com

Pankaj Saha kolkata doordarshan TV
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy