Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Bengali Novel

হাওয়ার আড়ালে

শুধু কথার কথা নয়, সত্যি ‘সমুদ্রগুপ্ত’ নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে এখন স্টুডিয়োগুলোর আনাচে কানাচে। খবরের কাগজেও এই নিয়ে প্রায় প্রতি রবিবারেই লেখালেখি বেরোচ্ছে।

ছবি: পিয়ালী বালা।

ছবি: পিয়ালী বালা।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২৩ ০৯:২৯
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: নতুন সিরিয়াল ‘চুয়া-নন্দিনী’-তে চুয়ার রোলে অভিনয় করছে মিশুক। সে কস্তুরীর সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখে। পরিবারের খোঁজখবর নেয়। মাঝে আকিঞ্চনের নানা কথা মনে পড়ে কস্তুরীর। সে ভাবে, আকিঞ্চনের মতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্বভাবের মানুষ জেলখানা কেমন করে দিন কাটাচ্ছে। নানা কথা মনে এলেও আকিঞ্চনের প্রতি সহানুভূতি আসে না তার। সে দিনই ওদের বাড়ি এসে হাজির হন স্বর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। কথায় কথায় জানা যায়, সে দিনই স্বর্ণেন্দু আর মেহুলির বিদেশযাত্রার দিন। খোলামেলা স্বর্ণেন্দুর স্পষ্ট কথায় কিছুটা হলেও মনের মেঘ কাটে কস্তুরীর। তবে সে বুঝতে পারে না, কেন স্বর্ণেন্দুকে তার এত চেনা চেনা লাগছে। স্বর্ণেন্দুর দেওয়া বইয়ের লেখক পরিচিতি থেকে সে জানতে পারে, স্বর্ণেন্দুর জন্মস্থান উত্তরবঙ্গের মালবাজার। সে নিশ্চিত হয়, স্বর্ণেন্দুর আর কেউ নন, ইনি কস্তুরীর সেই যৌবনে হারিয়ে যাওয়া ভালবাসার মানুষটি। তার বইয়ের প্রচ্ছদে কস্তুরীরই মুখের আদল ফুটে আছে।

তবে ওয়েবে আপলোড হওয়ার সঙ্গে পেমেন্টের কোনও সম্পর্ক নেই। হাউস থেকে তার কাছে ফোন এসেছে এই নিয়ে বার তিনেক। কিছুতেই টাইম বার করতে পারছিল না মিশুক। আজ স্থির করেছিল, যা-ই ঘটুক, বৃষ্টি নামুক বা ভূমিকম্প হোক, দাসানি থেকে এক বার ঘুরে আসবেই। তার পরে মাফিনের খাবার আর ওষুধ কিনতে হবে। এমনিতে সে সব খায়, খাবার নিয়ে কোনও বাছবিচার নেই। তবে বেশ কয়েক দিন পর পর লুজ় মোশন হওয়ায় এক জন পেট-ডক্টরকে দেখাতে হয়েছে।

এক বার তুষারদার কাছেও যেতে হবে। সামনেই ইয়ার এন্ডিং। মার্চ পেরোলেই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। তার আগে প্রতি বার ট্যাক্স সেভিংসের জন্য কিছু প্ল্যানিং করে তুষারদা। কাল রাতে ফোন করেছিল, কী একটা নাকি বন্ড বাজারে এসেছে। খুবই লাভজনক। তবে ও সব নিয়ে মিশুক কোন দিনই বা মাথা ঘামায়। এমনিতে তার খাতায় যা টিডিএস জমে তাতে আলাদা ট্যাক্স পেমেন্ট তাকে করতে হয় না। বরং ইনকাম ট্যাক্স রিফান্ড আসে অনেকটাই। স্টুডিয়োর অনেকেরই খাতা খোলা আছে তুষারদার কাছে। ট্যাক্স বাঁচানোর প্রচুর ঘাঁতঘোঁত জানা আছে ভদ্রলোকের।

এই সব মিটে গেলে অবশেষে সব্যর সঙ্গে দেখা করার কথা। ব্যাটা দিব্যি ডুব মেরে আছে। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে কথা কাটাকাটি হবে, মান-অভিমান হবে, তবে না প্রেম জমে ক্ষীর হবে! ব্যাপারটা কিছুই নয়। মিশুকের খুব ইচ্ছে জেগেছে একটা বিদেশি ফোনের লেটেস্ট মডেলটা কিনবে। হ্যাঁ, দাম একটু বেশি, মানে লাখের উপরে আর কী। শুনেই সব্যসাচী আগুন! তার মতে কোনও মানেই হয় না একটা ফোনের জন্য এত টাকা খরচ করার। তার চেয়ে দেখেশুনে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি নিতে পারে সে। হয়তো এক লাখ টাকায় হবে না, তবে সব্য হেল্প করলে হতেই পারে। সব্যর মতে এই মুহূর্তে মিশুকের সবচেয়ে দরকার একটা গাড়ির। গাড়িটা থাকলে আর মিশুক ড্রাইভিংটা শিখে নিলে এই রোজ রোজ অ্যাপ ক্যাবের পিছনে গাদাগুচ্ছের টাকা খরচ হয় না।

আর একটা প্রোপোজ়ালও ছিল। যদি গাড়িটা সব্যসাচীই গিফট করে। মিশুক এক বার ঠান্ডা চোখে তাকাতেই দ্বিরুক্তি করেনি সব্যসাচী।

এটা গত শুক্রবারের ঘটনা। রাজারহাটের রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানে হাতের ভাঁড়টা সজোরে মাটিতে আছড়ে ফেলে চলে যায় সব্য। কখনও এত মাথা গরম করতে মিশুক দেখেনি তাকে। একটা মোবাইল ফোন কেনা নিয়ে, তাও মিশুকের নিজের উপার্জনের টাকায়... কোনও মানে হয়?

এনটিওয়ান থেকে দাসানি খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু আজ সারা দিন এত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যে, আর হাঁটতে ইচ্ছে করছিল না। মিশুক একটা অ্যাপ ক্যাব বুক করতে করতে মনে মনে হাসে। বাবুর গোঁসা হয়েছে। এত দিন হোয়াটসঅ্যাপের কোনও রিপ্লাই দেয়নি, অথচ সব ক’টা মেসেজ পড়েছে দিব্যি, বুঝতে পারছিল সে। আজ সকালে স্টুডিয়োতে আসার পথে বিবিকে ফোন করে সামান্য কথা বলেই ফোন লাগিয়েছিল সব্যসাচীকে। এক চান্সে ফোন ধরেই সব্য বলেছিল, “বল, কী বলবি?”

“দেখ, আমি ন্যাকামি করে বলব না, এত দিন কোন চুলোয় ছিলি কিংবা ফোন ধরছ না কেন গো?”

“যা বলার বলে ফেল।”

“আজ দেখা করবি?”

“আজ? আজ তো বিকেলের দিকে একটা...”

“জুতোব। বুঝলি? আজ না এলে স্রেফ তোর বাড়ি গিয়ে জুতোব। চলে আয় স্টুডিয়োতে। আমি বিকেলে দাসানিতে থাকব।”

“হবে না রে। বিলিভ মি নিনি...”

“ফের?”

“আরে সত্যি বলছি। অফিসের কাজ নয়। বাড়িতে আজ দিদি-জামাইবাবু আসছেন। তুই এক কাজ কর। আমাদের বাড়িতে চলে আয়।”

“না। বাড়িতে তোকে পেটাতে পারব না। রাস্তায় নাম। তোর কাকার নাম নিমাই করে ছেড়ে দেব।”

“ফোনটা কিনলি?”

“নাঃ।”

“কিনবি না?”

“কিনব। ইনস্টলমেন্টে।”

“অ। মানে কিনবিই?”

“কাম অন সব্য। কী হচ্ছে বাচ্চাদের মতো? বুঝতে পেরেছি। অনেক দিন হাতের চড় খাসনি তো, তাই।”

“মাইরি মারিস না। তোর রোগা রোগা আঙুলের মার, হেব্বি লাগে রে।”

“সে ভয় থাকলে চলে আয়। এই ধর আটটার মধ্যে। গল্ফ গ্রিন।”

দাসানির গেট দিয়ে ঢুকতেই চমক। সামনে অর্ক। মিশুক লক্ষ করল, ওকে দেখেই অর্কর চোখে একটা ঝিলিক দেখা দিল। ওকে অ্যাভয়েড করতেই চেয়েছিল মিশুক, কারণ আজ একদম হাতে সময় নেই। কিন্তু সে দিনের বিপদে অর্ক যে ভাবে হেল্প করেছিল, সে কথা মনে আসতেই একটু হেসে মিশুক বলল, “কী? কেমন আছ?”

চোখের সামনে চলে আসা চুল সরিয়ে অর্ক নির্মল হাসল, “ভাল আছি। তুমি? এখন কী করছ?”

মিশুক বলল। ভদ্রতাবশত সেও জানতে চাইল অর্ক এখন কী করে। অর্ক বলল, “একটা সিরিয়ালে আছি। খুব ছোট রোল। তবে মেনলি আমি আর একটা কাজের ডিরেকশন দিচ্ছি। মানেএ ডি আর কী।”

“ডিরেকশন? গুড। কোন সিরিয়াল?”

“সিরিয়াল নয়। মুভি। ‘সমুদ্রগুপ্ত’।

“তাই নাকি! শুনেছিলাম তো বিগ বিগ বাজেটের মুভি। তুমি আছ ওতে? ওয়াও!”

শুধু কথার কথা নয়, সত্যি ‘সমুদ্রগুপ্ত’ নিয়ে একটা আলোচনা হচ্ছে এখন স্টুডিয়োগুলোর আনাচে কানাচে। খবরের কাগজেও এই নিয়ে প্রায় প্রতি রবিবারেই লেখালেখি বেরোচ্ছে। ইন্দ্রজিৎ দত্তচৌধুরীর ডিরেকশনে এত বড় প্রজেক্ট আজ অবধি হয়নি টলিউডে। শোনা যাচ্ছে এই প্রথম হলিউড থেকে কে এক জন আসছেন অভিনয় করতে। এক জন প্রস্থেটিক আর্টিস্টকেও নাকি উড়িয়ে আনা হচ্ছে কানাডা না বলিভিয়া থেকে। তবে মিডিয়ার সামনে এখনই কিছু ভাঙছেন না ইন্দ্রজিৎ। সবটাই হচ্ছে পার্পল স্টুডিয়োতে, কড়া নিরাপত্তার ভিতরে। সব মিলিয়ে হইহই রইরই ব্যাপার। কিন্তু কাল ময়দানের ঘাসে পা ভেজানো ছেলেটা সোজা বিশ্বকাপে চান্স পেল কী করে? তবে এই প্রশ্নটা করা যাবে না। এটিকেটে আটকাল মিশুকের। সে বলল, “কনগ্র্যাটস। শুটিং চালু?”

“হ্যাঁ। হ্যাঁ। এক মাস হয়ে গেল। বিশাল প্রজেক্ট। শেষ হতে হতে মে মাস।”

অনেক কিছু জানার জন্য মনটা আকুলিবিকুলি করে উঠছিল, কিন্তু এক জন জুনিয়র আর্টিস্টের কাছে এত কৌতূহল দেখানো ভাল নয়। বিশেষ করে হলিউড অভিনেতার ব্যাপারে। কে আসছে? ইস, যদি উইলস স্মিথ হয়? ভাবা যায় না। তবে যদি স্মিথ হয়, তা হলে এক বার যে করেই হোক দেখা করতেই হবে। সারা দিন দাঁড়িয়ে লাইন দিয়ে হলেও। মিশুক স্মিথের ব্লাইন্ড ফ্যান। কী সব মুভি! ‘দ্য পারসুট অব হ্যাপিনেস’, ‘আই অ্যাম লেজেন্ড’, ‘ব্যাড বয়েজ়’, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’, ‘মেন ইন ব্ল্যাক’! স্মিথের সব ক’টা কাজই মিশুকের দেখা। এমনকি টেলিভিশনে করা স্মিথের ‘দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অব বেল-এয়ার’ও। হয়তো অর্ককে জিজ্ঞেস করলেই হয়, কিন্তু...

“তা এখানে কী? সিরিয়াল করছ এখনও?”

“আরে না। বললাম না সিরিয়ালে আমার খুব ছোট ক্যারেক্টার। তাও প্রায় শেষ। আজ এসেছিলাম পেমেন্ট নিতে। তাও অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ইন্দ্রজিৎদার পারমিশন নিয়ে। আমি আসি, কেমন? এক দিন এসো না পার্পল টাউনে।”

মুহূর্তে মনটা লাফিয়ে উঠলেও নিজেকে সামলে নিল মিশুক। আদেখলাপনা হয়ে যাবে। সে মুখে বলল, “আসলে আমিও সুপার্ব বিজ়ি।দেখি এক দিন।”

“হ্যাঁ। ভাল কথা, কনগ্র্যাচুলেশনস। চুয়া-নন্দিনীর টিআরপি তো হাই।”

“ওই আর কী। তুমি দেখো?”

“না। বাড়ি ফিরতে ফিরতে এগারোটা-বারোটা। তবে বাড়ির সবাই দেখে। মা, দিদি তো নাকি হাসতে হাসতে মাটিতেই পড়ে যায়। হাউসকে বলবে রিপিট টেলিকাস্টটা যেন রাত একটার পরে দেয়?”

“অ্যাপে দেখে নিয়ো।”

“জিও! এই ব্যাপারটা তো মাথাতেই আসেনি! গুড আইডিয়া। আমি আসি। নইলে ইন্দ্রজিৎদা গালাগালি দেবে।”

অর্ক চলে গেছে। তরুণবাবুকে ফোনটা করে মিশুক দাঁড়িয়েছিল। তরুণবাবু দাঁড়াতে বলেছেন। চেক নিয়ে আসছেন। সে আসুন, মিশুকের মন পড়েছিল অর্কর দিকে। একেই বলে কপাল! একটা ছেলে, একটা-দুটো সিরিয়াল করেই সোজা ইন্দ্রজিৎদার ব্যানারে। কিন্তু ও তো এডিটিং নিয়ে লেখাপড়া করেছিল। নির্দেশনার ডাক পেল কী করে? ইন্দ্রজিৎদার মুখটা মনে পড়ল। অনেক বছর আগে ইন্দ্রজিৎদার ডিরেকশনে একটা ডেলি সোপে মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়েছিল মিশুক। সেটা তার স্ট্রাগলিং পিরিয়ডের প্রথম দিকের কথা। খুব ইচ্ছে ছিল পরে মানুষটার সঙ্গে আরও কিছু কাজ করবার। কিন্তু ইন্দ্রজিৎদা আর ডাকেননি। হয়তো মিশুকের তখনকার অভিনয় তেমন চোখে পড়ার মতো ছিল না। আর এখন তো মানুষটার আশপাশে যাওয়াই মুশকিল। ইন্দ্রজিৎদা অনেক আগে বাংলায় কাজ করতেন। এই সব স্টুডিয়োগুলোতে। বছর পাঁচেক হল মুম্বই চলে গেছেন। ইন্দ্রজিৎদার লাস্ট ডিরেকশন বিদেশে রুপোর ভল্লুক পেয়েছিল।

মিশুক খবর পেয়েছিল, ‘সমুদ্রগুপ্ত’ প্রোডিউস করছে ‘ওল্ড প্রোভার্বস’। ‘ওল্ড প্রোভার্বস’-এর হীরেন সান্যালকে চেনে মিশুক। এক দিন কফি শপে হিয়ান্তিকার সঙ্গে আড্ডা মারার সময় দেখা হয়েছিল হীরেন সান্যালের সঙ্গে। সে দিনই গল্পে গল্পে ‘সমুদ্রগুপ্ত’-র আভাস পেয়েছিল মিশুক। সেও সামান্য পিআর করেছিল দাঁও বুঝে। কিন্তু পরে আর ব্যাপারটা নিয়ে প্রসিড করা হয়নি। এখন ভাবলে আফসোস হচ্ছে। মিশুক ভাবল, সেটা কি আসলে অর্ককে দেখার পরে? হয়তো। আরও একটা ব্যাপার ছিল। ‘রাঙামাটির মেয়ে’ শেষ হওয়ার মাসচারেক আগেই মণিজিঞ্জির ছেড়ে যায়। তার জায়গায় আসে পূবালী। মণিজিঞ্জির বলেছিল, টাকাপয়সা নিয়ে কী সব ঝামেলা হয়েছে ‘ওয়ান্ডারমোমেন্টেস’-এর সঙ্গে।

পরে খবর পেয়েছিল, সবটাই মিথ্যে। ‘সমুদ্রগুপ্ত’ মুভির জন্য ডাক পেয়েছিল মণিজিঞ্জির। সুযোগ হাতছাড়া হোক এটা হয়তো চায়নি মণিজিঞ্জির, তাই মিথ্যে বলেছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে তো কাঠি করার লোকের অভাব নেই। হয়তো হাউস থেকেই নির্দেশ ছিল কোথাও মুখ না খোলার।

তবে মিশুক জানে, তার মতো সবারই মনে খচখচানি ভাবটা রয়ে গেছে। আসলে এই স্টুডিয়োগুলোর সবাই চায় এক দিন না এক দিন ছোট পর্দা ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় পর্দায় মুখ দেখাবে। কারও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে, কারও ভাগ্যে আজীবন হিরোর বন্ধু অথবা হিরোইনের বৌদি।

যেমন সতীনাথ শিকদার। এঁর কথা শোনা হীরেন সান্যালের মুখ থেকেই। হীরেন সান্যালরা ডাকত সতীবাবু বলে। তখনও ইন্ডাস্ট্রিতে বয়স নির্বিশেষে সবাইকে দাদা বলে ডাকার অভ্যেস শুরু হয়নি। টিভির পর্দা যখন সাদা-কালো। সিরিয়াল হত বারো-তেরো, বড় জোর কুড়ি-একুশ এপিসোডের। টেলিকাস্ট হত সপ্তাহে এক দিন। সতীনাথবাবু আগে বোধহয় সিনেমা করতেন, তবে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। পার্শ্বচরিত্র। তবে সিরিয়ালে তিনি বেশ দাপুটে অভিনেতা হয়ে উঠেছিলেন। প্রথম একান্ন এপিসোডের সিরিয়াল ‘বিশ্বনাথ’। নামভূমিকায় ফাটিয়ে দিয়েছিলেন সতীনাথবাবু।

তার পর অনেক সিরিয়ালে পর পর ডাক পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ক্রমশ সন্ধে ঘনিয়ে এল। এক সময় এমন হল যে, জনপ্রিয় সিরিয়াল, তিনিও আছেন, তবে ডায়লগ প্রায় নেই বললেই চলে। এক বার শুধু মুখের এক্সপ্রেশন। শোনা যায় বেশ কয়েকটি হাউসের কাছে টাকা পেতেন তিনি। বকেয়া টাকার জন্য স্টুডিয়োয় আসতেন আর চেষ্টা করতেন যদি নতুন কিছু কাজ পাওয়া যায়। তার পর কবে থেকে যেন আর আসেননি এ দিকে। তিনি আছেন না মারা গেছেন, সে খবরও কেউ জানে না। এই তো জীবন, কালীদা!

“ম্যাডাম, চেকটা।”

ভীষণ অন্যমনস্ক হয়ে ছিল মিশুক। তরুণবাবু কখন সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, লক্ষই করেনি সে।

“কিছু ভাবছিলেন? ভাববেন না। আকাশ এমনি মেঘলা। বৃষ্টি আসবে না।”

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Novel Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE