Advertisement
E-Paper

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:০৩

কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে গোটা দেশ আলোড়িত! সেখানে বলা হয়েছে, সামনের বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য যাঁরা নমিনেশন পাবেন, তাঁদের হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে তাঁরা কোনও নেশা-ভাঙের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁরা সত্যি বলছেন কি না জানতে মনোনীত শিল্পী-কলাকুশলীদের ডোপ পরীক্ষাও করা হবে। পাশ করলে তবেই জুটবে সম্মান। নেশা-মুক্ত দেশ গড়ার পদক্ষেপ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত বলে মন্ত্রক জানিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, কিছু দিন পর থেকেই সাহিত্য আকাদেমি-ভারতরত্ন-পদ্মশ্রী সহ সরকারি সমস্ত পুরস্কার-খেতাব এই তালিকায় স্থান পাবে। কিছু দিনের মধ্যেই নিষিদ্ধ মাদকের তালিকা জানিয়ে দেওয়া হবে। শুধু মদ-গাঁজা নয়, চা-কফির মতো ‘বিষ’ও তালিকায় থাকছে। নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ চলছে। সিদ্ধান্ত কানে আসা মাত্রই টলিপাড়ায় তিনটি তথ্যচিত্র তৈরি হচ্ছে। দেশের বহুত্ববাদকে মাথায় রেখে হচ্ছে ‘যত pot তত মদ’, চিত্রনাট্যকারদের সংগঠন তৈরি করছেন ‘আ যা গাঁজা’, আর কলাকুশলী ইউনিয়ন-এর প্রজেক্ট ‘দিনে কোলাহল, রাতে অ্যালকোহল’! কফি হাউসের সামনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ‘ওপেন অ্যান্ড ওপেন’ ক্যাম্পেন শুরু করেছেন। ছিপি খুলে প্রকাশ্যে গলায় ঢেলে মিছিল। দক্ষিণ কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রবীণ-নবীন গীতিকার-সুরকাররা ‘আগুন জ্বালো আগুন জ্বালো’ স্লোগানে গাঁজার কলকেতে আগুন লাগিয়ে ‘প্রসাদ’ বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে। দেশের প্রায় সব সিনেমা হলে ‘শরাবি’ ছবিটি চালানো হবে, যত দিন না সিদ্ধান্তের বদল হচ্ছে। সবচেয়ে বড় খবর, দেশের এক নম্বর অভিনেতা, যিনি শাসক-ঘনিষ্ঠ বলে খ্যাত এবং যাঁঁর শীর্ষাসন-রত ছবিই কেন্দ্রীয় যোগ প্রকল্পের লোগো— এই সিদ্ধান্তকে ‘জোলো-ধোঁয়াটে’ অভিহিত করে অভিনয় ছেড়ে দিচ্ছেন বলে টুইট করেছেন।

সুশান্ত ঘোষাল, কালনা

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

খেলার মাঠে দশক পার

১৯৮৭-র বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ইডেনে সেই প্রথম এত বড় স্পোর্টস ইভেন্টের ফাইনাল। ’৮৩-র চ্যাম্পিয়ন ভারত সে বার সেমিফাইনালে হেরে যায়। তা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ফাইনাল দেখতে মাঠে ছিল নব্বই হাজার দর্শক। তাদের চিৎকার দুই বিদেশি দলকে কখনও বুঝতে দেয়নি, ইডেনে তাঁরা শুধুই অতিথি। খেলা শেষে অতীত দিনের ক্রিকেটার মুস্তাক আলি, বিজয় হাজারে, চাঁদু বোড়ে, পঙ্কজ রায়, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, পিটার মে, হানিফ মহম্মদ, জাহির আব্বাসদের খোলা জিপে চড়িয়ে শুরু হয় ইডেন পরিক্রমা।

মাঠ থেকে ফেরার পর আমাকে পাঠানো হল গ্র্যান্ড হোটেলে, আগের তিন বারের ফাইনালিস্ট এবং দু’বারের চ্যাম্পিয়ন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম ক্যাপ্টেন ক্লাইভ লয়েড-এর ইন্টারভিউ নিতে। আমার জীবনের এক দারুণ অভিজ্ঞতা। ভিড়-ঠাসা লাউঞ্জ পেরিয়ে সকলের অলক্ষে তখনকার মুঘল-রুম আর সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে গিয়ে ভিআইপি লিফ্‌ট ধরে সোজা লয়েডের দরজায়। ‘কাম-ইন’ শুনে দরজা খুলে যে দৃশ্য দেখেছিলাম, জীবনে ভুলব না। সবে ম্যাচ দেখে ফিরেছেন। ‘ফ্রেশ’ হবেন বলেই হয়তো গায়ের জামা-প্যান্ট সব ছেড়ে খাটের ওপর বসে। হ্যান্ডব্যাগের মতো একটা কিছু তাড়াতাড়ি কোলের ওপর রেখে আব্রুর নিয়মরক্ষা করলেন। মাত্র দু’ফুট কাছ থেকে ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির ওই দশাসই কালো পাথরে-কোঁদা শরীর দেখে তখনই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম, ভাগ্যিস ওঁর লেভেলে ক্রিকেটটা খেলতে হয়নি! বাইশ গজে ওঁর মুখে পড়লে পিটিয়ে ‘ইউনিভার্সিটি-ব্লু’ সার্টিফিকেটটা বগলে পাকিয়ে আমাকে সুদ্ধু গ্যালারিতে ফেলতেন! কাজ শেষ করে উঠছি, লয়েড বললেন, ‘জেন্টলম্যান, একটা উপকার করবেন?’ বিশ্বত্রাস ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেন আমার কাছে উপকার চাইছেন! কোনও মতে বললাম, ‘হ্যাঁ, বলুন!’ সম্মানের আকাশে বিচরণ করা ক্লাইভ লয়েড হঠাৎই ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির উচ্চতায় নেমে এসে বললেন, ‘রুমের ইন্টারকমটা কাজ করছে না। আমার জন্যে একটু খাবারের কথা বলবেন?’ ওঁকে নিশ্চয়তা দিয়ে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, সুপারম্যানরাও তা হলে মানুষ! তাঁদেরও খিদে পায়! অফিসে ফিরে লিখে ফেললাম লয়েডের কলাম, আর মেন স্টোরি-ও। পরের দিন ফার্স্ট পেজ ‘বাইলাইন’, চার কলাম ছবি সহ ‘বর্ণময় সুশৃঙ্খল সমাপ্তি’ প্রকাশিত হল।

৮ নভেম্বর, ১৯৮৭। বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেট ক্যাপ্টেন ক্লাইভ লয়েড।

’৮৫-র ১৫ অক্টোবর। টেলিপ্রিন্টারে ‘ফ্ল্যাশ’ এল: ‘লালা প্রয়াত।’ স্পোর্টস এডিটর বললেন, ‘তাড়াতাড়ি লাইব্রেরি যাও, লালার লাইফ-স্কেচটা করে ফেলো।’ তখনকার দিনে সকলকেই রেকর্ড-বই, অভিজ্ঞতা, স্পোর্টস ম্যাগাজিন ও শোনা ঘটনার ওপর নির্ভর করতে হত। রাত ন’টার মধ্যে ব্রোমাইড পেপারের ‘পুল’টাও চলে এল। কিন্তু কোনও ভাবেই তাঁর মৃত্যু-সংবাদ ‘কনফার্ম’ করা গেল না। লেখাটা নিজের কাছে রেখে দিলাম। এর বছর কয়েক পরে ডুরান্ড কাপ কভার করতে গিয়ে দিল্লিতে ওঁর বাড়ি গেলাম। ঘরের দেওয়ালে অসংখ্য সাদা-কালো ছবি। ৭৫ বছরের মানুষটাকে দেখে কে বলবে, ভারতীয় ক্রিকেটে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে! তাঁর নেতৃত্বেই ভারত জিতেছে প্রথম টেস্ট সিরিজ (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে)! এক বার ইংল্যান্ড সফর থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। পরে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানও হন। ভারতীয় ক্রিকেটে ‘লালা’ এক বিরল চরিত্র। মৃত্যু-সংবাদের গুজবের কথাটা শুনে মুখের একটা রেখাও কাঁপেনি। শুধু বললেন, ‘মাঝে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এখন নিজের কাজ নিজেই করে নিতে পারি।’

’৮০-র দশকে ছিল মোহনবাগানের শতবর্ষ। ১৮৮৯ সালে উত্তর কলকাতায় যে বাড়িতে শতাব্দী-প্রাচীন ক্লাবের জন্ম, সেই রাস্তাতেই আমারও বাড়ি। হোম-যজ্ঞ-প্রভাতফেরির সঙ্গে, ফার্স্ট-ডে কভার প্রকাশ ইত্যাদি সব ঐতিহাসিক আয়োজনের ‘আঁখো দেখা হাল’ লেখার সুযোগ জুটেছিল। তখন ‘নেট সার্চ’ শব্দবন্ধের জন্ম হয়নি। শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত আনন্দবাজারের ক্রোড়পত্রে অনেক পরিশ্রমে দুটি লেখা লিখেছিলাম। ‘মানব কল্যাণে মোহনবাগান’ লেখাটিতে খেলার বাইরে ক্লাবের আর একটি দিক তুলে ধরেছিলাম।

কলকাতায় সফলতম বিদেশি ফুটবলার চিমা ওকোরি-র প্রথম সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এই ‘গোল-মেশিন’কে পাওয়ার জন্যে ঐতিহ্যশালী মোহনবাগান, ক্লাবের সংবিধান পালটে বিদেশি খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খুলে দেয়। এক বার পেমেন্ট নিয়ে একটি বড় ক্লাবের লনে পেশি-শক্তিতে বিশ্বাসী এক কর্মকর্তার চড়ে-ঘুষিতে চিমার ঠোঁট ফেটে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল গোটা বাংলা। ক্লাব লনে কোনও ফুটবলারের এই রকম নির্মম ভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা আগে বা পরে কখনও ঘটেনি। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় মার খাওয়ার প্রবল ঝুঁকি আর আতংক নিয়েও লুকিয়ে সেই ‘এক্সক্লুসিভ স্টোরি’ করার কাহিনি আজও মনে পড়ে।

এখন তো যুবভারতী স্টেডিয়ামে রাতের আলোয় ম্যাচ হওয়ার মধ্যে কোনও নতুনত্ব নেই। কিন্তু সল্টলেক স্টেডিয়ামে প্রথম নৈশালোকে আয়োজিত মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটিতে মনে আছে, উত্তম মুখোপাধ্যায়ের একমাত্র গোলে সবুজ-মেরুন জিতেছিল। ’৮৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত প্রথম ‘সাফ গেম্‌স’-এর ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে ভারত সোনা জেতে ফুটবলে। ইডেনের ইতিহাসে প্রথম এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচটিও হয়েছিল ওই সালেই, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সেটায় অবশ্য ভারত হারে। তবে সব আনন্দের মধ্যে একটা মন খারাপ করা বিকেলও গচ্ছিত রয়ে গিয়েছে। ’৮০-র ১৬ অগস্ট ইডেনের সেই কলঙ্কিত দিনে আমিও যে মাঠে ছিলাম!

অশোক রায়, বলরাম ঘোষ স্ট্রিট, কলকাতা

আশির দশকের কোনও ঘটনার সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে?
লিখুন এই ঠিকানায়: হ্যালো 80’s, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। বা, লেখা pdf করে পাঠান
এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

sunday magazine Upal senguta eden india west indies Clive Lloyd
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy