Advertisement
E-Paper

অযান্ত্রিক

এরা মোটেও জগদ্দল নয়। ভিন্টেজ ওয়াইনের মতো পুরনো রোলস রয়েস, স্টুডিবেকার, স্পিটফায়ার গাড়ির মৌতাতই আলাদা। কলকাতাতেও আছে অভিজাত গাড়িপ্রেমিকদের নিজস্ব ক্লাব। আজই কলকাতায় সেই সব ভিন্টেজ গাড়ির দৌড়।এরা মোটেও জগদ্দল নয়। ভিন্টেজ ওয়াইনের মতো পুরনো রোলস রয়েস, স্টুডিবেকার, স্পিটফায়ার গাড়ির মৌতাতই আলাদা। কলকাতাতেও আছে অভিজাত গাড়িপ্রেমিকদের নিজস্ব ক্লাব। আজই কলকাতায় সেই সব ভিন্টেজ গাড়ির দৌড়।

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
সুন্দরী: স্ট্যান্ডার্ড লিটল নাইন (১৯৩১)

সুন্দরী: স্ট্যান্ডার্ড লিটল নাইন (১৯৩১)

গাড়ির জগতের ছবি বিশ্বাস, কমল মিত্তির, পাহাড়ী সান্যাল এঁরা। ওই যে হুড–খোলা, টুকটুকে লাল আসনের হাসিখুশি ‘‌অস্টিন–৭ ট্যুরার’‌, উনি উত্তমকুমার। আর ওই যে বনেটের মাথায় জোড়া ‘‌আর’‌ চিহ্নের ওপর উড়ন্ত পরি, ওঁকে প্রমথেশ বড়ুয়া বলে ডাকাই যায়। ওটা পরি নয়, ওর নাম ‘‌সিলভার গোস্ট’‌। যে ধাবন্ত প্রেত ‘‌রোলস রয়েস’‌ গাড়ির চিরায়ত অভিজ্ঞান।

সে দিন সকালে টাউন হলের সামনে দাঁড়ানো গাড়িগুলো দেখে পথচলতি মানুষের বিচিত্র প্রতিক্রিয়া। অন্তত দশ জন এসে জিজ্ঞেস করে গেলেন, ‘‘‌শুটিং হবে?‌’’‌ হবে না শুনে হতাশ হলেন, কিন্তু মোবাইলে নানা দিক থেকে গাড়িগুলোর ছবি তুলতে ভুললেন না। হেঁটো ধুতি, কাঁধে গামছা এক দশাসই বিহারি তাঁর ছোটখাটো, ঘোমটা–টানা বউটিকে ঠেট হিন্দিতে বললেন, ‘‘‌কিতনি পেয়ারি হ্যায় না?’‌’‌ দু’জনেরই নজর লাজুক বধূটির সিঁথির মেটে সিঁদুরের মতোই আগুনে লাল ‘‌ট্রায়াম্ফ-স্পিটফায়ার ৪’‌ গাড়িটির দিকে। যেন এক ঝলক আগুন!‌ তার ঠিক পাশেই কাশিমবাজার রাজবাড়ির ঢাউস স্টুডিবেকার গাড়িখানা দেখে হাইকোর্ট পাড়ার দুই ওডিয়া তরুণ বলাবলি করল, ‘‘‌এমন একটা গাড়ি ঢেনকানলে নিজেদের গ্রামে নিয়ে গেলে কী মজাই না হত!’‌’‌

সত্যিই মজা হত, কারণ এই ‘‌স্টুডিবেকার প্রেসিডেন্ট ৮ স্টেট লিমুজিন’‌ মডেলের গাড়িটি সারা বিশ্বে এখন এই একটিই। সবিনয়ে জানালেন গাড়ির মালিক, কাশিমবাজার রাজবাড়ির পল্লব রায়, যিনি নিজের হাতে গাড়িটি রেস্টোর করেছেন। তাঁদের এই গাড়ির ছবি আছে আমেরিকার পেনসিলভানিয়াতে, হার্শের অ্যান্টিক কার মিউজিয়ামে। তবে একদা ঢেনকানলের রাজার সংগ্রহেই ছিল একাধিক ভিন্টেজ গাড়ি। রাজামশাই যখন তাঁর খাস ল্যান্ড রোভারে চড়ে জঙ্গলে পাখি মারতে বেরোতেন, তখন হয়তো এ রকমই কোনও স্টুডিবেকার বা বেন্টলে চড়ে রানিমা’রা যেতেন পিকনিকে। কাস্টমাইজেশনের যুগ সেটা। রাজাদের মর্জিমাফিক গাড়ি বানিয়ে দিত ইউরোপ, আমেরিকার তাবড় গাড়ি কোম্পানি। উদয়পুরের মহারানার ঠাকুমার ছিল এমনই এক কাস্টমাইজড ‘‌জেনানা কার’‌। আকারে ছোট স্কুলবাসের মতো সেই সাত আসনের ক্যাডিলাক গাড়ির জানলায় পরদা আঁটা, বাইরের লোকের নজর যাতে না পড়ে। পিছনের অংশে আয়না–সমেত ওয়াশ বেসিন, যেখানে হাত–মুখ ধুয়ে, শাড়ি বদলে, চটজলদি প্রসাধন সেরে নিতেন মেয়েরা। গাড়ির পিছন দিকে পরিচারিকাদের জন্যেও এক ফালি জায়গা আলাদা করে বানিয়ে দিয়েছিল ক্যাডিলাক কোম্পানি।

রাজকীয়: পল্লব রায়ের স্টুডিবেকার প্রেসিডেন্ট ৮ স্টেট লিমুজিন‌। ডান দিকে, ‘লাইন আপ’-এ গাড়িরা

উদয়পুর রাজবাড়ির আর একটি অতি বিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গী রোলস রয়েস এখন আছে ভুবনেশ্বরে ধর্মাদিত্য পট্টনায়কের সংগ্রহে। অব্যবহারে অকেজো গাড়িটি ফের সচল করেছিলেন কলকাতার শশী কানোরিয়া। পুরনো গাড়ির রেস্টোরার হিসেবে শশীর বেশ নামডাক। সংগ্রাহক হিসেবেও। কলকাতার রাস্তায় প্রথম মোটর গাড়ি চলে ১৮৯৬ সালে। সেই আমলের একটি ‘‌রেনো ফ্রেরে’‌ গাড়ি (‌১৯০৬)‌ রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। ‌ক্ল্যাসিক ড্রাইভার্‌স অব ক্যালকাটা‌–র জমায়েতে এখন আসেন শশীর ছেলে শ্রীবর্ধন। এ বার এসেছিলেন একটি মাথা–খোলা শেভ্রলে বিগ–৬ (‌১৯৩১)‌ নিয়ে, যে গাড়ি রাস্তায় দেখলে ট্রাফিক পুলিশও হাত দেখাতে ভুলে যায়!‌ তবে শ্রীবর্ধন এ দিন চালালেন শহরের আর এক ভিন্টেজ গাড়ির রেস্টোরার সঞ্জয় ঘোষের ছেলে রাজীবের আনা ঢাউস ক্যাডিলাক গাড়িটি। আর রাজীব চালালেন শ্রীবর্ধনের শেভ্রলে।

ক্ল্যাসিক ড্রাইভার্স অব ক্যালকাটা‌ গোষ্ঠীর আসল মজাটা হল, ওঁদের সদস্যরা সে সব গাড়িই আনেন, যেগুলো এখনও সচল, ওঁরা নিয়মিত ব্যবহার করেন। যেমন জর্জি গুহ। যে ছোট্ট, মিষ্টি ‘অস্টিন এ–৪০’‌ গাড়িটি এনেছিলেন, তার বনেটের ধারে ইউনিয়ন জ্যাকের ধাতব এমব্লেমের নীচে লেখা ‘‌অস্টিন অব ইংল্যান্ড’‌। আগে একটি ঢাউস ‘‌হাডসন’‌ গাড়ি ছিল জর্জির, ভিড়ে অসুবিধে হত। এখন এই অস্টিন নিয়ে দিব্যি বেরোন।

তবে জমিয়ে দিলেন ধবধবে সাদা ধুতি–পিরান আর পাকানো গোঁফের গদাই দে, তাঁর হলুদ–কালো ‘‌স্ট্যান্ডার্ড লিটল ৯’‌ (‌১৯৩১)‌ গাড়িটি নিয়ে। এই গাড়িও ভারতে এখন এই একটিই। ‘‌‘‌আর এই যে ‘‌অস্টিন ১০/‌৪ টুরার’‌ গাড়িটা দেখছেন, এটা শিবরাম চক্রবর্তীর ‘‌গদাইয়ের গাড়ি’ গল্পের‌ সেই গাড়ি!’‌’‌ হাসতে হাসতে বললেন গদাইবাবু। এখন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা হলেও আদতে তিনি উত্তরের, ঠনঠনে কালীতলার। তাঁদের গাড়ি থাকত ১৩৪ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বিখ্যাত মেসবাড়িটির একতলার গ্যারাজে। তরুণ গদাই গাড়ি চালাতে শিখেছেন, হাত পাকাচ্ছেন পাড়ার লোককে চড়িয়ে। শিবরাম এক দিন বললেন, ‘‌‘‌চল তো, অশোক সরকারের বাড়ি যাব। টাকা পাব কিছু, নিয়ে আসি।’‌’‌ তখন আনন্দবাজার পত্রিকায় কলাম লেখেন শিবরাম, ‘‌অল্প–বিস্তর’‌।

আর এক দিন, গাড়ি চালিয়ে কলেজ স্ট্রিটে তাঁদের পারিবারিক প্রকাশনার অফিসে যাচ্ছেন গদাইবাবু। দেখেন, ফুটপাত ধরে হনহনিয়ে যাচ্ছেন শিবরাম। গদাইবাবু বলেছিলেন, ‘‌‘‌উঠে আসুন, পৌঁছে দিই।’‌’‌ শিবরাম তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে বলেছিলেন, ‘‌‘‌না রে, আজ একটু তাড়া আছে!‌’‌’‌

পারিবারিক ব্যবসায় না গিয়ে গদাই দে ওকালতি পড়েছিলেন। চাকরি নিয়েছিলেন পুলিশে। তখন ভবানীপুর থানার ওসি, মাঝরাতে বেরিয়ে তাড়া করেছিলেন এক চোরকে। সে দৌড়ে এক ভাঙা বাড়ির পাঁচিল টপকে ঢুকে গেল, পিছন পিছন তিনিও। বাড়ি ঘিরে জঙ্গল, ঝোপের মধ্যে দেখতে পেলেন মাটির মধ্যে এক হাত ডুবে থাকা একখানি ভিন্টেজ গাড়ি। মালিককে ভজিয়ে সেই গাড়ি ঘরে এনেছিলেন। নামেই গাড়ি, ভাঙাচোরা, জংধরা খাঁচা।

‘‌‘‌এটাই সেই গাড়ি,’‌’‌ স্ট্যান্ডার্ড লিটল নাইনের গায়ে আদরের চাপড় মারলেন প্রাক্তন দারোগাবাবু।

গদাই দে–র পাঁচটি ভিন্টেজ গাড়ির চারটি ব্রিটিশ। সব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের। আর পঞ্চমটি জার্মান। ‘‌আডলার’‌ (‌১৯৩৮)‌। জার্মান ভাষায় আডলার মানে ঈগল। ১৯৩৮-এ জার্মান জাতীয়তাবাদ তুঙ্গে। অস্ট্রিয়া দখল করেছেন হিটলার, নাত্‌সি পার্টির স্বস্তিকা চিহ্নের তলায় ডানা ঝাপটাচ্ছে জার্মান ঈগল। সেই ঈগলের মনোগ্রাম গদাই দে–র আডলার–এর সামনের গ্রিলে।

অনেক গাড়ির সঙ্গেই এ রকম ইতিহাস জড়িয়ে— হরিশ মুখার্জি রোডে, কাশিমবাজার হাউসে দাঁড়িয়ে বলছিলেন পল্লব রায়। তাঁদের ‘প্রেসিডেন্ট ৮’ গাড়িটি কেনা হয়েছিল ১৯২৮ সালে, কলকাতায় স্টুডিবেকারের এক প্রদর্শনী থেকে। বিক্রির জন্য দু’টি গাড়ি এসেছিল আমেরিকা থেকে। দু’টিই এদেশের উপযোগী ‘‌রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ’। একটি এই মাথা-ঢাকা লিমুজিন, অন্যটি মাথা-খোলা ট্যুরার। পল্লবের ঠাকুরদা রাজা কমলারঞ্জন রায় লিমুজিনটিই পছন্দ করেছিলেন, কারণ কাশিমবাজারের রাস্তার ধুলো। তা ছাড়া বাড়ির মেয়েরা মাথা–খোলা গাড়ি চড়বে না। দ্বিতীয় গাড়িটি কারা কিনেছিল, কৌতূহল ছিল পল্লববাবুর। অনেক বছর পর, নেতাজির মহানিষ্ক্রমণের ‘‌ওয়ান্ডারার’‌ গাড়িটি সংস্কার করতে গিয়ে জানতে পারেন শরৎচন্দ্র বসুর একটি হুডখোলা স্টুডিবেকারের কথা, যেটা চড়ে ডাক্তারি পড়তে যেতেন শিশির বসু। একে শহরের পরিচিত গাড়ি, তায় হুডখোলা, তাই গৃহবন্দি নেতাজির বাড়ি থেকে পালানোর জন্যে চারদিক ঢাকা ওয়ান্ডারার গাড়িটিই শেষ পর্যন্ত বেছে নেওয়া হয়।

পক্ষিরাজ: আডলার (১৯৩৮), জার্মান গাড়ি। মালিক গদাই দে

পল্লব রায় হাত পাকিয়েছিলেন ১৯৬৭ সালের একটি মার্সেডেস দিয়ে, তার পর ঠাকুরদার স্টুডিবেকার। এখন চারটি গাড়ির কাজ চলছে তাঁর ওয়ার্কশপে। তার মধ্যে একটি শেভ্রলে পন্টিয়াকের সামনের গ্রিলটি লাগাতে হিমসিম খাচ্ছে মিস্ত্রিরা। উত্তরবঙ্গের এক চা-বাগানের গাড়ি। নিয়ম না মেনে মেরামতি হয়েছিল, এখন তাকে আগের চেহারায় ফেরাতে নাস্তানাবুদ। পল্লববাবু খুঁতখুঁতে, সেটা জানেন বলেই তাঁর জিম্মায় ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত আছেন গাড়ির মালিক রূপক ঘোষ। বয়সে নবীন রূপক পেশায় উকিল, কিন্তু তাঁর নেশা ভিন্টেজ গাড়ির। যেমন বেলগাছিয়ার অমিতাভ সাহা। পারিবারিক ব্যবসা, কিন্তু পুরনো গ্রামোফোন আর রেকর্ড, অ্যান্টিক ঘড়ি আর ভিন্টেজ গাড়ি সংগ্রহের নেশাটাও পারিবারিক। অমিতাভ এসেছিলেন একটি মাথা–খোলা অস্টিন–১০ ট্যুরার নিয়ে। কলকাতা হাইকোর্টের সামনে থেকে টলি ক্লাব পর্যন্ত রাস্তা পেরোতে গিয়ে, মেয়ো রোডের মুখে সে গাড়ি সামান্য হাঁপিয়ে পড়ল। সে জন্য যেন কিছুটা অপ্রতিভ অমিতাভ। তবে দিব্যি দৌড়ল রূপকের অস্টিন–৭ ট্যুরার। স্টিয়ারিংয়ে পৃথ্বীনাথ টেগোর। ঠাকুর নয়, টেগোরই বলেন তিনি। পাশে রূপক। বাকি গাড়িদের রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ওঁদেরই হাতে। ‘‌ক্ল্যাসিক ড্রাইভার্‌স অব ক্যালকাটা’‌–র সারথি এই নবীনেরাই। পৃথ্বী, রূপক, অমিতাভ এবং শৌভিক রায়চৌধুরি। পুরনো গাড়ি দৌড়োদৌড়ি করে ওঁদের স্বপ্নে। একটা ফেসবুক গ্রুপ বানিয়েছেন, চমৎকার ধাতব মনোগ্রাম তৈরি করেছেন গাড়ি ক্লাবের। ‌

ওঁরা এখন একটা যৌথ পরিবার। ছুটির দিন দেখে দেখা করে ওঁদের গাড়িরা, দল বেঁধে বেড়াতে যায়। নিজেদের মধ্যে সুখ–দুঃখের গপ্পো করে। দুঃখও আছে বইকী। এ ‌দেশে প্রায় কোনও স্পেয়ার পার্টই পাওয়া যায় না। ইউরোপ-আমেরিকায় ভিন্টেজ গাড়ির মডেল আর বছর ধরে ধরে স্পেয়ার মজুত থাকে। সে সব বিদেশ থেকে আনাতে গেলেও কাস্টমস, এক্সাইজের ঝামেলা।

‘‌‘আমাদের হয়ে ‌একটু লিখবেন তো ভাই ভাল করে। এটা শখের ব্যাপার, আমরা তো কেউ এ সব নিয়ে ব্যবসা করি না!‌’‌’‌ করুণ গলা গদাই দে–র। একদা জাঁদরেল দারোগা ছিলেন, যন্ত্রাংশ আমদানির নানাবিধ নিয়মের সঙ্গে এই চোর–পুলিশ খেলায় এখন আর পেরে উঠছেন না।

তবে ভরসা একটাই। এ শহরে এখনও আছেন পুরনো মিস্ত্রিরা, যাঁদের হাতে খানদানি গাড়িরা কথা বলে। বয়সের ভার ঝেড়ে ফেলে গর্জে ওঠে সে সব গাড়ির ইঞ্জিন। বাতাস বেগবান হলে গাড়িরাও অস্থির হয়ে ওঠে। লাগাম ছিঁড়তে মরিয়া ঘোড়ার মতই দুরন্ত আবেগে মাটি আঁচড়ায়।

Vintage Cars Car Lovers Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy