Advertisement
E-Paper

টাইম মেশিন

ঘোর বর্ষায় সূর্যোদয় হল ভারতীয় ফুটবলের। ছাড়পত্র মিলল প্রথম ‘ফিফা ওয়াটার ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ’ আয়োজন করার। অবশ্য আয়োজক দেশের দৌড়ে অন্য কোনও দেশ ছিলই না। গন্ডোলা-নগরী ভেনিসের দেশ ইতালিও কলকাতা-মুম্বই-গুরুগ্রামের সঙ্গে পাল্লা দেয়নি।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০

ঘোর বর্ষায় সূর্যোদয় হল ভারতীয় ফুটবলের। ছাড়পত্র মিলল প্রথম ‘ফিফা ওয়াটার ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ’ আয়োজন করার। অবশ্য আয়োজক দেশের দৌড়ে অন্য কোনও দেশ ছিলই না। গন্ডোলা-নগরী ভেনিসের দেশ ইতালিও কলকাতা-মুম্বই-গুরুগ্রামের সঙ্গে পাল্লা দেয়নি। তাই, পরের বছর দেশের স্মার্ট-শহরগুলোর জমা জলেই হবে এই টুর্নামেন্ট। মনে থাকতে পারে, প্রায় পাঁচ বছর আগে কলকাতাতে এই খেলার জন্ম। তখন কেউই ভাবতে পারেননি এত তাড়াতাড়ি এই খেলা ফিফা-র স্বীকৃতি পাবে। এ বার থেকে, বাড়ির বারান্দা বা ছাদ বা সামনের রাস্তা থেকেই অনেকে বিশ্বকাপ জল-ফুটবল দেখতে পাবেন। কয়েকটি দেশ অভিযোগ তুলেছে, ফিফা নির্ঘাত ভারতের থেকে ঘুষ নিয়েছে। তারা ভারতের রাস্তায় জমা জলের গুণাগুণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ফিফা-র সেফটি ডিপার্টমেন্ট জানিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর সর্বত্র জলের সংকেত H20, এর বেশি কিছু তাদের বিশ্লেষণ করার দরকার নেই। ভারতে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি তুঙ্গে। কেজো ড্রেনগুলিকে বুজিয়ে দেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তাঘাট নিচু করা হচ্ছে, যাতে সব জায়গায় অন্তত এক বুক জল জমে। বিশ্ব ফুটবলের বৃদ্ধ রাজপুত্র লিয়োনেল মেসি নয়া মডেলের এই বিশ্বকাপে ভারতকে বাজি ধরেছেন। ভারতের ক্যাপ্টেনও গোলের চেয়ে বেশি প্র্যাকটিস করছেন বিজয়সূচক মুখ-ফোয়ারা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, বিশ্বকাপে কলকাতার ম্যাচগুলি হবে সেক্টর ফাইভ, মুকুন্দপুর, বেহালা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও ইএম বাইপাসে। ফাইনাল ঠনঠনিয়ায় হবে না উল্টোডাঙা আন্ডারপাসে, তাই নিয়ে ওই দুই এলাকার পুরপ্রতিনিধিদের মধ্যে জোর রেষারেষি চলছে। মেয়র জানিয়েছেন, দর্শকরা যাতে হাততালি দিতে বাধ্য হন, সে জন্য প্রতিটি জমা জলের ময়দানে তিন লক্ষ তেরো হাজার মশার চাষ করা হচ্ছে, চটাপট শব্দে টিভিতে মনে হবে, সারা ক্ষণ সবাই উৎসাহে নাচছে!

শৈলেশ মহাপাত্রƒ ময়না, পূর্ব মেদিনীপুর

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

চাঁদের মাটিতে বিয়ের আসর

২১ জুলাই ১৯৬৯ চাঁদের মাটিতে পা রেখেছিল মানুষ। তার পর দিন, ২২ জুলাই ১৯৬৯-এর আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতা।

বিয়ের দিনটা ছিল ১৯৬৯-এর ২১ জুলাই। সকাল থেকেই দুই বাড়ির ব্যস্ততা। মেয়ের বাড়ি থেকে লোকজন গিয়ে ছেলেকে আশীর্বাদ করার পর ছেলের গায়ে হলুদ চড়ল। সেই হলুদ এসে মেয়ের গায়ে পড়তে পড়তে বিকেল। বিয়েটা ছিল গোধূলিলগ্নে। বরযাত্রী-সহ ছেলে পৌঁছল ঠিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। জুলাইয়ের ভরা বর্ষা, তবে পর পর ক’দিন ভারী বৃষ্টির পর আজ আকাশ একটু বিশ্রামে। মেয়ের বাবা সুধীনবাবু অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করেছেন গ্রামের চণ্ডীমণ্ডপের আটচালাতে। সকাল থেকেই সেখানে নহবত শুরু। তবে পাড়ার ছেলেদের দাপটে সন্ধের মুখে নহবত বন্ধ হয়ে চালু হল জোর ভলিউমে ট্রানজিস্টর। অভূতপূর্ব এক ঘটনা যে ওই দিনেই ঘটছে। মানুষ পা রাখতে চলেছে চাঁদে, বিবিসি-তে হবে সেই চন্দ্রাভিযানের ধারাবিবরণী!

ছেলেপক্ষ নিজেদের পুরোহিতকে সঙ্গে করে এনেছিলেন। বিয়ে হবে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে, তাই ‘পুরোহিত দর্পণ’ও আনতে ভোলেননি। নহবত বন্ধ হওয়ায় ওঁর আপত্তি, শুভকাজের সূচনায় তো নহবতই পথ দেখায়! সানাইবাদকদের বললেন, আস্তে করে হলেও বাজান। বাড়ির দুয়ারে তখন মেয়ের বাবা নিজেদের পুরোহিতকে দিয়ে নান্দীমুখ শ্রাদ্ধ করছেন। ছেলেপক্ষের পুরোহিত সেই মন্ত্রপাঠে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। পুরোহিত দর্পণ খুলে এগিয়ে দিলেন। কনেপক্ষের পুরোহিত কিছুটা নাখোশ হলেও, যজমানের মঙ্গলার্থে সেই বই দেখেই মন্ত্রোচ্চারণ করলেন— নিজের রাগ হজম করে।

শ্রাদ্ধকাজ শেষ হতেই বরকর্তা বিয়ের অনুষ্ঠানের তোড়জোড় ফেলে দিলেন। শুভলগ্ন খুব কম সময়ের, কোনও ভাবেই ফেল না হয়— বার বার বোঝাতে লাগলেন সুধীনবাবুকে। কথাটা কানে গেল বিধুঠাকুমার। লাঠি ঠুকে ঠুকে বাইরে বেরিয়ে এসে সোজা অকুস্থলে। বরপক্ষের পুরোহিতের সামনে গিয়ে বললেন, ঠাকুরমশাই, এক্ষুনি বিয়ের এত তাড়াহুড়ো কেন? দেরি আছে তো! পুরোহিত অবাক, দেরি আছে মানে! লগ্ন আর মোটে মিনিট দশেক পরই শুরু, পেরিয়ে গেলে তো মেয়ে লগ্নভ্রষ্টা হবে! বুড়ির উত্তর: হবে না। আমার মনে হয় আরও ভাল লগ্নে নাতনির বিয়ে হবে। পুরোহিতের চোখ কপালে, সে কী, এর চেয়ে ভাল লগ্ন তো আজ আর নেই! মাহেন্দ্রযোগ, অমৃতযোগ আর এই গোধূলিলগ্ন একসঙ্গে মিশেছে অল্প সময়ের জন্য। এত ভাল যোগ খুব কম আসে। তা ছাড়া, এ তো দু’মাস আগে থেকে স্থির হয়ে আছে, আজ বাধা দিচ্ছেন?

ঠাকুমার সিধে জবাব: দেখুন মশাই, আজ আর কিছু ক্ষণ পরেই মানুষ প্রথম চাঁদের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছে। এ তো দু’মাস আগে জানতাম না! দিনটা যখন না জেনেই মিলে গেছে, তখন সময়টাকেও মিলিয়ে নিতে আপত্তি কী। এত ভাল লগ্ন আমার নাতনির জীবনে আর আসবে না। এটুকু মেনে নিন। এই দুষ্প্রাপ্য লগ্নটাকে ওদের জীবনে আসতে দিন।

ঠাকুরমশাই মৃদু বাঁকা হাসিতে বললেন, ও, এই কথা? আপনিও তা হলে বিশ্বাস করেন, মানুষ চাঁদে যাচ্ছে! আরে পৃথিবীরই কোথায় কোন মরুতে খানিক ঘুরেঘারে এসে বলবে, চাঁদে পা ফেলেছি। গোঁড়া ব্রাহ্মণের কথা শুনে বুড়ির মুখে হাসি ফুটে উঠল। বেশ তো, আপনাদের ছেলে তো এ-যুগের বিদ্যে জানা ছেলে, ‘ইঞ্জিনর’। ওকেই জিজ্ঞেস করুন, আজ মানুষ যে মাটিতে পা ফেলতে যাচ্ছে, সেটা চাঁদের, না পৃথিবীর! পুরোহিত আর ঠাকুমার কথা-কাটাকাটি হতে দেখে ছেলেটি উঠে এসে বলল, ঠাকুমা ঠিক কথাই বলছেন। আজকের ওই সময়টার মতো আর কোনও লগ্নই আমাদের জীবনে আসবে না। চাঁদের মাটিতে মানুষ পা রাখার সময়টাতেই আমাদের বিয়ে হোক। এ শুধু আমাদের না, সবার কাছেই একটা স্মরণীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন ঠাকুমা, আমাদের বিয়ে ওই লগ্নেই হবে।

সানাইয়ের মৃদু সুর চলেছে তখনও। ট্রানজিস্টরটা চলে এল বিয়ের মণ্ডপের পাশে। বর-কনে বেদিস্থলে, ওদের সামনে দু’দিকে দুই পুরোহিত। সুধীনবাবুও কনে সম্প্রদানের অপেক্ষায় মঙ্গলঘটের সামনে। ঠাকুমাকে এনে মণ্ডপের পাশে একটা চেয়ারে বসানো হল। ছেলেছোকরারা বলে উঠল, এই তো, চাঁদের বুড়ি এসে গেছে! ট্রানজিস্টরে সবাই শুনছে, মূল যান অ্যাপোলো-১১ থেকে ‘ঈগল’ নামে একটা ভেলা বেরিয়ে এল। চাঁদের চার দিকে বৃত্তাকার পথে ঘুরতে শুরু করল... পুরোহিতমশাই সুধীনবাবুকে দিয়ে কনে সম্প্রদানের কাজ শুরু করলেন।

ধারাভাষ্যের দিকে সবার কান খাড়া। বিয়ের অনুষ্ঠানে কখন কী করতে হবে, পুরোহিতদের সব যেন গাইড করছে ওই ট্রানজিস্টরটাই। সবাই যেন মানসচোখে দেখছে, বিয়ের মণ্ডপ ঘিরে ঘুরছে সেই ‘ঈগল’। আস্তে আস্তে ওর পরিক্রমার পথের ব্যাসটা কমছে, ঈগল পৌঁছচ্ছে একেবারে চাঁদের কাছাকাছি... পুরোহিতও প্রস্তুত। বর-কনের হাতদুটো তাঁর দু’হাতে ধরা। ঈগল চাঁদের মাটি স্পর্শ করতেই, সারা পৃথিবীর মানুষের জয়ধ্বনিতে ট্রানজিস্টরটা যেন ফেটে পড়ল। মণ্ডপের লোকজন তখন অধীর আগ্রহে কান পেতে আছে। এলও সেই প্রতীক্ষিত লগ্ন— চাঁদের মাটির ওপরে ঈগল-এর দরজাটা খুলে গেল। নিল আর্মস্ট্রং পা বাড়িয়ে চাঁদের মাটিতে নেমে দাঁড়ালেন...

ঠিক সেই সময়েই পুরোহিতমশাই ছেলের হাতের ওপর মেয়ের হাতটা চাপিয়ে দূর্বা-জড়ানো সুতো দিয়ে বাঁধলেন। উলু আর শঙ্খধ্বনির সঙ্গে উচ্চারিত হল, যদিদং হৃদয়ং তব... ট্রানজিস্টরের চিৎকার আর মণ্ডপের সবার হইচই মিশে একাকার। যেন বিয়েটাই হল চাঁদের মাটিতে!

এই কিছু দিন আগে সে দিনের সেই বর-কনের বাড়ি গেলাম। দুজনেরই বয়স হয়েছে, অসুস্থ। দেখি, বেডরুমে আমার দেওয়া ছবিটা ঝুলছে। এক পাশে চাঁদের মাটিতে নিল আর্মস্ট্রং আর এডউইন অলড্রিন, সেই ঈগল ভেলা। আর এক পাশে ওদের দুজনের হস্তবন্ধনের ছবি, পাশে ঠাকুমাকেও দেখা যাচ্ছে। বললাম, ছবিটা রি-প্রিন্ট করে নিও, দুঃখের দিনে ওটাই তোমাদের সান্ত্বনা দেবে।

গোবর্ধন জানা, বৃন্দাবনপুর, মেচেদা

ষাটের দশকের কোনও ঘটনার সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে?
লিখুন এই ঠিকানায়: হ্যালো 60’s, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। বা, লেখা pdf করে পাঠান
এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

নীহাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ দুর্গাপুরে আমাদের ইতিহাসের শিক্ষক এনআরবি স্যর বিখ্যাত ছিলেন পুরস্কার আর তিরস্কারের বহু বিচিত্র পদ্ধতির আবিষ্কর্তা হিসেবে। অবশ্য সিক্স থেকে টেন অবধি কোনও ক্লাসে শিক্ষকরা অনুপস্থিত থাকলে, তিনি ভূগোল, বাংলা, ইংরেজি এবং জীবনবিজ্ঞানও পড়িয়ে দিতেন।

এক বার ভূগোল পড়ানোর ক্লাসে ভারতবর্ষের কয়লা উৎপাদক অঞ্চলগুলি ব্যাখ্যা করার সময় বোর্ডে ভারতবর্ষের মানচিত্র এঁকে নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করে নীহারবাবু বললেন, পরীক্ষার খাতায় যা কিছুরই ব্যাখ্যা করবি, সেটার একটা ছবি আঁকতে পারলে বেশি নম্বর পাবি। এক অতি উৎসাহী সহপাঠী সে বছরই পরীক্ষায় মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনব্যবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে সম্রাট আকবরের কাল্পনিক এতটা পেনসিল স্কেচ এঁকে তার নীচে ক্যাপশন লিখল— প্রজাদের জন্য চিন্তামগ্ন আকবর। সেই খাতাটা নিয়ে হাসিমুখে নীহারবাবু ক্লাসে ঢুকে ছাত্রটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাংলায় ‘গোবরগণেশ’ দিয়ে বাক্যরচনা লিখতে গেলে কীসের ছবি আঁকা খুব জরুরি বলে তোর মনে হয়? গোবর? নাকি গণেশ?

নীহারবাবুর শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিগুলো ছিল অদ্ভুত। হোমওয়ার্ক না করে আসা ছাত্রদের উনি স্কুলের মাঠে দৌড় করাতেন আর বলতেন, পড়া না পারলে অলিম্পিকে নামাব। হিন্দি সিনেমা-প্রিয় ছাত্ররা লম্বা চুল রাখলে তিনি রাবারব্যান্ড দিয়ে বেণী বেঁধে দিতেন। সেই থেকে অনেকে নীহারবাবুকে ‘বেণীস্যর’ নামে চিনত। এক বার স্টাফরুমের বাইরে রাখা সাইকেল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া যুবকটিকে শাস্তি দেওয়ার ভার পড়ল নীহারবাবুর ওপর। চোরের উদ্দেশে তাঁর নিদান ছিল, দু’ঘণ্টা সময় দিলাম। মুখ হাঁ করে ‘মা’ বলতে পারলে তোকে আর পুলিশে দেব না। মনে আছে, স্টাফরুমে উপস্থিত শিক্ষকদের সামনে প্রায় ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর হাঁ করে ‘মা’ বলতে গিয়ে সাইকেল চোর পটি করে ফেলেছিল।

ক্লাস নেওয়ার সময় যাকেই অযথা কথা বলতে দেখতেন, স্যর সেই ছাত্রটিকে ডেকে হয় নিজের পড়ানোর চেয়ারটিতে বসতে বাধ্য করতেন, অথবা হাতে চক-ডাস্টার ধরিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে ব্যাখ্যা করতে বলতেন আলোচ্য বিষয়টি।

নিখিল নামে আমাদের স্কুলে একটি ছেলে ছিল। সে ক্লাস সিক্স থেকে মাধ্যমিক পাশ করা পর্যন্ত মোট চার বার ফেল করে। সেই নিখিলের মাধ্যমিক পাশ করার পুরস্কার হিসেবে নীহারবাবুর বিশেষ উদ্যোগে স্কুলের অডিটোরিয়ামে এক সংবর্ধনাসভার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিখিলকে মাল্যদান করে শংসাপত্র দেওয়ার পর অডিটোরিয়ামে উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে স্যর বলেন, এ কথা ঠিকই যে এখনও পর্যন্ত এই স্কুলের ইতিহাসে নিখিলই একমাত্র ছাত্র যে চার বার ফেল করেছে। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক যে, চার বার ফেল করার পাশাপাশি সে পাঁচ বার পাশও করেছে। তাই, ‘এক বার না পারিলে দেখ শতবার’, কবির এই অমোঘ বাণী যে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে, সেই নিখিলের উদ্যম ও ধৈর্যকে আমি এই মঞ্চ থেকে স্যালুট জানাচ্ছি। তোমরা যারা এক-আধ বার ফেল করেছ, নিখিল যেমন তাদের প্রেরণা, তেমনই যারা ফার্স্ট-সেকেন্ড হয়েছ, তারাও অবশ্যই মনে রেখো নিখিলকে। স্কুল-কলেজ ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা তো এক দিন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু জীবনের পরীক্ষা চলতেই থাকবে।

দেবদুলাল চক্রবর্তীƒ অরবিন্দ সরণি, কলকাতা

স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকা কি নিষ্ঠুর বা উদ্ভট ছিলেন? বিবরণ লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে এই ঠিকানায়: গাঁট্টা, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

‘ও তো এই বংশেরই ছেলে’

কিশোর বেলার সঙ্গীকে বাইশ বছর বয়সে জীবনসঙ্গী বানিয়ে নিলাম। বিয়ের পর বুঝলাম, পরিবারের যে সদস্যটি এখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়, সে আমার ছোট দেওর। তার আবদার, আদেশ, সর্বোপরি তার জ্ঞানই এ পরিবারে শেষ কথা। আমার চেয়ে সে মোটে বছর দুয়েকের বড়। কর্মসূত্রে তাকে কলকাতার বাইরে থাকতে হত। তাই তার এ বাড়ি আসা এবং চলে যাওয়া— দুটো ব্যাপারই স্পেশাল বলে মনে করা হত।

নতুন বিয়ের দিন কুড়ি পেরিয়েছে। হঠাৎ প্রায় মাঝরাতে আমাদের শোওয়ার ঘরের দরজায় ধাক্কা এবং শাশুড়ির গলা। দরজা খুলতে হবে। এই দারুণ আনন্দের কারণ হল, বিনা নোটিসে দেওর সেই মাঝ রাতে এসে হাজির হয়েছে।

আমি অগোছালো, অপ্রস্তুত। স্বামী দরজা খুলতেই মা আর ভাই ঘরে ঢুকে এল। আমি প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয়ে তাদের কোনও ভাবেই আলো না জ্বালানোর অনুরোধ করলাম। অনুরোধ রাখা হল বটে। কিন্তু দেওরের আবদার ও আদেশ হল, সে রাতে আমাকে আমার ঘর ছেড়ে তার ঘরে শুতে হবে। আমি স্তম্ভিত! সবচেয়ে আশ্চর্যের, স্বামী আর শাশুড়িও একই আদেশ দিলেন এবং আমাকে তা মানতেও হয়েছিল।

যদিও দেওর আর আমি দুটো আলাদা বিছানায় শুয়েছিলাম, তবুও সেই রাতে আমার একটুও ঘুম হয়নি। কিছুতেই ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না যে, কী কারণে দেওর ও রকম একটা বেয়াড়া আবদার করে বসল আর আমার স্বামী তা মেনেও নিলেন। সারা রাত এক ভয়ানক আতঙ্কে কাটিয়েছিলাম। পরবর্তী কালে দেওরের সঙ্গে সখ্য তৈরি হলেও সে দিনের সেই অপমানের রাতটা আজও ভুলতে পারিনি।

এই প্রসঙ্গেই আরও একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আমার শ্বশুরবাড়িতে তাদের গ্রাম থেকে আসা আত্মীয়-স্বজনের ভিড় লেগেই থাকত। অনেকেই কলকাতার এই আস্তানাটিতে আশ্রয় নিয়ে লেখাপড়া বা চাকরির সন্ধান করত। এমনই এক অল্পবয়সি ছেলে কাজকর্ম খোঁজার জন্য আমাদের বাড়িতে থাকতে এল। সম্পর্কে সে আমার স্বামীর এক জ্ঞাতি ভাইপো।

তত দিনে আমার গায়ের নতুন গন্ধ খানিক উবে গিয়েছে। অতিথিসেবায় কোনও ত্রুটি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট কড়াকড়ি ছিল বাড়িতে। তা ছাড়া সেই সময়টায় আমারও আন্তরিক চেষ্টা ছিল যাতে শ্বশুরবাড়ির জন্যই আমি আমার সবটুকু ঢেলে দিতে পারি। ভাইপোটিকে খুব যত্ন করতাম। তার সুযোগ-সুবিধের ব্যাপারে সচেতন থাকতাম। কলকাতার মেয়ে আমি। তাই তাদের গ্রামের বাড়িতে ‘অহংকারী’ বলে যাতে আমার নিন্দে না হয়, সব সময় সে চেষ্টাই করতাম। তা ছাড়া বয়সে ছোট বলে ছেলেটির ওপর একটা ভাইসুলভ স্নেহও মনে তৈরি হয়েছিল।

এক দিন সন্ধেবেলা নিজের ঘরে একা বসে মন দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত শুনছি। হঠাৎ পেছন থেকে দুটো হাত সবলে জাপটে ধরল। ভয়ানক চমকে দেখি মূর্তিমান সেই ভাইপো। রাগে, দুঃখে, ভয়ে থরথর করে কাঁপছিলাম। কিন্তু কিছু বলতে পারছিলাম না। সে ছেলে কিন্তু হাসিমুখেই দাঁড়িয়ে ছিল। রাতে স্বামীকে বলতে তিনি কোনও মন্তব্য না করে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লেন।

পর দিন শুনলাম, শ্বশুরমশাই আমার স্বামীকে বলছেন, ‘এত সামান্য ব্যাপারে উত্তেজিত হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। ও তো এই বংশেরই ছেলে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

আপনার শ্বশুরবাড়ি ভাল? খারাপ? ভাল-খারাপ মিশিয়ে? শ্বশুরবাড়ির টকঝালমিষ্টি ঘটনা লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে। ঠিকানা: শ্বশুরবাড়ি, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy