ছবি: সুমন চৌধুরী
প্রা য় ১৫ দিন ঘোড়ার পিঠে চলতে চলতে ৩০ মে বিকেল চারটেয় তিব্বতের রাজধানী লাসা পৌঁছল দলটি। দূরে, পাহাড়ের ওপর দলাই লামার পোতালা প্রাসাদ, অস্তগামী সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে তার শিখরে। পাহাড়ের নীচে, সারা শহরে চিনা কেতায় সাজানো ঘরবাড়ি। তিব্বতি, চিনা, লাদাখি, অনেকেরই বাস দুর্গম এই লাসা শহরে।
সালটা ১৮৮২। এই দলে মালবাহক ও তিব্বতি লামারা আছেন। আর আছে লামার পোশাক-পরা, লাল পাগড়ি, চোখে সানগ্লাস, এক ভিনদেশি। ক্লান্তিতে মাঝে মাঝে নুয়ে পড়ছে সে। চিনে পেস্ট্রির দোকানে জমায়েত হওয়া ভিড়টা তাকে দেখে মন্তব্য করল, ‘দেখেছ, আবার এক বসন্ত রোগী হাজির হয়েছে। ইস, বেচারির চোখ দুটো বোধহয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আহা রে! বাঁচলে হয়!’ ব্রিটেনে তার ৩২ বছর আগে এডওয়ার্ড জেনার নামে এক ডাক্তার বসন্তের টিকা বের করে ফেলেছেন, তবে এই দেশে সেই খবর পৌঁছয়নি।
পেস্ট্রির দোকানের জমায়েত জানে না, লাল পাগড়ি ভিনদেশির সঙ্গে আছে রিভলভার, কম্পাস, সেটস্কোয়ার ও হরেক কাগজ। ভিনদেশি তিব্বতি ভাষায় সুদক্ষ, কখনও পাঞ্চেন লামার মঠে খুঁজে পেয়েছেন তিব্বতি হরফে দণ্ডীর কাব্যাদর্শ, কাশ্মীরি কবি ক্ষেমেন্দ্রের ‘অবদানকল্পলতা’ ও চান্দ্র ব্যাকরণের প্রাচীন পুঁথি। সেগুলি নকল করে তাঁর দেশে নিয়ে যাবেন। ভারতে।
তিব্বতি সংস্কৃতি ও জনজীবনে আগ্রহী এই ভিনদেশি আর একটি কাজ করেছেন। চলার পথে প্রতিটি পাহাড়, নদীনালা ও ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য কাগজে লিখে নিয়েছেন, লাসায় আসার পথে চুম্বি উপত্যকা, ‘ইয়ামদ্রোক সো’ হ্রদে ঝটিতি জরিপ করেছেন। টুকে নিয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এলাকার হরেক পাহাড় ও পথের পরিচয়। পরে সেগুলি ভারত সরকারের দফতরে গোপনে বাক্সবন্দি হবে, তার পরে লর্ড কার্জনের আমলে ব্রিটিশ সেনাপতি ইয়ংহাজব্যান্ড এই সব তথ্যের ওপর নির্ভর করেই তিব্বত দখলে হানাদারি চালাবেন।
ওই ভিনদেশি এক বঙ্গসন্তান। শরৎচন্দ্র দাস। তাঁর পরিচয় নিয়ে কয়েক বছর পরেও তিব্বতে ঘোর ধোঁয়াশা। যে তিব্বতি লামারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন, সকলকেই পরবর্তী কালে এক ধার সে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। শরৎচন্দ্র দাস তবে ঠিক কী? পণ্ডিত? রোমাঞ্চকর দুর্গম পথের অভিযাত্রী? না কি ব্রিটিশের বেতনভুক গুপ্তচর?
লাসা সফরের তিন বছর পর এই রহস্যময় চরিত্রটিকে দেখা গেল চিনের রাজধানী পিকিং (এখন বেজিং) শহরে। সেখানে বাণিজ্যের খোঁজে আসা তিব্বতিরা তাঁকে ‘কা চে লামা’ বা কাশ্মীরের লামা বলে ডাকেন। শরৎচন্দ্র দাসের সঙ্গে অবশ্য কাশ্মীরের কোনও সম্পর্ক নেই, তিনি এসেছেন কোলম্যান মেকলে নামে এক ব্রিটিশ কূটনীতিককে সাহায্য করতে। কোলম্যান লাসা শহরে ব্রিটিশ দূতাবাস খুলতে যাবেন, পিকিং শহরে তাই ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন। চিনের রাজধানীতে বাঙালি শরৎচন্দ্র দাস এ বিষয়ে তাঁর প্রধান সাহায্যকারী।
দূতাবাস খোলা আর হয়নি। কিন্তু শরৎচন্দ্র দাসের পরিশ্রমী তথ্য থেকে ব্রিটিশরা এ ভাবেই নানা সাহায্য পেয়েছে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাব, ‘অর্ডার অব ইন্ডিয়ান এম্পায়ার’-এ ভূষিত করেছে। হিমালয়ের খুঁটিনাটি অজানা ভৌগোলিক তথ্য আবিষ্কারের জন্য সম্মানিত করেছে লন্ডনের রয়্যাল জিয়োগ্রাফিক সোসাইটি।
আবার, কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় এই গুপ্তচরের লেখালিখি খুলে দিয়েছে তিব্বত ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার নতুন দিগন্ত। নিজেই তৈরি করেছেন তিব্বতি-ইংরেজি ভাষার অভিধান। অতঃপর তাইল্যান্ডে গিয়েছেন, বৌদ্ধ শাস্ত্রচর্চার জন্য খেতাব দিয়েছেন সেখানকার রাজা। মৃত্যুর দু’বছর আগেও বৌদ্ধ শাস্ত্র ও সংস্কৃতি ঘাঁটতে কয়েক মাসের জন্য পাড়ি দিয়েছেন জাপান। উনিশ শতকেই তিব্বতচর্চার জন্য সারা পৃথিবীর কুর্নিশ আদায় করে নিয়েছেন এই বাঙালি।
এই পণ্ডিত গুপ্তচর আসলে চট্টগ্রামের আলমপুর গ্রামের লোক। ১৮৪৯ সালে তাঁর জন্ম। ছাত্র হিসাবে মেধাবী, উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে জ্যোতির্বিদ্যা, হরেক বিষয়েই তাঁর আগ্রহ। স্কুল শেষে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখানে তখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হত।
বাদ সাধল পিলেজ্বর। ম্যালেরিয়াকে তখন বাঙালি ওই নামেই ডাকত। ১৮৭৪ সালে ফাইনাল পরীক্ষার সময় অসুস্থ হলেন শরৎচন্দ্র, সারা ক্ষণই ঠকঠকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। বাঁচিয়ে দিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক সি বি ক্লার্ক। দার্জিলিঙের ডেপুটি কমিশনার স্যর জন এডগার তত দিনে সেখানকার শিশুদের লেখাপড়ার জন্য ভোটিয়া বোর্ডিং স্কুল তৈরি করেছেন। ক্লার্ক সেখানকার প্রধান শিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব দিলেন ছাত্রকে। শরৎচন্দ্র প্রথমে দোনোমোনো করছিলেন। তার পর ভেবেচিন্তে, পাহাড়ি জলহাওয়ায় স্বাস্থ্য উদ্ধার হবে ভেবে সায় দিলেন।
সাহেবগঞ্জ অবধি ট্রেন। তার পর স্টিমারে কারগোলা ঘাট পেরিয়ে বলদ-টানা গাড়িতে পূর্ণিয়া হয়ে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে কার্সিয়াং। অতঃপর জীবনে প্রথম ঘোড়ার পিঠে চাপলেন তিনি। এবং ঘোড়ায় চেপেই কার্সিয়াং থেকে দার্জিলিং পৌঁছেছেন ২৫ বছরের শরৎচন্দ্র দাস।
স্কুলের ছাত্ররা বাংলা, ইংরেজি বোঝে না। হেডমাস্টারমশাইও তাদের ভাষা বোঝেন না। কিন্তু আগ্রহী শিক্ষক আস্তে আস্তে রপ্ত করে ফেললেন তাদের ভাষা। সিকিমের তৎকালীন রাজা, মন্ত্রী, অমাত্যরাও ইংরেজি শেখাতে তাঁদের ছেলেদের পাঠাচ্ছেন ভোটিয়া বোর্ডিং স্কুলে।
দু’বছর পরে হেডমাস্টারমশাই ছুটিতে ছাত্রদের এক্সকারশনে নিয়ে গেলেন পাশের দেশ সিকিমেই। সেখানে পেমিয়াংচি মঠ। ‘পুজোর আচার-অনুষ্ঠান, লামাদের ভাবগম্ভীর মন্ত্রোচ্চারণ আমার মনে জাগিয়ে তুলল আগ্রহ। জানতে হবে এই তান্ত্রিক বৌদ্ধমত,’ আত্মজীবনীতে লিখছেন শরৎচন্দ্র।
১৮৭৯ সালে এই পেমিয়াংচি মঠের লামা উগ্যেন গিয়াতসো-কে নিয়ে তিব্বতে পাঞ্চেন লামার তাশিলুনপো মঠে পৌঁছলেন শরৎচন্দ্র। সেখানে পাঞ্চেন লামার প্রধান সহকারী, তাশি লামা হিন্দি ও ইংরেজি শিখতে চান, সিকিমবাসী তিব্বতি বৌদ্ধ উগ্যেন সেই সূত্র ধরে সহজেই জোগাড় করে ফেললেন তাঁর ও শরৎচন্দ্র দাসের তিব্বত যাত্রার অনুমতি।
দার্জিলিং থেকে পেমিয়াংচি, তার পর কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে জোংরি। সেখান থেকে চাং থাং গিরিপথ। বরফে পা ডুবে যাচ্ছে, এক এক জায়গায় উগ্যেন কোমরের কুকরি দিয়ে বরফ কেটে তৈরি করছেন পায়ে চলার ধাপ। গাছের শাখাপ্রশাখা কেটে তৈরি করছেন রাস্তা। ঝুরো পাথর নেমে আসছে, ১৯০০০ ফুট উচ্চতায় দুজনেরই নিশ্বাস পড়ছে ঘন ঘন। রাতে থাকার জায়গা বলতে পাহাড়ি গুহা। চাং থাং পেরিয়ে এ ভাবেই ওঁরা ঢুকে এসেছেন তিব্বতি সীমানার মধ্যে।
তিব্বতি সংস্কৃতিতে আগ্রহী বাবু শরৎচন্দ্র দাস সে যাত্রায় প্রায় ছয় মাস ছিলেন পাঞ্চেন লামার তাশি লুনপো মঠে। নিয়ে এসেছেন ভারতে হারিয়ে-যাওয়া নানা বৌদ্ধ গ্রন্থের অনুলিপি। তারই মধ্যে ব্রিটিশ সরকারকে জানাচ্ছেন দেশটা নিয়ে হরেক তথ্য। ভারতের তৎকালীন সার্ভেয়ার জেনারেল বাবু শরৎচন্দ্র দাসের পাঠানো রিপোর্ট সম্বন্ধে লিখছেন, ‘ওঁর পাঠানো প্রতিটি তথ্য মূল্যবান, মানচিত্র তৈরিতে কাজে দেবে।’ অচেনা দেশকে জানতে গেলে, দখল করতে গেলে প্রথমেই দরকার তার মানচিত্র। ব্রিটিশ সরকার শরৎচন্দ্রকে তাদের মতো ব্যবহার করছে, আবার শরৎচন্দ্র গুপ্তচরবৃত্তির ফাঁকে জেনে নিচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মের হরেক তথ্য, নিয়ে আসছেন তিব্বতি ভাষায় লেখা বিভিন্ন সংস্কৃত পুঁথি। এই সব পুঁথিপত্র সংগ্রহ তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফল, ব্রিটিশ সরকারের এ বিষয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।
দু’বছর বাদে শুক্লপক্ষের এক রাতে ফের দার্জিলিং থেকে রওনা দিলেন শরৎচন্দ্র ও উগ্যেন। এ বার ১৪ মাসের সফর।
তাশি লুনপোয় ফের পরিচিতদের সঙ্গে দেখা। দেখা গেল, পাঞ্চেন লামার দরবারে এক মন্ত্রীর বউ সিকিমের রাজকন্যা। মেয়েরা নাচগানে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পরিচিত অতিথিদের। একই গান প্রথমে তিব্বতিতে, তার পর চিনা ভাষায়। বাবু শরৎচন্দ্র দাস জানেন, হিমালয়ের সংস্কৃতিতে প্রত্যেক দেশের সঙ্গে প্রত্যেকের সম্পর্ক থাকে। পঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহের পর তাঁর এক সেনাপতি তিব্বত দখলের প্রবল চেষ্টা চালিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিব্বতি ও চিনা সৈন্যরা সেই শিখদের পরাস্ত করে।
তাশি লুনপোয় পাঁচ মাস থেকে শরৎচন্দ্র এ বার লাসা শহরে। তিব্বতি জনজীবন ফুটে উঠছে তাঁর রিপোর্টে, সেখানে কখনও জানা যাচ্ছে ‘রাগ্যিবা’দের কথা। রাগ্যিবারা মূলত ভিক্ষা করে খায়। ‘লাসার সমাধিস্থলে মৃতদেহ এলে সেগুলিকে টুকরো টুকরো করে কুকুর, শকুনদের খাওয়ায়।’ কখনও বহুবিবাহের কথা, ‘মেয়েটি অবাক হয়ে তাকাল। সে কী, তোমাদের ওখানে এক মেয়ের একটাই স্বামী? তোমার মনে হয় না, আমরা অনেক বেশি সুখী?’ পরক্ষণে তাঁর মন্তব্য, ‘ভারতে স্ত্রীরা স্বামীর প্রেম ও সম্পত্তির অংশীদার। কিন্তু পরিবারের সব ভাইয়ের উপার্জন ও উত্তরাধিকার যাঁর হাতে বর্তায়, সেই তিব্বতি স্ত্রী সত্যিকারের ক্ষমতাবান গৃহিণী।’ জনশ্রুতি, তাঁর এক তিব্বতি স্ত্রীও ছিল। কিন্তু ঘটনাটিকে আজকের দৃষ্টিতে দেখলে হবে না। তখন নেপাল বা চিন থেকে যাঁরা তিব্বতে ব্যবসা করতে চান, তাঁদের অনেকেরই দেশে একটি স্ত্রী, তিব্বতে আর একটি।
দু’মাস লাসায় থাকতে থাকতে ১০ জুন সকালে পরিচিত এক তিব্বতি লামা তাঁকে নিয়ে গেলেন পোতালা প্রাসাদের অভ্যন্তরে, দলাই লামার দর্শনে। বিশাল হলঘরের প্রতিটি আসবাবে সোনার আবরণ। ছয় ফুট লম্বা, চার ফুট উঁচু সিংহাসনে বাবু হয়ে, করজোড়ে বসে তখনকার আট বছর বয়সী শিশু ত্রয়োদশ দলাই লামা। মাথায় হলুদ চাদর। সোনার বাটিতে জাফরান মেশানো হলুদরাঙা জল নিয়ে এক জন এগিয়ে গেল সেই শিশুর কাছে। তিনি উচ্চারণ করলেন, ‘ওম মণিপদ্মে হুম।’ তার পর লামার সোনার কাপে মাখন চা ঢেলে দিলেন এক জন, শরৎচন্দ্র প্রণামী হিসেবে শিশুর কোলে রেখে দিলেন এক তোলা সোনা। এ বার সোনার বাটিতে চাল নিয়ে এগিয়ে এলেন এক জন, শিশু লামা সমবেত অতিথিদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন সেটি। বেরিয়ে আসার সময় শরৎচন্দ্রকে এক লামা পরিয়ে দিলেন লাল রঙের খাদা বা চাদর। অনুপুঙ্খ বিবরণ দিতে দিতে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র শরৎচন্দ্র এ কথাও লিখেছেন, ‘ফুটফুটে শিশুটির চোখে যেন ক্লান্তির ছাপ। রোজ রাজসভার এই বাঁধাধরা রিচ্যুয়াল, ধর্মীয় আচার নিশ্চয় ক্লান্ত করে তাকে!’ পরবর্তী একশো বছরের মধ্যে এই শিশু লামার উত্তরসূরি চতুর্দশ দলাই লামা চিনের হাত থেকে বাঁচতে শরৎচন্দ্রের দেশ ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে আসবেন। কিন্তু সে সব পরের গল্প।
দুর্গম এই সফর পণ্ডিত গুপ্তচরকে কখনও ক্লান্ত করেছে, কখনও বা হতবাক। দেখেছেন নীল পোশাকে, ঘোড়ায় চড়া ‘তেসি’-দেরও। তেসি-রা এক রকমের কুরিয়ার, হলুদ ব্যাগে চিঠিপত্র ও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে লাসা-পিকিং যাতায়াত করেন। এই ঘোড়সওয়ার, ডাকহরকরাদের অন্য খাতির। একটি সরাইখানায় পৌঁছেই বন্দুক উঁচিয়ে আকাশে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করেন, যাতে পরবর্তী সরাইখানা তাঁর জন্য ঘোড়াদের সাজিয়ে রাখতে পারে। প্রতি সরাইখানায় তেসি-র জন্য পাঁচটি ঘোড়া মজুত থাকে, মধ্যরাতে তেসি বসে তিন ঘন্টা ঝিমিয়ে নেন, তার পরই সরাইওয়ালা ডেকে দেয়। তেসি-র চাকরিতে শুয়ে ঘুমোনো বারণ। পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো লঙ্কা ও দুধ খাওয়াও নিষিদ্ধ।
লাসা ভ্রমণের এ রকমই সব বিবরণ লিখে গিয়েছেন এই পণ্ডিত গুপ্তচর। সে যাত্রা লাসা থেকে ফেরার পর আর তিব্বতে ঢোকার অনুমতি তিনি পাননি। কিন্তু হিমালয়ের গহনে সেই দুর্গম দেশটিকে কোনও দিনই ভুলতে পারেননি তিনি। বাড়ি করলেন দার্জিলিঙে, নাম রাখলেন ‘লাসা ভিলা।’ সেখানেই থাকত তিব্বতি পুঁথিপত্র ও মূর্তিসম্ভার। মাঝে মাঝে কলকাতায় মানিকতলার বাড়িতে স্ত্রী, পুত্রদের কাছে আসতেন। জাপান থেকে ফেরার পর ১৯১৭ সালে এই দার্জিলিঙের বাড়িতেই মারা যান শরৎচন্দ্র।
মানিকতলার সেই বাড়ি আর নেই। দার্জিলিঙে স্টেশনের কাছে ‘লাসা ভিলা’ বাড়িটি টিকে আছে হতমান অবস্থায়। শরৎচন্দ্রের উত্তরসূরিরা বাড়িটি বেচে দিয়েছেন। তার পিছনে বেখাপ্পা সব ইমারত। ভিলার বর্তমান মালিক সুদীপ তামাং পণ্ডিত গুপ্তচরের কাহিনি জানেন, তিনিই কোনও মতে ঐতিহাসিক বাড়িটিকে প্রোমোটারের আগ্রাসন থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
ভোলেননি স্থানীয় তিব্বতিরাও। বছর দুয়েক আগে নোরবু নামে তিব্বতি বংশোদ্ভূত স্থানীয় এক ভারতীয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দার্জিলিঙে তৈরি হয়েছে ‘হিমালয়ান টিবেট মিউজিয়াম।’ সেখানে আধুনিক তিব্বতচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ হিসাবে শরৎচন্দ্র সসম্মানে উল্লিখিত।
মৃত্যুশতবর্ষেও বাঙালির কাছে বিস্মৃত তিনি। বাঙালির ঐতিহ্য অনুসারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy