Advertisement
E-Paper

নীহারিকা দেবী থেকে নীহারকণা

মহিলার ছদ্মনামে কবিতা পাঠিয়েছিলেন ‘প্রবাসী’তে।  অচিন্ত্যকুমার জানতেন না, তাঁর ভাবী স্ত্রী ওই নামের কাছাকাছি।মহিলার ছদ্মনামে কবিতা পাঠিয়েছিলেন ‘প্রবাসী’তে।  অচিন্ত্যকুমার  জানতেন না, তাঁর ভাবী স্ত্রী ওই নামের কাছাকাছি।

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
অচিন্ত্যকুমার

অচিন্ত্যকুমার

তখন বয়স সাতাশ। পড়াশোনার পাঠ কয়েক বছর শেষ করেছেন। কবিতা, উপন্যাসে হাতও পাকছে। ‘বিচিত্রা’ পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন।

এ বার বসতে হবে বিয়ের পিঁড়িতে। পাত্রী মায়েরই ঠিক করে দেওয়া, বয়স সতেরো। বছর কয়েক আগে পরিবারেরই এক বিয়েবাড়িতে মেয়েটিকে দেখেন তিনি। অমনি ছেলের সম্বন্ধ ঠিক করে ফেললেন। পাত্রপক্ষের একটিই দাবি, বরযাত্রী যাবেন ৩০ জন। তার মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী এক জন রয়েছেন, জানিয়ে দেওয়া হল তা-ও। তাতে কনেপক্ষের অবশ্য আপত্তি নেই।

গোকুল মিত্র লেনে বসল বিয়ের আসর। কমবয়সি সাহিত্যিকেরা সব ভিড় জমালেন। সেই মুসলিম বন্ধুটি আ়়ড্ডার আসর বসাতে দারুণ ওস্তাদ। শুরু হল গান। বন্ধুই গাইছেন। পরে দেখা গেল, বৌভাতের দিনও সেই তরুণই গেয়ে চলেছেন, ‘মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর’... ইত্যাদি। সকলে মিলে গানে গলা মেলালেন, ‘চল্‌রে চল্‌রে চল।’ ও দিকে একা ঘরে বসে নতুন বউ। তার চোখ ফেটে জল আসে যেন। সব কিছুর আকর্ষণের কেন্দ্রে যে ওই গায়ক ভদ্রলোকটিই।

ভদ্রলোক তথা তরুণের নাম, কাজী নজরুল ইসলাম। বিয়েটা ছিল অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের। পাত্রী, নীহারকণা দেবী।

এই বিয়ে নিয়ে একটু রসিকতাই করেছিলেন বয়সে খানিক ছোট এক সাহিত্যিক। অচিন্ত্যকুমারকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন তিনি, ‘হঠাৎ বিয়ে করা ঠিক করে ফেললে যে?... বিয়ে করে তুমি একেবারে তৈলস্নিগ্ধ সাধারণ ঘরোয়া বাঙালি বনে না যাও।’— পত্রলেখকের নাম বুদ্ধদেব বসু।

বুদ্ধদেবের এমন আশঙ্কার কারণও ছিল বোধহয়। এক বার ‘কল্লোল’ পত্রিকার দফতরে সভা বসল, কী ভাবে শক্তিশালী সাহিত্যিক গোষ্ঠী তৈরি করা যায়, সেই নিয়ে। সেখানেই নাকি ঠিক হয়েছিল, ‘সাহিত্যিক সিদ্ধিও যোগসিদ্ধি’। তাই বিয়েতে ‘না’ বলতে হবে।

তবে নীহারকণা দেবীর সঙ্গে বিয়েটা সেই ‘সিদ্ধি’ লাভে মোটেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ‘মুন্সেফ’ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জীবনে।

একটু অন্য প্রসঙ্গ। স্ত্রীর সঙ্গে কী ভাবে যেন অনেক দিন আগেই ‘নাম’ যোগটা হয়ে গিয়েছিল অচিন্ত্যকুমারের। সে আরও আগের কথা। অচিন্ত্যকুমার তখন সাউথ সুবার্বন কলেজের আইএ ক্লাসের ছাত্র। অনেক আশা করে কবিতা পাঠিয়েছিলেন ‘প্রবাসী’ পত্রিকায়। ফেরত এসেছিল তা। কী আর করা। এক বন্ধু বললেন, কবিতাটা আবার পাঠাও, তবে এ বার এক মহিলার ‘ছদ্মনামে’। সত্যি দেখা গেল, কবিতা ছাপা হল, অন্যান্য পত্রিকাও সেই ‘মহিলা কবি’কে কবিতা লেখার আমন্ত্রণ পাঠাতে লাগল। ছদ্মনামটি ছিল ‘নীহারিকা দেবী’। বিয়ের পরে নাকি অচিন্ত্যকুমার বলেওছিলেন, ‘‘নীহারিকা দেবী এ বার ‘নীহারকণা’ হয়ে দেখা দিলেন।’’

এ হেন নীহারিকা দেবীর বিয়ের আসর যিনি মাতিয়েছিলেন, সেই বন্ধুটির বিয়েও কম চর্চিত নয়। ৬ নম্বর হাজি লেন, কলকাতা। ২৪ এপ্রিল ১৯২৪। পাত্র কাজী নজরুল ইসলাম, ধর্মে মুসলমান। পাত্রী, প্রমীলা সেনগুপ্ত, হিন্দু। বিয়েতে বাধাবিপত্তি কিছু কম এল না। তার অন্যতম কারণ, পাত্র বা পাত্রী কেউই ধর্মান্তরে রাজি নন। তা বলে বিয়ে হবে না, হয় না কি! দুজনেই মুখ ফুটে একে অন্যের দাম্পত্য-ধর্ম স্বীকার করলেন। হল মালাবদলও। বন্ধু মইনুদ্দিন হোসেন সাহেব-সহ অন্যদের উপস্থিতিতে ‘আহলে কিতাব’ অনুযায়ী এক প্রকার আইনসিদ্ধও করা হল বিয়েকে।

আসলে নীহারকণাই হোন বা প্রমীলা, এঁরাই কবি-জীবনীর আসল ‘বিজয়িনী’।

Achintya Kumar Sengupta Writer Niharika Debi নীহারকণা দেবী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy