Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক ছিলিম ফিলিম

বাড়ির সব্বার সঙ্গেই সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গিয়েছিল ইসাবেল। সতেরো বছর বয়স হতে মেয়েটার তখনও কয়েকটা দিন বাকি। তার জার্মান বয়ফ্রেন্ড ফেলিক্স বলেছিল, ইসাবেলের মতো মেয়ে নাকি সে আগে কক্ষনও দেখেনি! এই ফেলিক্সের সঙ্গেই তো সাগরবেলায় তার প্রথম শরীরের অভিজ্ঞতা! ফেলিক্সের পেশি আর মাংসের স্রোত যখন হ্যাংলা-আনাড়ি খিদে নিয়ে তার শরীর ধামসাচ্ছে, ইসাবেলের মন তখন কোথায়, কোন স্বপ্নে, সমুদ্রের জলরেখায় কোমল পা ছুঁইয়ে হেঁটে যাচ্ছে!

শান্তনু চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

বাড়ির সব্বার সঙ্গেই সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গিয়েছিল ইসাবেল। সতেরো বছর বয়স হতে মেয়েটার তখনও কয়েকটা দিন বাকি। তার জার্মান বয়ফ্রেন্ড ফেলিক্স বলেছিল, ইসাবেলের মতো মেয়ে নাকি সে আগে কক্ষনও দেখেনি! এই ফেলিক্সের সঙ্গেই তো সাগরবেলায় তার প্রথম শরীরের অভিজ্ঞতা! ফেলিক্সের পেশি আর মাংসের স্রোত যখন হ্যাংলা-আনাড়ি খিদে নিয়ে তার শরীর ধামসাচ্ছে, ইসাবেলের মন তখন কোথায়, কোন স্বপ্নে, সমুদ্রের জলরেখায় কোমল পা ছুঁইয়ে হেঁটে যাচ্ছে! ফেলিক্সের যাবতীয় উত্তেজনাও তার শরীর জাগাতে পারে না। মেয়েটির কাছে তখন থেকেই যৌনতা আর রোমান্টিক-রংবাহারি নয়। সে এ বার থেকে কামনার নির্বাপণ খুঁজবে ইন্টারনেটের পর্নো-সাইটে। সেখানে সাইবার-জালে জড়িয়ে থাকে যৌনসঙ্গী চেয়ে অনেক বিজ্ঞাপন। থাকে স্কুল বা কলেজ-ছাত্রীদের পার্ট টাইম যৌনকর্মী হয়ে রোজগার করার লোভনীয় ইশারা!

না, পরিচালক নেট-এরও ফাঁদ-পাতা-ভুবনে টিনএজ বালক-বালিকাদের নৈতিক হড়কে যাওয়ার ভয়ানক সম্ভাবনা নিয়ে সচেতনতামূলক ছবি বানাননি। গরমের ছুটি কাটিয়ে প্যারিস ফেরার পর, যে ইসাবেলকে আমরা মায়ের ওয়ার্ডরোব থেকে না-বলে-নেওয়া টপ পরে, ব্র্যান্ডেড ব্যাগ ঝুলিয়ে মাঝারি হোটেলে ক্লায়েন্ট-সার্ভিস দিতে যেতে দেখি, তার ‘বঞ্চিত-লাঞ্ছিত’ কোনও শৈশব নেই! তাদের মা ইসাবেল ও তার ভাই ভিক্টরের স্নেহ-যত্নে ফাঁক রাখেন না। সৎ-বাবাটিও হাসিখুশি, কেয়ারিং, দায়িত্ববান। তাঁরা হইহই করে মেয়ের জন্মদিন করেন। মেয়ের নতুন বয়ফ্রেন্ড জুটলে খুশি হন। অবহেলা বা অভাববোধের কোথাও কোনও ‘সিন’ই নেই! তাই ফেলিক্সের সঙ্গে অসুখী মিলনের পরে যে ইসাবেল প্রথম দিন হোটেলের ৬০৯৫ নম্বর ঘরে, জর্জ নামে এক ধনী বৃদ্ধের শয্যাসঙ্গিনী হয়, সে আসলে নিজের শরীর, নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষাটাকে পরখ করতে চাইছিল। ওই যে সে তার সঙ্গে একটা সকাল, দুপুর বা সন্ধে কাটানোর (রাত কাটাতে গেলে বাড়িতে জেনে যাবে) দাম ঠিক করেছিল ৩০০ ইউরো— ওটা আসলে তার অহংকারের দাম! এই অহংকার তার সদ্য যৌবনবতী শরীরের জন্য। আর এই অহংকার ক্রমশ স্ফীত হয় রতিকলায় তার নিপুণ পটুত্বের জন্য। নানা বয়সের, বিভিন্ন পুরুষের হরেক যৌন-আবদারের মোকাবিলা করতে করতে এই আত্মবিশ্বাস সে অর্জন করে। বয়ঃসন্ধির শরীরে এক অভিজ্ঞ নারীর মন নিয়ে সে তার হাইস্কুলের সহপাঠীদের প্রেমের আদিখ্যেতাকে করুণা করে। কবেকার কোন ফেলিক্সকে তার মনেই পড়ে না। নতুন বয়ফ্রেন্ড অ্যালেক্সকে উদাসীন রুক্ষতায় প্রত্যাখ্যান করে।

পরিচালক এক টিন-এজারের সহসা স্বেচ্ছা-গণিকা হওয়ার গল্প বলেন, কোনও ‘এক্সপ্লয়টেশন’-এর নিরাপদ ছক ছাড়াই। এক দিন মিলনশয্যায় জর্জের আচমকা মৃত্যু ইসাবেলের যৌন অ্যাডভেঞ্চারে দাঁড়ি টেনে দেয়। পুলিশ জেনে যায়, মা জেনে যায়, মেয়েটাকে সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়। যে জর্জ বলেছিল, ইসাবেলের চোখ দুটো খুব সুন্দর আর করুণ— তার মৃত্যুর জন্য সে নিজেকে দায়ী করে। মনস্তাত্ত্বিকের কাছে সেটা স্বীকারও করে। কিন্তু তার পরেও সে আবার ওই পুরনো শরীর-অভিযানে ফিরতে চায়। আর এই নতুন ইনিংসের প্রথম দিনেই তার খদ্দের হয়ে আসেন জর্জের স্ত্রী। তার স্বামী মৃত্যুর মুহূর্তে যে-মেয়েটির সঙ্গে ছিল, মহিলা তাকে শুধু এক বার দেখতে চেয়েছিলেন। ওই ৬০৯৫ নম্বর ঘরটাতেই তার সঙ্গে একটা রাত কাটাতে চেয়েছিলেন। দুজনে একসঙ্গেই বিছানায় শুতে যান। সেই বিছানাতেই। ভদ্রমহিলা ইসাবেলের ঠোঁটে-গালে-কপালে-চুলে আলতো করে আঙুল ছোঁয়ান। উনি কি কোথাও সতেরো বছরের মেয়েটির উত্তাপ তার শরীরে নিতে চাইছিলেন? ছবির একেবারে শেষ দৃশ্যে ওই ঘরটায়, ওই বিছানায়, মস্ত আয়নায় তার প্রতিবিম্বের সঙ্গেই ইসাবেল একা বসে থাকে। সেই প্রথম দৃশ্যে বালুকাবেলায় বিকিনি-পরা কিশোরীটির মতোই একেবারে একলা। সেই কিশোরী, সতেরো বছরের জন্মদিন থেকে কয়েকটা দিন দূরে, যে তখনও শরীর-মিলনের স্বাদই পায়নি।

sanajkol@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE