Advertisement
E-Paper

ড্রাকুলার মিসটেক

সৈকত মুখোপাধ্যায়কাউন্ট ড্রাকুলার পেটের ভেতরটা সমানে কেমন যেন চিড়িক মারছিল। পেটের দোষ নেই অবশ্য। হয়েছিল কী, সন্ধের দিকে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে কুকুরে দাঁত দুটোয় ধার দিতে বসেছিলেন। প্রায় দুশো বছর কোনও মানুষের গলায় দাঁত বসাননি।

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
ছবি: দেবাশীষ দেব।

ছবি: দেবাশীষ দেব।

কাউন্ট ড্রাকুলার পেটের ভেতরটা সমানে কেমন যেন চিড়িক মারছিল। পেটের দোষ নেই অবশ্য। হয়েছিল কী, সন্ধের দিকে তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে কুকুরে দাঁত দুটোয় ধার দিতে বসেছিলেন। প্রায় দুশো বছর কোনও মানুষের গলায় দাঁত বসাননি। অব্যবহারে দাঁত দুটো ভোঁতা হয়ে গিয়ে থাকলে আজ ওই পাশের ঘরে শুয়ে থাকা মানুষটার রক্ত খাবেন কেমন করে? এই ভেবে একটা সরু উকো দিয়ে দাঁত দুটো ঘষছিলেন। এ দিকে জিভ দিয়ে সমানে এত জল পড়ছিল যে একটু বাদেই উকোটা হাত থেকে হড়কে গিয়ে সোজা পেটের মধ্যে।

নিজের মনকে কাউন্ট ড্রাকুলা বোঝালেন, ও সব পেটে ব্যথাট্যথা

কিছু নয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল কত বছর বাদে আবার এই অভিশপ্ত দুর্গে কোনও মানুষের পা পড়েছে।

কত বছর বাদে আবার তিনি মানুষের রক্ত খেতে পাবেন।

সেই যে ব্রাম স্টোকার না কে একটা লোক ১৮৯৭ সালে একটা বই লিখে গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দিল যে, তিনি আসলে মানুষ নন, রক্তচোষা বাদুড়। তার পর থেকেই এ দিকে মানুষের পা পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

এখন বোধ হয় দু’হাজার সাতানব্বই সাল। দুশো বছরে কত কিছুই বদলে গেল। নীচে ওই উপত্যকায় ঘন জঙ্গল কেটে শহর বসল। কাউন্টের পোষা নেকড়েগুলোও কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে! কেউ বিশ্বাস করবে যে, এক সময় পৃথিবীতে তিনি একাই উড়তে পারতেন? এখন ক্যাসেলের জানলায় দাঁড়িয়ে কাউন্ট ড্রাকুলা দেখেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোও পিঠে মিনি-জেট বেঁধে সুঁইসাঁই করে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। তা ছাড়া প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ছোট ছোট স্পেস-কার তো রয়েছেই।

যে মানুষটা আজ রাতে তার অতিথি, সেও ওরকমই একটা নতুন মডেলের স্পেস-কারে চেপে উড়ে যাচ্ছিল। তার পর যান্ত্রিক গোলোযোগে একেবারে ড্রাকুলা ক্যাসেলের ছাদে ল্যান্ড করেছে। বেচারা!

অবশ্য আজকাল কাউন্ট ড্রাকুলা পারতপক্ষে উড়তেটুড়তে চান না।

বাঁ দিকের পাখনাটায় অনেক দিন ধরেই ভীষণ বাতের ব্যথা। ওই কখনও ক্যাসেলের ছাদ থেকে দুটো কুমড়ো পেড়ে আনতে হলে, কী পড়ে যাওয়া পায়রার ছানাকে ঘুলঘুলিতে তুলে রাখতে হলে, তবেই। তা না হলে তিনি শুয়ে বসেই জীবন কাটাচ্ছিলেন। খাচ্ছিলেন শুধু টমেটোর সস, বিটের ঝোল, আর মাঝেমধ্যে লাল শাকের ঘণ্ট। লাল ছাড়া অন্য কোনও রঙের খাবার দেখলে ঠিক রুচি লাগে না। হাজার বছরের অভ্যেস তো।

কিন্তু আজ দুপুরে ফটফট শব্দ করতে করতে স্পেস-কারটা যেই ছাদের ওপর এসে পড়ল, আর সেই স্পেস-কারের দরজা খুলে একটা নাদুসনুদুস লোক মাথা চুলকোতে চুলকোতে বেরিয়ে এল, অমনি এত বছর বাদে কাউন্টের ভেতরে সেই ঘুমিয়ে পড়া রক্তচোষা বাদুড়টাও আবার ফিসফিস করে বলে উঠল— রক্ত চাই, রক্ত চাই।

অবশ্য লোকটার সামনে তিনি ঘুণাক্ষরেও সেই রক্তের খিদে দেখাননি। বরং এখানে শোও, ওখানে পা রাখো, এই মিছরির শরবতটা খাও, ওখানে কানখুসকি রাখা আছে, কান চুলকোও— এই সব বলে সমানে তাকে তোয়াজ করে গেছেন।

লোকটা নাকি সাইকো-ফোনে রকেট মিস্তিরিকে খবর দিয়েছিল। কিন্তু মিস্তিরি বলে দিয়েছে আজ বিশ্বকর্মা পুজো, যন্তরে হাত ঠেকাবে না। তার মানে রাতটা ওকে ড্রাকুলার কুখ্যাত দুর্গেই কাটাতে হচ্ছে। আর তার পর কাউন্ট ড্রাকুলার দাঁতের বিষে কাল থেকে তো ও নিজেই হয়ে যাবে একটা ভ্যাম্পায়ার। কোনও দিন আর এই ক্যাসেল ছেড়ে যেতে চাইবে না।

রাত নিঝুম। বিশাল বিশাল জানলাগুলোর মধ্যে দিয়ে ঘোলাটে জ্যোৎস্না এসে ঘরের মেঝেয় পড়েছে। অবিকল একটা বিরাট বাদুড়ের মতনই কালো আলখাল্লা গায়ে কাউন্ট ড্রাকুলা বিছানার দিকে এগিয়ে এলেন। লোকটাকে দেখে মনে হল গভীর ঘুম ঘুমোচ্ছে। কাউন্ট মুখটা নামিয়ে আনলেন তার গলার দিকে। জ্যোৎস্নায় ঝিলিক মেরে উঠল কাউন্টের লাল টুকটুকে ঠোঁট আর লম্বা দুই কুকুরে দাঁত।

তার পরেই কী যে হল! সিঁইইইক ঝাঁই করে একটা প্রচণ্ড শব্দ। তারই সঙ্গে জোরালো নীল আলোর ঝলক। চোখটোখ রগড়ে লোকটা বিছানায় উঠে বসে দেখল, কাউন্ট দূরে ঘরের কোনায় ঘাড় গুঁজে পড়ে পড়ে কাতরাচ্ছেন।

লোকটা ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ল। বলল, কী ব্যাপার স্যর? আপনি আমার গলায় কামড়ে দিলেন কেন?

কাউন্ট দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, আরে উল্লুক, আমাকে চিনতে পারলি না? আমি সেই কাউন্ট ড্রাকুলা। তোর রক্ত খেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রক্তের বদলে এমন জোরালো ইলেকট্রিক শক খেলাম কেন বলতে পারিস?

লোকটা কাউন্টকে হাত ধরে তুলে এনে বিছানায় বসাল। তার পর ভীষণ লজ্জিত ভাবে বলল, আগে বলবেন তো। আমার শরীরে আপনি রক্ত পাবেন কোথায়, ইয়োর হাইনেস? আমি তো মানুষ নই; মানুষের মতন দেখতে একটা অ্যান্ড্রয়েড রোবট। স্পেস-কারের পরীক্ষামূলক উড়ানের জন্যে আমাদের মতন রোবটদের ব্যবহার করা হয়। রক্তের বদলে আমরা ইলেকট্রিক কারেন্টের শক্তিতে চলাফেরা করি।

তা আপনি কামড়েছেনও একেবারে মোক্ষম জায়গায়। ওই গলার ভেতর দিয়েই আমার পুরো পাওয়ার-লাইনটা গেছে। একেবারে গামা-হর্মোন ব্যাটারির চল্লিশ হাজার ভোল্ট।

নেহাত ভ্যাম্পায়ারদের মরণ নেই, তাই কপালজোরে বেঁচে গেলেন ইয়োর হাইনেস!

drakula mistake saikat mukhopadhay rabibarer anandamela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy