নববর্ষের শুরুতেই সরকার ‘দেহদান কর্মসূচি’ স্থগিত রাখায় রাজ্যের বাসিন্দাদের বড় অংশ বিপাকে পড়েছেন। গত বছর পর্যন্ত দেহদান করলেই সরকারের তরফ থেকে পারলৌকিক ক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হত। ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য দৌড়তে হত না। সরকারি কর্মচারীরা অশৌচের কয়েক দিন বাড়ি এসে হবিষ্যির জোগাড় করে দিয়ে যেতেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রাদ্ধের কার্ড নিজে ডিজাইন করে দিতেন। কিন্তু, হাসপাতাল ও মর্গগুলিতে এত বেশি শবদেহ জমে গিয়েছে যে সরকার আগামী তিন বছর ‘দেহদান প্রকল্প’ বন্ধ রেখেছে। পরিবর্তে পুরসভার পক্ষ থেকে পাঁচটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা গঠন করা হয়েছে। ‘স্বর্গদ্বার’, ‘শেষ যাত্রা’, ‘লহ প্রণাম’, ‘অন্তর্জলি’ ও ‘মুক্তি’। পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যাঁরা দূর দেশে থাকেন, তাঁদের বাবা-মা’র মৃত্যু হলে সংস্থাগুলোকে জানালেই চলবে। সঙ্গে সঙ্গে এঁরা বাতানুকূল ভ্যান নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজায় পৌঁছে যাবেন। সিডি প্লেয়ারে দশ মিনিট বাজাবেন কান্নার রোল। দুই কামরার শ্মশানগামী গাড়িটির একটিতে শবদেহ উঠবে, অন্যটিতে সর্বাধিক দশ জন আত্মীয়ের বসার বন্দোবস্ত থাকবে। শ্মশানে ক্রায়োজেনিক চুল্লিতে দাহ করতে লাগবে সাড়ে বারো মিনিট। ভ্যানের ওয়াশরুমে গঙ্গাজলে স্নান, শবাধারটিকে যন্ত্রের মাধ্যমে ছোট ডায়াসে পরিণত করে পুরোহিতের মাধ্যমে রেডিমেড শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান সারতে লাগবে বড়জোর দেড় ঘণ্টা। দু’চার জন শ্মশানবন্ধু রাজি থাকলে তাঁদের অ্যাকাউন্টে ই-ব্যাঙ্কিং মারফত নিয়মভঙ্গের টাকাও পাঠানোর ব্যবস্থাও করা যাবে। পুরপিতা বলেছেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু এক বছর বলে আক্ষেপ করেছিলেন এক কবি। আজকের দিনে সেটা এক ঘণ্টায় এসে ঠেকেছে। যাঁদের সেই সময়টুকুও নেই, তাঁদের জন্য আছে ‘হোম ডেলিভারি’র ব্যবস্থা। কাউকেই যেতে হবে না। সংস্থা (বেশি চার্জের বিনিময়ে) প্রিয়জনের সৎকার করে চিতাভস্ম বাড়ি পৌঁছে দেবে।’
সরিৎ শেখর দাস, নোনাচন্দনপুকুর
লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in