Advertisement
E-Paper

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৪ ০০:২৬

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তিতিবিরক্ত মায়েদের দীর্ঘ দিনের দাবিকে অবশেষে মান্যতা দিল সরকার। গতকাল দেশের আইনসভায় পাশ হয়ে গেল সহজ পদ্ধতিতে বাচ্চাদের খাওয়ানোর আইন। আইনে বলা হয়েছে, যে ব্যস্ত মায়েরা তাঁদের বাচ্চাদের খাওয়াতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন, তাঁরা এ বার অনলাইন শপিংয়ের মাধ্যমে যে কোনও সংস্থার কাছ থেকে ‘স্বস্তি’ নামক একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র আনিয়ে বাচ্চার পেটে লাগিয়ে নেবেন। ছয় মাস থেকে দুই বছরের বাচ্চাদের জন্য আছে ‘স্বস্তি ছুটকু’। গলা ভাত, হাড়-কাঁটা বেছে মাছ-মাংসের মণ্ড খাওয়ানোর জন্য বানানো। আর দুই থেকে আট বছরের বাচ্চাদের জন্য ‘স্বস্তি স্মার্টি’। যে কোনও অপছন্দের খাবার, যেমন পটল, ঢেঁড়স, করলা, রুটি, চিঁড়ে, ছানা মণ্ড বানিয়ে দেবে নিমেষে। স্বস্তি ব্যবহারের পুরো প্রক্রিয়াটি এই রকম: প্রথমে বাচ্চার পেটের মধ্যিখানটা কেটে দু’ফাঁক করা হবে। তার পর সেখানে ‘স্বস্তি’ যন্ত্রটি বসানো হবে। এর বাইরের অংশে একটি নল আছে, সেটি বন্ধ থাকবে ক্যাপ দিয়ে। শিশুকে খাওয়ানোর সময় ক্যাপটি খুলে পিচকারির মতো একটি সহায়ক যন্ত্র দিয়ে খাবারের মণ্ড ঢুকিয়ে দিতে হবে। তার পর ক্যাপ এঁটে দিলেই, মিটে গেল। এই সময় শিশুটির কার্টুন বা অ্যানিমেশনের অনুষ্ঠান দেখা বা ল্যাপটপে গেম খেলা বাঞ্ছনীয়। এই আইন বর্তমানে শুধুমাত্র কমর্রতা মায়েদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। গতকাল আইনের কথা টিভি-নিউজে প্রচারিত হওয়ামাত্র, কর্মরতা নন এমন মায়েদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মাননীয় শিশুপালন মন্ত্রী। এঁরাও তাঁদের সন্তানের জন্যও ‘স্বস্তি’ ব্যবহারের অনুমতি চাইছিলেন। মন্ত্রীমহোদয় বিক্ষোভকারী মায়েদের আশ্বস্ত করেছেন যে, কোনও মা যদি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘নিদ্রাকাতর’ অথবা ‘সিরিয়ালপ্রেমী’ হিসাবে শংসাপত্র নিয়ে আসতে পারেন, তবে তাঁদের ক্ষেত্রেও অবশ্যই এই আইনটি প্রযোজ্য হবে।

জয়ন্ত আচার্য, গোপালপুর, দঃ দিনাজপুর

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

একটা ভয় [কষ্ট] লজ্জা

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

জীবন অনিত্য, প্রেম অনিত্য, পয়সা অনিত্য, আইপিএল-এর ফর্ম অনিত্য, এমনকী একটা সময় বোঝা গেল, সিপিএম-ও অনিত্য। কিন্তু কপাল চাপড়ে, টেবিল থাবড়ে বলতে পারি একটা জিনিস নিত্য অটোওয়ালাদের ব্যবহার বা ধমকি বা হুমকি। অপমান করার রেলা তার জন্মগত অধিকার।

হাজরা থেকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি যাব। সকাল সাড়ে দশটায় অটোর লাইনে। এক মোটাসোটা মাঝবয়সি লোক এসে দাঁড়ালেন বেশ গলদঘর্ম হয়ে। ঘন ঘন রুমাল দিয়ে কপাল মুছছেন। আমি অটোয় উঠলাম, আমার পরে ভদ্রলোক উঠতে গিয়ে এক বার পেছনের পকেটে হাত দিয়ে বোধ হয় মানিব্যাগটা চেক করতে গিয়ে দেখলেন সেটা নেই। এ পকেট, ও পকেট, হাতে ধরা প্লাস্টিক প্যাকেটের ভেতর। নাহ্! কোথাও নেই। এ বার লঙ্কা-ফোড়ন ‘জেঠুউউমণি, কাকে চকমা দিচ্ছেন। আমি ডুডু খাই না। আমি বাংলা খাই। পয়সা নেই তো পরের লোককে লাইন ছেড়ে দিন।’ কথাগুলো বেশ সুর করে বলছিল। অপমানটা যাতে বেশ তাগড়া হয়। ভদ্রলোক মুখ লাল করে নেমে গেলেন। গলার কাছে চিনচিনে ভাব হয়তো থাকবে সারাটা জীবন। জোয়ানের আরক ফেল মেরে যাবে।

হঠাৎ আমার মস্তিষ্কে অপমান ফ্ল্যাশব্যাক-ফ্ল্যাশব্যাক খেলতে লাগল। সে দিনও হাজরা থেকে ফাঁড়ি যাচ্ছিলাম। বছর কুড়ি আগে। আমার পেছনে খুব রোগা চেহারার, গরমে হা-ক্লান্ত একটা আমার বয়সি ছেলে দাঁড়িয়েছিল। হাতে ফাইল। মাঝে মাঝে হাওয়ায় তার শার্ট পেটের সঙ্গে লেগে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল। ফাঁড়ি নেমে সে-ও পকেট হাতড়াচ্ছিল। এ পকেট ও-পকেট, ফাইলের ভেতর। সে বলতে চাইছিল, ‘আমি আসলে...’, কথা শেষ হয়নি, কলার-তোলা দাদারা ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। ‘কী লাল্টুসোনা, ব্যাগ হারিয়েছে? পকেটমার? তোমার পকেট আছে বাবু?’ ছেলেটির মুখ লাল। অসহায় চাউনি। এক জন অটোওয়ালা বলে উঠল, ‘সব ভাঁওতা। মেয়েদের নিয়ে চপ-কাটলেট খাওয়ানোর সময় তো কই পকেট হাতড়াও না। আর দুটো টাকা দিতে গেলেই, বাড়িতে ভুলে গেছি, না? ভদ্দলোকের জামা পরে তো বেশ চালিয়ে যাচ্ছ খোকন!’ ছেলেটির চোখ টলটল করছে। আমি এই জটলার মধ্যে আটকে গিয়েছি। ছেলেটা চোয়াল শক্ত করে রয়েছে, যাতে চোখের জল আর এই জ্বালা না বাড়ায়। বলে উঠল, ‘আমার এই হাতঘড়িটা রাখুন। এটা বেচলে কিছু না হলেও অন্তত সাত-আটশো টাকা পাবেন।’ ‘হ্যাঁ, তাই দে। তাই নেব। শালা, এদের ছেড়ে দিয়ে দিয়ে এরা মাথায় চেপে বসেছে। যাও খোকা কলেজ যাও। আসিব্বাদ করি, বড় মানুষ হও।’ জটলা কাটতে ছেলেটি হনহনিয়ে এগিয়ে গেল। আমি ইতস্তত করে একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘একটু জল খাবেন? আমার কাছে আছে।’ বলল, ‘আচ্ছা।’ দেখলাম চোখটা আরও লাল, অপমানের তাড়স তখনও গলার পুঁটলিটার সঙ্গে লড়াই করছে। বললাম, ‘এত সহজে ঘড়িটা দিয়ে দিলেন?’ ছেলেটি বলল, ‘ঘড়িটা আমার বাবা দিয়েছিলেন। মাধ্যমিকে স্টার এটাই ছিল বারগেন। বাবা নেই। বাবার গন্ধটা ছিল।’ দু-মুহূর্ত আমরা চুপ। অত লোকের সামনে এত জোরদার ঝাঁঝানো-শাসানো কি ভদ্র মেরুদণ্ড সইতে পারে? সে কেবল মনের মধ্যে অপমানের উত্তর শানায় মধ্য-চল্লিশে নিজের গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে।

কী বলি কী বলি অস্বস্তিটা কাটল ছেলেটির কথায়, ‘কেমন অটোওয়ালাদের সঙ্গে আজ জিতে গেলাম, বলুন?’

amisanchari@gmail.com

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy