Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

দেবলীনা

ছবিটিতে নানা রঙে আঁকা থাকে এক শিল্পী-দম্পতির নয় নয় করে দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সহাবস্থান। শিল্পে এবং সংসারে। রেওয়াজ-মাফিক, বাধ্য সংসারী শিল্পী নারীটি, আর নিয়মভাঙা অবাধ যাপনে থাকেন পুরুষটি। আবার, যে কোনও অযুতনিযুত, গড়পড়তা দম্পতিসমও তো তাঁরা নন। অসহ্য, কিন্তু ঝিমিয়ে না-পড়া, খ্যাপাটে, উদ্দাম এক ঘর-গেরস্থালি তাঁদের।

চার দশকের চড়াই-উতরাই এই যাত্রা যখন শুরু হয়, তখন নিউ ইয়র্কের শিল্পী মহলে উশিয়ো শিনোহারা এক জানাচেনা নাম। বোহেমিয়ান, অ্যালকোহলিক, এক্সপেরিমেন্টাল। আর নোরিকো জাপান থেকে পায়ের তলায় মাটি খুঁজতে চলে আসা সদ্য বয়ঃসন্ধি পেরনো এক তরুণী, ছবি আঁকিয়ে। কয়েক দিনের জানপহেচানেই দুজনেই কূল-ভাসানো প্রেম। ঝোড়ো গতিতে বিবাহ এবং সন্তান। উশিয়ো তখন একচল্লিশ, নোরিকো উনিশ। আপাত-অসম এক যাত্রার সেই শুরু। আর সেই জীবনের ঘরে-বাইরের ছবি অন্তরঙ্গে বুনে-গেঁথে এই তথ্যচিত্র। কাহিনিচিত্র নয়তো? খটকা লাগবে অবরে-সবরে। ক্যামেরার নিপুণ নৈকট্য হেঁয়ালিতে ফেলবে। তার সামনে চরিত্রদের এমন অনায়াস চলাচল, তোয়াক্কাহীন, যেন বা যন্তরটি নেই-ই, আজব লাগবে। পরিচালক আসলে এই পরিবারের অন্দরমহলে ক্যামেরা হাতে প্রায় ছ’সাত বছর কাটিয়েছেন। সপ্তাহান্তে, বা যে-কোনও অবসরে।

উশিয়ো মূলত বিখ্যাত এক জন ‘অ্যাকশন পেন্টার’ হিসেবে। বক্সিংয়ের দস্তানা রঙে চুবিয়ে ইলাহি ঢাউস ক্যানভাসের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পটু দৌড়বাজের মতো ছুটে বেড়িয়ে করেন ‘বক্সিং পেন্টিং’। তাঁর আশ্চর্য কোরিয়োগ্রাফি থেকে নজর ফেরানো যাবে না, এ দিকে রঙে-রসে ক্রমশ ডুব দেবে ক্যানভাস। সে এক সম্মোহনী পারফরম্যান্স। এই শিল্পীকে নিয়েই তো ছবি বানাতে এসেছিলেন পরিচালক। কিন্তু পুরুষটির শিল্পচর্চার হট্টগোলের পাশে চুপটি করে দাঁড়িয়ে যে নারী, খেয়াল রাখেন স্বামী-সংসার-সন্তানের খুঁটিনাটির, শিল্পী উশিয়োর নানাবিধ জরুরি তাড়না থেকে শুরু করে তাঁর খেয়ালি খোলামকুচির, ক্যামেরা কখন যেন তাঁকেও নজর করতে শুরু করে। হয়তো বা অজান্তেই। ক্যামেরা এখানে যেন বা শুধুই দর্শক। তার চোখে পড়ে যায়, সংসারের প্রতি দিনের বায়নাক্কা সামলে, নিপুণ গৃহিণীর রং-তুলি হাতে তুলে নেওয়া, অবসরে। নিভৃতে, একান্তে। কোনও হট্টগোল নেই। কারণ, হুকুমবরদার বউটির রং-তুলির খবর তো দুনিয়া কবেই ভুলে গিয়েছিল।

ছবিটি অনায়াসে তার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলে সম্পর্কের জটিল সমীকরণ, ফ্রেম থেকে ফ্রেমে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান সৌধটিকে। এবং অবশ্যই পুরুষতন্ত্রের নানাবিধ ফেরেববাজির অলিতে-গলিতে ঢুঁ মারতে থাকে ক্যামেরা, ধরে ফেলতে থাকে তার চাতুরি। হালকা চালে, বিশেষ কোনও ঝুটঝামেলা ছাড়াই। এ ছবিতে যখন চল্লিশ বছরের বিয়ে-করা বউ নিস্পৃহ বলে ওঠে, ‘তুমি পাশে না থাকলে বড় হালকা লাগে, মুক্ত লাগে’, তখন প্রেম বা বিবাহ নিয়ে যাবতীয় নাকে-কান্না মায়া-অঞ্জন মুছে খাড়া হয়ে বসে। শিল্পী স্বামী স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্যে কখনও বলে ওঠেন, ‘গড়পড়তা মানুষ জিনিয়াসের অনুচর হবে, এ ছাড়া আবার কী?’ ‘না, আমি তা নই, আমার নিজের কাজই করা উচিত, আমি তোমাকে সাহায্য করি বটে, কারণ মনে হয় সেটা জরুরি।’ ‘না, করো, কারণ আমি তোমার স্বামী।’ ফিচেল হাসিতে আশির বৃদ্ধের মুখ ভরে ওঠে। হাসিঠাট্টার আড়াল সরিয়ে ভার্জিনিয়া উল্ফের সেই বিখ্যাত উক্তি নিজের মতো করে আওড়ায় নোরিকো, ‘মহিলা শিল্পীদের দরকার নিজের টাকা আর নিজস্ব একটি ঘর।’

বয়স যখন ষাট পেরলো, এক গ্যালারি-কর্তার নজরে এল নোরিকোর কাজ। উশিয়োর সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী, এই প্রথম। কমিক বুক স্টাইলে নিজের জীবন কাহিনি বলেন নোরিকো। নাম, ‘কিউটি অ্যান্ড দ্য বক্সার’। কিউটি এবং বক্সার: চরিত্র দুটিকে, অথবা নোরিকোর তুলি উপচে পড়া প্রেম, ক্ষোভ, কান্না, বিদ্রোহকে চিনে নিতে ধন্দে পড়বে না কেউ। ছবিতে এর অনেক পাতাই অ্যানিমেটেড হবে। থাকবে আর্কাইভাল ফুটেজ। আভাস দেবে আভাঁ-গার্দ শিল্প আন্দোলনের। কিন্তু সব ছাপিয়ে এই তথ্যচিত্র আর পাঁচটা মামুলি থোড়-বড়ি-খাড়া জীবনী-ছবির ছক ভেঙে হয়ে উঠবে অন্য এক জটিল সন্দর্ভ। দাম্পত্য, প্রেম, বিবাহ নিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরবে এক সহজ আয়না, যদিও সেটা গোটা নয়, টুটাফুটা।

debalina.majumder@gmail.com

ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে ভারতীয় ফুটবল। আজ সন্ধে সাতটায় বারুইপুরের গোষ্ঠ পাল ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ভারত এবং আট বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। প্রথম বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামছে ভারত। আগের ম্যাচগুলোয় তারা ক্রীড়ানৈপুণ্যে ফুটবল অনুরাগীদের মন ভরিয়ে দিয়েছে। স্টেডিয়ামের দু’লক্ষ কুড়ি হাজার আসনের একটিও আজ শূন্য থাকবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য ফুটবলপ্রেমী দখল করে নিয়েছেন ডায়মন্ড হারবার, সোনারপুর, চম্পাহাটি, বারুইপুরের সমস্ত বিলাসবহুল হোটেল। বারুইপুর সংলগ্ন পাঁচটি বাইপাস ও এগারোটি ফ্লাইওভার যানজট-মুক্ত করার ব্যবস্থা হয়েছে। ভারতীয় দলের টিম হোটেলটি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ইন্ডিয়া-কোচ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জয় সম্পর্কে দারুণ আশাবাদী। বলেছেন, সেমিফাইনালে জয়সূচক গোলের নায়ক, বার্সেলোনার দশ নম্বর স্ট্রাইকার গোবিন্দ গুছাইত ও এ সি মিলানের ডিফেন্ডার সরল মুর্মুর সামান্য চোট রয়েছে, কিন্তু তাঁরা শুরু থেকে খেলবেন। কার্ড সমস্যায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার মানব দাসের না থাকার বিষয়টি তিনি আমলই দেননি। তাবড় বিশেষজ্ঞও ভারতের পক্ষেই বাজি ধরছেন। মাতলা নদীর ১৫ তলা ক্রুজে বসা প্রবীণ ভাষ্যকার দিয়েগো ফোরলান ও সুন্দরবনের টাইগার সাফারির অত্যাধুনিক জিপে থাকা প্রাক্তন বিশ্বসেরা ফুটবলার লিয়োনেল মেসি বলেছেন, ‘বম্বারস ইন ব্লু’ (ভারতীয় ফুটবল দলকে যে নামে বিশ্ব চেনে)-র গতি, স্কিল ও উদ্ভাবনী শক্তির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা ব্রাজিলের নেই। তাই ফিফা বিশ্বকাপটি ভারত অধিনায়ক, তিন বার এশিয়া-সেরা ফুটবলার ঝলমল সিংহের হাতে ওঠা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ছ’শো কোটি ভারতবাসীর প্রার্থনা, হোম-যজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। চলছে প্রহর গোনা হকি, ক্রিকেটের পর ফুটবল বিশ্বকাপও ভারত ঘরে তুলতে পারে কি না!

প্রকাশ রঞ্জন দাশ, সুচেতানগর, কলকাতা

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট?

ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

magazine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE