Advertisement
E-Paper

সাহেবদাদু

মধুমিতা ঘোষবাড়িতে সাহেবদাদু এসেছেন। তাই রিয়া, জয়, বিট্টুর ভীষণ আনন্দ। সাহেবদাদু আসা মানেই নানা রকম গল্প। উনি রিয়ার মায়ের কাকা হন। রিয়াদের দাদু। মায়ের মুখে রিয়া শুনেছে যে সাহেবদাদু বিয়ে করেননি। কলেজে পড়ান। নানা দেশ-বিদেশে ঘোরেন। এমনকী অনেক বইও লিখেছেন।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০

বাড়িতে সাহেবদাদু এসেছেন। তাই রিয়া, জয়, বিট্টুর ভীষণ আনন্দ। সাহেবদাদু আসা মানেই নানা রকম গল্প। উনি রিয়ার মায়ের কাকা হন। রিয়াদের দাদু।

মায়ের মুখে রিয়া শুনেছে যে সাহেবদাদু বিয়ে করেননি। কলেজে পড়ান। নানা দেশ-বিদেশে ঘোরেন। এমনকী অনেক বইও লিখেছেন।

বিট্টু ক্লাস ওয়ানে পড়ে। রিয়ার কাকার ছেলে। হাতে সব সময় টেডি বিয়ার নিয়ে ঘোরে। তা দেখে সাহেবদাদু বলেন, এই টেডি বিয়ার নামকরণের রহস্য জানিস কি?

ওরা যথারীতি ঘাড় নেড়েছিল। সাহেবদাদু বলেছিলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন রুজভেল্ট। উনি শিকার করতে খুব ভালবাসতেন। এক দিন শীতকালের শেষের দিকে উনি শিকারে বেরিয়েছেন। কিন্তু সারা দিন ঘুরেও তিনি কোনও শিকার পেলেন না। প্রেসিডেন্টের খুব মনখারাপ। তখন তাঁর সঙ্গীরা অনেক খুঁজে খুঁজে সন্ধেবেলায় একটা ছোট্ট ভালুকছানা পান। সেটাই প্রেসিডেন্টের সামনে রেখে শিকার করতে বলেন।

কিন্তু অত ছোট ভালুকবাচ্চা দেখে প্রেসিডেন্টের খুব মায়া হয়। উনি বললেন, না, এটাকে না মেরে বরং সঙ্গে নিয়ে যাই। পুষব। রুজভেল্টের ডাকনাম ছিল টেডি। তাই সবাই ভালুকছানাটিকে টেডিজ বিয়ার বলত।

সাহেবদাদু গল্প থামিয়ে, জল খেয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই তো ক্লাস এইটে পড়িস। নিশ্চয় জানবি। বল তো, আমেরিকার রাজধানী কী?

রিয়া বলার আগেই জয় লাফিয়ে উঠে বলল, আমি জানি। ওয়াশিংটন।

সাহেবদাদু বললেন, বাঃ বাঃ, ক্লাস ফোরে আমি কিন্তু তোর মতো জানতাম না রে, জয়। জয় লাজুক হাসি হেসে বলল, ধ্যাৎ।

সাহেবদাদু আবার শুরু করলেন ওয়াশিংটনের এক ব্যবসায়ী কাপড় আর তুলো দিয়ে খেলনা ভালুক বানালেন। দেখতে ঠিক প্রেসিডেন্টের ভালুকের মতো। আর সেগুলো বাজারে ‘টেডি বিয়ার’ বলে বিক্রি করতে লাগলেন। ব্যস, এ ভাবেই টেডি বিয়ার বাজারে চলে এল।

এ রকমই নানান বিষয় নিয়ে দাদু ওদের গল্প বলেন। আবার মাঝে মাঝে ওদের নিয়ে বেড়াতেও যান।

এ বারে ওদের নিয়ে শিবপুরে বোটানিকাল গার্ডেনে এসেছেন। বলেছেন, সবার আগে বিখ্যাত বটগাছটা আমরা দেখব। তার পরে তোদের ‘ভিক্টোরিয়া অ্যামাজয়নিকা’ দেখাব।

রিয়া জিজ্ঞাসা করেছিল, সেটা কী গো সাহেবদাদু? দাদু রহস্যময় হাসি হেসে বলেছেন, সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য।

রিয়াদের সঙ্গে ওর মামাতো বোন আঁখি আর ওর ভাই অভিও এসেছে। নানা রকম গাছ দেখতে দেখতে ওরা সেই বিখ্যাত বটগাছটার সামনে থামল।

গাছটা দেখে সবাই অবাক। এত মোটা মোটা ঝুরি চার ধার থেকে নেমেছে যে গাছের মূল গুঁড়িটাই চেনা যায় না।

মশলামুড়ি খেতে খেতে সাহেবদাদু বললেন, ওই দ্যাখ একটা বড় পুকুর দেখতে পাচ্ছিস। ওখানেই ভিক্টোরিয়া অ্যামাজয়নিকা ফুটে আছে।

ওরা একসঙ্গে ‘কোথায় কোথায়’ বলে দেখতে লাগল। আঁখি জিজ্ঞাসা করল, সাহেবদাদু এই ফুলটা কিন্তু অন্য কোথাও দেখিনি। রিয়ারাও ঘাড় নাড়ল।

সাহেবদাদু বললেন, এই ফুলটা প্রথম ফোটে লন্ডনের কিউ গার্ডেনে। সেখান থেকে মহারানি ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। সেই জন্যই নাম হয় ভিক্টোরিয়া অ্যামাজয়নিকা।

সাহেবদাদু বললেন, নামটা শুনেই বুঝতে পারছিস এর আসল জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের আমাজন নদীতে। ওখান থেকে বীজ এনে ১৮৭৩ সালের কাছাকাছি শিবপুরের এই উদ্যানে লাগানো হয়েছিল।

রিয়া হিসেব করে বলল, ওঃ মাই গড! প্রায় ১৪১ বছর আগে।

সাহেবদাদু ঘাড় নেড়ে বললেন, ঠিক তাই। পাতাগুলো তাকিয়ে দ্যাখ কেমন চকচকে সবুজ রঙের। তাই জল জমে না। আর পাতার ব্যাস প্রায় দেড় মিটারের কাছাকাছি। কানা উঁচু থালার মতো দেখতে। শুনলে আরও অবাক হবি যে, এই পাতার ওপর যদি রিয়া তুইও বসে যাস তো ডুববি না।

রিয়া লাজুক হাসি হেসে বলল, যাঃ, কী যে বলো না সাহেবদাদু, আমি কি রোগা প্যাকাটি বিট্টু! বিট্টু চোখ পাকিয়ে ওর দিদির দিকে তাকাল।

সাহেবদাদু বললেন, না রে, আমি মজা করছি না। সত্যিই। এক একটা পাতা প্রায় ৪২ কেজির মতো ওজন বইতে পারে। পাতা ডুববে না। প্রমাণ চাস তো চল, তোকে বসিয়ে দিচ্ছি।

রিয়া আঁতকে উঠল, না না থাক!

সাহেবদাদু বললেন, ফুলগুলো দ্যাখ পদ্মফুলের মতো। ইংরাজিতে ‘রয়াল ওয়াটার লিলি’ বলে। এক একটা গাছে ৪০ থেকে ৪৫টা পাতা আর ৩০ থেকে ৩৫টা ফুলের কুঁড়ি হয়। কুঁড়ি থেকে ফুল হতে সময় নেয় প্রায় তিন দিন। এই গাছগুলো সাধারণত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে।

জয় বলল, সাহেবদাদু, তুমি এত সব জানো কী করে?

সাহেবদাদু মুচকি হেসে বললেন, মনের মধ্যে জানার ইচ্ছে আর উৎসাহ রাখবি। তা হলেই সব জানতে পারবি। এখন সব ওঠ। তাড়াতাড়ি অর্কিড হাউসটা দেখে বাড়ি ফিরতে হবে।

আঁখি বলল, ভাগ্যিস সাহেবদাদু তুমি আমাদের এখানে নিয়ে এলে। না হলে রয়াল ওয়াটার লিলির কথা আমাদের অজানাই থাকত।

সবাই আঁখির কথায় সায় দিল।

বিট্টু বলল, এর পর কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের? সাহেবদাদু বিট্টুর মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে বলল, এ বার আর হবে না রে। কালই দিল্লি যেতে হবে। এর পর যখন আসব তখন আবার অন্য জায়গায় নিয়ে যাব, কেমন।

সাহেবদাদুর কথায় ওরা সবাই চুপ হয়ে গেল। আবার দিন গোনা শুরু হবে। কবে সাহেবদাদু আসবেন আর ওরা নতুন নতুন কথা জানতে পারবে।

saheb dadu madhumita ghosh rabibarer anandamela
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy