বিয়েবাড়ির শুক্তো হোক বা বাড়ির শাকের ঘণ্ট, পাতে পড়লে একটি আবদার থাকেই— ‘একটা বড়ি পাওয়া যাবে?’
সব রান্নায় বড়ি পড়ে না ঠিকই। তবে যখন যে রান্নাতে থাকে, তার তারকা-সুলভ আকর্ষণ নিয়েই থাকে। যেখানে চাহিদা মিটেও মেটে না। অথচ জোগান হাতেগোনা। ফল, টানাটানি। ভাগে না পড়লে অসন্তোষও!
খাদ্যরসিকের কাছে এমন ‘হাই ডিম্যান্ডে’ থাকা বড়ি এখন দোকানে কেনা হলেও এককালে বাড়িতেই বানানো হত। শিলনোড়ায় মুসুর, মটর বা বিউলির ডাল বেটে তাতে কালো কিংবা সাদা জিরে মিশিয়ে তৈরি হত বড়ির মালমশলা। তার পরে মিহি সুতির কাচা ধুতিতে ছোট ছোট বড়ি সেজে বাড়ির ছাদে কিংবা উঠোনে রোদে শুকোতে দেওয়া হত। গরমের কাঠফাটা রোদেও বড়ি শুকোতে সময় লেগে যেত দিন চারেক। তার মধ্যে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় বা বৃষ্টি এলেই বিপদ। বড়িসমেত ধুতি তুলতে ছোটাছুটি শুরু হত।

ছবি: সংগৃহীত।
বাড়িতে বড়ি দেওয়া আর সেই বড়ি পাহারা দেওয়া ছিল এক পর্ব। শুধু তো বৃষ্টি নয়, কাক-পায়রার দৌরাত্ম্য আছে। তাদের দৃষ্টি থেকে বড়ি বাঁচানোর দায়িত্ব দেওয়া হত বাড়ির ছোটদের। পুরস্কার হিসাবে শুকিয়ে যাওয়া বড়ি কাপড় থেকে ছাড়ানোর সুযোগ পেত তারা। এখনকার ‘ব্লিস্টার প্যাক’ ফাটানোর থেকে কিছু কম মজাদার ছিল না সেই কাজ। এর পরে বড়ি ভেজে বা তরকারিতে শোভিত হয়ে হাজির হত পাতে। বাড়িতে বানানো বড়ি রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দিত বহু গুণ। বড়িভাপা সেই কালেরই রান্না। যে রান্নায় বড়ি কোনও তরকারির সঙ্গী হয়ে আসবে না। এই রান্নায় বড়ি একাই একশো।
উপকরণ:
২০-২৫টি মাঝারি মাপের ডালের বড়ি
৫-৬ টেবিল চামচ সর্ষের তেল
২ টেবিল চামচ সাদা সর্ষে
১ টেবিল চামচ কালো সর্ষে
১ টেবিল চামচ গোটা জিরে
১ টেবিল চামচ পোস্ত
৪-৫টি কাঁচা লঙ্কা
১টি মাঝারি মাপের টম্যাটো ডুমো করে কাটা
১/২ চা চামচ হলুদগুঁড়ো
স্বাদমতো নুন
সামান্য চিনি

ছবি: স্পাইসি ওয়ার্ল্ড বাই অর্পিতা।
প্রণালী:
সর্ষের তেলে বড়িগুলোকে লাল করে ভেজে তুলে নিন।
একটি পাত্রে সামান্য জল নিয়ে তাতে দিন দু’রকমের সর্ষে, জিরে, পোস্ত, নুন এবং দু’টি কাঁচালঙ্কা। কিছু ক্ষণ ভিজিয়ে রেখে তার পরে মিক্সিতে দিয়ে বেটে নিন।
এ বার একটি স্টিলের টিফিনবাক্সে ওই বাটা মশলা, কুচোনো টম্যাটো, দুটি চেরা কাঁচালঙ্কা, ভাজা বড়ি, বড়িভাজার তেল, হলুদগুঁড়ো এবং সামান্য চিনি দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে দিন।
কড়াই আঁচে বসিয়ে তাতে কিছুটা জল দিয়ে টিফিনবাক্সটি বসিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। জল ফুটলে আঁচ কমিয়ে আরও ১০-১৫ মিনিট ভাপিয়ে নিন।
আঁচ বন্ধ করে কিছু ক্ষণ ঢাকনা বন্ধ অবস্থাতেই রেখে দিন। তার পরে খুলুন। ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।