Advertisement
E-Paper

ভোগ মানেই মণ্ডামিঠাই! রইল বনেদিবাড়ির পুজোর ৩টি মিষ্টির প্রণালী

বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে কথা হবে আর ভোগের প্রসঙ্গ উঠবে না, তাই আবার হয় নাকি! পারিবারিক প্রথা, নিয়ম-আচারের পাশাপাশি বৈচিত্র লক্ষ করা যায় বিভিন্ন বনেদি বাড়ির ভোগ তৈরির পদ্ধতিতেও। জেনে নিন, ৩টি বনেদিবাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগের মিষ্টির রেসিপি।

শমিতা হালদার

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৫
ভোগের থালায় সাজিয়ে দিন রকমারি মিষ্টির পদ।

ভোগের থালায় সাজিয়ে দিন রকমারি মিষ্টির পদ। ছবি: সংগৃহীত।

বিভিন্ন বনেদি বাড়ির সাবেক পুজো ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোর ইতিহাস অসম্পূর্ণ। একশো, দেড়শো, দুশো, কোথাও কোথাও আড়াইশো, এমনকি তিনশো বছরের পুরনো এই সব পুজো যেন নিজেরাই বহমান ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় যা চলে আসছে এখনও, প্রতি বছর। থামে ঘেরা অট্টালিকায় বিশাল ঠাকুরদালান। তাতে একচালার দুর্গা, পরিবারের নিজস্ব আচার-রীতিনীতি মেনে জাঁকজমকের পুজো— বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর ট্রেডমার্ক। বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে কথা হবে আর ভোগের প্রসঙ্গ উঠবে না, তাই আবার হয় নাকি! পারিবারিক প্রথা, নিয়ম-আচারের পাশাপাশি বৈচিত্র লক্ষ করা যায় বিভিন্ন বনেদি বাড়ির ভোগ তৈরির পদ্ধতিতেও।

বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে কথা হবে আর ভোগের প্রসঙ্গ উঠবে না, তাই আবার হয় নাকি!

বনেদি বাড়ির পুজো নিয়ে কথা হবে আর ভোগের প্রসঙ্গ উঠবে না, তাই আবার হয় নাকি! —নিজস্ব চিত্র।

হুগলি জেলার কারকুনবাটির মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো প্রায় ২৫০ বছর পুরনো। প্রাচীন খড়ের চালের ঠাকুরদালান এখন পাকা হয়েছে। প্রতি বছর পুজো উপলক্ষে পরিবারের প্রায় ৭০-৮০ জন মানুষ গ্রামে একত্রিত হোন। এই পরিবারের পুজোর সময়ে ভোগের থালায় বাড়িতে বানানো রকমারি মণ্ডামিঠাই পরিবেশন করা হয়। তবে ভোগের থালায় সকলের নজর থাকে আটা দিয়ে তৈরি বিশেষ নাড়ুর উপরে। দেবী দুর্গার নৈবেদ্যর থালায় পরিবেশন করা হয় এই নাড়ু।

কারকুনবাটির মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় ভোগপ্রসাদে নিবেদন করা হয় আটার নাড়ু।

কারকুনবাটির মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় ভোগপ্রসাদে নিবেদন করা হয় আটার নাড়ু। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে বানানো হয়?

উপকরণ:

৪ কাপ নারকেল কোরা

১/২ কাপ আটা

২ কাপ আখের গুড়

১/২ কাপ ভেলি গুড়

৫-৬টি বড় এলাচ (থেঁতো করা)

৫-৬ টেবিল চামচ ঘি

প্রণালী:

ভারী পাত্রে নারকেল, ঘি, আখের গুড় জ্বাল দিতে হবে প্রথমে। জ্বাল হয়ে এলে ভেলি গুড়, এলাচ, আটা মিশিয়ে নিন। মিশ্রণে পাক ধরে এলে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে খানিকটা ঠান্ডা হতে দিন। এ বার হাতে ঘি মেখে নিয়ে নাড়ু গড়ে নিন।

ইতিহাসের এক চরিত্র প্রতাপাদিত্য। তিনি ছিলেন বারো ভুঁইয়ার এক জন। তাঁর এক সভাসদ ছিলেন বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৬০৬ সালে তিনি বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তাঁদের বাড়ির পুজো বর্তমানে হয় উত্তর চব্বিশ পরগনার ইতিনা অঞ্চলে। এই বাড়ির পুজোর ভোগে বিশেষ চমক হল নারকেলের তক্তি। এই তক্তির আকারেও থাকে চমক। সাধারণ ফুল, পাতার ছাঁচে ফেলে ভোগের তক্তি তৈরি হয় না। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিশেষ নকশার ছাঁচ তৈরি করেছিলেন কারিগরেরা। বন্দেমাতরম, ভারত মাতা, চরকা ইত্যাদির কাঠের ছাঁচেই তৈরি হত পুজোর তক্তি।

বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগে পরিবেশন করা হয় নারকেলের তক্তি।

বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগে পরিবেশন করা হয় নারকেলের তক্তি। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে বানানো হয়?

উপকরণ:

ছাঁচ

২ কাপ নারকেল কোরা

১/২ কাপ ক্ষীর

১ কাপ গুড়

১/২ কাপ সাদা তিল

প্রণালী:

তিল শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে রাখুন। এ বার কড়াইতে নারকেল কোরা, নারকেল, গুড়, ক্ষীর সব ভাল করে মিশিয়ে পাক দিতে হবে। শেষে তিলগুঁড়ো মিশিয়ে খানিক ক্ষণ নাড়াচাড়া করে গ্যাসের আঁচ বন্ধ করে নিন। এ বার মিশ্রণটি বেটে নিয়ে ছাঁচে ফেলে সন্দেশের আকারে গড়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে নারকেলের তক্তি।

কোচবিহারের উত্তর প্রান্তে রয়েছে ব্রাহ্মণ পাড়া। কথিত আছে, কোচবিহারের মহারাজ সুদূর কনৌজ থেকে কয়েক ঘর ব্রাহ্মণ পরিবারকে নিয়ে এসে এখানে থাকার জায়গা করে দিয়েছিলেন। মহারাজের দ্বারপণ্ডিত থেকে শুরু করে কূল পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাতেন এই ব্রাহ্মণ সমাজের লোকেরাই। কালের নিয়মে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটেছে। এখন এই বাড়ির পুজো গোপীনাথ বাড়ির পুজো নামেই পরিচিত। গৃহদেবতা গোপীনাথকে স্মরণ করেই বাড়ির দোলযাত্রা, রথ, দুর্গাপুজো, জন্মাষ্টমী সব উৎসবই ধুমধাম করে পালন করা হয় এই বাড়িতে। দুর্গাপুজোয় অষ্টমীতে পাঁঠা বলি, পায়রা বলি, চালকুমড়ো, আখ, চালতা সব বলি হয়। অন্ন ভোগ, খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে নাড়ু, মোয়া, পিঠে পুলি, সব রকম পদই পরিবেশন করা হয় ভোগের থালায়। এই বাড়ির ঠাকুরের ভোগের থালায় ক্ষীরমোহন থাকবেই থাকবে।

গোপীনাথ বাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগে ক্ষীরমোহন থাকবেই।

গোপীনাথ বাড়ির দুর্গাপুজোর ভোগে ক্ষীরমোহন থাকবেই। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে বানানো হয়?

উপকরণ:

৩ লিটার দুধ

৩ কাপ ছানার জল

৪-৫টি ছোট এলাচ

১ কাপ চিনি

১০০ গ্রাম ময়দা

৫০ গ্রাম সুজি

প্রণালী:

প্রথমে ৩ কাপ জল ও ৩ কাপ চিনি দিয়ে চিনির শিরা তৈরি করে নিন। এ বার পরিমাণ মতো দুধ নিয়ে সেটিকে ঘন করে তাতে ছানার জল দিয়ে ছানা তৈরি করে নিতে হবে। এ বার ছানা থেকে জল ঝরিয়ে নিয়ে একটি বড় থালায় ছড়িয়ে দিন। ছানার মিশ্রণে ছোট এলাচ, পরিমাণ মত ময়দা, চিনি আর সুজি দিয়ে খুব ভাল করে মাখতে হবে। এ বার মিশ্রণটি অল্প করে হাতের চেটোয় নিয়ে গোল গোল আকার দিয়ে আগে থেকে বানিয়ে রাখা চিনির শিরায় ফেলতে হবে। কিছু ক্ষণ ভিজিয়ে রেখে মিষ্টিগুলিকে খুব ভাল করে চিপে তুলে আলাদা করে রাখতে হবে। এ বার অন্য একটি পাত্রে দুধ গাঢ় করে সেটাকে ক্ষীর বানাতে হবে। ওই ক্ষীরে মিষ্টিগুলিকে আবার ডুবিয়ে কিছু ক্ষণ ঢেকে রাখলে দেখা যাবে মিষ্টিগিুলি ফুলে উঠেছে। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন ক্ষীরমোহন।

Durga Pujo 2024 Durga Puja Special Durga Puja 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy