Advertisement
E-Paper

খেলার চেয়ে খেলোয়াড়ই বেশি টানে

শাহিদ আফ্রিদির মতো অমন সুন্দর একটা বর পেলে খেলতেই দিতাম না। আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখতাম। লিখছেন লগ্নজিতা চক্রবর্তীশাহিদ আফ্রিদির মতো অমন সুন্দর একটা বর পেলে খেলতেই দিতাম না। আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখতাম। লিখছেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৫

মনে-প্রাণে বাঙালি হলেও, বাঙালিদের সঙ্গে আমার একটা তফাত আছে। আমি বাড়িতে বসে খেলা দেখতে পছন্দ করি না। নিজে খেলাধুলো করতে ভালবাসি। আমার বাবা অবশ্য এ ব্যাপারে পাক্কা বাঙালি। আমি কোনও দিন বাবাকে খেলাধুলো করতে দেখিনি। কিন্তু টিভিতে খেলা হচ্ছে অথচ বাবা দেখছে না, এমনটা কখনও হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। তাই আমি নিজে খেলা না দেখলেও, খেলা যে হচ্ছে সেটা জানতে বাধ্য হই, কারণ তখন বাবাকে টিভি-র সামনে থেকে তোলা যায় না।

মা খুব বিরক্ত হয়ে প্রায়শই বাবাকে বলে, “তুমি বিরক্ত হও না?” কেন? মা’র সংযোজন, “আমাদের ছোটবেলায় শুধু শীতকালে ক্রিকেট খেলা হত। তখন খেলা দেখার একটা মজা ছিল। এখন তো ঋ

তু নির্বিশেষে ক্রিকেট হয়েই চলেছে!” বাবার নীরবতাই জানিয়ে দেয় যে, বিরক্ত হন না। গল্প শুনেছি যে, মা-কাকিমারা বিয়ে হয়ে আসার পরে এক দিন সবাই মিলে ক্রিকেট দেখার সময় মা-রা ‘আউট’ বলে চিৎকার করে ওঠায়, আমার এক ঠাম্মা নাকি বলেছিলেন, “বাড়ির বৌদের ক্রিকেট নিয়ে এত মাতামাতি ভাল না!” তার পর থেকে আমি আমার মা-কে আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলা দেখতে দেখিনি। কিন্তু দাদুর কাছে শুনেছি যে, বিয়ের আগে নাকি মা খুব হুল্লোড় করে খেলা দেখত। পাড়ায় প্রথম টিভি আসে আমাদের বাড়িতেই।


শাহিদ আফ্রিদি।

যৌথ পরিবার আমাদের। পাঁচ ঠাকুমা, পাঁচ ঠাকুর্দা, বাবা-কাকা মিলিয়ে সাত ভাই, তাদের স্ত্রীরা এবং প্রত্যেকের দু’টি করে সন্তান নিয়ে জমজমাট পরিবার আমাদের তখন। মনে আছে, সবাই মিলে ক্রিকেট দেখার একটা চল ছিল তখন (বাড়ির বৌরা বাদে)। পাড়ার অনেকেই আমাদের বাড়িতে খেলা দেখতে আসতেন। বাড়ির ভেতরটা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলে জানালার বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবাই খেলা দেখতেন। ক্লান্তি ছিল না কারও।

আমার প্রিয় বন্ধু দেবাঙ্গনা খুব ভাল ক্রিকেট খেলে। ছেলে বন্ধুরা ওকে দেখে প্রশংসার চোখ বড় বড় করে বলত, তুই তো আমাদের থেকেও ভাল খেলিস অন সাইডে। দেবাঙ্গনা সৌরভের ফ্যান। অনেক বড় বয়স অবধি ও সৌরভের ছবি রাখত নিজের টাকার ব্যাগে। ওর স্কুলের এক দিদিমণি সৌরভের প্রতিবেশী ছিলেন। স্কুলে থাকাকালীন দেবাঙ্গনা আর ওর এক বন্ধু দিদিমণির হাত দিয়ে প্রতি বছর সৌরভের জন্মদিনে কার্ড পাঠাত। সৌরভ নাকি উত্তরও দিতেন! আমরা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তাম। সেখানকার মহিলা ক্রিকেট টিমে দেবাঙ্গনা আর আমাদের সিনিয়র অনুত্তমাদি ওপেন করত। খুব একটা ভাল ব্যাট করতে পারতাম না বলে আমি শেষের দিকে ব্যাট করতাম। কিন্তু, ভাল বল করতে পারতাম বলে আমাকে টিমে নেওয়া হত। প্রত্যেক ম্যাচে দু’-তিনটে করে উইকেট নিতাম।

কিছু দিন আগে আমি ‘দাদাগিরি’র শ্যুটিঙে গিয়েছিলাম। আমার থেকে বেশি লাফাচ্ছিল দেবাঙ্গনা। সৌরভ তো ওর স্বপ্নের পুরুষ। মজার কথা, আমার বাবার ‘স্বপ্নের পুরুষ’ও সেই সৌরভ। তাই বাবা আমার সঙ্গে শ্যুটিঙে যেতে চেয়েছিল ভীষণ ভাবে। আমি অনেক কষ্টে তাকে নিরস্ত করেছিলাম।

প্রত্যেক বিশ্বকাপের মতো এ বারেও আমাদের বাড়িতে বাবার ক্রিকেট দেখা চলছে। কী যে বিরক্ত লাগে, আমার পক্ষে তা বুঝিয়ে বলা খুব মুশকিল! তবে, খেলোয়াড়দের দেখতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। সবুজ মাঠে ছুটোছুটি করে এত পুরুষ খেলছেন— যে কোনও মহিলার কাছে সে এক মনোরম দৃশ্য! তাই বাবা যখন খেলা দেখে আমিও মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ি। বিদেশি খেলোয়াড়দের তো প্রায় কাউকেই চিনি না। তবে প্রচুর ‘মাচো’ খেলোয়াড় আছেন, সেটা দেখেছি। ভারতের টিমটা জানি অবশ্য। বিরাট কোহলি তো মেয়েদের কাছে ‘হার্টথ্রব’। আমার কিন্তু ওঁকে ভাল লাগে না। কেন জানি না সুরেশ রায়নাকে খুব আমার খুব মিষ্টি লাগে। কী সুন্দর হাসি ওঁর! বেশ একটা খরগোশ-খরগোশ ভাব আছে। সব মিলিয়ে মিশিয়ে আমার দিব্যি লাগে। রায়না কেমন খেলেন তা কিন্তু জানি না।

সুরেশ রায়না ইশান্ত শর্মা

আর এক জনকে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তিনি ইশান্ত শর্মা। কারণ, যখনই তিনি ছুটে আসেন, আর হাওয়ায় তার চুলটা ওড়ে, তখনই আমার ইমরান খানের কথা মনে পড়ে যায়। ইশান্তকে দেখি আর ভাবি, ইস্! আমাদের সময়ে কেন যে একটা ইমরান নেই। তিনি তো আবার আমাদের মতো মেয়েদের কষ্ট দিয়ে ফের বিয়েও করে ফেললেন। আর এক জনের তো বয়সই বাড়ল না! শাহিদ আফ্রিদি। আহা! অমন সুন্দর একটা বর পেতাম যদি! খেলাধুলো করতেই দিতাম না। আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখতাম। আমার মা’রও ভাল লাগত, আমারও ভাল লাগত। শাহিদের প্রতি প্রেমটা বংশপরম্পরায় চলে আসছে।

খেলার সঙ্গে এমন প্রেম প্রেম একটা অনুভূতি তো জড়িয়ে তো আছেই, পাশাপাশি এত হ্যান্ডসাম ছেলে তাঁদের যাবতীয় আবেদন নিয়ে সারা ক্ষণ মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন, সেটাও কেমন শিহরণ জাগায় মাঝে মাঝে! এ সব থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে সব সময় ক্রিকেট চলাটা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর।

—নিজস্ব চিত্র।

lagnajita chakraborty cricket worldcup 2015
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy