Advertisement
১১ মে ২০২৪
Nobel Prize

হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের খোঁজ দিয়ে নোবেল জয়

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবিষ্কারের সূত্রে চিকিৎসায় নোবেল এ বার অলটার-সহ তিন জনের। বাকি দু’জন হলেন মাইকেল হাওটন ও চার্লস এম রাইস।

ত্রয়ী: হার্ভে জে অলটার, মাইকেল হাওটন এবং চার্লস এম রাইস।

ত্রয়ী: হার্ভে জে অলটার, মাইকেল হাওটন এবং চার্লস এম রাইস।

সংবাদ সংস্থা
স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০৪:২২
Share: Save:

গভীর রাতে প্রথম বার ফোনটা বেজে উঠতেই চটেছিল ঘুম। কয়েক মিনিট পরে আবার সরব হয় ফোন। তৃতীয় বারে বিরক্তি সহকারে উঠে ধরেন ফোন। ঘুম জড়ানো হ্যালোর জবাবে ও-প্রান্ত থেকে পরিচয় দেন অ্যাডাম স্মিথ, “স্টকহলমের নোবেল প্রাইজ কমিটির ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে বলছি।” এর পরে স্মিথ জানান হার্ভে জে অলটারের নোবেল প্রাপ্তির খবর। অলটার হেসে পরে বলেছেন, প্রথম দু’বারের ঘুম ভাঙানি ফোন ছিল ধাক্কা। তৃতীয়টা তাঁর কাছে ‘আফটারশক’-এর মতো। ১১ বছর আগের আবিষ্কারের জন্য এই ‘আফটারশক’-এর কথা প্রথম স্ত্রীকে জানান ৮৫ বছর বয়সি বিজ্ঞানী।

হেপাটাইটিস সি ভাইরাস আবিষ্কারের সূত্রে চিকিৎসায় নোবেল এ বার অলটার-সহ তিন জনের। বাকি দু’জন হলেন মাইকেল হাওটন ও চার্লস এম রাইস। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (১১.১৮ লক্ষ ডলারের বেশি) সমান ভাবে ভাগ হবে তিন জনের মধ্যে।

নোভেল করোনাভাইরাস এখন বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তারই মধ্যে আর একটি নোভেল ভাইরাসের সন্ধানকে এই স্বীকৃতিদান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সকলেই। জীবন শুধু নয়, অর্থনীতির পক্ষেও বিজ্ঞানের এমন খোঁজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কোভিডের হানাদারিতে সেটা এখন ভাল ভাবে টের পাচ্ছে বিশ্ব। লিভার ক্যানসার ও লিভার সিরোসিসের কারণ, রক্তবাহিত এই হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সন্ধান দিয়ে অলটাররা সেটারই প্রমাণ রেখেছিলেন।

আরও পড়ুন: এগজিমার চিকিৎসায় নতুন পথের সন্ধান দিলেন বেহালার শৌভিক

আরও পড়ুন: ব্রহ্মাণ্ড ডুবে ছিল অন্ধকারে, তার পরে ভোর হল কী ভাবে? উত্তর দিয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানী

একটা সময় ছিল, যখন হেপাটাইটিস এ এবং হেপাটাইটিস বি-এর খোঁজ মিলেছে। প্রথমটি জলবাহিত ভাইরাস। দ্বিতীয়টির বাস রক্তে। এ দু’টিকে চিহ্নিত করার পরীক্ষাও হাতে এসে গিয়েছে। কিন্তু এর পরেও অনেকের ক্রনিক হেপাটাইটিস ও তার জেরে লিভার সিরোসিসের কোনও ব্যাখ্যা পাচ্ছিলেন না বিজ্ঞানীরা। সে সময়েই অজানা এক ভাইরাসের সন্ধান চালান অলটাররা।

লিভারের নানা সমস্যা তৈরি করা হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের সন্ধান মিলেছিল গত শতকের চল্লিশের দশকে। ষাটের দশকে বিজ্ঞানী বারুচ ব্লুমবার্গ আবিষ্কার করেন হেপাটাইটিস বি। দেখান রক্তবাহিত এই ভাইরাসের সংক্রমণ আরও মারাত্মক ও তার থেকে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার হতে পারে। তার জন্য ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। সেই একই গোত্রের, ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের আরও একটি আরএনএ ভাইরাসের সন্ধান দেন অলটার, হাওটন ও রাইস। এখন যাকে হেপাটাইটিস সি বলা হয়। এর খোঁজ পাওয়ায় সঠিক চিকিৎসার পথ পেয়েছেন ডাক্তারেরা। বাঁচানো গিয়েছে লক্ষ লক্ষ রোগীকে।

হেপাটাইটিসের আক্রমণ থেকে অবশ্য মুক্তি মেলেনি এখনও। এখনও প্রতি বছর এই রোগে বিশ্বের ৭ কোটি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যু হচ্ছে ৪ লক্ষের। তবে ক্রনিক হেপাটাইটিসের কারণ জানা, হেপাটাইটিস সি সংক্রমণ চিহ্নিত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা এবং সম্ভাব্য ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে অলটারদের আবিষ্কার। অলটার জানিয়েছিলেন, অনেকের ক্রনিক হেপাটাইটিসের পিছনে রয়েছে অভিন্ন একটি অজানা ভাইরাস। হাওটন সেই ভাইরাসের জিনোমকে আলাদা করার পথ দেখান। রাইস দেখান, অন্য কোনও কারণ ছাড়া, এই নতুন ভাইরাসটি একাই হেপাটাইটিস ঘটাতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE