E-Paper

সবুজের দান, দু’বছরেই ‘কার্বন নিউট্রাল’ আদাভি

মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু, দৈনন্দিন নানা কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পরিবেশে মিশছে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড।

দেবজ্যোতি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:১৩
বাবা-মায়ের কোলে ছোট্ট আদাভি।

বাবা-মায়ের কোলে ছোট্ট আদাভি।

‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার এই লাইন হয়তো জানা নেই তাঁদের। কিন্তু দূষণময় পৃথিবীতে সন্তানকে সুস্থ ভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন তাঁরা। সেই পথে হাঁটার ফল, দু’বছর বয়সেই তাঁদের মেয়ে ডি জে আদাভি পেয়েছে বিশ্বের প্রথম ‘কার্বন নিউট্রাল’ শিশুর তকমা।

কথা হচ্ছে তামিলনাড়ুর চেন্নাই নিবাসী দম্পতি, দীনেশ এস পি ও জনাগা নন্দিনীর। মেয়ের জন্মের আগেই স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে ছ’হাজারের বেশি গাছ লাগিয়েছেন তাঁরা। আদাভির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠা গাছগুলি জীবনভর তার ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ শূন্যে রাখতে সাহায্য করবে। চেন্নাই থেকে ফোনে দীনেশ জানাচ্ছিলেন, আইআইটি মাদ্রাজে প্রকল্প সহায়ক হিসাবে কাজের সময়ে কার্বন ফুটপ্রিন্টের বিষয়ে জানতে পারেন। সিদ্ধান্ত নেন, সন্তানকে কার্বন নিউট্রাল করার চেষ্টা করবেন। স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা হওয়ার পরে শুরু তাঁদের সবুজায়ন যজ্ঞ।

কার্বন ফুটপ্রিন্ট কী? কী ভাবে কেউ হয় কার্বন নিউট্রাল? মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু, দৈনন্দিন নানা কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে পরিবেশে মিশছে ‘গ্রিনহাউস’ গ্যাস কার্বন ডাইঅক্সাইড। খাদ্য উৎপাদন, পরিবহণ, বিদ্যুতের ব্যবহার থেকে বর্জ্য তৈরি—সবই সেই তালিকায় পড়ে। ব্যক্তিপিছু প্রতি বছর যত টন কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবেশে মেশে, তা-ই তার কার্বন ফুটপ্রিন্ট। গড় ভারতবাসীর ক্ষেত্রে তা প্রায় ২ টন। আমেরিকায় সর্বোচ্চ, মাথাপিছু প্রায় ১৬ টন। কার্বন ফুটপ্রিন্ট যত বেশি হয়, স্বভাবতই বাড়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ।

দেখা গিয়েছে, একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ ফি বছর গড়ে প্রায় ২৫ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়। যে যত গাছ লাগাবে, তার কার্বন ফুটপ্রিন্ট তত কমবে এবং কার্বন নিউট্রাল হওয়ার দিকে এগোবে। হিসেব বলে, গড়ে কোনও ভারতীয় জীবনকালে ৩৫০টি গাছ লাগালে কার্বন নিউট্রাল হতে পারে।

জলবায়ুগত পরিবর্তনের মোকাবিলায় ‘সেরাক্কু’ নামে একটি অলাভজনক সংগঠনও গড়েছেন দীনেশ ও তাঁর স্ত্রী। তামিলনাড়ুর নানা প্রান্তে কাজ করছে সংগঠনটি। সবুজ বাড়ানোর পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধ, জলাশয় সংরক্ষণ, প্লাস্টিকের পুনর্নবীকরণ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাসে মানুষজনকে সচেতন করা হচ্ছে। দীনেশের কথায়, “স্ত্রী এই কাজে আমার বড় প্রেরণা। বন লাগোয়া গ্রামের মেয়ে হওয়ায় ছোট থেকে সবুজকে ঘিরে ওঁর বেড়ে ওঠা। মেয়েকেও সেই ভাবে গড়ে তুলতে চাই। ‘এশিয়া বুক রেকর্ডস’-এর এই স্বীকৃতি আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়েছে।” স্থানীয় বন বিভাগের ‘গ্রিন অ্যাম্বাসেডর’-ও হয়েছে মেয়ে, গর্বিত স্বর দীনেশের। উদ্যোগের প্রশংসা করে পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী জানান, এতে সচেতনতা বাড়বে। পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতেও কার্যকর হবে। তবে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ একেবারে শূন্য হওয়ার বিষয়টি আরও গবেষণাসাপেক্ষ।

এর পরে কী? দীনেশ জানান, গত দু’বছরে চার লক্ষের বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। এই কাজে পাশে পেয়েছেন বন দফতরকে। ২০২৫-এ লক্ষ্য, ১০ লক্ষের বেশি গাছ লাগানো। সর্বোপরি, কার্বন ফুটপ্রিন্ট সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজ তো রয়েছেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chennai

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy