বিষ যখন ‘অমৃত’!
অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, তাঁরা মৌমাছির বিষে এমন গুণাগুণ লক্ষ্য করেছেন, যা স্তনের আগ্রাসী কর্কট কোষকে খতম করে দিতে পারে। তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘নেচার প্রিসিশন অঙ্কোলজি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
হ্যারি পারকিন্স ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চ ও দ্য ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া-র বিজ্ঞানী সিয়েরা ডাফি জানিয়েছেন, তাঁরা ৩১২টি মৌমাছি ও ভোমরার বিষ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। তাতে দেখা যায়, ট্রিপল-নেগেটিভ-সহ স্তনের কর্কটরোগের নানাসাবটাইপ নিরাময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে এই মৌমাছিদের বিষ (ভোমরার বিষে অবশ্য এই গুণ মেলেনি)। এইচইআর২স্তনের কর্কটরোগেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এর।
ডাফি জানান, তাঁদের গবেষণার লক্ষ্য ছিল মৌমাছির বিষে কী ধরনের কর্কটরোগ-প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ‘মেলিটিন’-এর প্রভাব খতিয়ে দেখা। মৌমাছি কামড়ালে যে যন্ত্রণা হয়, তার জন্য দায়ী এই ‘মেলিটিন’ নামক উপাদানটিই। ডাফি বলেন, ‘‘মৌমাছির বিষ বা মেলিটিনের প্রভাব সাধারণ কোষে কেমন আর কর্কটরোগে আক্রান্ত কোষে কেমন, তা এর আগে কেউ পরীক্ষা করে দেখেননি।’’
মেলিটিন হল ২৬টি অ্যামাইনো অ্যাসিড দিয়ে তৈরি একটি পেপটাইড। ডাফি বলেন, ‘‘আমরা খুব অল্প পরিমাণে মেলিটিন নিয়ে পরীক্ষা করে দেখি। এই মেলিটিন কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করেছিলাম আমরা। মৌমাছির বিষে উপস্থিত মেলিটিনে যে ক্যানসার-রোধী গুণাগুণ রয়েছে, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি মেলিটিনেও অবিকল সে সব পেয়েছি আমরা।’’
ডাফির দাবি, একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বের মৌমাছির বিষ কর্কট কোষকেসম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে।কিন্তু সুস্থ কোষে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘মৌমাছিরবিষ এবং মেলিটিন, দু’টিই দ্রুতগতিতে ট্রিপল নেগেটিভ স্তনের কর্কটরোগ এবং এইচইআর২ স্তনের কর্কটরোগকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম।’’ কর্কট কোষের বৃদ্ধি ও সংখ্যায় বাড়তে থাকার যে চেনা ধরন সাধারণত দেখতে পাওয়া যায়, সেটাই বদলেদেয় মেলিটিন।
দ্য ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া-র প্রধান বিজ্ঞানী পিটার ক্লিনকেন বলেন, ‘‘মেলিটিনের এই চরিত্র ও গুণ জানতে পারাটাই অসাধারণ। স্তনের মারণ কর্কটরোগ রুখে দিতে পারে মৌমাছির বিষ— এই অনুসন্ধান চমকে দেওয়ার মতো।’’ তবে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডাফি ও ক্লিনকেন দু’জনেই।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)