Advertisement
E-Paper

ল্যাবরাডরের মাপের ডাইনোসর! ঘুরঘুর করত স্টেগোসরাসদের পায়ে পায়ে, নয়া আবিষ্কার ব্রিটেনে

ল্যাব্রাডরের আকারের ওই ডাইনোসরের অস্তিত্ব প্রথম যখন খুঁজে পাওয়া যায়, সে সময় এটিকে ন্যানোসরাস হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, আসলে এটি একটি নতুন প্রজাতি। এদের নাম দেওয়া হয়েছে এনিগমাকারসর— যার অর্থ এলোমেলো ভাবে দৌড়ে বেড়ানো প্রাণী!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ১৮:০৪
এনিগমাকারসরের কঙ্কাল।

এনিগমাকারসরের কঙ্কাল। ছবি: সংগৃহীত।

১৫০ কোটি বছর আগের কথা। তখন জুরাসিক যুগ চলছে। পৃথিবী জুড়ে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে দৈত্যাকার স্টেগোসরাস, অ্যালোসরাস, আর্কিওপটেরিক্সরা। আর তাদেরই পায়ে পায়ে খেলে বেড়াত খুদে এই কুকুরেরা! না, দেখতে কুকুরের মতো হলেও আদতে কুকুর নয়। নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে, কুকুরের মতো আকারের ওই প্রাণীরা আসলে ছিল এনিগমাকারসর— ডাইনোসরেরই তুতো ভাই।

ল্যাব্রাডরের আকারের ওই ডাইনোসরের অস্তিত্ব প্রথম যখন খুঁজে পাওয়া যায়, সে সময় এটিকে ন্যানোসরাস হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, আসলে এটি একটি নতুন প্রজাতি। এদের নাম দেওয়া হয়েছে এনিগমাকারসর— যার অর্থ এলোমেলো ভাবে দৌড়ে বেড়ানো প্রাণী! আজ থেকে প্রায় ১৫ কোটি বছর আগে খুদে খুদে পা নিয়ে এ ভাবেই দৌড়ে বে়ড়াত চারপেয়ে এই জীব। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হতে চলেছে এনিগমাকারসরের কঙ্কাল।

লন্ডনের ওই জাদুঘরের জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক পল ব্যারেট জানিয়েছেন, এই আবিষ্কারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর থেকেই প্রমাণ হয়, বিবর্তনের ইতিহাসের একেবারে প্রথম দিকের ছোট ডাইনোসরগুলিই পরে বড়সড় চেহারার ‘কিম্ভূত’ প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। বৃহস্পতিবার থেকে জাদুঘরের ‘আর্থ হল’-এর একটি বারান্দায়, কাচের বাক্সে ঠাঁই হবে এনিগমাকারসরের কঙ্কালের। ২০১৪ সাল থেকে এই ঘরেই রয়েছে ‘সোফি’, বিশালদেহী স্টেগোসরাসের প্রবাদপ্রতিম কঙ্কাল। ‘সোফি’র ঠিক নীচেই ঠাঁই হবে এনিগমাকারসরের।

জীবাশ্মবিদেরা বলছেন, এনিগমাকারসর অন্যান্য ডাইনোসরের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে আকারে অনেক ছোট। উচ্চতা মাত্র ৬৪ সেন্টিমিটার। দৈর্ঘ্যও মেরেকেটে ১৮০ সেন্টিমিটার মতো হবে। সব মিলিয়ে এনিগমাকারসরের উচ্চতা একটি পূর্ণবয়স্ক ল্যাব্রাডরের উচ্চতার সমান। তবে এদের পা কুকুরের তুলনায় বেশ খানিকটা বড়। লেজও বাকি ডাইনোসরদের চেয়ে লম্বা। উদ্ধার হওয়া হাড়ের জীবাশ্মের অবশিষ্টাংশ দক্ষ হাতে ধাতব ফ্রেমে জুড়ে জুড়ে পূর্ণ কঙ্কালটি বানিয়েছেন দুই সংরক্ষক লু অ্যালিংটন-জোন্স এবং কিয়েরান মাইল্‌স। মাইল্‌সের কথায়, ‘‘এই ডাইনোসরদের পিছনের পা ও কোমরের গঠন দেখেই বোঝা যায়, এরা খুব দ্রুত দৌড়োতে পারত। কিন্তু এদের সামনের পা দু’টি ছিল অনেক ছোট। সম্ভবত ওই হাত দিয়ে ঘাসপাতা জাতীয় খাবার খেত এরা।’’

এর আগে ১৮৭০ সাল থেকে খুদে আকারের সব ডাইনোসরকেই ন্যানোসরাস নামে ডেকে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এনিগমাকারসরের হাড় আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানীদের মনে সন্দেহ জাগে। কারণ, এ বারে যা পাওয়া গিয়েছিল, তা একটি সুসংবদ্ধ এবং প্রায়-সম্পূর্ণ কঙ্কাল— যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর পায়ের হাড়। ব্যাস, শুরু হয় গবেষণা। ক্রমে জানা যায়, ন্যানোসরাস নয়, আদতে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি নতুন প্রজাতি। এ বিষয়ে জীবাশ্মবিদ সুসানা মেডমেন্ট বলেন, ‘‘আমাদের চারপাশে আসলে কত প্রজাতি আছে, তা বোঝা আমাদের কাজের ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা একটাও ভুল করি, তা হলে ওই ভুলের উপর দাঁড়িয়ে খাড়া করা সমস্ত তত্ত্বও ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়।’’ এনিগমাসরাসের আবিষ্কারের পর অদূর ভবিষ্যতে ন্যানোসরাসের গোটা বিভাগটিই মুছে ফেলতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনুমান, ওই যুগের অন্যান্য ছোট ডাইনোসরও সম্ভবত স্বতন্ত্র প্রজাতি। অধ্যাপক ব্যারেটের কথায়, ‘‘এত দিন বিশালাকার ডাইনোসরদের হাড় নিয়ে এত মাতামাতি হত, যে ছোট ডাইনোসরদের জীবাশ্ম নিয়ে তেমন আগ্রহই ছিল না কারও! আশা করি এখন মানুষ এই খুদেদের খুঁজতে মাটির দিকেও চোখ রাখবে!’’

Dinosaur Jurassic Period
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy