চার পাশে সমুদ্র। মাঝে বিশাল এক দ্বীপ। আপাত ভাবে দেখে মনে হয় ‘নির্বিকার’ এক ভূখণ্ড। তেমন হেলদোল নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে উত্তরের দিকে। নেহাত কম গতিতে নয়। বিজ্ঞানীরা বলছে, প্রতি বছরে সাত সেন্টিমিটার বা ২.৮ ইঞ্চি করে উত্তরের দিকে এগোচ্ছে। মানুষের আঙুলের নখ বছরে যত বৃদ্ধি পায়, ঠিক ততটাই সরছে অস্ট্রেলিয়া।
আপাত ভাবে মনে হতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার এই সরে যাওয়ার তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না। তবে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, দীর্ঘ মেয়াদে অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে। লক্ষ লক্ষ বছর পরে তা ধাক্কা খেতে পারে এশিয়ার সঙ্গে। ক্রমে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু, ভূখণ্ডের গঠন, বাস্তুতন্ত্র, জীববৈচিত্র্যের উপরেও তার প্রভাব পড়তে পারে। প্রভাব ফেলতে পারে অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতি, পরিকাঠামোর উপরেও।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঝেং-জিয়াং লি এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পছন্দ করি বা না করি, অস্ট্রেলিয়া এশিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খেতে চলেছে।’’ লি জানান, অস্ট্রেলিয়া এই যে উত্তর দিকে সরে সরে এক সময়ে এশিয়ার সঙ্গে ধাক্কা খাবে, সেই প্রক্রিয়া কিন্তু নতুন নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে বার বার ঘটেছে। এক বার করে এক ভূখণ্ড থেকে অন্য ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পরে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর পরে আবার দুই ভূখণ্ড যুক্ত হয়ে যায়।
গবেষক লি বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার এই উত্তরের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রায় আট কোটি বছর আগে, যখন আন্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল সেই মহাদেশ। গত পাঁচ কোটি বছর ধরে এশিয়া মহাদেশের দিকে এগোচ্ছে অস্ট্রেলিয়া বৃহত্তর ইন্দো-অস্ট্রেলিয়া পাতের অংশ হিসাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়ার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার এক দিন ধাক্কা লাগবেই। তার প্রভাব পড়বে দুই মহাদেশেরই পরিবেশ, জলবায়ু, বাস্তুতন্ত্রে। অস্ট্রেলিয়ায় এমন কিছু প্রাণী রয়েছে, যা আর কোনও মহাদেশে নেই। ক্যাঙারু, ওমব্যাটস, প্ল্যাটিপাস, কোক্কা। অস্ট্রেলিয়ার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এই প্রাণীগুলি অভিযোজিত হয়ে সেখানে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্রমেই উত্তরে সরে সরে এশিয়ার কাছাকাছি চলে গেলে এই মহাদেশের জলবায়ু, পরিবেশে প্রভাব পড়বে। নতুন পরিবেশে এই প্রাণীগুলি কতটা মানিয়ে নিতে পারবে, সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজ্ঞানীদের।
প্রভাব পড়তে পারে এখনই?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার এই সরে যাওয়ার প্রভাব লক্ষ লক্ষ বছর পরে সেখানকার প্রাণীজগতের জীবনে শুধু পড়বে, এমন নয়। এখনও ধীরে ধীরে মানুষের জীবনে এর প্রভাব পড়ছে। ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার এই গমন তার জিপিএস স্থানাঙ্ক ১.৫ মিটার (৪.৯ ফুট) সরিয়ে দিয়েছে। পরিমাপ নির্ভুল রাখতে অস্ট্রেলিয়ার নিজেদের সরকারি পজিশনিং সিস্টেম ১.৮ মিটার (৫.৬ ফুট) আপডেট করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে হেতু দেশটি ক্রমে উত্তরে সরে যাচ্ছে, তাই এর স্যাটেলাইট সিস্টেম, নেভিগেশন সিস্টেমও নিয়মিত আপডেট করতে হবে।