মৃত্যুমুখে মহাবিশ্বের লাখ লাখ নক্ষত্র। কোটি কোটি বছর ধরে তারা আড়েবহরে বেড়ে উঠেছে। এখন জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে রাক্ষসের মতো গিলে খাচ্ছে নিজেদেরই ‘সন্তান’, আস্ত এক একটা গ্রহকে। এমন দৃশ্য দেখে বিজ্ঞানী মহলের একাংশের আশঙ্কা, তা হলে কি পৃথিবীও এই ভাবেই নিশ্চিহ্ন হবে সূর্যগ্রাসে?
সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’ জার্নালে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা চার লক্ষাধিক প্রাচীন নক্ষত্রের তথ্য সংগ্রহ করেছেন ‘ট্রানজ়িটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট’ (টেস) থেকে। তাঁরা দেখতে চেয়েছিলেন, এই সব নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকা গ্রহেরা এখন কোথায়? তারা কি নিজেদের জায়গামতোই আছে? না কি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে?
টেস থেকে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা গেল, বিজ্ঞানীদের আশঙ্কাই সত্যিই! বুড়ো হয়ে যাওয়া নক্ষত্র তার গ্রহকে গিলে খাচ্ছে, এই ছবি অতীতেও দেখা গিয়েছিল। তা যে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সে ব্যাপারে স্পষ্ট হতেই এই গবেষণা। তাতে বিজ্ঞানীরা দেখলেন, একটা বা দুটো নয়, ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে এ রকম ১৩০টি গ্রহের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। তাদের মধ্যে আবার ৩৩টি সদ্য জন্মানো নক্ষত্রও রয়েছে। কোনও ভাবে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে মহাবিশ্ব থেকে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, মরতে বসা নক্ষত্রেরাই এই গ্রহদের গিলে খেয়েছে।
গবেষণাপত্রের মূল লেখক, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড ব্র্যান্ট বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই মাথা ঘামিয়ে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। অনেক গবেষণা হয়েছে। এখন সত্যিই দেখা যাচ্ছে, বয়স্ক নক্ষত্রেরা এ ভাবে গ্রহদের গিলে খায়।’’
আরও পড়ুন:
মহাকাশ বিজ্ঞানের তত্ত্ব এবং বিজ্ঞানীদের অঙ্ক বলছে, যে কোনও নক্ষত্রই বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারে বাড়ে। স্বাভাবিক নিয়মেই বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রকৃতিগত পরিবর্তনও হয়। কখনও নক্ষত্রের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা লেলিহান শিখার তেজ বৃদ্ধি পায়। কখনও বাড়ে চৌম্বক ক্ষেত্রের আকর্ষণ। সেই সব পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে নক্ষত্রের সব চেয়ে কাছে থাকা গ্রহের উপর। সেই কারণেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কিত বিজ্ঞানী মহলের একাংশ। তাঁদের মত, সূর্য বৃদ্ধ হলে তার কোপেও পড়বে সবচেয়ে কাছে থাকা তিনটি গ্রহ— বুধ, শুক্র এবং পৃথিবী।
যদিও এই গবেষণাপত্রের লেখকদের মত, পৃথিবীর ক্ষেত্রে তেমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বুধ, শুক্র সূর্যের পেটে গেলেও, নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে বাঁচবে পৃথিবী। গবেষকদের যুক্তি, তাঁরা দেখেছেন, রাক্ষুসে নক্ষত্রেরা চারপাশে ঘুরতে থাকা সব গ্রহকেই গিলে খাচ্ছে না। তারা শুধু গিলে খাচ্ছে সেই সব গ্রহকে, যারা নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি রয়েছে। জন্মদাতা নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে যে সব গ্রহের ১২ বা তার কম দিন সময় লাগে, মূলত সেই গ্রহেরাই নক্ষত্রের পেটে চলে যাচ্ছে। সেই তুলনায় পৃথিবী সূর্যের থেকে অনেকটাই দূরে।
তবে গবেষণাপত্রের আর এক লেখক ভিনসেন্ট ভ্যান আইলেন বলেন, ‘‘পৃথিবী হয়তো নিশ্চিহ্ন হবে না। তবে আর প্রাণের উপযোগী থাকবে না এই গ্রহ।’’ বয়স্ক নক্ষত্রদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে ২০২৬ সালের শেষ দিকে ‘প্ল্যাটো মিশনের’ ভাবনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। সে ক্ষেত্রে আরও অনেক তথ্য ভবিষ্যতে জানা যাবে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।