ঘটনা হল, করোনাভাইরাস পরিবারের ৪টি ক্যাটেগরির সব প্রজাতির সকলেই কিন্তু আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে না। শেষ দু’টি ক্যাটেগরি গামা ও ডেল্টার প্রজাতিদের মূলত পাখিতে দেখা যায়।
যদিও পৃথারা দেখেছেন, এই দু’টি ক্যাটেগরির কয়েকটি প্রজাতিও আমাদের ত্বকে দিব্য বেঁচে থাকতে পারে। ফলে, আগামী দিনে যে এই প্রজাতিগুলির হানাদারিতে আমরা কাবু হব না, তাই বা কে বুক ঠুকে বলতে পারেন?
করোনাভাইরাসের বাকি দু’টি ক্যাটেগরি (আলফা ও বিটা)-র প্রজাতিরা থাকে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীতে।
সার্স-কভ-২ ভাইরাস যেমন বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন থেকে আমাদের শরীরে এসেছে বলে মনে করা হয়। তা সে আমাদের প্যাঙ্গোলিনের মাংসপ্রীতির জন্যই হোক অথবা আমাদের বন কেটে বসত বানানোর উৎসাহে এরা আমাদের আরও বেশি সংষ্পর্শে এসে পড়ার ফলে।
নিজের প্রয়োজনেই আশ্রয়দাতাদের মারতে চায় না ভাইরাসরা
কোনও ভাইরাসই তার কোনও আশ্রয়দাতা প্রজাতিকে (মানুষই হোক বা বাঁদর অথবা অন্য কোনও প্রাণী) মেরে ফেলতে চায় না। মেরে ফেললে সে বেঁচে থাকবে কী ভাবে? কী ভাবেই বা বিভিন্ন প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখবে ভাইরাসগুলি?
তবে ঘটনাচক্রে ভাইরাসরা শরীরে ঢুকলে প্রাথমিক ভাবে আশ্রয়দাতা প্রজাতিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ আশ্রয়দাতাদের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা চট করে এই আগন্তুকদের চিনে উঠতে, তাদের মতলব বুঝে ফেলতে, তাদের রোখার উপায় খুঁজে নিতে পারে না। বুঝে উঠতে সময় লাগে। আর সেই সময়েই আশ্রয়দাতারা দ্রুত সংক্রমিত হয়, মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে চলে আশ্রয়দাতা প্রজাতিগুলির মধ্যে, প্রাথমিক ভাবে।
তার পর একটা সময়ে এই ভাইরাসগুলি আশ্রয়দাতাদের বন্ধু হয়ে যায়। নিজেদের টিঁকে থাকতে হলে তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে আশ্রয়দাতাদেরও। কয়েক লক্ষ বছরের সহ-বাসের পর বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন যেমন এখন সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বন্ধুই হয়ে গিয়েছে! আমরাও হব হয়তো কয়েকশো বছর পর।
ভবিষ্যতের হানাদারদের বুঝে ফেলতে চেয়েছেন পৃথারা
পৃথারা চাননি, সেই অসীম ধৈর্যে অটল থেকে করোনাভাইরাসের নতুন নতুন সদস্যদের হামলার প্রথম ঝটকায় আমরা এই ভাবে দলে দলে প্রাণ দিই। তাই তাঁরা করোনা পরিবারের ৪টি ক্যাটেগরির সব সদস্যকেই চেনা, বোঝার চেষ্টা করেছেন। যাতে আমাদের শরীরে তাদের আচার, আচরণ, ফন্দি, মতলব, কায়দা, কারসাজিগুলিকে বোঝা সম্ভব হয়। তা হলে সেগুলিকে জব্দ করার পথটা আমরা আগেভাগেই ভেবে রাখতে পারব। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের জন্য এখন যে সব টিকা বা ওষুধ বানাচ্ছি সেগুলি দিয়েই রুখে দিতে পারব করোনা পরিবারের যে সদস্যরা ভবিষ্যতে আমাদের আক্রমণ করবে, তাদেরও।
সেটার জন্য দরকার করোনা পরিবারের চেনা, জানা সব সদস্যের আচার, আচরণ, ফন্দি, মতলব, কায়দা, কারসাজিগুলির মিলটা কোথায়, সেটা সবচেয়ে আগে বোঝা। সেই মিল যদি খুব কম জায়গাতেও থাকে তা হলেও সেই জায়গাগুলি চিনে ফেলা দরকার। যাতে সেই জায়গাকে লক্ষ্য করে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। জায়গাটিকে (বা, গুলি) ওষুধের অণুর চক্রব্যূহে বেঁধে বা আটকে ফেলা যায়, অথবা অকেজো করে দেওয়া যায়।