Advertisement
E-Paper

যুগলমিলনে তৈরি হওয়া সবচেয়ে ‘ওজনদার’ কৃষ্ণগহ্বরদের হদিশ! গিলতে পারে ৭ কোটি পৃথিবীকে

পৃথিবীর ভরের তুলনায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি গুণ বেশি এই কৃষ্ণগহ্বরের ভর। তুলনামূলক ছোট দু’টি কৃষ্ণগহ্বর একে অন্যকে চক্কর কাটতে কাটতে একসঙ্গে মিশে গিয়েছে। তৈরি করেছে আরও বেশি ভরের একটি কৃষ্ণগহ্বর।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ২০:০১
দুই কৃষ্ণগহ্বর মিলে তৈরি হল আরও বেশি ভরের ব্ল্যাক হোল।

দুই কৃষ্ণগহ্বর মিলে তৈরি হল আরও বেশি ভরের ব্ল্যাক হোল। —প্রতীকী চিত্র।

২০২৩ সালে দেখা মিলেছিল। ধরা গেল ২০২৫-এ। দু’টি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মিলনে তৈরি সবচেয়ে বেশি ভরের ‘সন্তান’ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা।

একে অন্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে মিলেমিশে গিয়ে নতুন কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা মহাবিশ্বে বিরল নয়। আগেও অনেক বার দেখা গিয়েছে। তবে দুই কৃষ্ণগহ্বরের মিশ্রণে তৈরি এত বেশি ভরের কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ এই প্রথম।

ব্রহ্মাণ্ডের অন্যতম রহস্যময় বস্তু কৃষ্ণগহ্বর। বিজ্ঞানীরা নতুন আবিষ্কৃত কৃষ্ণগহ্বরটির নাম দিয়েছেন ‘জিডাব্লিউ২৩১১২৩’। পৃথিবী থেকে ১০ হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে এটি রয়েছে। আমাদের সূর্যের ভর পৃথিবীর ভরের ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার গুণ। নতুন খুঁজে পাওয়া কৃষ্ণগহ্বরটির ভর সূর্যের ভরেরও ২২৫ গুণ। অর্থাৎ, পৃথিবীর ভরের ৭ কোটি ৪৯ লক্ষ গুণ। প্রায় সাড়ে সাত কোটি পৃথিবী এঁটে যেতে পারে এই কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে।

মহাবিশ্বে এর চেয়েও বেশি ভরের কৃষ্ণগহ্বর রয়েছে। যেমন আমাদের সৌরমণ্ডলের ছায়াপথ ‘মিল্কি ওয়ে’ বা আকাশগঙ্গার মধ্যে রয়েছে ‘এসজিআর এ*’ কৃষ্ণগহ্বর। এর ভর সূর্যের ভরের চেয়ে ৪৩ লক্ষ গুণ বেশি। তবে সেগুলি দু’টি কৃষ্ণগহ্বর মিলে তৈরি হয়েছে বলে কোনও প্রামাণ্য তত্ত্ব এখনও মেলেনি। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মহাকর্ষ তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের সময় ‘জিডাব্লিউ২৩১১২৩’ কৃষ্ণগহ্বরটি প্রথম ধরা পড়ে। আমেরিকা, ইতালি এবং জাপানের মহাকাশ গবেষকেরা যৌথ ভাবে ওই পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছিলেন।

এক দশকের ধারাবাহিক গবেষণা

দু’টি কৃষ্ণগহ্বরের মিশে যাওয়া নিয়ে প্রাথমিক ভাবে গবেষণা চালাচ্ছিলেন আমেরিকার ‘লেসার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজ়ারভেটরি’ (লিগো)-র বিজ্ঞানীরা। দু’টি কৃষ্ণগহ্বর মিশে গিয়ে যে আরও বেশি ভরের একটি কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করতে পারে, তা তাঁদের গবেষণাতেই প্রথম বার জানা যায়। ২০১৩ সালে প্রথম ওই তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ওই সময় দু’টি কৃষ্ণগহ্বর মিলে যে নতুন কৃষ্ণগহ্বরটি তৈরি হয়েছিল, সেটির ভর ছিল সূর্যের ভরের ৬২ গুণ।

তার পরে ইতালির ‘ভার্গো’ এবং জাপানের ‘কামিওকা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ ডিটেক্টর’ (কাগরা)-ও এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হয়। যৌথ ভাবে তিন সংস্থা ২০০টিরও বেশি কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে পেয়েছে, যেগুলি দু’টি কৃষ্ণগহ্বর মিলে তৈরি হয়েছে। লিগোর গবেষণা শুরুর পর থেকে হিসাব করলে, ৩০০টিরও বেশি এমন কৃষ্ণগহ্বরের খোঁজ মিলেছে। তবে এত বেশি ভরের কৃষ্ণগহ্বরের মিশ্রণে আগে ধরা পড়েনি।

কৃষ্ণগহ্বরের নতুন ‘রেকর্ড’

২০২১ সালে একটি কৃষ্ণগহ্বর পাওয়া গিয়েছিল ‘জিডাব্লিউ১৯০৫২১’। সেটির ভর ছিল সূর্যের ভরের ১৪০ গুণ। নতুন কৃষ্ণগহ্বরটি খুঁজে পাওয়ার আগে এটিই ছিল মিশ্রণের পরে তৈরি হওয়া সবচেয়ে বেশি ভরের কৃষ্ণগহ্বর। তবে ‘জিডাব্লিউ২৩১১২৩’ যে দু’টি কৃষ্ণগহ্বর মিলে তৈরি হয়েছে, সেগুলিরই এক একটি ভর প্রায় ২০২১ সালে খুঁজে পাওয়া কৃষ্ণগহ্বরের ভরের কাছাকাছি। এদের একটির ভর সূর্যের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি। অন্যটির সূর্যের ভরের ১৪০ গুণ বেশি। দু’টি মিশে গিয়ে যে নতুন কৃষ্ণগহ্বরটি তৈরি করেছে, তার ভর সূর্যের ভরের ২৬৫ গুণ।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন খুঁজে পাওয়া ‘জিডাব্লিউ২৩১১২৩’ কৃষ্ণ গহ্বরের সৃষ্টি নিয়ে ধারণায় অনেক বদল আনতে পারে। তাঁদের অনুমান, আগে যে কৃষ্ণগহ্বরগুলি মিশে গিয়ে নতুন কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করেছে, সেগুলিও হয়ত আরও ছোট কোনও কৃষ্ণগহ্বরের মিশ্রণের ফলে তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

কৃষ্ণগহ্বর কী

খুব বেশি ভরের নক্ষত্রের ‘মৃত্যু’ হলে সেগুলি থেকে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রথম শর্তই হল নক্ষত্রগুলির ভর একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি হতে হবে। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি কোনও নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের ভরের ২০ গুণ বা তার বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে নক্ষত্রটির ‘মৃত্যু’ হলে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হতে পারে। এই ধরনের নক্ষত্রের মৃত্যুর পরে সেটি ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে হতে কৃষ্ণগহ্বর তৈরি হতে পারে। কৃষ্ণগহ্বরগুলিতে মহাকর্ষ বল এতটাই শক্তিশালী যে এর মধ্যে দিয়ে আলোও বেরোতে পারে না। আলো বিচ্ছুরিত না-হওয়ার ফলে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অত্যাধুনিক টেলিস্কোপেও এর ভিতরের বস্তু বিশেষ ধরা পড়ে না।

black hole universe Space Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy