Advertisement
E-Paper

এপ্রিলে চন্দ্রযান রওনা দেবে কি, প্রশ্ন ইসরোতেই

২০১৮ সালের মার্চে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান (যার পোশাকি নাম, ‘চন্দ্রযান-২’) শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কখনও প্রযুক্তি উন্নত করা, কখনও বা কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে সেই উৎক্ষেপণ পিছিয়ে গিয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩৫

বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে অভিযান। সেই গত বছরের মার্চের পর থেকে। আবার কি পিছোবে? নাকি আগামী মাসে কি সত্যিই রওনা দেবে চাঁদের গাড়ি? ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র অন্দরে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চলছে জোরদার জল্পনা। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না! ইসরো-র ওয়েবসাইটে শুধু বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের গোড়ায় উৎক্ষেপণ করা হবে।

২০১৮ সালের মার্চে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান (যার পোশাকি নাম, ‘চন্দ্রযান-২’) শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কখনও প্রযুক্তি উন্নত করা, কখনও বা কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে সেই উৎক্ষেপণ পিছিয়ে গিয়েছে। গত বছরের মার্চের পরিকল্পনা পিছিয়ে যাওয়ার পরে ঠিক হয়েছিল, চলতি বছরের জানুয়ারিতে উৎক্ষেপণ হবে। কিন্তু ফের তা পিছিয়ে যায়। ইসরো-র একটি সূত্রের দাবি, আগামী এপ্রিলে দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান হতে পারে।

বুধবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উপগ্রহ ধ্বংস করার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের উপগ্রহগুলির নিরাপত্তায় এই কৃতিত্ব অর্জনের দিনেই অনেক বিজ্ঞানীর প্রশ্ন, বারবার চন্দ্রাভিযান পিছিয়ে দিয়ে আসলে কি মহাকাশবিজ্ঞানে দেশের সারস্বত সাধনাকেই পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? চিন তো ইতিমধ্যেই চাঁদের বুকে ‘রোবট গাড়ি’ বা রোভার নামিয়েছে। ইজ়রায়েলও এপ্রিলে পাড়ি দিচ্ছে চাঁদে। তা হলে মহাকাশ গবেষণার প্রতিযোগিতায় ভারত কি পিছিয়ে যাচ্ছে না?

ইসরো-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুধু চন্দ্রাভিযান নয়, পরপর সারিতে থাকা দ্বিতীয় মঙ্গল অভিযান, সূর্যের উপরে বৈজ্ঞানিক নজরদারির জন্য ‘আদিত্য’ নামে মহাকাশযান পাঠানোর প্রকল্পের বাস্তবায়নও পিছিয়ে গিয়েছে।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক সুজন সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘চন্দ্র অভিযান বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত সরকারের।’’ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান (চন্দ্রযান-১) সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল। সেই অভিযানে ভারতের পাঠানো উপগ্রহ চাঁদের মাটিতে জলের উপস্থিতির প্রমাণ দিয়েছিল। দ্বিতীয় অভিযানে চাঁদের মাটিতে রোভার পাঠাচ্ছে ইসরো। তাতে আরও নতুন তথ্য আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে।

‘‘কিন্তু অভিযান পিছিয়ে যেতে থাকলে অন্যান্য দেশের মহাকাশযান ভারতের আগে সেই সব তথ্য পেয়ে যেতে পারে। সে-ক্ষেত্রে ভারতের অভিযান কিন্তু কোনও দাগ কাটতে পারবে না,’’ মন্তব্য এক বিজ্ঞানীর।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভোটের আগে হঠাৎ কেন উপগ্রহ ধ্বংসের পরীক্ষা, উঠছে জোরদার প্রশ্ন। অনেকের প্রশ্ন, তা হলে এপ্রিলে ভোট শুরুর ঠিক আগে চাঁদে পাড়ি দেওয়া হবে কি? বিজ্ঞানসাধনাকে ভোটের চমক হিসেবে কাজে লাগানো হবে না তো? ইসরো-র সূত্র মহাকাশ গবেষণাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর কথা অস্বীকার করলেও কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স’-এর অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘এই অভিযান প্রযুক্তিগত দিক থেকে জটিল। তাই সাফল্য নিয়ে ইসরোর কর্তারা হয়তো আশাবাদী নন। ভোটের আগে অভিযান ব্যর্থ হলে সরকারের মুখ পুড়বে, সেই আশঙ্কা থেকেই কি উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে?’’

কেউ কেউ অবশ্য এই প্রসঙ্গেই মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ এবং ইসরো-র কর্মপদ্ধতির মধ্যে ফারাকের কথা তুলেছেন। মার্কিন এবং ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যৌথ গবেষণায় যুক্ত থাকা এক বাঙালি বিজ্ঞানীর মতে, বিদেশি সংস্থাগুলিতে বিজ্ঞানীদের বক্তব্যই অগ্রাধিকার পায়। কিন্তু এ দেশে গবেষণা সংস্থাও আমলাতান্ত্রিক নিয়মে চলে। শীর্ষ পদে বসা আমলা এবং বিজ্ঞানীরাও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ দেখে সিদ্ধান্ত নেন। এ ভাবে চললে প্রযুক্তির ঢাক যতই বাজুক, বিজ্ঞানসাধনা কতটা এগোবে, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

Chandrayaan ISRO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy