Advertisement
E-Paper

যৌবনের রক্তে বার্ধক্য দূর, নতুন যযাতির কাহিনি লিখছে বিজ্ঞান?

কথায় বলে যৌবনে নাকি রক্তের তেজ বেশি থাকে। বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন, কথাটা উল্টো দিক থেকেও সত্যি। অর্থাৎ রক্তের তেজ যদি ধরে রাখা যায়, তা হলে যৌবনকেও হাতের মুঠোয় রাখা যেতে পারে!

উজ্জ্বল চক্রবর্তী ও রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৫

কথায় বলে যৌবনে নাকি রক্তের তেজ বেশি থাকে। বিজ্ঞানীরা এখন পরীক্ষা করে দেখছেন, কথাটা উল্টো দিক থেকেও সত্যি। অর্থাৎ রক্তের তেজ যদি ধরে রাখা যায়, তা হলে যৌবনকেও হাতের মুঠোয় রাখা যেতে পারে!
অনন্ত যৌবনের আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরকালের সঙ্গী। মহাভারতের যযাতি নিজের জরা বিনিময় করেছিলেন ছেলের যৌবনের সঙ্গে! এখন চেহারা থেকে বয়সের ছাপ দূরে রাখতে কত কৃৎকৌশলই না আঁকড়ে ধরছে মানুষ! কেউ বোটক্স করাচ্ছেন, কেউ রূপটানে মন দিচ্ছেন। অনেকে আবার ভরসা রাখছেন সুষম আহার এবং শরীরচর্চাতেই। লক্ষ্য কিন্তু একটাই, জরা দূর হটো!
সম্প্রতি নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ কিন্তু আসল রাস্তাটা প্রায় দেখিয়েই দিয়েছে। টনি ওয়াসি-কোরে নামে এক গবেষক সেখানে জানিয়েছেন— রক্তই সেই অমূল্য রতন যার কল্যাণে কৈশোর যৌবনে এবং যৌবন জরায় রূপান্তরিত হয়। সেই সূত্রেই তাঁর দাবি, নবীন রক্তই পারে প্রবীণের জরা বিলম্বিত করতে।
টনি এমনিতে দীর্ঘদিনই বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল অ্যালঝাইমার্স। এই রোগে আক্রান্তদের বড় অংশই বয়স্ক। টনি খুঁজে দেখার চেষ্টা করছিলেন, বুড়ো বয়সে কে এই রোগের শিকার হবেন সেটা তাঁর যৌবন কালে আগাম বলে দেওয়া যায় কি না! শেষ অবধি টনি বুঝলেন, উত্তরটা লুকিয়ে আছে রক্তে।
কী রকম? ৭০০ রকম উপাদান নিয়ে ধমনী-শিরা-জালিকার ভেতর দিয়ে মানবদেহে প্রায় ৯৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় রক্ত। সেই উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করা গেলেও তাদের প্রত্যেকের কাজ কী, বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও তা স্পষ্ট নয়। প্রাথমিক ভাবে টনির মনে হয়েছিল, এদেরই কোনও একটির মধ্যে অ্যালঝাইমার্স-এর আগাম সঙ্কেত থাকতে পারে। বিস্তারিত গবেষণায় দেখা যায়, বয়স যত বাড়ে রক্তে কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ তত কমে। কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রবীণদের রক্তে কয়েকটি প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ হয়ে যায়। এই প্রোটিনের বাড়া-কমার সঙ্গে অ্যালঝাইমার্স-এর সম্পর্ক খুঁজে পেলেন টনি আর তাঁর দলবল।
অন্য দিকে স্টেম কোষ নিয়ে কাজ করছিলেন বি়জ্ঞানী টমাস রান্ডো। শরীরের কোষগুলিকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে ওই কোষের প্রয়োজন। কিন্তু প্রবীণদের দেহে স্টেম কোষ ঠিক মতো কাজ করে না। যে কারণে বয়সকালে ক্ষত সারতে সময় লাগে। টমাসের মাথাতেও প্রশ্ন এল, কোনও সঙ্কেত পেয়েই কি স্টেম কোষ তার কাজ বন্ধ করে দেয়? সেই সঙ্কেত কি রক্তেই আছে? উত্তর খুঁজতে একসঙ্গে কাজ শুরু করলেন টনি-টমাস। তরুণ ইঁদুরের রক্ত ঢুকিয়ে দেওয়া হল বয়স্ক ইঁদুরের শরীরে। নবীন রক্ত মিরাকল-এর কাজ করল! দেখা গেল, রক্তে বেশ কিছু প্রোটিন আছে যারা কোষকে সতেজ রাখে। আবার কিছু প্রোটিন কোষকে বুড়োটে করে দেয়। কমবয়সিদের রক্তে এই সতেজ করার প্রোটিনগুলি বেশি মাত্রায় থাকে। ইঁদুরের পরীক্ষা সফল হওয়ার পরে এখন মানুষের শরীরেও পরীক্ষা চালাচ্ছেন টনিরা। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত বেশ কয়েক জনকে এ জন্য বেছে নেওয়া
হয়েছে। তাঁদের শরীরে নবীন রক্তের প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে ফলাফল।
তবে কি যৌবনকে অচলা রাখার ফর্মুলা বেরিয়েই গেল? এও কি সম্ভব? কী বলছেন চিকিৎসকরা? কলকাতার হেমাটোলজিস্ট আশিস মুখোপাধ্যায়ের মতে, এটা জটিল প্রক্রিয়া, কিন্তু অসম্ভব নয়। ‘‘শরীরে যে প্রোটিনগুলো আর বিভাজন হয় না বলে বার্ধক্য আসে, তাদের যদি বাইরে থেকে কোনও প্রক্রিয়ায় উদ্দীপ্ত করা যায়, তা হলে সেই প্রোটিন নতুন করে কাজ শুরু করবে। তা হলেই বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে।’’
প্লাস্টিক সার্জন অরিন্দম সরকারেরও বক্তব্য, ‘‘বার্ধক্য দূর করার জন্য আমাদের যে সব
প্রয়াস তার অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে রক্ত।’’ যেমন অনেক সময় শরীর থেকে অল্প কিছুটা রক্ত নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তার বিভাজন করে শুধু প্লেটলেট সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সেই প্লেটলেটকে সক্রিয় করা হয়। তার পরে খুব দ্রুত সেই সক্রিয় প্লেটলেট মুখের ত্বকে বা মাথার পিছনে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢোকানো হয়। এতে বার্ধক্যের ছাপ কিছুটা আটকায়। তবে মেডিসিন-এর চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, চিরযৌবন ধরে রাখা এখনও অলীক স্বপ্ন। সুকুমারবাবুর কথায়, ‘‘মানুষের দেহের ভিতরের বিষয়টাকে বলে জিনোটাইপ। সে সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছু জানি না।’’
খোদার উপর খোদকারি করলে তার পরিণাম কতটা ভাল হবে, সে সম্পর্কেও অনেক সংশয় আছে। কিডনি, ফুসফুস, লিভার নিয়ে কালোবাজারির সঙ্গে এ বার রক্তও না জুড়ে যায়! আশার মধ্যে শঙ্কাতেও রয়েছেন টনিরা। এখানে সাহিত্যিক বাণী বসুর কথাতেও আশঙ্কারই সুর, ‘‘তরুণ রক্তের লোভে কী কারবার শুরু হবে, কে বলতে পারে!’’ তিনি বরং বলছেন, ‘‘জীবনে ক্রমশ বড় থেকে বুড়ো হওয়ার যে নিয়মটা চালু আছে, তা পাল্টানোর দরকার কী? অনন্ত যৌবন মানেই কি খুব উপভোগ্য?’’
কিন্তু দেহপট সনে নট সকলই হারায়! চিত্রতারকাদের মধ্যে তাই
রূপ-যৌবন অটুট রাখার তাগিদ বেশি দেখা যায়। তার ফলও কিন্তু সব সময় ভাল হয় না, অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এমনটাই বলছেন।
আবার এক ধরনের আশার আলোও দেখছেন স্বস্তিকা। ‘‘আজকাল প্রিয়জনেদের কারও না কারও জন্য টেনশনে থাকি। বুড়ো হওয়া ঠেকিয়ে রাখা গেলে আমি তো ওই মানুষগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাইব।’’ ‘আশিতে আসিও না’ ছবিতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় পুকুরে ডুব দিয়ে যৌবন ফিরে পেয়েছিলেন। সেই গল্প কি এ বার সত্যি হবে? বিজ্ঞান কিন্তু স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে।

ageing process ratnanka bhattacharya blood mahabharata abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy