Advertisement
E-Paper

ব্রহ্মাণ্ডের ভূতুড়ে বস্তু নিজেরাই নিজেদের গিলে খাচ্ছে? আমাদের ছায়াপথের রহস্যময় আভায় উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা

আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গার (মিল্কিওয়ে) একেবারে মধ্যভাগে রহস্যময় একটি আভা দেখা গিয়েছে। সেই আভাতেই ভূতুড়ে বস্তুর সঙ্কেত লুকিয়ে আছে বলে বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা। মনে করা হচ্ছে, ভূতুড়ে বস্তুর কণাগুলি একে অপরকে গিলে খাচ্ছে। তাই এই আভার সৃষ্টি!

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৯
অদৃশ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে বস্তুর (ডার্ক ম্যাটার) রাজত্ব চলে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে।

অদৃশ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে বস্তুর (ডার্ক ম্যাটার) রাজত্ব চলে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

তার অস্তিত্ব টের পান বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। মহাকাশের সেই অদৃশ্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে বস্তু (ডার্ক ম্যাটার) নাকি নিজেরাই নিজেদের গিলে খাচ্ছে! আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গার (মিল্কিওয়ে) একেবারে মধ্যভাগে রহস্যময় একটি আভা দেখা গিয়েছে। সেই আভাতেই ভূতুড়ে বস্তুর সঙ্কেত লুকিয়ে আছে বলে বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা। মনে করা হচ্ছে, ভূতুড়ে বস্তুর কণাগুলি একে অপরকে গিলে খাচ্ছে। নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। তার ফলে অন্ধকারের উৎস থেকে তৈরি হচ্ছে অনির্বচনীয় ওই আলোর আভা।

ভূতুড়ে বস্তু কী

আমাদের চারপাশে গাছপালা, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, গ্রহ-উপগ্রহ, ছায়াপথ-সহ যে সমস্ত দৃশ্যমান জড় পদার্থগুলি দেখা যায়, তারা এই মহাবিশ্বের মোট ভরশক্তির ৫ শতাংশ মাত্র। বাকি ৯৫ শতাংশ সম্পূর্ণ অদৃশ্য। অজানা। রহস্যময় এক অন্ধকার জগৎ। তার মধ্যে ৭০ শতাংশই হল অদৃশ্য শক্তি (জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ডার্ক এনার্জি)। আর ২৫ শতাংশ সেই সব ভূতুড়ে বস্তু। বিজ্ঞানীরা যাকে ‘ডার্ক ম্যাটার’ বলে থাকেন। ব্রহ্মাণ্ডের সব নক্ষত্রমণ্ডলই ঘুরছে লাট্টুর মতো। অত জোরে ঘুরেও কিন্তু তারা অটুট! অভিকর্ষ বল নক্ষত্রমণ্ডলের মধ্যে নক্ষত্রদের টেনে রাখার কাজ করে বটে। কিন্তু লাট্টুর ঘোরার যে গতি, তাতে সেই টান উপেক্ষা করে নক্ষত্রদের দিগ্বিদিকে ছিটকে পালানোর কথা। তা ঘটছে না কেন? বিজ্ঞানীদের অনুমান, এখানেই ভেলকি দেখায় ডার্ক ম্যাটার, যা চেনা যায়নি আজ পর্যন্ত। এই সব পদার্থের অভিকর্ষ বল নাকি বাড়তি আকর্ষণ-বল জুগিয়ে আঁটসাঁট ভাবে বেঁধে রেখেছে সব নক্ষত্রমণ্ডলকে। এই ডার্ক ম্যাটারের শুধু অস্তিত্বটুকু বিজ্ঞানীদের জানা। তারা ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন চরিত্রের নয়, তা-ও জানা। কিন্তু তার উৎস কী, কী দিয়ে তৈরি, তা এখনও জানা যায়নি।

গামা রশ্মির বিচ্ছুরণ

আকাশগঙ্গা এবং তার মতো অন্য ছায়াপথগুলি নিয়ে নতুন একটি গবেষণা করেছেন আমেরিকার মেরিল্যান্ডের জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা। সেখানেই দেখা গিয়েছে এক অদ্ভুত আলোর বিচ্ছুরণ। গামা রশ্মির বিচ্ছুরণের ফলে এই আলোর আভা তৈরি হয়েছে। নিশ্চিত ভাবে এর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে উঠে আসছে বিভিন্ন রকমের তত্ত্ব। তার মধ্যেই অন্যতম ভূতুড়ে বস্তুর আত্মধ্বংসাত্মক রূপ। জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোসেফ সিল্ক বলেন, ‘‘সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে ভূতুড়ে বস্তুর রাজত্ব চলে। ছায়াপথগুলিকে ধরেও রেখেছে এই বস্তু। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কী ভাবে এর সম্বন্ধে আরও তথ্য জানা যায়, কী ভাবে একে দেখা যায়, চেনা যায়, আমরা তা জানতে মরিয়া। চেষ্টা চলছে।’’ গামা রশ্মির বিকিরণ নিয়ে জোসেফ আরও বলেন, ‘‘আমাদের ছায়াপথের একেবারে কেন্দ্রে যে বাড়তি আলো দেখতে পাচ্ছি, সেই গামা রশ্মি ভূতুড়ে বস্তুর রহস্য উদ্‌ঘাটনের পথে আমাদের প্রথম সূত্র হতে পারে।’’

অন্ধকারের উৎস

গামা রশ্মির আভা অবশ্য নতুন কোনও আবিষ্কার নয়। ২০০৯ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ফেরমি গামা রশ্মি স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম এই আভার ছবি তোলা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তা দেখে। এই আভার নাম দেওয়া হয়েছে গ্যালাক্টিক সেন্টার জেভ এক্সসেস (জিসিই)। বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন, আমাদের ছায়াপথের মাঝখানে এমন কিছু রয়েছে, যা সর্বোচ্চ শক্তিযুক্ত আলোর আকারে একটি আভা তৈরি করছে। কিন্তু এই আলোর উৎস সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা আজও নিশ্চিত হতে পারেননি। ওই আলোর আভার সঙ্গে ভূতুড়ে বস্তুর যোগ যে থাকতে পারে, তা জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাই প্রথম দেখাল। ভারী হল ভূতুড়ে বস্তুর তত্ত্ব।

আত্মধ্বংসাত্মক!

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মহাকাশে দুর্বল ভাবে মিথষ্ক্রিয়াশীল বিশাল কণাগুলির সঙ্গে যখন তাদের বিরোধী কণার সংঘর্ষ ঘটে, তখন তারা একে অপরকে ধ্বংস করে দেয়। হয় প্রচণ্ড শক্তির বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণে বিভিন্ন ধরনের কণা মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। গামা রশ্মি তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের ছায়াপথের মাঝে এই ঘটনা ঘটে চলেছে বলে বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন। রহস্যময় আলোর আভাটি কেমন দেখতে? বিজ্ঞানীদের মতে, তা পুরোপুরি গোলাকার নয়। আকাশগঙ্গার সঙ্গে অন্য ছায়াপথের মিশে যাওয়ার ইতিহাস অনেক পুরনো। সেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণেই এই আভা কিছুটা চ্যাপ্টা ধরনের। এই আলো বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে। সত্যিই কি অন্ধকারাচ্ছন্ন বস্তুর আত্মধ্বংসের কারণে এই আলোর সৃষ্টি? নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন, মত বিশেষজ্ঞদের।

Space Science Scientific Research Dark matter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy