সুদূর অ্যান্টার্কটিকার বরফ-সাম্রাজ্যও নজর এড়িয়ে যায়নি ভিনগ্রহীদের?
সেখানেও কি কোনও সুদূরতম অতীতে কোনও ‘সভ্যতা’ গড়ে তুলেছিল ভিনগ্রহীরা? সেখানেও ছিল ‘পিরামিড’?
গুগ্ল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজের তোলা ছবি দেখিয়ে এমনটাই দাবি করলেন একদল বিজ্ঞানী। এবং ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’রা। তাঁদের দলটির নাম- ‘সিকিওর টিম’। তাঁদের আরও একটি দল রয়েছে। যাদের নাম- ‘ইউএফও অ্যান্ড কনস্পিরেসি থিয়োরি ফোরাম’। তাঁদের দাবি, অ্যান্টার্কটিকার বরফ-সাম্রাজ্যের গভীরতর স্তরে ‘ভিনগ্রহীদের জাহাজ’-এরও খোঁজ মিলেছে। হদিশ মিলেছে, কোনও মন্দির বা কোনও অট্টালিকার সিঁড়ির ধাপেরও (স্টেয়ারকেস)। গুগ্ল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজের তোলা ছবি দেখিয়ে তাঁদের দাবি, এক সময় অ্যান্টার্কটিকার ওই বরফ-সাম্রাজ্যে ‘নগর-সভ্যতা ছিল ভিনগ্রহীদের’! সেই সব ছবির ভিডিও তাঁরা ইউটিউবে ছড়িয়ে দিয়েছেন সম্প্রতি।
সেই ‘পিরামিড’
যাঁরা ভিনগ্রহীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন আর ভিনগ্রহীদের ‘হদিশ পেয়েও’ নাসা ও ইউরোপিয়ান এজেন্সির মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি ‘সব কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে’ বলে বহু দিন ধরেই বলে আসছেন, তাঁদেরই বলা হয় ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’। তাঁদের দাবির সমর্থনে ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’রা আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদককে আমেরিকার ওহায়ো থেকে টেলিফোনে তাঁদের মতামত তো জানিয়েছেনই, সঙ্গে ই-মেলে পাঠিয়েছেন বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও। যা দিয়ে তাঁরা তাঁদের বক্তব্যকে সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি অনলাইনে প্রকাশ করা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিআইএ’-র ‘কনফিডেনশিয়াল ফাইল’-এও ভিনগ্রহীদের ‘মহাকাশযান’- ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট’ (ইউএফও) বা ‘উড়ন্ত চাকি’ নিয়ে প্রচুর উল্লেখের প্রমাণ মিলেছে। সে সম্পর্কে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার সহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির ‘গোপন মতামত’ও গত দু’-চার দিনে সবার সামনে এসেছে।
গুগ্ল ইমেজে সেই এলাকা যেখানে অ্যান্টার্কটিকায় মিলেছে সিঁড়ির ধাপের ছবি!
গুগ্ল ইমেজে সেই ডিমের মতো এলাকা যেখানে অ্যান্টার্কটিকায় প্রাচীন সভ্যতা ছিল বলে একদল বিজ্ঞানীর দাবি
দাবি আর পাল্টা দাবির মধ্যে আনন্দবাজারের তরফে টেলিফোনে এবং ই-মেলে যোগাযোগ করা হয়েছিল অন্যতম ‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’ জেমস জেসনের সঙ্গে। ওহায়োর ক্লিভল্যান্ড থেকে টেলিফোনে জেসন বলেছেন, ‘‘গুগ্ল আর্থ ইমেজের ছবি থেকে স্পষ্টই দেখা গিয়েছে একটি ভিনগ্রহীদের জাহাজ, যা রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ-সাম্রাজ্যের পুরু বরফ-স্তরের অন্দরে। দেখা গিয়েছে, সেখানে রয়েছে একটি অত্যন্ত প্রাচীন কোনও সভ্যতায় গড়ে ওঠা একটি সুবিশাল পিরামিড। রয়েছে নগর-সভ্যতার আরও নানা প্রমাণ। অট্টালিকা বা কোনও মন্দিরের সিঁড়ির ধাপ।
দেখুন ভিডিও।
গুগ্ল ইমেজে অ্যান্টার্কটিকায় সেই সিঁড়ির ধাপের মতো এলাকা
ভিনগ্রহীদের সেই সভ্যতা ছিল অনেক অনেক বেশি উন্নত, প্রযুক্তি-প্রকৌশলের নিরিখে। তবে তাদের প্রযুক্তি কতটা উন্নত ছিল, সম্ভবত তার সবচেয়ে সেরা প্রমাণ- ভিনগ্রহীদের ওই জাহাজটি। সেখানে আমরা বরফে চাপা পড়ে যাওয়া একটি গুহারও হদিশ পেয়েছি। পেয়েছি বিশাল একটি বৃত্তাকার এলাকার ছবি। যা এক সময় কোনও প্রাচীন কিন্তু আধুনিকতম সভ্যতার ধাত্রীভূমি ছিল বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেখানেই মিলেছে ডিমের মতো ৪০০ ফুট বা ১২১ মিটার (ব্যাস) মাপের একটি এলাকা। এই এলাকাটিকেই অ্যান্টার্কটিকায় ভিনগ্রহীদের এক সময়ের আস্তানা বলে মনে করা হচ্ছে। ওই জায়গাটিই প্রমাণ করছে দক্ষিণ মেরুর বরফ-সাম্রাজ্যেও এক সময় প্রযুক্তি-প্রকৌশলের নিরিখে কোনও আধুনিকতম সভ্যতার জন্ম হয়েছিল। অ্যান্টার্কটিকার যে ভৌগোলিক অবস্থানটা আমরা এখন দেখছি, তখন অবশ্য তা মোটেই ছিল না।’’
আরও পড়ুন- ভিনগ্রহীরা বার বার আসছে পৃথিবীতে! গোপন নথি প্রকাশ করল সিআইএ
‘কনস্পিরেসি থিয়োরিস্ট’দের ওই দাবি অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদরা। তাঁদের অন্যতম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জিওলজির অধ্যাপক কুমার আনন্দ টেলিফোনে আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘আমরা ওই সব দাবিকে আমল দেওয়ার কোনও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি না। প্রথমত, গুগ্ল আর্থ স্যাটেলাইট ইমেজের ছবিগুলি পরে ‘ডক্টরড’ (কাটা-ছেঁড়া) হয়েছে কি না, তার বিন্দু-বিসর্গও আমরা জানি না। বরফে নানা রকমের দৃষ্টিবিভ্রমের জন্ম হয়। আদতে যেগুলি বরফের পুরু স্তর, সেগুলিকেই দৃষ্টিবিভ্রমের কারণে পাহাড় বা মালভূমি বা পিরামিড বলে হয়তো মনে হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ বা হাজার হাজার বছর ধরে তুষারপাতের ফলে ওইগুলি তৈরি হতে পারে।’’