Advertisement
E-Paper

মঙ্গল গ্রহের পিছন দিকে যেতেই আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন! মহাকাশে ‘রত্ন’ হারাল নাসা, কী আছে লাল গ্রহের অন্ধকার প্রান্তে

২০১৩ সালে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ম্যাভেন। লাল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছোয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই থেকে এই মহাকাশযানটি পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহের চারপাশে ঘুরছিল। হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৭
মঙ্গল গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণরত এক মহাকাশযানের সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

মঙ্গল গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণরত এক মহাকাশযানের সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

মহাকাশে এক ‘রত্ন’ হারিয়ে ফেলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘুরে ঘুরে গত ১১ বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করছিল যে মহাকাশযান, তার সঙ্গে আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীরা শত চেষ্টা করেও সেই যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করতে পারছেন না। নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না অতি পরিচিত ম্যাভেন (মার্স অ্যাটমোসফিয়ার অ্যান্ড ভোলাটাইল ইভলিউশন)-কে। মঙ্গল গ্রহের পিছন দিকে যেতেই তার সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

২০১৩ সালে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ম্যাভেন। লাল গ্রহের কক্ষপথে পৌঁছোয় ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেই থেকে এই মহাকাশযানটি পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহের চারপাশে ঘুরছিল। তার মাধ্যমে অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে নাসা। মঙ্গল গ্রহের চারপাশে ঘোরার জন্য আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মোট সাতটি মহাকাশযান (অরবিটার) পাঠিয়েছিল। ম্যাভেন ছিল তার মধ্যে অন্যতম।

নাসা জানিয়েছে, সাধারণ গতিতেই মঙ্গলের কক্ষপথ বরাবর এগোচ্ছিল ম্যাভেন। একসময়ে গ্রহের পিছন দিকে চলে যায় সে। ওই অংশ বিজ্ঞানীদের চোখের আড়ালে ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পর গত ৬ ডিসেম্বর মহাকাশযানটি আবার দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অর্থাৎ, মঙ্গলের অন্ধকার প্রান্তে এমন কিছু ঘটেছে, যাতে মহাকাশযানের সঙ্গে নাসার যোগাযোগ স্থায়ী ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এমনিতে মহাকাশযানের সঙ্গে পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া বিরল নয়। এই ধরনের কোনও গ্রহ বা উপগ্রহকে প্রদক্ষিণকারী মহাকাশযানের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তা হয়ে থাকে। তবে সেগুলি সাময়িক বিচ্ছিন্নতা। সামনে অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু বা পাথরখণ্ড চলে এলে যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে নিজে থেকেই আবার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ম্যাভেনের ক্ষেত্রে তা হয়নি।

নাসার ক্যামেরায় তোলা মঙ্গল গ্রহের ছবি।

নাসার ক্যামেরায় তোলা মঙ্গল গ্রহের ছবি। ছবি: এক্স।

৬ তারিখ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর তা পুনরুদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করেছিল নাসা। পরে ৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে তা ঘোষণা করা হয়। যদিও এখনও ওই মহাকাশযানের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আশা ক্ষীণ।

কৌতূহলের বিষয় হল, ম্যাভেনে কোনও যান্ত্রিক গোলযোগের হদিস পাওয়া যায়নি। যে সময়ে ওই মহাকাশযানের সঙ্গে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, সেই সময়েও তার সমস্ত যন্ত্রাংশ নিখুঁজ কাজ করছিল। মঙ্গলের পিছন দিকের অংশ নিয়ে সেই কারণেই বিজ্ঞানীদের কৌতূহল আরও বেড়ে গিয়েছে। একটি বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত, লাল গ্রহের অন্ধকার প্রান্তে কিছু একটা ঘটেছে। কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

মঙ্গল গ্রহ প্রদক্ষিণকারী ম্যাভেন অরবিটার।

মঙ্গল গ্রহ প্রদক্ষিণকারী ম্যাভেন অরবিটার। ছবি: নাসা।

মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগের বায়ুমণ্ডল এবং আয়নোস্ফিয়ার নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করত ম্যাভেন। সৌরবায়ু এই বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে কী ঘটে, তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হত। কী ভাবে একসময়ের সিক্ত অবস্থা থেকে মঙ্গল বর্তমানের শুষ্ক, শীতল অবস্থায় পৌঁছোল, ম্যাভেনের তথ্য থেকেই সেই রহস্যভেদের আশায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সেই কাজে আপাতত বাধা পড়ল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, একসময় মঙ্গল গ্রহে প্রচুর জল ছিল। কোনও এক প্রবল ধূলিঝড়ে সেই জল বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে উঠে এসেছিল। তার পর সৌরবায়ুর সংস্পর্শে এসে তা গ্রহের বাইরে বেরিয়ে যায়। ম্যাভেনের তথ্য এই অনুসন্ধানে ছিল অত্যন্ত উপযোগী। আগামী দিনে পৃথিবী থেকে মঙ্গল অভিযানের যে সমস্ত পরিকল্পনা রয়েছে, তা-ও ম্যাভেনের তথ্যের উপর ছিল অনেকাংশে নির্ভরশীল। ফলে তার সঙ্গে আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে, বিশেষত মঙ্গলকেন্দ্রিক গবেষণায় বড়সড় ধাক্কা।

মঙ্গলের পিছন দিকে কী আছে?

মঙ্গল গ্রহের পিছন দিক বলতে যে অংশ পৃথিবীর উল্টো দিকে রয়েছে, তাকে বোঝানো হয়েছে। উল্টো দিকে থাকার কারণে তা পৃথিবী থেকে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তবে মঙ্গল পৃথিবীর মতোই নিজের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে কোনও একটি দিক সবসময় পৃথিবীর চোখের আড়ালে থাকে না। তবে যে দিকে গিয়ে ম্যাভেন হারিয়ে গিয়েছে, সে দিক তখন সূর্যের আলোর বিপরীতে থাকায় অন্ধকার ছিল।

মঙ্গল গ্রহের লালচে মাটি।

মঙ্গল গ্রহের লালচে মাটি। ছবি: সংগৃহীত।

মঙ্গলের দু’টি উপগ্রহ রয়েছে— ফোবোস এবং ডেমিয়োস। ফোবোস তুলনামূলক বড় এবং গ্রহের কাছাকাছি অবস্থিত। ডেমিয়োস খানিক ছোট। তা মঙ্গলের বাইরের কক্ষপথে প্রদক্ষিণরত। পৃথিবীর চাঁদের মতোই এই দুই উপগ্রহও মঙ্গলকে একমুখী প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ, উপগ্রহগুলির একটি দিকই সবসময় মঙ্গলের সামনে থাকে। উল্টো দিকটি কখনও ঘুরে সামনে আসে না। লালগ্রহের বিপরীত প্রান্তে ম্যাভেনের যোগাযোগ হারানোর নেপথ্যে এই দুই উপগ্রহের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, স্পষ্ট নয়। সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

mars Red Planet NASA Orbiter Space Science
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy