মানবকোষে ঢুকেও সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না করোনাভাইরাস! -ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসকে এ বার তার নিজের বিরুদ্ধেই লাগিয়ে দেওয়া যাবে। যাতে মানবশরীরে ঢুকলেও কোষে কোষে প্রবেশ করে ভাইরাস দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। তার ফলে, মানবদেহে ঢুকেও সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না করোনাভাইরাস। এক জন থেকে অন্য জনেও রোখা যাবে সংক্রমণ।
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে রোখার এই অভিনব উপায় খুঁজে বার করেছেন আমেরিকার হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ব্লাভাটনিক ইনস্টিটিউট ও বস্টন চিলড্রেন্স হসপিটালের বিজ্ঞানীরা। ইঁদুর ও গবেষণাগারে মানবকোষের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস'(পিনাস)-এ। সোমবার।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর ফলে, আগামী দিনে এমন ওষুধ আবিষ্কারের পথ খুলল, যাতে মানবদেহে ঢুকলেও করোনাভাইরাস কোষ থেকে কোষে ছড়াতে না পারে। কোষে ঢুকে বংশবৃদ্ধি ঘটাতে না পারে। এই অভিনব পদ্ধতিতে ভাইরাসের যে কোনও রূপেরই সংক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব। ভাইরাসের আরএনএ-র যে অংশটিকে লক্ষ্য করে এই ওষুধ বানানো যেতে পারে, সেই অংশটির কোনও মিউটেশনই হয় না। তাই সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের এক রূপ থেকে অন্য রূপেও এই অংশের কোনও পরিবর্তন ঘটে না। তাই একই ওষুধ ভাইরাসের সবক’টি রূপের সংক্রমণ গোড়াতেই রুখে দিতে পারবে। এমনকি, এই ওষুধে অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণও রোখা যেতে পারে। তবে তার আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন।
অন্যতম মূল গবেষক হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানী সেতু ভোরা বলেছেন, ‘‘কোভিড টিকা বাজারে আসার পরেও ভাইরাসের নতুন নতুন রূপের সংক্রমণ রোখা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের আরও রূপ বেরোতে পারে। তখন সংক্রমণ রোখার জন্য টিকাগুলিকেও বদলাতে হবে তাদের মোকাবিলার জন্য। তাই ভাইরাসের আরএনএ-র সেই অংশটিকে খুঁজে বার করার প্রয়োজন ছিল যে অংশটি ভাইরাসকে মানবকোষে বংশবৃদ্ধি করতে বাধা দেয়। আর সেই অংশটির কোনও পরিবর্তন ঘটে না মিউটেশনে ভাইরাসের নতুন নতুন রূপ তৈরি হলেও। এতে এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হতে পারে, যা ভাইরাসের এখনকার সবক’টি ও আগামী দিনের সম্ভাব্য রূপগুলির সংক্রমণও রুখতে পারে।’’
মানবদেহে যে কোনও কোষেই এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া চলে অবিরত। কোষকে সজীব, সতেজ রাখার জন্য তৈরি হয়ে চলে নানা ধরনের প্রোটিন। পাশাপাশি চলে যে কোনও সংক্রমণকে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য মানবকোষেই ভাইরাসের নানা ধরনের প্রোটিন সংশ্লেষণ বা ভাইরাসের প্রোটিনের সহায়ক প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া।
সার্স-কোভ-২ ভাইরাস মানবশরীরে ঢুকে কোষের এই ভারসাম্যকেই ভেঙে দেয়। তখন কোষে ভাইরাসের প্রবেশ ও বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক প্রোটিন বেশি পরিমাণে তৈরি করতে শুরু করে মানবদেহ।
গবেষকরা দেখেছেন, ভাইরাসের অভ্যন্তরেই থাকে পরস্পরবিরোধী দু’টি শক্তি। চলে পরস্পরবিরোধী দু’টি প্রক্রিয়া। একটি ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা নেয় ভাইরাসের একটি প্রোটিন। ‘এনএসপি-১’। এই প্রোটিনটি মানবকোষে সব ধরনের প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া কমিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে, ভাইরাসের আরএনএ-র একটি ক্ষুদ্র অংশ (যার নাম— ‘স্টেম লুপ-১’) রয়েছে যেটি এনএসপি-১ প্রোটিনকে অগ্রাহ্য করে মানবকোষকে আরও বেশি পরিমাণে ভাইরাস সংক্রমণের সহায়ক প্রোটিন তৈরির নির্দেশ পাঠায়।
গবেষকরা এনএসপি-১ প্রোটিনটিকে কী ভাবে আরও সক্রিয় করে তোলা যায়, তা দেখতে চেয়েছিলেন। তা হলে ওই প্রোটিনটিকে সক্রিয় করে তোলার ওষুধ দিয়ে মানবকোষে ভাইরাসের সংক্রমণ গোড়াতেই নির্মূল করা যাবে।
গবেষকরা সেই লক্ষ্যে এমন একটি প্রোটিন তৈরি করেন, যা ওষুধের সঙ্গে মানবশরীরে ঢুকে কোষের বাইরের স্তরে এসে বসা ভাইরাসের স্টেম লুপ-১ অংশটির (যে অংশটি মানবকোষকে সংক্রমণে সহায়ক বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করতে নির্দেশ পাঠায়) উপর বসবে। তার পর সেই স্টেম লুপ-১ অংশটিকে বেঁধে ফেলবে, যাতে তা কোনও কাজ করতে না পারে। মানবকোষকে সংক্রমণে সহায়ক বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করার নির্দেশ না পাঠাতে পারে। তখন ভাইরাসের এনএসপি-১ প্রোটিনের ভূমিকাই মুখ্য হয়ে উঠবে, যাতে তা মানবকোষকে সংক্রমণে সহায়ক বিভিন্ন প্রোটিন তৈরি করতে না দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy