E-Paper

ভুল কোথায় ছিল বুঝতেই এক বছর কেটে গিয়েছিল, শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছিল সবটা, বললেন ইসরো প্রধান

২৩ অগস্ট দিনটাও অনেক ভেবেচিন্তে বেছে নিয়েছিল ইসরো। পৃথিবীর এই দিনটায় চাঁদের দিন শুরু। চাঁদের একটা দিন, পৃথিবীর দু’সপ্তাহ। চাঁদে রাত নামার আগে ১৪ দিন সময় পাবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৩
s somnath.

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ। ছবি: পিটিআই।

সে ছিল হার না-মানা হার। চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যের পরে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রধান এস সোমনাথের মুখে বারবার ফিরে এল ২০১৯ সালের ব্যর্থতার স্মৃতি। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, ‘‘এক বছর তো এটা বুঝতেই কেটে গিয়েছিল, ভুল কোথায় ছিল!’’ জানালেন, কী ভাবে শূন্য থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল সবটা। শিক্ষা নিতে হয়েছিল ব্যর্থতা থেকে। বার্তা স্পষ্ট, আগের অভিযান সম্পূর্ণ না হলেও হেরে যায়নি ইসরো। লক্ষ্য আরও বহু দূর। চাঁদে কলোনি স্থাপন! ইসরো-প্রধান বলেন, ‘‘মানুষ চাঁদে যেতে চায়। সেখানে থাকার মহল্লাও তৈরি করতে চায়। আমরা সেরা এলাকাটি খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি।’’

গত কাল চাঁদে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান-৩। চল্লিশ দিনের দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি কাটাতে গত কাল চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার পরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নেয় ল্যান্ডার বিক্রম। তার আগমনে উপগ্রহের মাটিতে যে ধুলোর ঝড় উঠেছিল, ক্রমে তা থিতিয়ে পড়ে। তার পরে বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। তার ছ’চাকার ছাপ পড়ে চাঁদের মাটিতে। আগামী দু’সপ্তাহ (পৃথিবীর হিসাবে) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে প্রজ্ঞান। তাকে সাহায্য করবে বিক্রম।

এই দিনটার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে ইসরোকে। সোমনাথ বলেন, ‘‘এক বছর ধরে শুধু ভুল খোঁজা। পরের বছর নতুন করে কাজ শুরু। মাঝে কোভিডের জন্যও বেশ কিছু কাজ পিছিয়ে যায়।’’ ইসরো প্রধান জানান, ব্যর্থতা থেকে পথ খুঁজেই ‘ফেলিয়োর-বেসড আপগ্রেড’ করা হয়েছে চন্দ্রযান-৩-এ। যেমন, বিক্রমের পা আরও শক্তপোক্ত করা হয়েছিল, যাতে সে নিরাপদে নামতে পারে। আগের যানটির দু’টি মুখে সৌর প্যানেল ছিল। এ বারে চারটি মুখেই সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। এ ছাড়া, চাঁদে সফ‌্‌ট ল্যান্ডিংয়ের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ অবতরণের শেষ ধাপেই ভেঙে পড়েছিল চন্দ্রযান-২।

২৩ অগস্ট দিনটাও অনেক ভেবেচিন্তে বেছে নিয়েছিল ইসরো। পৃথিবীর এই দিনটায় চাঁদের দিন শুরু। চাঁদের একটা দিন, পৃথিবীর দু’সপ্তাহ। চাঁদে রাত নামার আগে ১৪ দিন সময় পাবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। এর পর রাত নামলে আবার পৃথিবীর হিসাবে ১৪ দিন ধরে অন্ধকার। এই সময়টা রোভার সক্রিয় থাকবে না, কারণ সৌরশক্তি পাবে না সে। তাপমাত্রা মাইনাস ১৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছোঁবে। এই দিন-রাতের ঝঞ্ঝাটের জন্য ইসরো বিকল্প পরিকল্পনাও করেছিল। যদি কাল না নামতে পারত বিক্রম, তা হলে ২৯ দিন পরে ফের চেষ্টা করত সে। তার জন্য অতিরিক্ত জ্বালানিও মজুত ছিল যানে।

আপাতত প্রজ্ঞানদের তথ্যানুসন্ধানে নজর ইসরোর। রম্ভা, চ্যাস্ট, ইলসা ও অ্যারে— কাজ শুরু করেছে ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই চারটি পে লোড। চাঁদের বুকে সূর্য থেকে আসা প্লাজ়মা কণার ঘনত্ব, পরিমাণ ও পরিবর্তনগুলি নিরীক্ষণ করবে রম্ভা। চ্যাস্ট মেপে দেখবে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। অবতরণস্থলের আশপাশের মাটির কম্পন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে ইলসা। ‘লেজ়ার রেট্রোরিফ্লেক্টর’ অ্যারে চাঁদের গতিশীলতা বোঝার চেষ্টা করবে। প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীদের নিশানায় অভিযানের প্রথম ১৪ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)। তবে তাঁদের আশা, অন্ধকার দিনগুলো ঠিকই কাটিয়ে উঠবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান। তারা দীর্ঘজীবী হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandrayaan-3 ISRO Moon Landing Moon landing of India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy