বোতল বোতল রক্ত! বড় বড় ড্রাম রক্তে ভরা!
একেবারে তরতাজা, চাপ-চাপ, গরম রক্ত!
আমাদের বাঁচিয়ে রাখার এই ‘কারিগর’কে এখন বানানো হচ্ছে জাদু-মন্ত্রে! জাপানে।
রক্ত বানানোর ‘কারখানা’য় মহাযজ্ঞে সামিল হয়েছেন জনাকয়েক ‘জাদুকর’!
সেই ‘অদ্ভুতুড়ে কারখানা’র এমনই বাহাদুরি ‘প্রোডাকশন’-এর যে, অনুমান করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমন একটা দিন আসবে, যখন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে আর পড়িমড়ি করে ছুটতে হবে না রক্ত জোগাড় করে আনতে। ছুটতে হবে না ব্লাড ব্যাঙ্কে, সরকারি হাসপাতালে। ছুটে গিয়ে হতাশ আর উত্তেজিত হয়ে পড়তে হবে না ‘রক্ত নেই’ শুনে।
স্টেম সেল দিয়ে আর হরেক রকমের জিনের ওপর কারিকুরি (জিন এডিটিং) করে আমরা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেই ‘ভগবান’কে ‘বশ’ করে পেলতে পেরেছি! শুধু রক্ত, সবকর্টি গ্রুপের রক্ত বানানো আর বাণিজ্যিক ভাবে তার উৎপাদনের পদ্ধতি-প্রকৌশল আমাদের মুঠোয় ছিল না এত দিন। জাপানের জনাকয়েক ‘জাদুকর’-এর কৃতিত্বে এ বার সেই পদ্ধতি-প্রকৌশলও আমাদের নাগালে চলে এল।
কিন্তু এই পদ্ধতি-প্রকৌশলের উদ্ভাবন আর বাণিজ্যিক ভাবে তার উৎপাদনের জন্য কেন আগ্রহী হয়ে উঠল জাপান?
হালের একটি পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২১০০ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা একলাফে ৮ কোটি ৩০ লক্ষ কমে যাবে। তার ফলে, জাপানে স্বাভাবিক রক্তদাতার সংখ্যাটাও কমে যাবে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ওই আশঙ্কাই জাপানি ‘জাদুকর’দের উদ্বুদ্ধ করেছিল রক্ত বানানোর ‘কারখানা’ গড়ে তুলতে।
ওই জাপানি সংস্থাটির নাম- ‘মেগাকারিওন’। কৃত্রিম ভাবে প্লুরি-পোটেন্ট স্টেম সেল থেকে যারা অণুচক্রিকা বা ‘প্লেটলেট্স’ তৈরি করতে পেরেছে। আর সরকারি ভাবে তার পেটেন্ট পাওয়ার পর তা বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন করতেও শুরু করে দিয়েছে।
‘মেগাকারিওন’ সংস্থার প্রেসিডেন্ট জেনজিরো মিওয়ার মাথায় এই ভাবনাটি এসেছিল ২০০৮ সালে। স্কুলের রি-ইউনিয়নের সময় মিওয়ার সঙ্গে হঠাৎই দেখা হয়ে যায় তাঁর ছোটবেলার সহপাঠী হিরোমিশতু নাকাউচির সঙ্গে। নাকাউচি সেই সময় স্টেম সেল থেকে অণুচক্রিকা বানানোর গবেষণাতেই মেতেছিলেন। কিয়েটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোজি এতোর সঙ্গে। নাকাউচিই সেই সময় মিওয়াকে বলেছিলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহী হতে। তাঁদেরই আরেক সহপাঠী কাজুও মাৎসুনাগা তখন জাপানের অর্থনীতি, শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁরই দৌলতে অর্থ সমস্যা মিটে যায়। এগিয়ে আসে জাপানের পিপিপি মডেলে চলা একটি কোম্পানি। ২০১১ সালে গড়ে ওঠে ‘মেগাকারিওন’।
আরও পড়ুন- সমুদ্রগর্ভে এ বার চিনের প্রাচীর, মহাকাশ স্টেশন বানাচ্ছে বেজিং!
কিন্তু এখন দু’সপ্তাহে মাত্রই কয়েকটা ড্রাম তরতাজা রক্ত উৎপাদন করতে পারে ‘মেগাকারিওন’। যদিও শুধু জাপানেই বছরে ৮ লক্ষ ইউনিট তরতাজা রক্তের প্রয়োজন। তবে আর চার বছরের মধ্যেই সেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব বলে আশা মিওয়ার। গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও চুক্তি হয়ে গিয়েছে ‘মেগাকারিওন’-এর।
হয়তো আগামী দিনে গোটা বিশ্বেই গরম, তরতাজা রক্ত রফতানি করতে শুরু করবে জাপান!