Advertisement
E-Paper

৪০০ টুকরো! নাসার দাবি ‘শক্তি-শেল’ বিপজ্জনক

পৃথিবীর কক্ষপথে পাক খাচ্ছে ১০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এমন অন্তত ৬০টি টুকরোকে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করেছে নাসা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:৩৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মহাকাশে ‘শক্তি’ জাহির, নাকি দূষণ! ভারতের সাম্প্রতিক ‘মিশন শক্তি’-কে বিঁধতে গিয়ে এ ভাবে শুধু কটাক্ষ নয়, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানাল, তারা আতঙ্কিত। ভারতের এই কাজ অত্যন্ত বিপজ্জনক!

অথচ কোনও দেশের কপালে ভাঁজ পড়ে, গত বুধবার তেমন কিছুই করেনি ভারত। দেশেরই মাটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে শুধু নিজেদেরই একটা অকেজো কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করেছিল। মিনিট তিনেকের ব্যাপার। কিন্তু নাসা বলছে, তাতেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। সংস্থার প্রধান জিম ব্রাইডেনস্টাইন দাবি করেছেন, ধ্বংস হওয়া ওই উপগ্রহের অন্তত ৪০০টি ছোট-বড় টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে মহাকাশে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারীদের পক্ষে যে কোনও মুহূর্তে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এ সব ধ্বংসাবশেষ। মহাকাশে ওই আবর্জনা ছিলই। কিন্তু ভারত ‘ক্ষেপণাস্ত্র’ ছোড়ার পর থেকেই বিপদের আশঙ্কা অন্তত ৪৪ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি নাসার।

পৃথিবীর কক্ষপথে পাক খাচ্ছে ১০ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের এমন অন্তত ৬০টি টুকরোকে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করেছে নাসা। যার মধ্যে অন্তত ২৪টি টুকরো বিপজ্জনক ভাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে বলে আজ দাবি করেন জিম। কিন্তু মোট সংখ্যাটা যে প্রায় ৪০০! যার বেশির ভাগই মাধ্যকর্ষণ শক্তির টান ছাড়িয়ে উঠে চলেছে আরও আরও উপরের স্তরে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিল্লি কিন্তু প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও এই পরীক্ষামূলক এ-স্যাট ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে মহাকাশের গভীরে নয়, নেহাতই ‘লো-অরবিট’-এ। যাতে কোনও ভাবেই ধ্বংশাবশেষ মহাকাশে ছড়িয়ে না-পড়ে। বাতিল ওই কৃত্রিম উপগ্রহের যা কিছু অবশিষ্ট তা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে পৃথিবীতেই ফিরে আসবে। এ দিনও ইসরোর এক কর্তা বলেন, ‘‘ছ’মাসের মধ্যেই সব ধ্বংসাবশেষ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ভারতকে লজ্জায় ফেলার মতো কিছুই করবে না ইসরো।’’

‘শক্তি-শেল’ পাঠিয়ে ৩০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে ইসরোর বাতিল উপগ্রহ ধ্বংস করেছে ভারত। আর নাসা জানিয়েছে, এর সামান্য উপরে, ৩৭০ কিলোমিটার উচ্চতায় রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র। তাই ভাসতে থাকা আবর্জনা সেখানে আঘাত করলে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। উদ্বিগ্ন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও।

আমেরিকা-রাশিয়া-চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসেবে মহাকাশ যুদ্ধেও মহাশক্তি হিসেবে ভারতের এই আত্মপ্রকাশকে গোড়া থেকেই ভাল চোখে দেখেনি ওয়াশিংটন। চিন সংযত থাকার আর্জি জানালেও খোঁচা দিতে ছাড়েনি পাকিস্তান। বিশেষত, এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ঢাক পেটাতে শুরু করায় শোরগোল পড়ে বিশ্ব জুড়ে। ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারে আজ অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল যুক্ত হল।’’

সরকারি ভাবে মুখ না খুললেও, আমেরিকার চটার কারণ, ১৯৬৭ সালের আন্তর্জাতিক ‘আউটার স্পেস’ চুক্তিতে বলাই রয়েছে, মহাকাশে কোনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র নেওয়া বা পাঠানো যাবে না। মোদী পাল্টা বলেছিলেন, এ-স্যাটের ভূমিকা সম্পূর্ণ রক্ষণাত্মক। কিন্তু ধ্বংস হওয়া উপগ্রহের আবর্জনার কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিশেষ মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি দিল্লিকে। তবে অন্দরে জল্পনা ছিলই। গত কাল শ্রীহরিকোটা থেকে শত্রুর রেডারের খোঁজে কক্ষপথে একটি গোয়েন্দা উপগ্রহ (এমিস্যাট)-সহ মোট ২৯টি উপগ্রহ পাঠিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এমিস্যাট রাখা হয়েছে মাটি থেকে ৭৪৮ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে। বিজ্ঞানীদের চিন্তা ছিল, ইসরোর এই রকেটও মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের টুকরোয় ধাক্কা খেয়ে নষ্ট হতে পারে। তেমন কোনও অঘটন হয়নি। কিন্তু যে কোনও দিন তা হতে পারে— আজ সেই আশঙ্কার কথাই মনে করিয়ে দিল নাসা। তাদের আরও ভয়, ভারতের দেখাদেখি যদি অন্য দেশও শক্তি-জাহিরের নেশায় মেতে ওঠে, তা হলে সমূহ বিপদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ পৃথিবীর পক্ষেও। কাছাকাছি থাকা উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষ কিছু দিনের মধ্যেই ছাই হয়ে ফিরে আসে। কিন্ত গভীর মহাকাশে বর্জ্যের টুকরো ধারাবাহিক সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে। পৃথিবীর চার পাশে ছোট-বড় বর্জ্যের বলয় তৈরিরও আশঙ্কা থাকছে। কারণ, মহাকাশে বর্জ্য জমানো বন্ধে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তি বা বিধিই যে নেই!

Mission Shakti Space
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy