E-Paper

সূর্যের রহস্য সন্ধানে ১০ মিনিট নজরদারি

গত ১৮ জুলাই আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে সাউন্ডিং রকেটে চাপিয়ে সৌরযানকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। নাসা জানিয়েছে, এতে সর্বপ্রথম ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইন্ট্রিগ্রাল স্পেকট্রোগ্রাফ’ ব্যবহার করা হয়েছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৯
নাসার সৌর অভিযানে যুক্ত বাঙালি বিজ্ঞানী সৌভিক বসু।

নাসার সৌর অভিযানে যুক্ত বাঙালি বিজ্ঞানী সৌভিক বসু। —ফাইল চিত্র।

ভরা গ্রীষ্মে সূর্যের তেজ নিয়ে আমজনতার দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। কিন্তু আমাদের জগতের কেন্দ্রে থাকা এই নক্ষত্র নিয়ে বিজ্ঞানীদেরও কৌতূহল কম নেই। সূর্যের একেবারে বাইরে থাকা মুকুটের মতো অংশের (করোনা) রহস্য সন্ধানে বিভিন্ন সৌরযানও গিয়েছে মহাকাশে। এ বার সেই সৌরমুকুটের রহস্য সন্ধানে আরও একটি অভিযান চালিয়েছে নাসা। তার নাম ‘সোলার ইরাপশন ইন্ট্রিগাল ফিল্ড স্পেকটোগ্রাফ’ (স্নিফস)। এই অভিযানে সূর্যের দৃশ্যমান অংশ (ফটোস্ফিয়ার অর্থাৎ গোল থালার মতো যে অংশকে খালি চোখে দেখা যায়) এবং সৌরমুকুটের (করোনা অর্থাৎ সব থেকে বাইরের অংশ) মাঝে থাকা ক্রোমোস্ফিয়ারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই অভিযানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বঙ্গসন্তান সৌভিক বসুও।

গত ১৮ জুলাই আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ থেকে সাউন্ডিং রকেটে চাপিয়ে সৌরযানকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। নাসা জানিয়েছে, এতে সর্বপ্রথম ‘সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইন্ট্রিগ্রাল স্পেকট্রোগ্রাফ’ ব্যবহার করা হয়েছে। ইমেজার এবং স্পেকট্রোগ্রাফ—এই দুয়ের মেলবন্ধনে তৈরি এই যন্ত্র। ইমেজার কোনও উৎস থেকে আসা সব রশ্মির মেলবন্ধনে তৈরি ছবি বা ভিডিয়োকে বন্দি করতে পারে। স্পেকটোগ্রাফ আলোকে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনুসারে ভেঙে সেই আলোর উপাদান, তাপমাত্রা এবং গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। সূর্যের রহস্য সন্ধানে এই অভিযান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেও দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রসঙ্গত, সূর্যের করোনা অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আয়নায়িত কণার (চার্জড পার্টিকল) প্রবল স্রোত মহাকাশে ছড়িয়ে দেয়। যাকে বলা হয় সৌরঝড়। এই আয়নায়িত কণার স্রোতের মুখে পড়লে মহাকাশযান বা কৃত্রিম উপগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত এবং বিকল হয়ে যেতে পারে। তাই সৌরঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে যেমন গবেষণা চলছে, তেমনই সৌরঝড়ের রহস্যাবৃত চরিত্র সন্ধানেও ব্যপ্ত বিজ্ঞানীরা। সৌভিক জানান, সূর্যের ফটোস্ফিয়ার এবং করোনার মধ্যে থাকা ক্রোমোস্ফিয়ার খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এই স্তর অতিক্রম করেই করোনায় সূর্যের শক্তি পৌঁছয় এবং করোনার তুলনায় ক্রোমোস্ফিয়ারের তাপমাত্রাও কম থাকে। তাই করোনা কখন এবং কী ভাবে উত্তপ্ত হচ্ছে, তা বোঝার জন্য ক্রোমোস্ফিয়ারকে বোঝা খুবই জরুরি। ‘‘তবে এই স্তরকে বোঝাও খুব কঠিন। আংশিক আয়নায়িত কণা দিয়ে গঠিত এই স্তর চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে খুবই উদ্ভট আচরণ করে,’’ বলছেন সৌভিক।

সৌভিক বলছেন, ‘‘ক্রোমোস্ফিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযানে মাত্র ১০ মিনিট পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকবে। কিন্তু এই অভিযানের সাফল্য আগামী দিনে সূর্য সংক্রান্ত গবেষণায় নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে।’’ আদতে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা সৌভিক স্কুলজীবন শেষে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স এবং কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে বি টেক এবং বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স থেকে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইনস্ট্রুমেনটেশন-এ এম টেক করে নরওয়ে পাড়ি দেন। ইউনিভার্সিটি অব অসলো থেকে পিএইচডি শেষ করে ২০২২ সালে আমেরিকার লকহিড মার্টিন সোলার অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স ল্যাবে গবেষক হিসেবে যোগ দেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Solar Mission Sun Scientists NASA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy