Advertisement
E-Paper

বর্ধমানের সৌম্যর বানানো প্যারাশুটে চেপে এ বার মঙ্গলে নামবে নাসার রোভার

১৫টি মানুষ একে অন্যের উপর দাঁড়ালে যতটা উঁচু হয়, তেমনই একটি দৈত্যাকার প্যারাশুট বানিয়েছেন বর্ধমানের সৌম্য দত্ত।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:১৬
ইনসেটে সৌম্য দত্ত। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

ইনসেটে সৌম্য দত্ত। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

লাল গ্রহের বুকে নিরাপদে অবতরণের জন্য এ বার বর্ধমানের ছেলের উপরেই বাজি ধরেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা

১৫টি মানুষ একে অন্যের উপর দাঁড়ালে যতটা উঁচু হয়, তেমনই একটি দৈত্যাকার প্যারাশুট বানিয়েছেন বর্ধমানের সৌম্য দত্ত। ওই প্যারাশুটে চেপেই মঙ্গলের বুকে নামবে নাসার ‘মার্স ২০২০ রোভার’ পারসিভের‌্যান্স আর ল্যান্ডার।

নস্যি কিউরিওসিটির প্যারাসুটও!

এর আগে লাল গ্রহে এত বড় প্যারাসুট আর কখনও পাঠায়নি নাসা। যে প্যারাশুটে চেপে ৯ বছর আগে লাল গ্রহের বুকে পা ছুঁইয়েছিল কিউরিওসিটি রোভার, এ বারের প্যারাশুটের কাছে সেটা শুধুই নস্যি নয়, প্রযুক্তির নিরিখেও বলা যায় ‘সেকেলে’ই। এমন প্যারাশুট না থাকলে মঙ্গলের বুকে নিরাপদে নামানো সম্ভব হতো না মার্স ২০২০ রোভার ও ল্যান্ডার।

এ বার মঙ্গলে দেখা যাবে এই প্যারাশুটেরই কেরামতি।

রকেট থেকে নামতে গিয়ে যাতে না ঘটে বিপত্তি

ভার্জিনিয়ায় নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টারের এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার সৌম্য ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানালেন, এ বার এত বড় আকারের প্যারাশুট বানানোর বিশেষ প্রয়োজন ছিল। কারণ, ল্যান্ডার ও রোভারকে মঙ্গলের মাটিতে নামাতে কোনও অরবিটার প্রদক্ষিণ করবে না লাল গ্রহের কক্ষপথে। যে রকেটে চাপিয়ে এ বার পাঠানো হয়েছে মার্স ২০২০ ল্যান্ডার ও রোভার তা পৃথিবী থেকে সরাসরি মঙ্গলে কক্ষপথে ঢুকে পড়বে। তার পর দ্রুত নামতে শুরু করবে লাল গ্রহে।

প্যারাশুট নিয়ে যে সব পরীক্ষা হয়েছে গবেষণাগারে, দেখুন ভিডিয়োয়

মঙ্গলের পিঠ (‘সারফেস’) থেকে যখন সেই রকেটের উচ্চতা থাকবে ১২৫ কিলোমিটার তখন সেই রকেটের গতিবেগ থাকবে সেকেন্ডে সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এই গতিবেগে থাকা রকেট থেকে ল্যান্ডার ও রোভার মঙ্গলের মাটিতে নামাতে গেলে রকেট থেকে নিয়ন্ত্রণ করে তার গতিবেগ কমিয়ে আনা সম্ভব নয়। লাল গ্রহে পাতলা হলেও যেহেতু বায়ুমণ্ডল রয়েছে তাই ওই গতিবেগে ল্যান্ডার ও রোভার রকেট থেকে নামাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে সেগুলি জ্বলে-পুড়ে যেতে পারে। তাই তাপরোধী বিশেষ ধরনের ‘হিট শিল্ড’ বানানো হয়েছে, জানালেন সৌম্য।

কী ভাবে জায়গা চিনে মঙ্গলে নামবে ল্যান্ডার, দেখুন ভিডিয়োয়

ল্যান্ডারের গতিবেগ থাকবে শব্দের প্রায় দ্বিগুণ

সৌম্যর কথায়, ‘‘নামার সময় ল্যান্ডার ও রোভারের গতিবেগ থাকবে শব্দের গতিবেগের প্রায় দ্বিগুণ (১.৭৫ গুণ)। এই গতিবেগ কমিয়ে এনে ধীরে ধীরে নিরাপদে লাল গ্রহে ল্যান্ডার ও রোভারের অবতরণের জন্যই সর্বাধুনিক প্যারাশুটের প্রয়োজন। সাড়ে ২১ মিটার ব্যাসের সেই প্যারাশুট খুলতে সময় নেবে বড়জোর ১ থেকে ২ সেকেন্ড। মঙ্গলে পাঠানো এটাই সবচেয়ে বড় সুপারসোনিক প্যারাশুট। ওই প্যারাশুট খোলার সময়েই র‌্যাডারের ক্যামেরা কোন জায়গায় নিরাপদে অবতরণ করা সম্ভব তার ছবি তুলতে শুরু করবে।’’

এই ভাবেই ১ থেকে ২ সেকেন্ডের মধ্যে খুলে যাবে প্যারাশুট।

বর্ধমান থেকে যে ভাবে মঙ্গলে...

বর্ধমান শহরে জন্মালেও বাবার চাকরির সূত্রে ছোটবেলা থেকেই বার বার ঠাঁই বদল হয়েছে সৌম্যের। স্কুলজীবনের প্রথম পর্বটা কেটেছে দেহরাদুন ও মুম্বইয়ে। তার পর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে আমেরিকায়। টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সৌম্য মাস্টার্স ও পিএইচডি করেন জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে। নাসার ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টারে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগ দেন সাত বছর আগে। ২০১৩-য়।

সৌম্যর দৌলতেই নাসার এ বারের মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে গেল বর্ধমানের নাম। বাঙালি প্রযুক্তিবিদের কাজের স্বীকৃতি মিলল লাল গ্রহে নাসার একেবারে হালের অভিযানে।

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা।

Langley Research Center NASA mars 2020 rover parachute AIMS Research Center JPL Soumyo Dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy