Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেলি ভাইদের ‘যমজ পরীক্ষা’য় সন্ধানী নাসা

মার্কিন এই নভশ্চর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (আইএসএস)-এ পাড়ি দিয়েছিলেন। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্পেস স্টেশনে ছ’মাসের বেশি কোনও নভশ্চর থাকেন না।

আইএসএস-এ মহাকাশচারী স্কট কেলি। ছবি রয়টার্স।

আইএসএস-এ মহাকাশচারী স্কট কেলি। ছবি রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:০১
Share: Save:

অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দূরের গ্রহে পাড়ি দেবে মানুষ। স্বপ্নে বুঁদ হয়ে মহাকাশ-বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তার জন্য জানা দরকার, মাধ্যাকর্ষণহীন ওই শূন্যে মানুষ আদৌ বাঁচবে কি না।

উত্তরের খোঁজে নিজেই ‘গিনিপিগ’ হয়েছিলেন মহাকাশচারী স্কট কেলি। মার্কিন এই নভশ্চর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (আইএসএস)-এ পাড়ি দিয়েছিলেন। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্পেস স্টেশনে ছ’মাসের বেশি কোনও নভশ্চর থাকেন না। পরীক্ষামূলক ভাবে সেখানে প্রায় এক বছর কাটান স্কট। তাঁর যমজ ভাই মার্ক কেলি থেকে যান পৃথিবীতে। উদ্দেশ্য ছিল, স্কট ফিরলে ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর দৈহিক মিল বদলে গিয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। মহাকাশবাসে তাঁর শরীরে কেমন পরিবর্তন ঘটেছে, খতিয়ে দেখা তা-ও।

আইএসএস থেকে পৃথিবীতে ফেরার পর স্কটকে নিয়ে পরীক্ষা চলছিল এত দিন। বৃহস্পতিবার সেই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স’-এ। জানা গিয়েছে, শুধু শারীরিক (ফিজ়িয়োলজিক্যাল) বদল নয়, জিনের বদলও ঘটেছে দীর্ঘ মহাকাশবাসে। স্কটের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ‘যমজ পরীক্ষা’য় মারাত্মক কোনও ফলাফল বেরোয়নি। ফলে দীর্ঘ মহাকাশ সফর বা ভিন গ্রহে মানুষের অভিযানের স্বপ্নভঙ্গ এখনই হচ্ছে না। তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত করে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা— ‘‘মানুষের শরীর পৃথিবীর চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়েই তৈরি। মাধ্যাকর্ষণহীন স্থানে তাঁর শরীর অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে।’’ যেমন, প্রোটিন তৈরির দায়িত্বে থাকা জিনগুলি কখনও কাজ করেছে, কখনও করেনি। ‘জিন এক্সপ্রেশন’ও অদ্ভূত আচরণ করেছে। দেখা গিয়েছে, মহাকাশে থাকাকালীন সে এক রকম, পৃথিবীতে ফেরার পরে আবার আগের মতো।

ক্রোমোজ়োমের টেলোমিয়ার অংশটি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ে যায়। মহাকাশে গিয়ে স্কটের টেলোমিয়ার দৈর্ঘ্যে বেড়ে গিয়েছিল। তাতে অবশ্য তাঁর মধ্যে তারুণ্য ফিরে আসেনি। পৃথিবীতে ফিরতেই দেখা গিয়েছে ওই টেলোমিয়ার নাটকীয় ভাবে আবার ছোট হয়ে গিয়েছে।

কী বলছেন ৫৫ বছর বয়সি স্কট? স্থানীয় একটি দৈনিককে তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশে গিয়ে প্রথমটা বেশ কষ্ট হতো। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া আলাদা করে বুঝিনি। কিন্তু এটাও সত্যি, ভালও লাগছিল না। ফিরে এসে আরও কষ্ট হয়েছে। পা ফুলে গিয়েছিল। সারা গায়ে র‌্যাশ। সুস্থ-স্বাভাবিক হতে আট মাস মতো সময় লেগে গিয়েছে।’’

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি-র জীববিজ্ঞানী সুজ়ান বেলি। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন মহাকাশে কাটানোর জেরে স্কট কেলির হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে। যে কোনও ধরনের ক্যানসারও হতে পারে।’’ তবে বিজ্ঞানীরা বারবারই বলছেন, এই গবেষণার সীমাক্ষেত্র খুবই ছোট। মাত্র এক জনের উপরে পরীক্ষা। আরও পড়াশোনা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NASA International Space Station ISS Scott Kelly
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE