Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Nobel

‘রিচার্জেবল বিশ্ব’ গড়ার পথ দেখিয়ে নোবেল পেলেন তিন রসায়নবিদ

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের রসায়নের অধ্যাপক গৌতম দেশিরাজু এ প্রসঙ্গে বলেন, “অবশেষে নোবেল এল। আমরা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই স্বীকৃতি এল অনেক দেরিতে।”

জন, স্ট্যানলি, আকিরা (বাঁ দিক থেকে)

জন, স্ট্যানলি, আকিরা (বাঁ দিক থেকে)

সংবাদ সংস্থা
স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:২৮
Share: Save:

দীর্ঘদিন পর রসায়নবিদরাই পেলেন রসায়নে নোবেল পুরস্কার। গত কয়েক দশক ধরে কোষ জীববিজ্ঞানী, ক্যানসার জীববিজ্ঞানী ও ডিএনএ জীববিজ্ঞানীরাই পাচ্ছিলেন রসায়নে নোবেল। প্রায় দু’দশকের সেই প্রথা ভেঙে এবার নোবেল দেওয়া হল তিন রসায়নবিদকে। বুধবার নোবেল কমিটির তরফে ঘোষণা করা হয়, ২০১৯-এ রসায়নে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন জন বি গুডএনাফ, এম স্ট্যানলি হুইটিংহ্যাম ও আকিরা ইয়োশিনো। আর তাঁরা যে আবিষ্কারের জন্য নোবেল পেলেন, তা সাধারণ মানুষ গত ২৮ বছর ধরে ব্যবহার করছে। তিন রসায়নবিদ নোবেল পেলেন লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আবিষ্কারের জন্য।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের রসায়নের অধ্যাপক গৌতম দেশিরাজু এ প্রসঙ্গে বলেন, “অবশেষে নোবেল এল। আমরা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু সেই স্বীকৃতি এল অনেক দেরিতে।”

জন বি গুডএনাফ (৯৭) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের অধ্যাপক। এম স্ট্যানলি হুইটিংহ্যাম (৭৭) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্কের একটি অংশ। আকিরা ইয়োসিনো(৭১), জাপানের নাগোইয়ে মেইজো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। এই তিন জনের মধ্যে রসায়নে নোবেলের অর্থমূল্য ভাগ করে দেওয়া হবে।

নোবেল কমিটি তাদের প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আবিষ্কারের ফলে আমরা জীবাশ্মজাত জ্বালানি যেমন পেট্রোল, ডিজেল, কয়লা ছাড়াই চলতে পারি। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দিয়ে এখন মোবাইল, ল্যাপটপ ছাড়াও ইলেক্ট্রিক গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুন : চিকিৎসায় ‘অক্সিজেন’ জুগিয়ে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

বিশ্বজুড়েই এখন বহনযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। যে ব্যাটারি নিজের আকারের তুলনায় অনেক বেশি শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে। সেই সঙ্গে বার বার চার্জ দিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, দৈনন্দিন কাজকর্ম, শিক্ষা ও বিনোদনের মতো ক্ষেত্রে বিপ্লব এসেছে। শুধু তাই নয় এই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে সৌর শক্তি বা বায়ু শক্তি থেকেও চার্জ দেওয়া যায়। ফলে অদূর ভবিষ্যতে পেট্রোলিয়াম বা কয়লার ব্যবহার ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারি আমরা।

আরও পড়ুন : ব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তন তত্ত্বে নতুন দিশা, পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেলেন তিন জন

লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির গবেষণা শুরু হয় ১৯৭০ সাল নাগাদ। যখন স্ট্যানলি হুইটিংহ্যাম জীবাশ্মজাত জ্বালানী ছাড়াই সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবেন। সেই সময় তিনি পরীক্ষা চালাতে চালাতে খোঁজ পান লিথিয়াম আয়নের, যা তাঁর এই স্বপ্নকে সত্যি করতে পারে। তিনি একটি মডেলও তৈরি করেন।

জন গুডনএনাফ তাঁর গবেষণায় বুঝতে পারেন, লিথিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রে ধাতব সালফাইডের বদলে যদি ধাতব অক্সাইডকে ক্যাথোড হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে তা আরও ভাল কাজ করবে। সেই সঙ্গে লিথিয়াম সালফাইড, লিথিয়াম অক্সাইডের থেকে বেশি টক্সিক। তাই লিথিয়াম অক্সাইড যুক্ত ব্যাটারি ব্যবহার করা অনেক নিরাপদ। ১৯৮০ সালে জন গুডএনাফ তাঁর পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি দেখান ধাতব অক্সাইড কী ভাবে আরও বেশি কার্যকরী।

আশ্চর্যের বিষয় হল, যে বয়সে মানুষ অবসর গ্রহণ করেন, সেই বয়সে গুডএনাফ এমন একটি আবিষ্কার করলেন, যা শুধু বিশ্বকে চমকে দিল তাই নয়, আধুনিক গ্যাজেট নির্ভর জীবনের পথে মানব সভ্যতাকে কয়েক কদম এগিয়ে দিল। এর আগে গুডএনাফ ১০ বার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু অবশেষে ৯৭ বছর বয়সে এসে নোবেল পেলেন সেই গবেষণার জন্য, যা তিনি প্রায় ৩০ বছর আগেই বিশ্বের সামনে এনেছিলেন।

গুডএনাফের ক্যাথোডকে ভিত্তি করেই আকিরা ইয়োশিনো প্রথম সাধারণ মানুষের ব্যবহার যোগ্য লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির মডেল তৈরি করেন। সেটা ছিল ১৯৮৫ সাল। সেখানে তিনি অ্যানোডে লিথিয়াম রিঅ্যাকটিভ ব্যবহারের বদলে পেট্রোলিয়াম কোক ব্যবহার করেন। যেহেতু লিথিয়াম ধাতু কম পাওয়া যায়, তাই আকিরার আবিষ্কার অনেক সস্তার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি পাইয়ে দিয়েছে। তাঁর মডেলের ব্যাটারিতে লিথিয়ামের ক্যাথোড আর অ্যানোড ব্যবহার করলেই হয়।

এই তিন গবেষকের ফলাফল আজ আমাদের সামনে। আজ আমরা এমন একটি ব্যাটারি ব্যবহার করছি, যা বারবার চার্জ দেওয়া যায়। ফলে ব্যাটারি কেনার খরচ অনেক কমে গিয়েছে। একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে কয়েকশো চার্জ দিয়ে বার ব্যবহার করতে পারি। সব থেকে বড় কথা এই ব্যটারি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় চালিত হয় না। তার বদলে লিথিয়াম আয়ন ক্যাথড ও অ্যানোডের মাঝে ঘুরতে থাকে। ফলে বার বার তাকে চার্জ দিয়ে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ১৯৯১ সালে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বাজারে আসার পর থেকে আমাদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনেছে। এখন আমরা ওয়্যারলেস হয়ে ও জীবাশ্মজাত জ্বালানি ছাড়াই পথ চলতে পারি।

শুধু সাধারণ জীবনযাত্রাই নয়, এই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিকে সামনে রেখে ভবিষ্যতের গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন। এমনকি ইসরো তাদের রকেটে নিজেদের তৈরি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যবহারের দিকে এগোচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Chemistry Li ion Battery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE