Advertisement
E-Paper

আইনস্টাইনের জন্মদিনেই চলে গেলেন হকিং

হকিংয়ের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০৯:৫০
স্টিফেন হকিং। ছবি: রয়টার্স।

স্টিফেন হকিং। ছবি: রয়টার্স।

হুইলচেয়ারে আবদ্ধ শরীর। কিন্তু মন-চিন্তা-কল্পনা-মেধা-স্বপ্নকে আটকে রাখবে কে? হুইলচেয়ারে বসেই গোটা মহাবিশ্ব বিচরণ করেছেন তিনি। স্থান, কাল পেরিয়ে চলে গিয়েছেন আদি বিন্দুতে। নিজের চিন্তা দিয়ে। গবেষণা দিয়ে। মেধা দিয়ে। এবং স্বপ্ন নিয়ে। কী স্বপ্ন? কী চেয়েছেন? “আমার লক্ষ্যটা সহজ...” বলেছিলেন তিনি, “ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ বোঝাপড়া, কেন এটা যেমন আছে তেমন এবং কেনই বা এটা রয়েছে...।” নিজের মতো বোঝাপড়া নিয়ে, অনেক অনেক মানুষকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে ভাবিয়ে, চলে গেলেন তিনি। স্টিফেন হকিং। বুধবার ভোররাতে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে, নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।

এই মানুষটাকেই ১৯৬৩ সালে চিকিত্সকেরা জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন— দু’বছরের বেশি আর বাঁচবেন না স্টিফেন। তাঁর বয়স তখন মাত্র ২২। চিকিত্সকদের ধারণা সত্যি হলে, মহাবিশ্বের রহস্য সন্ধানী তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, চিন্তাবিদ, এবং বিজ্ঞান-তত্ত্বের জনপ্রিয় লেখক স্টিফেন হকিংকে পেতামই না আমরা। স্নায়ুর মারাত্মক অসুখ এএলএস (অ্যামিয়োট্রপিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস) সঙ্গে নিয়েই ৭৬ বছর বয়স পর্যন্ত লড়ে গেলেন তিনি। শুধু লড়াই নয়, কাজ করে গেলেন আমৃত্যু।

জীবদ্দশাতেই তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। ঘটনাচক্রে তাঁর জন্ম আর মৃত্যুর সঙ্গে জুড়ে রইল বিজ্ঞানের আরও দুই কিংবদন্তি পদার্থবিদের নাম। তাঁর জন্মদিন ৮ জানুয়ারি গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুদিন। আর যে দিন মারা গেলেন হকিং, সেই ১৪ মার্চ অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন।

স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুর পর নাসা-র টুইট

স্টিফেন হকিং রেখে গেলেন তিন ছেলে লুসি, রবার্ট এবং টিম-কে। বিয়ে করেছিলেন দু’বার। প্রথম স্ত্রী এলাইনের সঙ্গে ১৯৬৫ সালে বিয়ে। ১৯৯৫ সালে বিচ্ছেদ। ওই বছরই বিয়ে করেন জেনকে। সে বিয়েও অবশ্য টেকেনি। ২০০৬ সালে বিচ্ছেদ হয়ে যায় দু’জনের। বিজ্ঞানীর মৃত্যুতে তাঁর সন্তানদের তরফে জানানো হয়েছে, “বাবার মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। এক জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি তিনি এক জন অসাধারণ মানুষও ছিলেন।”

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www)-এর আবিষ্কারক টিম বার্নার লি বলেছেন, ‘‘একটা বড় মন এবং বিস্ময়কর প্রতিভাকে হারালাম। শান্তিতে থাকুন স্টিফেন হকিং।’’

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোমেটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) লিখেছে, ‘‘গোটা বিশ্ব একসময় যা জানতে চাইছিল মহাবিশ্বের সেই গোপন রহস্যের আপনি দরজা খুলে দিয়েছেন। মাইক্রোগ্র্যাভিটির সুপারম্যানের মতোই চিরকাল উড়ে চলুন।’’

১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্ম প্রবাদপ্রতিম এই বিজ্ঞানীর। ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এর লেখক কাজ করেছেন মহাবিশ্বের জন্ম, তার বিকাশ এবং ব্ল্যাকহোলের মতো তত্ত্ব নিয়ে। অবলম্বন করেছেন এক দিকে অপেক্ষবাদকে, অন্য দিকে কণা পদার্থবিজ্ঞানকে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসিয়ান প্রফেসর অব ম্যাথামেটিক্সের আসনে দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৭৯-২০০৯) ছিলেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক এই অ্যাকাডেমিক পদে এক সময় (১৬৬৯-১৭০২) ছিলেন আইজাক নিউটন।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পর, আর কোনও বিজ্ঞানী বিশ্ব জোড়া এত জনপ্রিয়তা পাননি। তাঁর জীবন নিয়ে সিনেমা পর্যন্ত হয়েছে। তবে যে বই তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলেছিল, তা অবশ্যই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। ক্লাস টেনের অঙ্ক জানা ছাত্রও আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞান বা ব্রহ্মাণ্ডচিন্তার তত্ত্ব জেনেছেন এই বই পড়ে।

আসলে পদার্থবিদ্যা যত বেশি বেশি জটিল অঙ্কনির্ভর হয়েছে, তত বেশি এর বিযুক্তি ঘটেছে বিশেষজ্ঞ নন এমন মানুষদের থেকে। হকিংয়ের আগেও বহু বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানলেখক এই সমস্যার কথা মাথায় রেখে, কঠিন তত্ত্বকথাকে যথাসম্ভব সহজবোধ্য করে লেখার কাজ করেছেন। স্বয়ং আইনস্টাইন নিজের অপেক্ষবাদ নিয়ে পপুলার সায়েন্সের লেখা লিখেছেন। কিন্তু হকিং-এর বইটির জনপ্রিয়তা অতীতের সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বই শুধু ইংরেজিতেই বিক্রি হয়েছে কোটির উপর। টানা পাঁচ বছরের উপর লন্ডন সানডে টাইমসের বেস্টসেলার তালিকায় থেকেছে এই বই। অনুবাদ হয়েছে বাংলা-সহ বহু ভাষায়।

Stephen Hawking Scientist Physicist Black Hole Theory
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy