Advertisement
E-Paper

বিলুপ্ত প্রজাতির মানুষ ডেনিসোভানেরা কেমন দেখতে ছিল? ৯২ বছর আগে পাওয়া খুলিতে জুড়ল নতুন পরিচয়

বিলুপ্ত প্রজাতির মানুষ ডেনিসোভানদের বিষয়ে আধুনিক বিশ্ব প্রথম জানতে পেরেছিল ২০১০ সালে। কিন্তু তারা দেখতে কেমন ছিল, তা এত দিন অজানাই ছিল। সেই ধোঁয়াশা কাটল দেড় দশক পরে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৪
ডেনিসোভানেরা কেমন দেখতে ছিল, এত দিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা।

ডেনিসোভানেরা কেমন দেখতে ছিল, এত দিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত।

এককালে যে তাদের অস্তিত্ব ছিল, তা আধুনিক বিশ্ব প্রথম জানতে পারে আজ থেকে মাত্র ১৫ বছর আগে। ২০১০ সালে। আদিমানবদের এক বিলুপ্ত গোষ্ঠী— ডেনিসোভান। তবে তারা দেখতে কেমন ছিল, তা নিয়ে এত দিন সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য ছিল না। ডেনিসোভানদের অবয়ব এত দিন সীমিত ছিল মানুষের কল্পনার মধ্যেই। দেড় দশক পেরিয়ে সেই ধোঁয়াশা কাটল জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের নতুন গবেষণায়।

২০১০ সালে সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সেই সময়েই গুহা থেকে পাওয়া যায় কিছু হাড়গোড়। কড়ে আঙুলের হাড়। সেই হাড় থেকে পাওয়া ডিএনএ-ই প্রথম বার ডিনোসোভানদের সঙ্গে জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের পরিচয় হয়। জানা যায়, আজ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর থেকে ৩০ হাজার বছর আগে এরা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত। ওই সময়ে নিয়ানডারথাল এবং আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর মতো অন্য প্রজাতিও ছিল পৃথিবীতে।

কিন্তু এই ডেনিসোভানদের দেখতে কেমন ছিল, তা সাইবেরিয়ায় পাওয়া ডিএনএ থেকে বোঝা যায়নি। পরবর্তী এক দশকে ডেনিসোভানদের আরও কিছু জীবাশ্ম মিলেছে। তা থেকেও কোনও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। জীবাশ্মবিজ্ঞানীরা সাধারণত কোনও আদিম হাড়গোড় থেকে পাওয়া ডিএনএ-কে একটি ‘টাইম মেশিন’-এর সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। এর কারণও রয়েছে। বহু বছর ধরে অক্ষত অবস্থায় থাকা ডিএনএ বিবর্তনের ইতিহাসের এক দলিল হয়ে উঠতে পারে। এর থেকে বোঝা যায় ওই আদিম প্রজাতি কেমন ছিল, কোথায় থাকত, এমনকি তারা অন্য কোনও প্রজাতির সঙ্গে মিলিত হয়েছিল কি না, তা-ও বলে দিতে পারে এই ডিএনএ।

তবে কাজটি মোটেও সহজ নয়। প্রাচীন এই ডিএনএগুলি অনেক সময়েই অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় না। হাজার হাজার বছর পরে এগুলি অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তার উপরে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার কারণে এই ডিএনএ-গুলি আরও দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে জীবাশ্মে হাড়গোড় অক্ষত অবস্থায় মিললেও তাতে গবেষণাযোগ্য ডিএনএ থাকে না। সেই কারণেই গত দেড় দশক ধরে ডেনিসোভানদের মুখাকৃতি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনও ধারণা পাওয়া যায়নি।

এই সমস্যার সমাধান কী ভাবে করা যেতে পারে? ডিএনএ-কে যদি গবেষণায় ব্যবহার করা না যায়, তবে আর কী ব্যবহার করা যেতে পারে? এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পেয়েছেন জীবাশ্মবিজ্ঞানীরা— প্রোটিন। ডিএনএ-র তুলনায় অনেক বেশি সময় অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকতে পারে প্রোটিন। এগুলিতেও লুকিয়ে থাকে আদিমকালের অজানা তথ্য। এই প্রোটিন বিশ্লেষণের এক নতুন গবেষণাই প্রায় দেড় লক্ষ বছরের পুরানো এক মাথার খুলির সঙ্গে ধরিয়ে দিয়েছে ডেনিসোভানদের যোগসূত্র।

বেজিং থেকে প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে রয়েছে হারবিন শহর। ১৯৩৩ সালে এই শহরে পাওয়া গিয়েছিল এক আদিম মাথার খুলি। বহু বছর ধরে পারিবারিক মালিকানায় থাকার কারণে এ বিষয়ে বিশ্ববাসী জানতেও পারেনি। ২০১৮ সালে প্রথম এই মাথার খুলির সঙ্গে পরিচয় হয় বিজ্ঞানীদের। ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বছরের পুরানো এক খুলি। জীবাশ্মবিজ্ঞানীরা এটির নাম দেন ‘ড্রাগন ম্যান’। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, ওই ‘ড্রাগন ম্যান’ আসলে ডেনিসোভিয়ানদেরই জীবাশ্ম।

বেজিঙের ‘ইনস্টিটিউট অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি অ্যান্ড প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলজি’র গবেষক কিয়াওমেই ফু-র নেতৃত্বে একটি দল ‘ড্রাগন ম্যান’-এর প্রোটিন বিশ্লেষণ করে। তাতে দেখা যায় ওই প্রোটিন বিশ্লেষণের তথ্য ডেনিসোভানদের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য ভাবে মিলে গিয়েছে। বোঝা গিয়েছে, দেড় দশক আগে সাইবেরিয়ায় সন্ধান পাওয়া ওই বিলুপ্ত আদিমপ্রজাতি দেখতে কেমন ছিল। বিজ্ঞানীদের দাবি, ডেনিসোভানদের খুলি ছিল বেশ চওড়া। ভ্রু ছিল পুরু। গাল নিয়ান্ডারথালেদের মতো রুক্ষ ছিল না, আবার আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-দের মতো কোমলও ছিল না। এই দুইয়ের মাঝামাঝি কোনও এক পর্যায়ে ছিল ডেনিসোভানদের গাল।

ওই চিনা গবেষক দল ‘ড্রাগন ম্যান’-এর খুলির দাঁতের মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ সংগ্রহ করেন। সেখান থেকে ৯৫টি আদিম প্রোটিনও বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে সেগুলির মধ্যে এমন তিনটি প্রোটিন রয়েছে যা এখনও পর্যন্ত শুধু ডেনিসোভানদের মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। আগে অনুমান করা হত, ‘ড্রাগন ম্যান’-এর খুলিটি ছিল হোমো লঙ্গি নামে আদিমানবদের অপর এক বিলুপ্ত প্রজাতির। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা সেই ধারণাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

কিয়াওমেইয়ের নেতৃত্বে ওই গবেষকদল ‘ড্রাগন ম্যান’-এর ডিএনএ নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে। এ বার তাঁরা ওই মাথার খুলির কানের ভিতরের হাড় থেকে পাওয়া নিউক্লিয়ার ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখছেন। গবেষক দলের অনুমান, নিয়ানডারথালেদের সঙ্গে এদের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা জানা যেতে পারে ওই বিশ্লেষণ থেকে। ডেনিসোভানদের চোখের রঙ কেমন ছিল, তাঁদের শরীরে কোন কোন রোগের ঝুঁকি ছিল, সেই সব তথ্যও মিলতে পারে আগামী দিনের গবেষণায়।

Evolution Anthropology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy