বিপদই যদি সঙ্কেত হয়!
স্তনের সংযোগকারী কলাকোষ ‘ব্রেস্ট কানেকটিভ টিস্যু’ (স্ট্রোমাল টিস্যু নামেও পরিচিত)-তে কিছু বিচিত্র অদলবদলের সন্ধান পেয়েছিলেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ’ (এনআইএইচ)-এর বিজ্ঞানীরা। মানব স্তনের কলাকোষের সন্দেহজনক ওই পরিবর্তনগুলিকে উপেক্ষা না করে পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। লক্ষ করেন, যাঁদের শরীরে ওই পরিবর্তনগুলি ঘটেছে, তাঁদের স্তনে কর্কট রোগের কঠিনতমরূপটি বাসা বেঁধেছে। স্তনের কলাকোষে এই পরিবর্তনগুলিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘স্ট্রোমাল ডিসরাপশন’।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এটিকে বায়োমার্কার বা বিপদের সঙ্কেত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন তাঁরা। এটি থাকলে একপ্রকার নিশ্চিত, রোগীকে স্তনের কর্কট রোগের কঠিনতম রূপটির সম্মুখীন হতে হবে। এ ধরনের কর্কট রোগে অসুখ বারবার ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে, মৃত্যুভয়ও বেশি। গবেষণাপত্রটি ‘জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
কর্কট রোগের মধ্যে সবচেয়ে চেনা-পরিচিত নাম স্তন ক্যানসার। স্তনের কোষগুলিতে আচমকাই পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটতে শুরু করলে, তা টিউমার সৃষ্টি করে। রোগীর শরীরে বাসা বাঁধে কর্কট রোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৫০ বছর বা পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের স্তনে কর্কট রোগ হতেদেখা যায়। তবে এর থেকে কমবয়সি নারী কিংবা পুরুষের স্তনেও কর্কট রোগ হতে পারে। কঠিনতম স্তন ক্যানসারটি হল ‘মেটাস্ট্যাটিক ব্রেস্ট ক্যানসার’। এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ২০-৩৯ শতাংশ কর্কট রোগে আক্রান্তের শরীরে এটাই ঘটে।
কোনও রোগীর চিকিৎসার শুরুতেই তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। ম্যামোগ্রামের সাহায্যে অস্বাভাবিক বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করা হয়। সন্দেহজনক কোষ পাওয়া গেলে তখন আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং টেস্ট করা হয়। তাতে বোঝা যায়, কোথায় রয়েছে সিস্ট। বায়োপসি তো অবশ্যই করে দেখা হয়। এর পর ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন রিসেপটরের কাজ খতিয়ে দেখা হয়। ব্রাকা১, ব্রাকা২ মিউটেশন ঘটেছে কি না, তা-ও জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও কর্কট রোগের বেশ কিছু মারণরূপ চোখে এড়িয়ে যায় চিকিৎসকদের। এর থেকেই বায়োমার্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন চিকিৎসকও গবেষকেরা। সাম্প্রতিক গবেষণাটি একটি বায়োমার্কারের (স্ট্রোমাল ডিসরাপশন)-এর খোঁজ দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বায়োমার্কারটি আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হলে, উন্নততর চিকিৎসা সম্ভব হবে। বিপজ্জনক টিউমার থাকলে তাধরা পড়বে।
বিভিন্ন ধরনের সংযোগকারী কলাকোষ নিয়ে তৈরি ব্রেস্ট টিস্যু। এর মধ্যে রয়েছে ‘ফ্যাটি টিস্যু’ ও ‘ফাইব্রাস টিস্যু’। এগুলি স্তনকেসুরক্ষা দেয়। আর একটি সংযোগকারী টিস্যু স্ট্রোমা ম্যামারি গ্ল্যান্ডকে ঘিরে রাখে। ‘ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’-এর গবেষক মুস্তাফা আবুবাকার বলেন, ‘‘স্ট্রোমাল ডিসরাপশন হল স্তনের স্ট্রোমা সংযোগকারী কলাকোষে ধারাবাহিক পরিবর্তন। এটি থাকার অর্থ, কোনও জটিল কর্কট রোগের পূর্বাভাস।আমরা এই বায়োমার্কারটিকে খুঁজে বার করেছি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)