Advertisement
E-Paper

আদরের পুষ্যি ‘ক্যাট’ কী ভাবে এল মানুষের ঘরে? বনবিড়ালের থেকে বিবর্তনের তত্ত্ব খারিজ নয়া গবেষণায়

বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি ছিল, যখন মানুষ প্রথম চাষবাস করা শুরু করেছিল, তখন থেকেই বিড়াল পুষতে শুরু করেছিল তারা। সেই নিয়ে যুক্তিও রয়েছে বিজ্ঞানীদের। যদিও নতুন গবেষণা সেই যুক্তি মানছে না।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬

— প্রতীকী চিত্র।

বহু বাড়ির সোফা, নরম কম্বল থাকে তাদের দখলে। সে সব থেকে সরানোর চেষ্টা করা হলে দখল করে মনিবের কোল। এই পোষ্য বিড়ালের জন্ম কোথায়, কী ভাবে এল তারা মনিবের সোফায়-সংসারে, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই চমকে গিয়েছেন।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটা অংশ মনে করতেন, প্রায় ৯,৫০০ বছর ধরে মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে বিড়াল। সেই শুরুটা হয়েছিল ভূমধ্যসাগরের পূর্বে লেভঁতে। এখন তা পশ্চিম এশিয়ার অন্তর্গত। বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, যখন মানুষ প্রথম চাষবাস করা শুরু করেছিল, তখন থেকেই বিড়াল পুষতে শুরু করেছিল তারা। সেই নিয়ে যুক্তিও রয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাঁরা মনে করতেন, চাষ করে শস্য যখন ঘরে রাখতে শুরু করল মানুষজন, তখন ইঁদুরের উৎপাত শুরু হয়। তারা দেখে, সেই ইঁদুর ধরে খায় বন্য বিড়াল। তার পরেই বন্য বিড়ালদের পোষ মানাতে শুরু করে মানুষজন। পৃথিবীতে বিড়ালের সবচেয়ে পুরনো সমাধি মিলেছে সাইপ্রাসে।

নতুন গবেষণা বলছে, বিড়াল পোষা নিয়ে বিজ্ঞানীদের এই ধারণা ঠিক নয়। পোষ্য বিড়ালের জন্ম অনেক পরে। ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সমাধিস্থল পরখ করে এই দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রেগার লারসন জানান, ১০ হাজার বছর বা তারও পুরনো হাড়গোড় পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কিছু হাড়গোড় পোষ্য বিড়ালের বলে দাবি করা হয়। সেই হাড়ও পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এখন মানুষের ঘরে যে পোষ্য বিড়াল থাকে, তাদের পূর্বপুরুষ বনবিড়াল নয়।

গবেষকেরা ৮৭টি প্রাচীন এবং আধুনিক কালের বিড়ালের জিন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, এই পোষ্য বিড়াল যার বিজ্ঞানসম্মত নাম ফেলিস ক্যাটাস, তার জন্ম লেভঁতে নয়, বরং উত্তর আফ্রিকায়। এই আধুনিক পোষ্য বিড়ালের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিল রয়েছে আফ্রিকার বন্য বিড়াল বা ফেলিস লিবিকার। ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পোষ্য বিড়াল ইউরোপের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছিল ২,০০০ বছর আগে, যখন রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। তারা বনবিড়ালের বংশধর নয়।

জার্নাল সেল জেনোমিকসে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা বলছে, ৭৩০ খ্রিস্টাব্দে চিনে পা পড়ে এই পোষ্য বিড়ালদের। সিল্ক রুট ধরে বণিকদের সঙ্গে তারা এসেছিল চিনে। গত পাঁচ হাজার বছর ধরে ওই দেশে যত বিড়ালের হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির মধ্যে ২২টি বিড়ালের হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তা পরখ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, ৫,৪০০ বছর আগে চিনে মানুষের সঙ্গে যে বিড়াল জাতীয় প্রাণী বাস করত, তাদের সঙ্গে আজকের পোষ্য বিড়ালের কোনও মিল নেই। ওই প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম রাখা হয়েছে প্রায়োনেইলারাস বেঙ্গালেনসিস। কথ্য ভাষায় তাদের লেপার্ড ক্যাট বলেন বিজ্ঞানীরা। চিনের সাতটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে এই প্রজাতির বিড়ালের হাড়গোড় মিলেছে।

পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শু-জিন লুও জানান, এই লেপার্ড ক্যাট এবং মানুষ উভয়েই উভয়ের উপকার করত। কিন্তু তাকে পুরোপুরি পোষ মানাতে পারেনি মানুষ। সাড়ে তিন হাজার বছর কেটে গেলেও তাকে বশ করতে পারেনি। সে নিজের মতো ইঁদুর ধরে খেত। পাশাপাশি পোষা মুরগিও খেয়ে নিত। এতেই সংঘাত শুরু হয়। তার পরে এক দিন বনে ফিরে যায় লেপার্ড ক্যাট। আজও সেখানে রয়ে গিয়েছে বন্য জীব। অবলুপ্তি ঘটেনি তার।

অনেক বিজ্ঞানী মানতে চাননি, যে আধুনিক পোষ্য বিড়ালের জন্ম উত্তর আফ্রিকায়। তবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন লোসোসের মতে, এই তত্ত্বে আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই। তিনি মিশরের প্রাচীন গুহাচিত্র, খোদিত লিপির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, সমাধির গায়ে যে বিড়ালের ছবি খোদিত রয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, তাদের গলায় রয়েছে হার। কানে রয়েছে দুল। প্লেট থেকে খাবার খাচ্ছে তারা। তবে ফারাওদের দেশেই প্রথম বিড়ালকে পোষ মানানো হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। লোসোসের মতে , এমনও হতে পারে, যে বনবিড়ালের বাচ্চাকে প্রথম পোষ মানানো হয়েছিল। কারণ, তা করা অনেক সহজ। ক্রমে সেই বনবিড়ালই মানুষের ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর মতে, এই নিয়ে আরও ডিএনএ গবেষণার প্রয়োজন।

Pet Cat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy