Advertisement
E-Paper

অক্ষরে অক্ষরে মিলছে! আইনস্টাইনের সূত্র ধরেই ব্রহ্মাণ্ডে মহারাক্ষসদের সন্তানের হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা

প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন, তার সূত্র ধরেই সেই ঘটনার কথা জানা গেল। বিজ্ঞানীরা শুধু তা চাক্ষুষই করলেন না, তাঁদের প্রাপ্তি আরও অনেক কিছুই।

দু’টি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ দেখলেন বিজ্ঞানীরা।

দু’টি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষ দেখলেন বিজ্ঞানীরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
Share
Save

আলোর গতিতে ছুটলে একটা প্রায় ৭০ কোটি বছর আগেকার ঘটনা। আর একটি প্রায় ২৪০ কোটি বছরের আগের। কিন্তু টের পাওয়া গেল বছর খানেক আগে।

প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গের ধারণা দিয়েছিলেন, তার সূত্র ধরেই সেই ঘটনার কথা জানা গেল। বিজ্ঞানীরা শুধু তা চাক্ষুষই করলেন না, তাঁদের প্রাপ্তি আরও অনেক কিছুই। ব্রহ্মাণ্ডে যে সব মহারাক্ষস ঘুরে বেড়ায়, তাদের সন্তানেরও হদিস দিয়ে গেল আইনস্টাইনের ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো সেই ধারণা।

বিশাল বড় একটা পুকুরের মাঝখানে কেউ খুব বড় একটা ঢিল ফেললে ঢেউ যে ভাবে ছড়াতে ছড়াতে পাড়ে এসে পৌঁছোয়, সে ভাবেই মহাশূন্যে কোনও ঘটনা ঘটলে, তার অভিঘাত ঢেউয়ের আকারে পৃথিবীতে পৌঁছোয়। কিন্তু তার জন্য কোটি কোটি বছর লেগে যায়। এ রকম দু’টি ঘটনার হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা। তা হল— দু’টি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে সংঘর্ষ। একটি প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে। আর একটি প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে।

আসলে পুকুরে যেটা ঢেউ, আদিগন্ত, অতলান্ত ব্রহ্মাণ্ডে সেটাই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ বা গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ। যা অনেক দূরের, বহু বহু কোটি বছরের পুরনো খবরাখবর বয়ে নিয়ে আসে। বার্তা বয়ে বেড়ায় ব্রহ্মাণ্ডের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পৃথিবীর ‘ঘাটে’ও এ রকম ঢেউ এসে ভিড়েছিল ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর এবং ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর। এই দুই তারিখ দিয়েই দুই ঘটনার নামকরণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ’ শব্দ দু’টির আদ্যক্ষর ‘G’ আর ‘W’-র সঙ্গে যথাক্রমে ১১ অক্টোবর এবং ১০ নভেম্বর তারিখটাকে জুড়ে নাম দেওয়া হয়েছে- ‘GW241011’ এবং ‘GW241110’ । এই আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।

ব্রহ্মাণ্ডে যে এমন ‘ঢেউ’ আছে, ঠিক এক শতাব্দী আগে সেই খবরটা দিয়েছিলেন আইনস্টাইন। তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে। ‘ঢেউ’ তার অনেক পরে এসে আছড়ে পড়েছে পৃথিবীর ‘ঘাটে’! তাই পূর্বাভাস মিলিয়ে দিয়ে সন্দেহ, সংশয়ের পরীক্ষায় আরও এক বার পাশ করে গেলেন আইনস্টাইন। আমেরিকার দু’টি জায়গা- ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ড আর লুইজিয়ানার লিভিংস্টোনে বসানো ‘লাইগো’, ইতালির ‘ভার্গো’ আর জাপানের ‘কাগরা’ ডিটেক্টরের চোখে ধরা দিয়ে ওই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ দু’টি রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষের কথা জানিয়েছে। রাক্ষুসে কারণ, তারা নক্ষত্র থেকে শুরু করে ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুই নাগালে পেলে টেনে এনে গিলে খায়। এমনকি আলোও তার নাগপাশ এড়াতে পারে না। বেরিয়ে আসতে পারে না গ্রাস থেকে।

দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা দেখলেন, একটি ব্ল্যাক হোল আকারে বড়। আর একটি আকারে ছোট। গত বছর ১১ অক্টোবর যে ঘটনাটি ধরা পড়েছিল, সেটির ক্ষেত্রে একটি ব্ল্যাক হোলের আকার সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি। আর অন্যটি প্রায় ছ’গুণ। এই দুই ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি বছর আগে। ঠিক তার এক মাস পর অর্থাৎ, ১০ নভেম্বর যে ঘটনাটি ধরা পড়েছিল, সেটির ক্ষেত্রে একটি ব্ল্যাক হোলের আকার সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। আর অন্যটি প্রায় আট গুণ। এই ব্ল্যাক হোল দু’টির সংঘর্ষ হয়েছিল প্রায় ২৪০ কোটি বছর আগে।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রেই দু’টি তুলনায় বড় ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়েছিল এ রকমই কোনও এক সংঘর্ষ থেকে। কারণ দু’টির ঘূর্ণনেই অদ্ভুত স্বভাব লক্ষ করা গিয়েছে। একটি অস্বাভাবিক গতিতে ঘুরে চলেছে। আর অন্যটি ঘুরছে নিজের কক্ষপথে উল্টো দিকে, যা বিজ্ঞানীদের চোখে ‘বিরল’। তাঁদের দাবি, এ রকম তখনই হয়, যখন দু’টি ব্ল্যাক হোলের সংঘর্ষে বিশাল ব্ল্যাক হোলের জন্ম হয়। তাই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বড় ব্ল্যাক হোল দু’টি আসলে দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্ল্যাক হোল।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আইনস্টাইনকে একাধিক বার পরীক্ষায় পাশ করিয়েছে যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ, তা একই সঙ্গে যেমন ব্রহ্মাণ্ডের ইতিহাস, ভবিষ্যৎ জানার জন্য আমাদের সামনে সম্পূর্ণ নতুন একটা জানলা (উইন্ডো) খুলে দিয়েছে।

এত দিন আলোকতরঙ্গকে (দৃশ্যমান, অতিবেগনি ও ইনফ্রারেড, এদেরই মধ্যে পড়ে এক্স-রে ও গামা রে) ‘হাতিয়ার’ করেই ব্রহ্মাণ্ডের অজানা, অচেনা বস্তু খুঁজে বেড়ানো হত। কোন উৎস থেকে সেই আলো বেরিয়ে আসছে, তারই পথ ধরে খুঁজে নেওয়া হত, তা ব্রহ্মাণ্ডের ঠিক কতটা দূরত্বে ঘটছে, বিগ ব্যাং-এর ঠিক কত দিন পর সেই সব ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন নক্ষত্রের মতো মহাজাগতিক বস্তুগুলি কবে, কখন তৈরি হয়েছে, কত কোটি বছর আগে তাদের শরীর কী ভাবে গড়ে উঠেছিল, তার কিছুই খুব সঠিক ভাবে বলা যেত না। কারণ, অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বলের জন্য ব্ল্যাকহোল থেকে তেমন ভাবে কোনও আলোই বেরিয়ে আসে না। যেটুকু আলো বেরিয়ে আসে, তা আসে ব্ল্যাক হোলের অ্যাক্রিশন ডিস্ক থেকে। আমরা যেমন থালার কানায়, কোণায় এঁটোকাঁটা ফেলে রাখি সব কিছু গিলে খাওয়ার পর, তেমনই কিছু ‘এঁটোকাঁটা’ ওই অ্যাক্রিশন ডিস্কে ফেলে, ছড়িয়ে রাখে ব্ল্যাকহোল। তাদের থেকে বেরিয়ে আসে আলোকতরঙ্গ। তারই সূত্র ধরে মেলে ব্ল্যাক হোলের হদিস।

কিন্তু এ বার হাতে এসেছে ব্রহ্মাণ্ডে নতুন নতুন বস্তু খুঁজে বার করার নতুন ‘হাতিয়ার’। যার নাম- মহাকর্ষীয় তরঙ্গ। যা দু’টো ব্ল্যাক হোল বা একটা ব্ল্যাক হোলের সঙ্গে একটা নিউট্রন নক্ষত্র বা দু’টো নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়। সেই সংঘর্ষের ‘ঢেউ’ (মহাকর্ষীয় তরঙ্গ) পৃথিবীতে এসে পৌঁছোলেই জানা যাবে, ঠিক কোথায় সেটা ঘটেছে বা ঠিক কত কোটি বছর আগে সেটা ঘটেছে।

black hole Scientists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy